গত শনিবার রাত। বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে তখন উন্মাদনার পারদ তুঙ্গে। হল জুড়ে অতিথিদের ভিড়। বিয়ের অনুষ্ঠান বলে কথা! সকলেই সুন্দর সেজে খুশির স্রোতে মাতোয়ারা। সেই সময় সেখানে এক অতিথি হিসাবেই হাজির হয় এক ব্যক্তি। আদপে এক মানববোমা। বিয়ে বাড়ির পোশাকের তলায় সারা গায়ে তার বাঁধা বিস্ফোরক। শহর-এ-দুবাই ওয়েডিং হলে সে যখন ঢোকে তখন স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪০। বিয়ের অনুষ্ঠানের হলে অবশ্য তখন সবে যেন সন্ধে নেমেছে। সকলেই উৎসবের মেজাজে। আচমকাই সেই সব খুশি মুছে যায় এক বিকট শব্দে। মানববোমা বিস্ফোরণ হয় ঠিক হলের মাঝখানে। হল ভর্তি মানুষ ছিটকে পড়েন চারধারে। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দেহ। রক্তের স্রোত বইতে থাকে। চারধারে তখন শুধু আর্তনাদ, পোড়া বারুদের গন্ধ আর মৃত্যু।
হিসাব বলছে এখনও পর্যন্ত ওই বিস্ফোরণে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। হলের মধ্যে থিকথিকে ভিড়ের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটানোয় মৃত্যু হয়েছে প্রচুর। যার মধ্যে অনেক মহিলা ও শিশু রয়েছে। পুলিশ দ্রুত জায়গাটি ঘিরে ফেলে। একে একে বার করে আনা হয় মৃতদেহগুলি। অধিকাংশ দেহেরই অঙ্গহানি হয়েছে। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও বেশ কয়েকজনের পরে মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে কাবুলের শহর-এ-দুবাই ওয়েডিং হলে। এই ঘটনার পর আর্তনাদ আর কান্নার রোল ছাড়া আর কোনও শব্দ সেখানে শোনা যাচ্ছিল না।
ঘটনার পরই তালিবানের তরফে জানানো হয় তারা এই ঘটনার পিছনে নেই। বরং যারা মহিলা ও শিশুদের টার্গেট করে তাদের সমালোচনা করে তালিবানরা। পরে অবশ্য গোটা ঘটনার দায় স্বীকার করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএস। প্রসঙ্গত আফগানিস্তানে এখন তালিবান ও আইএস, ২টি সংগঠনই জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তবে এই ২ সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক একেবারেই ভাল নয়। ঘটনার কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি।
সোমবার আফগানিস্তানের ১০০ তম স্বাধীনতা দিবস। কাবুলের ঐতিহাসিক দার-উল-আমন রাজপ্রাসাদে এদিন স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বিয়েবাড়িতে ভয়াবহ মানববোমা হামলার পর দেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সমস্ত অনুষ্ঠান স্থগিত করে দিয়েছে আফগান সরকার। মৃতদের শোকজ্ঞাপন, তাঁদের ও আহতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে স্থগিত করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের সমস্ত অনুষ্ঠান। আফগান সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সাদিক সিদ্দিকি। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা