১৯২৪ সালে গোয়ালিয়রে জন্ম হয় অটলবিহারী বাজপেয়ীর। পড়াশোনায় চিরকালই ভাল অটলবিহারী স্নাতক হন হিন্দি, ইংরাজি ও সংস্কৃত ভাষায়। এরপর রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যুক্ত হয়ে জেলবন্দি হন অটলবিহারী। সেই তাঁর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে পদার্পণ। তার আগেই অবশ্য আরএসএস-এর সদস্য হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সচিব হিসাবে কাজ করার সময়ে রাজনীতিতে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন অটলবিহারী। ১৯৫৭ সালে প্রথমবার সাংসদ হন বলরামপুর কেন্দ্র থেকে। তখন থেকেই বিরোধী নেতা হিসাবে নামডাক শুরু হয় তাঁর।
১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাই সরকারে বিদেশমন্ত্রী হিসাবে তাঁর সাফল্য শুধু দেশ নয়, বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালে বিজেপি প্রতিষ্ঠা হয় তাঁর ও লালকৃষ্ণ আডবাণীর হাত ধরে। বিজেপির প্রথম প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন বাজপেয়ী। কিন্তু মাত্র ১৩ দিনেই সেই সরকারের পতন হয়। দেশের দশম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সিংহাসনে বসার ১৩ দিনের মধ্যেই গদিচ্যুত হতে হয় তাঁকে। এরপর ১৯৯৮ সালে ১৩ মাসের জন্য দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন অটলবিহারী বাজপেয়ী। পরে লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত একটানা ৫ বছর দেশ শাসন করেছেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। সেবার তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন বাজপেয়ী।
তাঁর বাগ্মিতা এখনও ভারতীয় রাজনীতিতে এক উদাহরণ হয়ে আছে। হিন্দি ভাষার ওপর তাঁর দখল, শব্দ চয়ন ও বক্তৃতায় তার ব্যবহার অটলবিহারী বাজপেয়ীকে মানুষের অনেক কাছে পৌঁছে দেয়। বহু রাজনীতিবিদও স্বীকার করে নেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর বক্তৃতা ছিল মুগ্ধ করে দেওয়ার মতন। সঙ্গে ছিল তাঁর কবি মন। অনেক সময়েই তাঁকে বক্তৃতার মাঝে কবিতা বলতে দেখা গেছে। কবিতার মধ্যে দিয়েই রাগ, ক্ষোভ, বার্তা, ভালবাসা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
শুধু নিজের দলের নেতাদের নয়, তিনি বিরোধী নেতাদের ভাল কাজকে বাহবা দিতে এতটুকু পিছপা হতেন না। ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পর বিরোধী আসনে থাকা অটলবিহারী মুক্তকণ্ঠে ইন্দিরার জয়গান করেন। তাঁর রাজত্বকালেই পোখরানে দ্বিতীয়বার সফল পরমাণু পরীক্ষা করে ভারত। পাকিস্তানের ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে তাঁর রাজত্বকালেই কার্গিলে জয় পায় ভারতীয় সেনা। পালিত হয় কার্গিল বিজয় দিবস। আবার লাহোর সামিটের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার উদ্যোগও অটলবিহারী বাজপেয়ীই নিয়েছিলেন। যা অনেকাংশে সফলও হয়।
২০১৪ সালে তাঁর জন্মদিনে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়। আজীবন অবিবাহিতই থেকেছেন এই মহান ব্যক্তিত্ব। ভালবাসতেন প্রকৃতিকে। হিমালয় তাঁকে বরাবর টানত। এক সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ভারতীয় রাজনীতির ‘পিতামহ ভীষ্ম’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ২০০৯ সালে গুরুতর অসুস্থতার পর থেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান এই পর্বত সমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘকাল। অবশেষে বৃহস্পতিবার লড়াই থামল। চলে গেলেন এক কবি। দেশের এক মহান দেশনায়ক।