মঙ্গলবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-র রোড শো যে বর্ণাঢ্য হতে চলেছে তা বেলা বাড়তেই টের পেয়েছিলেন শহরবাসী। এত বড় মাপের রোড শো এর আগে কলকাতার বুকে করতে পারেনি বিজেপি। সপ্তম ও শেষ দফায় লোকসভা নির্বাচন রয়েছে কলকাতায়। কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার এলাকাতেই এদিন রোড শো করেন অমিত শাহ। শহিদ মিনার থেকে ঠিক ছিল রোড শো শুরু হবে। কিন্তু সেখানে অনুমতি না মেলায় তা শুরু হয় লেনিন সরণী থেকে। যদিও অমিত শাহ রোড শোতে যোগ দিতে হাজির হন বিকেলে। তবু দুপুর থেকেই লেনিন সরণী হয়ে ওয়েলিংটন স্কোয়ার হয়ে, কলেজ স্ট্রিট হয়ে সিমলা স্ট্রিটে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে পর্যন্ত বিজেপির তরফে সাজিয়ে ফেলা হয়। জমতে শুরু করে ভিড়। কর্মী সমর্থকদের ভিড়। গেরুয়া বসনে বহু মানুষকে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে দেখা যায়। ছোঁড়া হচ্ছিল গাঁদা ফুলের পাপড়ি। অনেক জায়গায় পিচ ঢালা রাজপথও মুখ লুকিয়েছিল পাপড়ির পুরু চাদরে।
দুপুরে তখনও অমিত শাহ আসেননি। তার আগেই অশান্তির আঁচ লাগে রোড শো ঘিরে। একটি মঞ্চ বাঁধাকে কেন্দ্র করে রাস্তার ওপরই বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। পুলিশ ওই মঞ্চ বাঁধা নিয়ে যে ধরণের অনুমতিপত্র চাইছিল তা দিতে পারেননি বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তা নিয়েই বচসা চলে বেশ কিছুক্ষণ। পরে একটি মাটাডোরে বিজেপি কর্মীরা ভাঙচুর চালান। যে ফেস্টুন খুলে ফেলা হয়েছিল, তা ফের লাগান তাঁরা।
অমিত শাহ তখনও আসেননি। তার আগে থেকেই বিজেপির উল্লাসের পারদ চড়তে থাকে। ঢাক-ঢোল-তাসা সবই বেজেছে। বেজেছে ডিজে। নাচতে নাচতে এগিয়ে গেছেন আদিবাসী রমণীরা। ধামসা মাদলের তালে তাঁদের পারম্পরিক সেই নাচের তালে নেচে ওঠেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরাও। যে রাস্তা ধরে অমিত শাহ-র রোড শো হওয়ার কথা ছিল সেই পুরো রাস্তা ধরেই এমন আয়োজন ছিল নজরকাড়া। অবশেষে বিকেলে অমিত শাহ এসে পৌঁছন। পরনে ছিল গোলাপি রঙের নমো জ্যাকেট। প্রথমে একটি জিপে উঠলেও পরে তা বদলে বিজেপির একটি সুসজ্জিত মাটাডোরে ওঠেন তিনি। সেখান তাঁর সঙ্গী হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বাবুল সুপ্রিয়, রাহুল সিনহা, মুকুল রায় প্রমুখ রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারা।
অমিত শাহ-র গাড়ি এগোয় ধীরে। শেষ বিকেলের আলো এদিন আগেই পড়ে গিয়েছিল। আকাশে মেঘ থাকায় বিকেল যেন মঙ্গলবার একটু তাড়াতাড়িই নামে। ক্রমশ অমিত শাহ-র গাড়ির সামনে জ্বলে ওঠে জোরালো আলো। গেরুয়া বসনে হোক বা সাধারণ পোশাকে, কর্মী সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের পারদ তখন চরমে। অমিত শাহ নিরন্তর ফুলের পাপড়ি মুঠো করে নিয়েছেন আর ছুঁড়ে দিয়েছেন ভিড়ের দিকে। তাঁর রোড শো দেখতে তখন মধ্য কলকাতার পুরনো পাড়ার অনেক বাড়ির ছাদ, বারান্দা, জানালায় তিল ধারণের জায়গা নেই।
সন্ধে নামার পর অমিত শাহ যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে ভেসে আসছে গো-ব্যাক অমিত শাহ রব। পাল্টা বিজেপি কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে লাঠি, পাথর, বোতল ছুঁড়ছেন। এক কথায় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। ওখানে অমিত শাহ-র বর্ণাঢ্য রোড শোয়ের ছন্দপতন কিছুটা হলেও হয়। তারপর তাঁর গাড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ পার করতেই বিদ্যাসাগর কলেজ ছাত্রাবাসে তুলকালাম বেঁধে যায়। আগুন জ্বলে। ভাঙা হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। ইটবৃষ্টি হয়।
অমিত শাহ-র রোড শো এদিন শেষ হয় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে। তবে সুরক্ষা জনিত কারণে তাঁকে সেখানে স্বামীজির মূর্তিতে মালা পরানোর সুযোগ দিতে পারেনি পুলিশ। প্রবল ভিড় হঠাতে মৃদু লাঠিচার্জও করে পুলিশ। সব মিলিয়ে এদিন অমিত শাহ-র রোড শো বর্ণাঢ্য হল বটে। তবে অশান্তির চোনাও থেকে গেল তাতে।