ঘরোয়া ফুটবলে এই বুদ্ধি মাঝে মধ্যে দারুণ কাজ করে যায়। যা কাজে এল একেবারে বিশ্বকাপের ময়দানেও। সোমবার নেইমারের একটা বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাক হিল খেলার মেজাজটাই বদলে দিল। শুধু গোল খাওয়াই নয়, ছন্দও হারাল মেক্সিকো। ফলে খেলায় দ্রুত আধিপত্য বিস্তার করল হলুদ ব্রিগেড। খেলার শেষে এসে আরও একটা গোল ব্যবধান বাড়াল। ব্রাজিলকে সহজেই তুলে দিল কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে এবারের বিশ্বকাপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলগুলো একে একে ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়ে ফেলেছে, সেখানে ৫ বারের বিশ্বজয়ীরা তাদের আরও একবার বিশ্বজয়ের আশা জিইয়ে রাখল। আর স্বস্তি দিল তাদের দেশ আর কলকাতার অগণিত ব্রাজিলপ্রেমীকে।
এদিন প্রথমার্ধে কিন্তু বেশ ছন্দে খেলছিল মেক্সিকো। ব্রাজিলও যদি আক্রমণ হেনে থাকে, তো তারাও কম যায়নি। বারবার ব্রাজিলের গোলে হানা দিয়েছেন মেক্সিকোর ২ স্ট্রাইকার। গোল হয়নি ঠিকই। কিন্তু আশা তৈরি হয়েছে। ব্রাজিলের মত দলের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। প্রথমার্ধ গোল শূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু শুরু থেকেই প্রবল আক্রমণ শুরু করে ব্রাজিল। খেলার ৫১ মিনিটের মাথায় মেক্সিকোর পেনাল্টি বক্সে নেইমার হাল্কা একটা ব্যাক হিল করেন। বল পান তাঁর সতীর্থ। তারপর তাঁর ভাসানো শট গোলকিপারের পায়ে লেগে এগিয়ে যায়। আর সুযোগ বুঝে আগে থেকেই পজিশন নেওয়া নেইমার তাতে পা ঠেকিয়ে দেন। বল জড়িয়ে যায় মেক্সিকোর জালে। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
১ গোল খাওয়ার পর অনেকেই ধরেছিলেন এবার বুঝি মেক্সিকো তাদের আক্রমণ বাড়াবে। কিন্তু এদিন পুরো দ্বিতীয়ার্ধেই সেভাবে ব্রাজিলের গোলে হানা দিয়ে উঠতে পারেনি মেক্সিকো। তার আগেই রুখে দিয়েছে ব্রাজিলের রক্ষণ। ফলে দ্বিতীয়ার্ধে বড় একটা খেলতেই হয়নি ব্রাজিলের গোলকিপারকে। কেবল একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। দূরপাল্লার সেই শট ফিস্ট করে বার করে দেন তিনি। বরং খেলায় বারবার ব্রাজিল মেক্সিকোর গোলে হানা দিয়েছে। গোলকিপারের তৎপরতায় আরও বেশি গোল খেতে খেতে খায়নি মেক্সিকো। খেলার ৮৮ মিনিটের মাথায় ফের সেই নেইমার বল নিয়ে এগিয়ে যান মেক্সিকোর গোলের কাছে। তারপর যখন বোঝেন নিজের পক্ষে গোল করা মুশকিল, তখন হাল্কা করে বল ভাসিয়ে দেন গোলকিপারের পাশ দিয়ে। আর সেই ভাসানো বলে পা ঠেকিয়ে দেন রবার্তো ফিরমিনো। বল ফের জড়িয়ে যায় মেক্সিকোর গোলে। ব্রাজিল এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে। যেখান থেকে ফেরা মেক্সিকোর পক্ষে কার্যত অসম্ভব ছিল। এদিন কিন্তু ব্রাজিলের ২টি গোলই হয়েছে এক ধরণের পাস থেকে। একটা করেছেন নেইমার। অন্যটা করিয়েছেন নেইমার। খেলায় ইনজুরি টাইম ৬ মিনিট দেওয়া হলেও, সে সময়ে মেক্সিকোকে বড় ক্লান্ত ঠেকেছে। লড়ার মনোভাব ছেড়ে তারা যেন আগেই হার মেনে নিয়েছিল এদিন।
এদিন ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছল সহজেই। ভেঙে দিল বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোল করার জার্মানির রেকর্ড। অন্যদিকে জার্মানিকে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সাড়া জাগানো মেক্সিকো এদিন প্রায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিল প্রতিযোগিতা থেকে।