বঙ্গসন্তানের বিশ্বজয়, ২৭টি দেশকে পিছনে ফেলে জিতে নিল সেরার মুকুট
বাংলার কিশোররা এখন অনেক খেলাতেই নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। সেই তালিকায় নবতম সংযোজন আরুষ। ২৭টি দেশকে পিছনে ফেলে বিজয় মুকুট উঠল এই বঙ্গসন্তানের মাথায়।
ভারতে জন্ম নেওয়া যোগ চর্চা এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয়। দেহ মনকে একসঙ্গে সুস্থ রাখতে, দীর্ঘদিন নিরোগ থাকতে বিশ্বকে ভারতের এ এক অনন্য দান। এখন শুধু যোগ চর্চা নয়, আন্তর্জাতিক যোগ নিয়ামক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল যোগা স্পোর্টস ফেডারেশন’-এর হাত ধরে তা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার রূপও পেয়েছে।
তাদের উদ্যোগে এবার ভারতের বেঙ্গালুরুতে ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বসেছিল যোগাসনের বিশ্বকাপের আসর। সেখানে বিভিন্ন বিভাগেই ভারতের প্রতিযোগীদের ফল নজর কেড়েছে।
১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরদের বিভাগে প্রথম থেকেই নজর ছিল বারাসতের কিশোর আরুষের দিকে। হতাশ করেনি আরুষও। আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল সহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে ৫২.৯২০ পয়েন্ট পেয়ে বিশ্ব সেরার খেতাব ছিনিয়ে নেয় সে।
প্রায় ১০ পয়েন্ট কম পেয়ে ভারতেরই সুমন্ত সাহু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। আমেরিকার প্রতিযোগী পঞ্চম স্থান এবং মালয়েশিয়ার প্রতিযোগী সপ্তম স্থান অধিকার করে।
আরুষের এই বিরল কৃতিত্বে তার কোচ থেকে পরিবার, প্রতিবেশি সকলেই খুশি। খুশি গোটা বাংলা। বাংলার ছেলের এই বিশ্বজয় অবশ্যই বাঙালির জন্য গর্বের।
১২ বছরের আপাত শান্ত ছেলেটা চোখে পড়তে শুরু করেছিল কিন্তু অনেক আগে থেকেই। ৫ বছর হল আরুষ যোগব্যায়াম চর্চা শুরু করেছে। যোগ চর্চা শুরুর পর থেকেই তার শরীরী নমনীয়তা অনেক যোগচর্চা বিশেষজ্ঞের নজর কাড়ছিল।
বারাসতের আদিত্য অ্যাকাডেমির ছাত্র আরুষ বসাক পড়াশোনার পাশাপাশি বারাসত যুবক সংঘ আয়োজিত যোগ চর্চা কেন্দ্রে কার্তিক চন্দ্র দাসের কাছে যোগ প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। ভাল লেগে যায় ভারতের আদি এই বিদ্যা।
কিছুদিনের মধ্যেই নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখাতে শুরু করে আরুষ। ক্রমে স্থানীয়, জেলা ভিত্তিক, রাজ্য ভিত্তিক এবং জাতীয় ক্ষেত্রে একের পর এক পুরস্কার জিততে থাকে। অবশেষে ভারতের হয়ে সে জিতে নিল আন্তর্জাতিক পুরস্কারও।
আরুষ এখন বিশ্বস্তরে আরও যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। কিন্তু অন্তরায় একটাই। স্পনসরের অভাব। ক্রিকেট পাগল ভারতে অন্য সব খেলায় স্পনসর পাওয়া কঠিন।
ভারত সরকার যোগ চর্চার প্রসারে উৎসাহী। তাই আরুষের পরিবার এখন চাইছে স্পনসর। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে আরুষকে বিশ্ব পর্যায়ের সব প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাওয়া আর্থিকভাবে মুশকিল।
তাই আরুষের মত প্রতিভা এখন তাকিয়ে আছে স্পনসরের দিকে। সেইসঙ্গে পরিবার আরুষের যোগাসন সম্বন্ধীয় যাবতীয় সিদ্ধান্ত তার প্রশিক্ষকের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে।
আরুষ বসাক স্কুল ও পড়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ২ ঘণ্টা যোগাসনে ব্যয় করে। যেদিন স্কুল থাকে সেদিন বিকেলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা যোগাসন চর্চা চলে। আর ছুটি থাকলে সকালে ১ ঘণ্টা আর বিকেলে ২ ঘণ্টা অনুশীলন বাধ্যতামূলক।
আরুষ যোগ চর্চার জন্য খাবার থেকে তেল মশলা প্রায় বাদই রেখেছে। সঙ্গে খেতে হয় প্রচুর ফল। প্রাতরাশ এবং বিকেলেই প্রধানত ভারী খাবার খায় ভারতের এই যোগ প্রতিভা। দুপুরে ও রাতে তুলনামূলক হাল্কা খাবার।
আরুষ ইতিমধ্যেই নিজের যে প্রতিভা দেখিয়েছে তাতে আগামী দিনে সে ভারতের মুখ আরও উজ্জ্বল করবে বলেই মনে করছেন যোগ চর্চার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।