চলে গেলেন বাংলা সঙ্গীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র অমর পাল। লোকশিল্পী হিসাবে যিনি বাংলা সঙ্গীতের এক কিংবদন্তী হয়ে থেকে যাবেন চিরকাল। গত শনিবার বিকেলেও গান গেয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে কিছু ছাত্রছাত্রীর আগমন ঘটেছিল। তারপরই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে। কিন্তু এসএসকেএম-এ নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ। খুব একটা ভোগেননি। চলে গেলেন হঠাৎই। জীবনের শেষ দিনেও জীবনের সবচেয়ে ভালবাসার গানকে বুকে আঁকড়ে মৃত্যু হল তাঁর। জরা তাঁকে সারা জীবনেও তেমন স্পর্শ করেনি। বরং এই বয়সেও সুর তাঁর সঙ্গ ছাড়েনি।
তখন অবিভক্ত বাংলা। অধুনা বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় তাঁর জন্ম। অল্প বয়সে পিতৃবিয়োগ। তারপর মায়ের কাছেই গানের হাতেখড়ি। মায়ের গলায় গান শুনে আর গেয়ে বড় হয়ে ওঠেন অমর পাল। জীবনের সঙ্গে মাটির সুর অল্প বয়সেই তাঁর প্রতিটি মুহুর্তের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এরপর অবশ্য আয়াত আলি খান, মণি চক্রবর্তী, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত শিক্ষাগুরুকে জীবনে পেয়েছিলেন অমর পাল।
একসময়ে যাত্রাদলে বিবেকের গান গাওয়া অমর পাল ক্রমে লোকশিল্পী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। বাংলার মেঠো সুর তাঁর গলায় যেন আরও পরিণত হয়ে উঠত। মাটির গন্ধ তাঁর সুরে ম ম করত। সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে সিনেমায় চরণদাসের কণ্ঠে কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়… আজ বাঙালির বড় প্রিয়। বাংলা গানের স্বর্ণযুগ থেকে তার পরবর্তী পর্যায়, সবই দেখেছেন অমর পাল। সান্নিধ্যে এসেছেন পঙ্কজ মল্লিক থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাবড় শিল্পীর। বাংলা গানের জগতে নিজেও ক্রমশ এক মাইল ফলক হয়ে উঠেছিলে। অমর পাল চলে গেলেন। তবে তাঁর গলায় বাংলার বহু লোকসঙ্গীত চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।