এশিয়ার সবেধন নীলমণির মত বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় পৌঁছেছিল জাপান। গোটা এশিয়া তাকিয়ে ছিল জাপানের দিকে। এশিয়াও যে বিশ্বমানের ফুটবল খেলতে পারে সেটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে তৈরি জাপানকে ভরসা করছিলেন সকলে। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোর সেই লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল জাপান। ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল তারা। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন জাপানের সূর্যোদয় আর বেলজিয়ামের সূর্যাস্ত তখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তারপরই ঘুরে দাঁড়াল বেলজিয়াম। ৩ গোল দিয়ে জাপানকে হারিয়ে দিল তারা। পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে বেলজিয়াম মুখোমুখি হবে ব্রাজিলের।
এদিন খেলা শুরুর পরেই জাপানের একটা জোড়াল শট বার পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। খেলার ২৪ মিনিটের মাথায় পাল্টা জাপানের গোলমুখ ফাঁকা পায় বেলজিয়াম। কিন্তু বলটা কব্জা করতে করতেই সময় চলে যায়। জাপান বাঁচিয়ে নেয় গোল। ৪৩ মিনিটের মাথায় জাপানের করা গোলমুখী হাল্কা শট বেলজিয়ামের গোলকিপারের হাত ফস্কে প্রায় গোলে ঢুকে গিয়েছিল। কোনওক্রমে শেষ মুহুর্তে বলটা ফের ঝাঁপিয়ে পাকড়াও করেন গোলকিপার।
দ্বিতীয়ার্ধের ৪৭ মিনিটের মাথায় একটা সাজানো পাস থেকে বল নিয়ে এগিয়ে কোনাকুনি শটে দুর্দান্ত গোল করেন জাপানের জেনকি হারাগুচি। জাপান এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। এর ঠিক ১ মিনিট পর জাপান পেনাল্টি বক্স থেকে নেওয়া বেলজিয়ামের স্ট্রাইকারের বুলেটের মত শট কপাল জোরে জাপানের সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। গোল বাঁচে। বেলজিয়ামের সমতা ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়। খেলার ৫২ মিনিটের মাথায় পায়ে আসা বল বেলজিয়ামের পেনাল্টি বক্সের বাইরে থামিয়ে সাজিয়ে তারপর বেলজিয়ামের গোলে মাপা শট করেন জাপানের তাকাশি ইনুই। গোলকিপার ঝাঁপিয়েও সে বলের নাগাল পাননি। বল জড়িয়ে যায় জালে। জাপান এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে।
এখানে অনেকেই মনে করছিলেন জাপানকে আর রোখা সম্ভব হবে না। কিন্তু খেলার ছবি বদলে যায় ৬৮ মিনিটের মাথা থেকে। একটা ওড়ানো বলে হেড করেন বেলজিয়ামের জাঁ ভারটনঘেন। বলটা হাওয়ায় অনেকক্ষণ থাকে। তারপর একদম কোণা ঘেঁষে গিয়ে পড়ে জাপানের গোলের মধ্যে। অদ্ভুত গোল। চোখ জুড়ানো গোল। হয়তো হেডের সময়ে গোলটা আশাও করেননি জাঁ। ব্যবধান কমায় বেলজিয়াম। ৭৩ মিনিটের মাথায় একটা দুরন্ত ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে খেলায় সমতা ফেরান বেলজিয়ামের মারুয়ান ফেলাইনি।
খেলার ৮৫ মিনিটের মাথায় বেলজিয়াম ফের সুযোগ পায়। গোলে হেড করতেও ভুল করেনি। কিন্তু সেই বল ফিস্ট করে দেন গোলকিপার। বল হাওয়ায় ভেসে ফের পৌঁছয় বেলজিয়ামের খেলোয়াড়ের মাথায়। ফের গোলে হেড। সেই হেডও রুখে দেন গোলকিপার। দুরন্ত গোলকিপিংয়ের হাত ধরে সে যাত্রায় রক্ষা পায় জাপান। কিন্তু ৪ মিনিটের ইনজুরি টাইমের একদম শেষে পৌঁছে বাঁশি বাজার ঠিক আগের মুহুর্তে একটা মাপা ক্রস থেকে জাপানের গোলমুখে বল পেয়ে যান বেলজিয়ামের ন্যাসার চাডলি। ভুল করেননি। শেষ মুহুর্তের সেই গোলে ব্যবধান ৩-২ করে বেলজিয়াম। এরপর আর সময় ছিলনা গোল শোধ দেওয়ার জন্য চেষ্টারও। ২ গোলে এগিয়ে থেকেও চোখের জলে বিদায় নিল জাপান। এবারের বিশ্বকাপ থেকে শুধু তারাই ছিটকে গেলনা। ছিটকে গেল গোটা এশিয়া।