২০১৯-কে ছাপিয়ে রাজ্যে তৃণমূল ঝড়, রেকর্ড গড়লেন অভিষেক
তাদের ২০১৯-এর ফলাফল ধরে রাখতে পারল না বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূল ২০১৯-কে ছাপিয়ে ফল করল। কয়েকটি জেতা আসনও হাতছাড়া হল বিজেপির।
ভোটবাক্সে দাগ কাটতে পারল না সন্দেশখালি ইস্যু, দুর্নীতি ইস্যু। বিজেপি প্রচারে যে বিষয়গুলিতে জোর দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ রাজ্যে প্রচারে এসে যে বিষয়গুলিকে সামনে তুলে ধরেছেন, তার কোনও প্রভাবই ভোটের বাক্সে পড়ল না।
বরং বিজেপি তাদের ২০১৯ সালের ফলাফলও ধরে রাখতে পারল না এ রাজ্যে। যাবতীয় সমীক্ষাকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়ে এ রাজ্যে তৃণমূল ঝড় বয়ে গেল।
যদিও বিজেপি তার উত্তরবঙ্গের দাপট অনেকটাই ধরে রাখতে পেরেছে। তা না হলে ফলাফল আরও খারাপ হতে পারত। অন্যদিকে তৃণমূল ২০১৯-এ কয়েকটি হারা আসন এবার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।
ফের শূন্য হাতে বামেদের ফিরিয়েছেন বাংলার মানুষ। কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য গড় বহরমপুর, যেখানে অধীর চৌধুরী হারতেও পারেন এমনটা অনেক পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতাও ভাবতে পারেননা, সেখানে অধীর চৌধুরীর মত নেতাকে ৭৮ হাজার ভোটে হারতে হয়েছে তৃণমূলের ক্রিকেটার প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে।
অধীর চৌধুরী অবশ্য কোনও অজুহাত দেননি। সাফ জানিয়েছেন, হার মানে হার। একদিকে ৫ বারের সাংসদ অধীর চৌধুরীর এই অবস্থা যেমন একটা চমক, তেমনই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক সর্বভারতীয় রেকর্ড গড়লেন।
ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে ৭ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়ী হলেন অভিষেক। পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড ছিল বাম নেতা অনিল বসুর। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রেকর্ড এদিন ভেঙে দিলেন।
এবারও উত্তরবঙ্গে বিজেপি ভাল ফল করলেও দক্ষিণবঙ্গে খারাপ ফল হয়েছে তাদের। গেরুয়া শিবির ২০১৯ সালে দক্ষিণবঙ্গ থেকে যে ফল করতে পেরেছিল এবার সেটাও ধরে রাখতে পারেনি। কীর্তি আজাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন বিজেপির দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ।
তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাটালের প্রার্থী দেব বা দীপক অধিকারী, মেদিনীপুরে জুন মালিয়া, যাদবপুরে সায়নী ঘোষ, বীরভূম থেকে শতাব্দী রায় জয় নিশ্চিত করতে পেরেছেন। অর্জুন সিংকে পিছনে ফেলে ব্যারাকপুরে পার্থ ভৌমিক ঘাসফুলের দাপট ফিরিয়েছেন।
তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা আসানসোলে জয়লাভ করেছেন ৬৩ হাজার ভোটে। হাওড়া থেকে জয়লাভ করেছেন তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদা উত্তর কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু।
বামেদের মত কংগ্রেসকে এ রাজ্যে শূন্য হতে দেননি ইশা খান চৌধুরী। মালদা দক্ষিণ থেকে তিনি কংগ্রেসের মুখরক্ষা করেছেন। ১ লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হন তিনি।
বর্ধমান পূর্বে জয়ী তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী শর্মিলা সরকার। জয়নগর কেন্দ্র থেকে জয়ী তৃণমূলের প্রতিমা মণ্ডল। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেন মহুয়া মিত্র।
কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মালা রায়। কলকাতা উত্তর থেকে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায়কে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
হুগলিতে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে জয়ী হলেন তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ায় বিজেপির সুভাষ সরকারকে হারিয়ে জয়ী হলেন তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী।
ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের কালীপদ সোরেন জয়ী হয়েছেন। বিজেপির বড় ধাক্কা কোচবিহারে। সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক পরাজিত হয়েছেন তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার কাছে।
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন আবু তাহের খান। জঙ্গিপুর থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের খলিলুর রহমান। আরামবাগে তৃণমূলের মিতালি বাগ জয়ী হয়েছেন।
শ্রীরামপুর থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসত থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের কাকলী ঘোষ দস্তিদার। বনগাঁ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর।
রাণাঘাট থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। কাঁথি থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপির সৌমেন্দু অধিকারী। বসিরহাট থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের হাজি নুরুল ইসলাম। এখানেই সন্দেশখালি ছিল বড় ইস্যু। সেখানে বিজেপির রেখা পাত্রকে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন হাজি নুরুল।
মথুরাপুর আসনে জয়ী তৃণমূলের বাপি হালদার। তমলুকে জয়ী বিজেপির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুরে জয়ী বিজেপির সৌমিত্র খাঁ।
দার্জিলিং থেকে বিজেপির রাজু বিস্ত ফের কামাল দেখালেন। দমদম কেন্দ্রে তৃণমূলের সৌগত রায়ের দাপট অক্ষুণ্ণ রইল। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে বিজেপির মনোজ টিগ্গা জয়ী হয়েছেন।
এবার ২টি বিধানসভা কেন্দ্রেও ভোট হয়। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থেকে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বরানগর থেকে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তৃণমূলের এই জয়ের জন্য রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।