রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতের বিশ্বজয়, বিরাট কোহলি করলেন বড় ঘোষণা
১৩ বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি। ফের বিশ্বজয়ের স্বাদ পেল ভারত। বার্বাডোজে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ জয় করল ভারত। গড়ল নতুন ক্রিকেট ইতিহাস।
টি২০ বিশ্বকাপ জিতে নিল ভারত। ২০১১ সালের পর ফের ভারতের ঘরে এল কোনও ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফি। ১৩ বছরের অপেক্ষার শেষ হল। ফাইনালে অবশ্য ভারত এদিন প্রায় খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতল তারা।
ম্যাচের সেরা হলেন বিরাট কোহলি। আর ম্যাচের সেরা হওয়ার পর আবেগঘন বিরাট ঘোষণা করলেন এটাই ছিল তাঁর টি২০ আন্তর্জাতিকের শেষ ম্যাচ। টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে অবসর গ্রহণ করলেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটিং প্রতিভা।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে এতটাই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন বিরাট ও রাহুল যে অনেকেই মনে করছিলেন যে প্রথম ৬ ওভারে বড় রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলবে ভারত।
একের পর এক ৪ হতে থাকে। কিন্তু ছন্দপতন হয় দ্বিতীয় ওভারেই। রাহুল আউট হন ক্যাচ তুলে। তারপরেই আউট হন ঋষভ পন্থ। বড় ধাক্কায় ভারতের রানের গতি অনেকটাই থেমে যায়।
এদিকে ৩৪ রানের মাথায় সূর্যকুমারের উইকেটও হারায় ভারত। চাপে পড়া দলকে শক্ত হাতে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন বিরাট কোহলি ও অক্ষর প্যাটেল। কার্যত এই ২ জন মিলেই ভারতকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেন।
অক্ষরের পর বিরাটকে যোগ্য সঙ্গত দিতে শুরু করেন শিবম দুবে। তবে এদিন ভারতীয় দলকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেন বিরাট কোহলি। বিরাটের নায়কোচিত ব্যাটিং, অভিজ্ঞতাকে ঢেলে দেওয়া সিদ্ধান্ত, ভারতকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেয়।
বিরাটের ৫৯ বালে ৭৬ রান, অক্ষরের ৩১ বলে ৪৭ রান এবং শিবম দুবের ১৬ বলে ২৭ রানে ভর করে ভারত ১৭৬ রান তোলে। জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ছিল ১৭৭ রান।
ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই চাপে পড়ে যায়। দ্বিতীয় ওভারে বুমরাহ রিজাকে বোল্ড করে এবং তৃতীয় ওভারে অর্শদীপ মার্করামকে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের লক্ষ্য কঠিন করে দেন। কিন্তু তারপরই ম্যাচের হাল ধরেন কুইন্টন ডি কক ও স্টাবস।
তাঁদের দাপুটে ব্যাটিং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দেয়। দলের ৭০ রানের মাথায় স্টাবসকে ফেরান অক্ষর প্যাটেল। এরপর ৩৯ রান করে ফেরেন ডি কক। কিন্তু ততক্ষণে খেলায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছেন প্রোটিয়ারা।
এরপর ক্ল্যাসেন ও মিলার মিলে যে ব্যাটিং শুরু করেন তাতে ভারতের জয়ের আশা কার্যত উবে যায়। কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেলের বল নিয়ে কার্যত খেলা করতে থাকেন মিলার ও ক্ল্যাসেন। একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ বলে ৩০ রান দরকার ছিল জেতার জন্য।
২৭ বলে ৫২ রান করা ক্ল্যাসেনকে এরপর প্যাভিলিয়নে ফেরান হার্দিক পাণ্ডিয়া। এটাই কার্যত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। ক্ল্যাসেন ফেরার পর ক্রমে বল এবং রানের ব্যবধান বড় হতে থাকে। দ্রুত ফেরেন মার্কো ইয়ানসেন।
মিলারের সঙ্গে সঙ্গত দিতে নামেন কেশব মহারাজ। কিন্তু খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়া ভারত তখন ফের জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। হার ভুলে এবার জয়ের চিন্তায় মশগুল তারা। যশপ্রীত বুমরাহর অসামান্য বোলিং, অর্শদীপের বুদ্ধিদীপ্ত বল খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
যে দক্ষিণ আফ্রিকার এক সময় ৩০ বলে ৩০ রান দরকার ছিল জয়ের জন্য, তারা শেষ ৬ বলে ১৬ রান করতে হবে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তখনও মিলার মাঠে। তাই আশাও জেগে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
এখানেই হার্দিক পাণ্ডিয়ার শেষ ওভারের প্রথম বলে হয় ম্যাজিক। মিলারের ছক্কা হাঁকানো শট একদম বাউন্ডারি লাইনের কিনারায় আটকে দিয়ে সূর্যকুমার বোঝেন টাল সামাল দিতে তাঁকে বাউন্ডারির মধ্যে পা ফেলতেই হবে।
তাই শেষ মুহুর্তে বলটি হাত থেকে উড়িয়ে দিয়ে বাউন্ডারিতে প্রবেশ করে ফের বেরিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় পড়তে থাকা বলটি ধরে এক অনবদ্য ক্যাচ ধরেন সূর্য। যা কার্যত দক্ষিণ আফ্রিকার হারে শেষ পেরেকটি মেরে দেয়।
এরপর রাবাডা একটি ৪ মারতে পারলেও পরে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে আউট হন। অবশেষে ৭ রানে জয় পায় ভারত। যে খেলায় কার্যত ৩০ বল বাকি থাকাকালীন সকলেই ধরে নিয়েছিলেন এ ম্যাচ ভারতের জেতা প্রায় অসম্ভব, তাঁরাই দেখলেন ক্রিকেটে সবই হয়।
খেলার পর একদিকে হারের যন্ত্রণায় গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা দল যখন চোখের জল ফেলছে, চিরকাল অধরা থেকে যাওয়া বিশ্বকাপ এবার হাতে পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা যখন তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, তখন জয়ী ভারতীয় শিবিরেও চোখের জলের বন্যা।
তবে সে জল আনন্দের কান্না। রোহিত, বিরাট, হার্দিক থেকে শুরু করে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও কাঁদছেন। অধিনায়ক রোহিত এরমধ্যেই ভারতের জাতীয় পতাকা পুঁতে দেন বার্বাডোজের সবুজ ঘাসের মাঠে। ট্রফি হাতে পাওয়ার পর আনন্দে ভেসে যাওয়া ভারতীয় শিবির শেষে মাঠও প্রদক্ষিণ করে।
ভারত এদিন শুধু বিশ্বকাপই জিতল না, ক্রিকেট বিশ্বে একটি ইতিহাসও লিখল। এই প্রথম কোনও দল ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতল একটাও ম্যাচ না হেরে।
প্রতিযোগিতার সেরা হয়েছেন যশপ্রীত বুমরাহ। ২০০৭ সালে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর ফের ২০২৪ সালে ভারতের ঘরে এল টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি।