যোগ্য দল হিসাবেই সেমিফাইনালের টিকিট পাকা করল ফ্রান্স। উরুগুয়েকে হারাল ২-০ গোলে। শুক্রবারের খেলায় কিন্তু আধিপত্য ধরে রেখেছে ফ্রান্স। ২টো গোল খাওয়ার পর বল দখলে উরুগুয়ে এগিয়ে থাকলেও সেই বল নিয়ে ফ্রান্সের গোলপোস্ট পর্যন্ত কখনই পৌঁছতে পারেনি তারা। শেষ ৩৪ মিনিটে একটি বার মাত্র ফ্রান্সের গোলকিপারকে ঝাঁপ দিয়ে বল জাপটে ধরতে হয়েছে। বাদ বাকি ফ্রান্সের রক্ষণেই থমকে গেছে উরুগুয়ের সব চেষ্টা।
এদিন শুরু থেকে সমানে সমানে লড়াই শুরু হয়। কোনও দলই প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলে উঠতে পারছিল না। ২টো দলই যে রক্ষণ সামলে খেলেছে তা এদিনের খেলা থেকেই পরিস্কার। উরুগুয়ের জন্য অবশ্যই বড় ধাক্কা ছিল কাভানির না থাকা। তার ফল যে কতটা ভয়ংকর তা খেলার শেষে টের পেয়েছে গোটা দলটা। সুয়ারেজ খেললেও তাঁর করা পাসকে গোলে পর্যবসিত করার খেলোয়াড় ছিল না।
খেলার ৪০ মিনিটের মাথায় ফ্রান্স উরুগুয়ের পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে একটি ফ্রি কিক পায়। ফ্রি কিক করেন গ্রিজম্যান। সেই মাপা শটে কার্যত চিলের মত উড়ে এসে রাফায়েল ভারানে মাথা ছুঁইয়ে দেন। তিরের মত বল ঢুকে যায় উরুগুয়ের গোলে। ফ্রান্স এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয়ার্ধে ১ গোলে পিছিয়ে থাকা উরুগুয়েকে দেখে মনে হয়নি তাদের কাছে এই অবস্থা থেকে বার হওয়ার জন্য কোনও নতুন প্ল্যান আছে। বরং খেলার ৬১ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে গ্রিজম্যানের নেওয়া একটা জোরাল শট ফিস্ট করতে গিয়ে গোলকিপারের কিছুটা গা ছাড়া ভাব ভয়ংকর হয়ে যায় উরুগুয়ের জন্য। বলের লাইনে ঠিকঠাক পৌঁছলেও, ফিস্টের ক্ষেত্রে যেন একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন উরুগুয়ের গোলকিপার। যার ফলে যে শট সহজেই তাঁর আটকে দেওয়ার কথা, সেই শট তাঁর হাতে লেগে ঢুকে পড়ে গোলে। ফ্রান্স এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে।
এরপর অনেকটা সময় খেলা বাকি ছিল। সে সময়ে ফ্রান্সের চেয়ে বল দখলে এগিয়ে ছিল উরুগুয়ে। কিন্তু ফ্রান্সের রক্ষণ ভেঙে গোল করার কোনও পরিকল্পনাই তাদের হাতে ছিলনা। ফলে পুরো সময়টা হাতড়ে বেড়িয়েছেন সুয়ারেজরা। অন্যদিকে ফ্রান্সের যেখানে প্রায় পুরো টিমটা রক্ষণে নেমে আসছিল, সেখানে ২টো গোল হজম করা উরুগুয়ে দলটাকে মরিয়া আক্রমণে যেতে দেখা যায়নি। বরং তখনও তারা ফরোয়ার্ডদের ওপরই কেবল ভরসা রেখেছে গোল নিয়ে। দলের সিংহভাগ খেলোয়াড়কে উঠে এসে আক্রমণে যেতে দেখা যায়নি। ফলে রক্ষণ সামলাতে কোনও কষ্টই করতে হয়নি ফ্রান্সকে।
খেলার ৬৭ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সের এমবাপের একটি প্লে অ্যাকটিংকে কেন্দ্র করে মাঠে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ২ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়। পরে রেফারি ফ্রান্সের এমবাপে ও উরুগুয়ের রডরিগেজ, ২ জনকেই হলুদ কার্ড দেখিয়ে অবস্থা আয়ত্তে আনেন। খেলার প্রায় শেষে দিকে এসে উরুগুয়ের কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাঁদতে দেখা যায়। ভেঙে পড়তে দেখা যায়। খেলার শেষ বাঁশি বাজার আগেই এভাবে হার স্বীকার ফুটবল বিশেষজ্ঞরা ভাল ভাবে নেননি। বরং তাঁদের শেষ পর্যন্ত মাটি কামড়ে লড়াই করা উচিত ছিল বলেই মনে করছেন তাঁরা। এদিন হারের ফলে উরুগুয়ের এই বিশ্বকাপে দৌড় শেষ। তাদের এবার বাড়ি ফেরার পালা। অন্যদিকে এদিন জিতে বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে গেল ফ্রান্স।