Sports

বিদায় নিল ব্রাজিলও, সেমিফাইনালে কালো ঘোড়ারা

জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগালের মত তথাকথিত প্রথমসারির দলগুলো একে একে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল। বাকি ছিল ব্রাজিল। শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালের খেলায় বেলজিয়ামের কাছে হেরে তারাও ছিটকে গেল বিশ্বকাপের দৌড় থেকে। ব্রাজিল হারল ২-১ ব্যবধানে। পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেও কালো ঘোড়াদের সঙ্গে পেরে উঠল না ব্রাজিল। ম্যাচের প্রথমার্ধটাই ছিল টানটান উত্তেজনার।

নেইমার পারলেন না। পারলেন না মার্সেলোও। তবে চেষ্টার ত্রুটি ছিলনা। কেমন যেন ভাগ্য সাথ দিল না। খেলার ২ মিনিটের মাথায় দুরন্ত একটা শট নেয় বেলজিয়াম। কিন্তু তা ব্রাজিলের বারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭ মিনিটের মাথায় ব্রাজিল কর্নার পায়। সেই কর্নার থেকে আসা ভাসানো বলে একদম ঠিকঠাক পা ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়। কিন্তু কপাল খারাপ। বল গিয়ে লাগল সাইড বারে। একটুর জন্য গোল হলনা। ৯ মিনিটের মাথায় ফের একটা সুযোগ পায় ব্রাজিল। কিন্তু সে সুযোগও গোলমুখে এসে মাঠে মারা যায়।


খেলার ১৩ মিনিটের মাথায় বেলজিয়াম কর্নার পায়। কর্নার থেকে ভাসানো বল ক্লিয়ার করতে লাফান ২ ব্রাজিল খেলোয়াড়। তারমধ্যে ফার্নান্দোর কাঁধের কাছে লেগে বল ঢুকে যায় ব্রাজিলের জালে। আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। এরপর ফের তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শুরু করেন নেইমার, মার্সেলোরা। ১৪ মিনিটের মাথায়ই আসে সুযোগ। কার্যত বেলজিয়ামের ফাঁকা গোলে বল ঠেলাটা বাকি ছিল। কিন্তু সেই অবস্থায় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান ব্রাজিলের খেলোয়াড়। ১৪ মিনিটের মধ্যেই কিন্তু পরতে পরতে উত্তেজনার মধ্যে খেলা এগোয়। তবে এই পর্যন্ত দেখার পর ব্রাজিল একগুচ্ছ সুযোগ নষ্ট করলেও মনে হচ্ছিল দলটা বেলজিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি গোছানো ফুটবল খেলছে। কিন্তু বেলজিয়ামের কৌশল ছিল রক্ষণে জোর দিয়ে আচমকা কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করা। আর সেটাই তারা করল খেলার ৩০ মিনিটের মাথায়। মাঝমাঠ থেকে লুকাকু বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যান। ব্রাজিলের মাঝমাঠকে পাস কাটিয়ে বুলেটের মত বল নিয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। তারপর পেনাল্টি বক্সের কাছে পৌঁছে হাল্কা করে বল বাড়িয়ে দেন কেভিনকে। বল রিসিভ করে সেখান থেকেই একটা দূরপাল্লার জোড়াল শট করেন কেভিন দ্য ব্রুনে। বল তিরের গতিতে ছুটে জড়িয়ে যায় জালে।

গোলকিপার লাফিয়েও সে বলের নাগাল পাননি। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। ৩৬ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের একটা দারুণ শট ঝাঁপ দিয়ে রুখে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে বেলজিয়ামের গোলরক্ষকের এই কামাল আরও একবার বেলজিয়ামকে গোল খেতে খেতে বাঁচিয়ে দেয়।


প্রথমার্ধে ব্রাজিলকে যতটা চাঙ্গা দেখিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু অতটা লাগেনি। বরং বেলজিয়াম নিজেকে আরও গুছিয়ে নেয়। ২ গোলে এগিয়ে থাকাকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিতে হয় তা এদিন কালো ঘোড়ার দল দেখিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রথমার্ধের মত অতটা টানটান হয়নি ম্যাচ দ্বিতীয়ার্ধে। ৭৫ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের রেনাতো অগাস্তো বেলজিয়ামের গোলমুখে একটা ভাসানো বল পেয়ে যান। কোনওভাবেই সুযোগ নষ্ট করেননি তিনি। মাপা হেডে গোল করে ব্যবধান কমান রেনাতো। এরপর খেলার শেষ প্রান্তে পৌঁছে নেইমার একটা হেডে গোলের সুযোগ পেলেও তা হাতছাড়া হয়। ইনজুরি টাইম ৫ মিনিট ধার্য হয়। তার ৩ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের একটি অব্যর্থ গোলমুখী শট বাঁচিয়ে দেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক। আশ্চর্য সেই রক্ষাই হয়তো ব্রাজিলের শেষ আশাটুকুও কেড়ে নেয়।

খেলার পর সেই একই ছবি ধরা পড়ে। বিধ্বস্ত ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের চোখে জল। অনেকেই তখন মাঠে শুয়ে পড়েছেন। জানেন এবারের মত বিশ্বকাপের দৌড় শেষ। ফের ৪ বছরের অপেক্ষা। অন্যদিকে ইতিহাস গড়ে বেলজিয়াম পৌঁছে গেল শেষ চারে। আগামী মঙ্গলবার সেমিফাইনালের লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হবে ফ্রান্সের। খেলা হবে ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা থেকে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button