Let’s Go

মায়ের মোহিনী চোখের দিকে তাকালেই প্রবল আকর্ষণ বোধ হয়, প্রবল জাগ্রত এক মন্দির

মায়ের এই অপার্থিব রূপ ও আকর্ষণ সৌন্দর্য দেখার পর থেকে আজও তা মুছে যায়নি অন্তর থেকে। এ দর্শন দুর্লভ কালিকা বিগ্রহ দর্শনের অন্যতম।

অমরাগড় থেকে গুসকরা-মানকর সড়কপথে পড়ে মা আনন্দময়ীতলা। এক সময় শক্তি পুজোর প্রাধান্য ছিল মানকরে। পঞ্চ কালী, বড় কালী ও শিবাখ্যার মতো মানকরে আনন্দময়ী তলায় প্রসিদ্ধ মা আনন্দময়ী।

প্রাচীরে ঘেরা মন্দির অঙ্গন। মূল দেবীমন্দিরের সামনেই নাটমন্দির। মন্দির ও নাটমন্দিরের সারা গায়ে প্রাচীনত্বের ছাপ। কালীঘাট মন্দিরের উপরের অংশের আদলে নির্মিত দেবীমন্দির। মন্দিরের দু’পাশে লাগোয়া শিব মন্দির। গর্ভমন্দিরে স্থাপিত বিগ্রহ দুটি শ্বেতপাথরের শিবলিঙ্গ। মন্দিরের ডানদিকে ভোগ রান্নাঘর, তারপরে মায়ের পুকুর। নাটমন্দিরে বলির ব্যবস্থা আছে। তবে যাত্রীদের মানসিক করা বলি দেওয়া হয় মন্দির অঙ্গনের বাইরে।


মন্দিরের প্রবেশদ্বার ছোট। পরে সামান্য একটু জায়গা, তারপর গর্ভমন্দির। গর্ভমন্দিরের উপরে পাথরের ফলকে লেখা আছে – ‘আনন্দময়ীতলা শকাব্দ : ১৭৩৭। সন ১২২২ সাল ২রা ফাল্গুন মঙ্গলবারে মাঘী পূর্ণিমাতে পত্নী দুর্গাদেবী সহিত রাজবল্লভ গুপ্ত কর্তৃক আনন্দময়ী নামে আদ্যাকালী প্রকাশিতা হইয়াছেন ইতি।’

এবার গর্ভমন্দিরে স্থাপিত মাতৃ বিগ্রহের কথা। সারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কয়েক বছর ধরে অসংখ্য কালী বিগ্রহ দর্শন করেছি, তবে মানকরে আনন্দময়ীতলায় এমন মধুর হৃদয় মন মুচড়ে দেওয়া নয়নাভিরাম বিগ্রহ কোথাও দেখিনি। অভিনব বিগ্রহ। আকার ও উচ্চতায় তেমন বড় নয়। মহাদেব শুয়ে আছেন টান টান হয়ে। তাঁর পেটের উপর শ্বেতপাথরের পদ্ম। পদ্মের উপরে দেবী কালিকা তথা মা আনন্দময়ী বিবসনা হয়ে বসে আছেন পদ্মাসনে। উন্নত স্তনযুগল। দেবী যোগযুক্ত হয়ে বসে আছেন যোগাসনে। ছোট্ট বিগ্রহে চোখ দুটি টানা টানা, ফালা ফালা। একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকা যায় না, এমন আকর্ষণীয় মোহিনী চোখ। দেবী ত্রিনয়নী। বস্ত্রহীন উন্মুক্ত সারা দেহে কোনও অলঙ্কার নেই, মাথায় মুকুটও নেই। কষ্টিপাথরের বিগ্রহ। মায়ের এই অনাবৃত দেহের এই অপার্থিব রূপ ও আকর্ষণ সৌন্দর্য দেখার পর থেকে আজও তা মুছে যায়নি অন্তর থেকে। এ দর্শন আমার দুর্লভ কালিকা বিগ্রহ দর্শনের অন্যতম।


Anandamoyee Temple Mankar

আনন্দময়ীর শক্তিমূর্তি মানকরের বৈদ্য কবিরাজদের কুলদেবী। বৈদ্যদের প্রতিষ্ঠিত বলে দেবীমন্দিরে কোনও দিনই অন্নভোগ দেওয়া হয় না, কোনও বিশেষ তিথি উৎসবেও নয়। লুচি ভোগ দেওয়া হয় প্রতিদিন। দেবীমন্দিরে সাড়ম্বরে পালিত উৎসবগুলির মধ্যে আছে মাঘী পূর্ণিমা (প্রতিষ্ঠা দিবস), দীপান্বিতা কালী পুজো, রটন্তী ও ফলহারিণী, দুর্গা নবমী ও জগদ্ধাত্রী পুজো। প্রতিদিন মন্দির খোলা হয় বেলা ১০টায়, বন্ধ হয় সাড়ে ১১টায়। বিকালে খোলা থাকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে। দেবীর শয়ন দিয়ে মন্দির বন্ধ হয় রাত ৯টায়। বর্ধমান-দুর্গাপুর রেলপথে মানকর স্টেশনে নেমে রিকশায় মা আনন্দময়ী কালীবাড়ি যেতে সময় লাগে মিনিট পনেরো।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button