গোল পার্থক্য, ২ দলের মধ্যে খেলার ফল, কোন দল বেশি গোল হজম করেছে, এর কোনও কিছুই মানদণ্ড হিসাবে পরিগণিত হলনা। মানদণ্ড হিসাবে পরিগণিত হল ফেয়ার প্লে বা পরিচ্ছন্ন খেলার মাপকাঠি। যে মাপকাঠিতে সেনেগালকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল জাপান। এই বিশ্বকাপে এখনও জাপান দেখেছে ৪টি হলুদ কার্ড। আর সেনেগাল ৬টি। সেই হলুদ কার্ড দেখার ফারাক জাপানকে পৌঁছে দিল শেষ ষোলোয়। আর লিগ থেকেই বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হল সেনেগালকে। পয়েন্ট সমান হলে এটাই ছিল মাপকাঠি। এদিন কলম্বিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে সেনেগাল ও পোল্যান্ডের কাছে ১-০-তে হেরে জাপান লিগ শেষ করে ৪ পয়েন্ট করে নিয়ে। ২ দলের পয়েন্ট সমান। তাই দেখা হয় ফেয়ার প্লেতে কে এগিয়ে। যার মাপকাঠি ছিল কার্ড দেখার পরিমাণ। সেখানেই শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করল জাপান। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও দল ফেয়ার প্লের হাত ধরে শেষ ষোলোর টিকিট পাকা করল। পয়েন্ট সমান হলে এবারই প্রথম ফেয়ার প্লে দেখে দলের লিগ অবস্থান স্থির করার সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। আর সেখানে প্রথম দল হয়ে সেই সুযোগে গ্রুপের ২ নম্বর দল হল জাপান।
এদিন সেনেগাল ও কলম্বিয়া ২ দলই একে অপরের গোলে হানা দিতে থাকে। এইচ গ্রুপের লিগ টেবিলের মাথায় থেকেও কলম্বিয়া এদিন ছিটকে যেতে পারত, যদি সেনেগাল তাদের হারাত। আর অন্য খেলায় জাপান জিতত। সেক্ষেত্রে ৬ পয়েন্ট নিয়েও ছিটকে যেতে হত কলম্বিয়াকে। তাই ৯০ এর দশকে কলম্বিয়া ফুটবলের সুপারস্টার কার্লোস ভালদেরামা এদিন পক্বকেশে মাঠে বসেও চাপে ছিলেন। যা তাঁকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল। ২ দলই একে অপরের গোলে হানা দিতে থাকলেও গোল মুখ কেউ খুলে উঠতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার চেহারার যে তেমন পরিবর্তন হয়েছে তা কিন্তু নয়। খেলার ৭৪ মিনিটের মাথায় কলম্বিয়ার কর্নার থেকে ইয়েরি মিনার মাপা হেড সেনেগালের গোলকিপারকে পরাস্ত করে ঢুকে যায় গোলে। ১ গোলে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। তাদের জন্য এই জয়টা জরুরি ছিল। এদিকে এই অবস্থায় খেলায় ফেরার মরিয়া চেষ্টা শুরু করে সেনেগাল। সুযোগও পায়। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি সেনেগালের স্ট্রাইকাররা। খেলার শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কলম্বিয়া লিগ টেবিলের শীর্ষে থেকে যায়। চলে যায় শেষ ষোলোয়। এই নিয়ে তারা বিশ্বকাপে ৩ বার নক আউট পর্যায়ে পৌঁছল।
গ্রুপের অন্য খেলায় জাপান ও পোল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছিল। খুব আক্রমণ প্রতি আক্রমণের খেলা না হলেও জাপান কিন্তু খেলার প্রথমার্ধে বেশ কিছু ভাল সুযোগ হাতছাড়া করে। গোল হতে হতেও হয়নি। সুযোগ এসেছিল পোল্যান্ডের জন্যও। তবে কম। দ্বিতীয়ার্ধেও প্রায় গোল হয় এমন অবস্থা থেকে জাপান গোল পায়নি। খেলার ৫৮ মিনিটের মাথায় পোল্যান্ড ফ্রি কিক পায়। মাপা ফ্রি কিক উড়ে এসে জাপানের পেনাল্টি বক্সে পৌঁছতেই বলে পা ঠেকিয়ে দেন জঁ বেদনারেক। বল জড়িয়ে যায় জাপানের গোলে। ১-০-তে এগিয়ে যায় পোল্যান্ড। এরপর জাপান চেষ্টা করলেও গোল শোধ করে উঠতে পারেনি। বরং খেলার ৮০ মিনিটের মাথায় তাদের গোলমুখ থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে জাপানের এক খেলোয়াড় বলটি সোজা মারেন নিজেদের গোলে। জাপানের গোলকিপার কোনওক্রমে তা আটকে দেন। না হলে ২-০ গোলে হারত জাপান। এদিন এইচ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেল কলম্বিয়া ও জাপান। ছিটকে গেল সেনেগাল ও পোল্যান্ড।