আগুনে গরম থেকে বন্যা, সব কিছু পার করে দেড় মাস ধরে বাইক ছোটাচ্ছেন একা মা
কিছুই তাঁকে আটকাতে পারছেনা। আগুনে গরম থেকে বন্যা, জ্বর থেকে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, কিচ্ছু না। একা মা বাইক নিয়ে ছুটে চলেছেন মাইলের পর মাইল।
ভারতীয় সেনার স্ত্রী তিনি। স্বামী দিল্লির রাস্তায় এক দুর্ঘটনায় মারা যান। তারপর থেকে একাই সন্তানকে বড় করছেন। সে এক অন্য লড়াই। তবে বাড়িতে থেকেই সন্তানকে বড় করছেন এমনটা নয়। বড় করছেন নিজের অস্তিত্ব ও ভালবাসা বজায় রেখে।
তিনি পেশায় আকাশবাণীর এফএম চ্যানেলের আর জে। সে কাজ তিনি দায়িত্বরে সঙ্গে সম্পূর্ণ করেন। সেই এফএম রেনবো-র আর জে ৪৪ বছরের একা মা অম্বিকা কৃষ্ণ কিছুদিন আগে এক অভিনব উদ্যোগ নেন।
জীবনের কঠিন লড়াই হাসি মুখে চালিয়ে যাওয়া অম্বিকা স্থির করেন ভারতীয় সেনারা যাঁরা অকালেই চলে গেছেন তাঁদের স্ত্রীদের মনকে শক্ত করতে।
মনকে শক্ত করে জীবনটাকে উপভোগ করা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার শক্তি তাঁরা যাতে তাঁকে দেখে সঞ্চয় করতে পারেন সেজন্য অম্বিকা স্থির করেন তিনি ভারতের ৭৫টি এফএম রেনবো স্টেশনে উপস্থিত হবেন। সেখানে সঞ্চালনাও করবেন।
সেইমত কেরালার কোচির বাসিন্দা অম্বিকা বেরিয়ে পড়েন তাঁর এনফিল্ড বাইক নিয়ে। বাইক নিয়ে তিনি দিনরাত এক করে ছুটতে থাকেন নিজের লক্ষ্য পূরণে।
স্থির হয় কেরালা থেকে শিলং হয়ে তিনি অমৃতসর যাবেন। দীর্ঘ এই পথ অতিক্রম করতে বেরিয়ে ৩ দিনের মাথায় চেন্নাইয়ের কাছে পৌঁছে তিনি এক দুর্ঘটনার শিকার হন। বাইক যায় উল্টে। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়।
সেখানেই থেমে যেতে পারত তাঁর সফর। কিন্তু জিদ আর মনের জোরে ফের বাইকে চড়ে বসেন অম্বিকা। তারপর হাইওয়ে ধরে দিনের পর দিন মাইলের পর মাইল একা ছুটে চলেছেন তিনি।
রোদ, ঝড়, বৃষ্টি সবই এসেছে পথে। কিন্তু তিনি থামেননি। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ হয়ে তিনি পৌঁছেছেন দিল্লি। আরও পথ এখনও যাওয়া বাকি।
এই পথে তিনি অসমের বন্যার মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনই মধ্য ভারতের ভয়ংকর গরম সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।
উত্তরপ্রদেশে ২ দিন জ্বরেও পড়েন তিনি। সেই ২ দিন বাদ দিয়ে ফের বেরিয়ে পড়েন বাইক নিয়ে। এও এক লড়াই। এই জিদ অম্বিকাকে একা মা হয়ে লড়ার ক্ষমতা দিয়েছে সন্দেহ নেই। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা