রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থলে যখন সেনা আধিকারিকরা কফিনের ওপর থেকে গোলাপের পাপড়ি সরিয়ে দিচ্ছিলেন তখন দিল্লিতে বিকেল নামছে। কিছুটা দূরেই ভিভিআইপিদের বসার জায়গা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব দলের প্রতিনিধিরা হাজির। ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ সহ অনেক কংগ্রেস নেতা। তৃণমূলের তরফে হাজির হয়েছিলেন ২ সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী ও সুখেন্দুশেখর রায়। ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব সহ বহু নেতা-মন্ত্রী। হাজির ছিলেন বিদেশ থেকে আসা সম্মানীয় অতিথিরাও।
এরপর একে একে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে আসেন দেশের ৩ সেনা প্রধান। স্থল, নৌ ও বায়ুসেনার প্রধানরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু। হাজির হন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রাষ্ট্রপতি ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর পর নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। শেষ শ্রদ্ধা জানান অটলবিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক জীবনের ৬৫ বছরের বন্ধু লালকৃষ্ণ আডবাণী। শেষ শ্রদ্ধা জানান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
এদিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন বিদেশ থেকে আসা অতিথিরাও। তাঁরাও এখানে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ছিলেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, ভুটানের রাজা, পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী, নেপাল ও বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী, সার্ক গোষ্ঠীর তরফ থেকে ১ প্রতিনিধি।
বিকেল সাড়ে ৪টেয় শেষ হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। শুরু হয় অন্ত্যেষ্টির তোড়জোড়। বিকেল সাড়ে ৪টেয় ফুল সরিয়ে ফেলা হয়। স্থল, নৌ ও বায়ুসেনার ২ জন করে আধিকারিক দুপাশে সারি দিয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরাই কফিনের ওপর থেকে তুলে নেন জাতীয় পতাকা। তারপর তা প্রথাগতভাবে ভাঁজ করে তুলে দেওয়া হয় অটলবিহারী বাজপেয়ীর নাতনি নীহারিকার হাতে।
বিকেলের আলোয় কফিন থেকে বার করে আনা হয় অটলবিহারী বাজপেয়ীর দেহ। শোয়ানো হয় অন্ত্যেষ্টি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে এগোয় প্রক্রিয়া। এসময়ে পরিবারের লোকজন পরিবৃত হয়ে ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। অতিথি আসনে তখন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ সকলেই হাজির।
বাজপেয়ীর পালিত কন্যা নমিতা কল ভট্টাচার্য, জামাই রঞ্জন ভট্টাচার্য, নাতনি নীহারিকা ছাড়াও পরিবারের অন্য সদস্যরা সকলে প্রথা মেনে প্রদক্ষিণ করেন দেহ। ৪টে ৪০ মিনিটে দেহ তুলে এনে রাখা হয় আগে থেকেই সাজানো চিতার ওপর। শুরু হয় দেহের ওপর একের পর এক কাঠ সাজানো। কাঠ দিয়ে ঢেকে ফেলা হয় দেহ। মুখাগ্নির সব শাস্ত্রীয় নিয়ম পালন করে ৪টে ৫৫ মিনিটে চিতায় অগ্নি সংযোগ করেন মেয়ে নমিতা। সেই সঙ্গেই শুরু হয় সেনা বাহিনীর তরফ থেকে গান স্যালুট। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ক্রমশ জ্বলতে শুরু করে চিতা। আগুনে শিখা লেলিহান হতে থাকে। ধোঁয়া ছুঁতে থাকে নীল আকাশ। পঞ্চভূতে বিলীন হতে থাকে দেশের এক অমূল্য রত্নের পার্থিব শরীর।