অক্ষয় তৃতীয়া কিভাবে পালন করলে লক্ষ্মীলাভ হবে, দুর্ভোগ দূর হবে
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনটিতে পালিত হয় অক্ষয় তৃতীয়া। শুভকাজ সম্পন্ন করলে তার ফল অক্ষয় হয় বলে এই তিথি অক্ষয় তৃতীয়া নামে প্রসিদ্ধ।
পুরাণে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিকে অত্যন্ত পুণ্য বা পবিত্র তিথি বলা হয়েছে। পঞ্জিকায় গৃহপ্রবেশের দিন থাকলে ভালো, না থাকলে অক্ষয় তৃতীয়ায় গৃহপ্রবেশ উপনয়ন ইত্যাদি ছাড়া যে কোনও শুভ কর্ম করা যায়। এর ফল হয় অক্ষয়। এই দিন বা তিথি অত্যন্ত পবিত্র ও পুণ্য বলে পরিগণিত হওয়ার কারণ হল –
এই অক্ষয় তৃতীয়াতে, পুরাণের কালে গঙ্গাদেবী ভগবান শঙ্করকে মাথায় নিয়ে অবতরণ করেছিলেন মর্ত্যে। গঙ্গাকে পথ দেখাতে দেখাতে সাগরে মিলন ঘটিয়েছিলেন ভগীরথ।
মহাভারতীয় যুগ, আনুমানিক ৪৪৫০ বছর আগের কথা। বদ্রিনারায়ণ থেকে ১০ কিলোমিটার মানা গ্রাম। এই গ্রামের ব্যাস গুহায় বসে বিশাল বুদ্ধি ব্যাসদেব শ্রুতিলিখনকারী গণেশজিকে সঙ্গে নিয়ে অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনে শুরু করেছিলেন লক্ষ শ্লোক মহাভারত রচনা।
লোকপরম্পরাগত কথা, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন গঙ্গা থেকে জোয়ারের জল পুণ্যঘটে এনে ঘরে বা ব্যবসায় ক্ষেত্রে ছেটানো মঙ্গলজনক। এই পুণ্যতিথির গঙ্গাজল সার্বিক দুর্ভোগ দূরকারক।
ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার হলেন পরশুরাম। এই দিনটিই পরশুরামের জন্মতিথি হিসাবে সুখ্যাত।
অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য দিনে ভগবান শঙ্করের আরাধনা করে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছেন কুবের ও লক্ষ্মী। মতান্তরে এই তিথিতেই কুবের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে লাভ করেছিলেন ধন-সম্পদ। অক্ষয় তৃতীয়ার আরেকটি নাম নবান্ন পার্বণ। এই দিনে বিষ্ণুর সঙ্গে বৈভব লক্ষ্মীর পুজো করলে ধনে-জনে লক্ষ্মীলাভ হয়।
বছরের পর বছর ধরে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে প্রভু জগন্নাথ দেবের রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়াতে।
জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভনাথ টানা এক বছর উপবাসের পর উপবাস ব্রত ভঙ্গ করছিলেন পবিত্র এই তিথিতে। সেদিন তিনি পান করেছিলেন আখের রস।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা পবিত্র তিথি হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয় যদি কোনও বছর সোমবার রোহিণী নক্ষত্রে অক্ষয় তৃতীয়া তিথি পড়ে। পুরাণের কালে রাজা যুধিষ্ঠির অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে পেয়েছিলেন অক্ষয়পাত্র। এই পাত্রের সাহায্যে রাজা সারা রাজ্যের সমস্ত দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কৌরব রাজসভায় রথী-মহারথীদের সামনে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি শ্রীকৃষ্ণের করুণায়। পাঞ্চালীর লজ্জা নিবারণ করেছিলেন বাসুদেব। দিনটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়ার। লোকবিশ্বাস, অক্ষয় তৃতীয়ায় দেহ ত্যাগ হলে তার অক্ষয় স্বর্গলাভ হয়।
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনটিতে পালিত হয় অক্ষয় তৃতীয়া। পয়লা বৈশাখের মত এই তিথিতে কিছু কিছু ব্যবসায়ী খাতা ও লক্ষ্মী গণেশ পুজো করেন। একটি অত্যন্ত শুভ ও পবিত্র দিন হিসাবে হিন্দু ও জৈনরা এই তিথিকে মান্যতা দিয়ে থাকেন। সাফল্য ও সৌভাগ্যের প্রতীক এই দিনটি। এই তিথিতে কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন করলে তার ফল অক্ষয় হয়ে থাকে বলে এই তিথি অক্ষয় তৃতীয়া নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
উত্তরাখণ্ডে কেদার বদরী যমুনোত্রী ও গঙ্গোত্রীতে প্রতি বছর ছ’মাস মন্দির বন্ধ থাকার পর দ্বার উন্মোচিত হয় এই তিথিতে। মন্দির বন্ধ হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়াতে। ছ’মাস আগে জ্বালিয়ে রাখা গর্ভ মন্দিরের অক্ষয় দীপের দর্শন মেলে জ্বলন্ত অবস্থায়। পুরাণের কালে এই তিথিতে শুরু হয়েছিল সত্যযুগের।
শ্রীকৃষ্ণ রাজা হলেন দ্বারকার। প্রিয়বন্ধু তথা গুরুভ্রাতা সুদামা দেখা করতে গিয়েছিলেন কৃষ্ণের সঙ্গে। দিনটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। শত চেষ্টা করেও চরম অভাব অনটন ও দারিদ্রের কথা সেদিন বলতে পারেননি কৃষ্ণভক্ত সুদামা। অন্তর্যামী ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের করুণায় বাড়িতে ফিরে দেখলেন তাঁর সাধারণ কুঁড়ে ঘর রূপান্তরিত হয়েছে বিলাসবহুল প্রাসাদে।
বাঙালি জীবনে আমার মনে হয় অনেক বেশি পবিত্র, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সামাজিক ও ধর্মীয় কোনও শুভকর্ম সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে পয়লা বৈশাখের তুলনায় অক্ষয় তৃতীয়া তিথি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।