Let’s Go

অজ গাঁয়ের উদ্দাম কিশোরীর মত রূপ, ঘরের কাছেই রূপবতী সেই অরণ্য

ঘন ঘোর সবুজে ভরা খাড়া পাহাড়ের গা। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরা আরণ্যক পরিবেশ। উপর থেকে নেমে এসেছে ঝরনাধারা। যেন অজ গাঁয়ের কোনও উদ্দাম কিশোরী।

উত্তর পশ্চিম ওড়িশার শহর সম্বলপুর থেকে ৪৮ কিলোমিটারের মাথায় বাদরামা অভয়ারণ্য। কলকাতা – মুম্বই জাতীয় সড়ক (৬ নম্বর) চলে গিয়েছে এরই বুক চিরে। পথের দু-ধারে কখনও গভীর ঘনজঙ্গল, কখনও কিছু জনবসতি দোকান-পাট, আবার কোথাও বিস্তীর্ণ অনাবাদী জমি। যাওয়ার পথে নয়, ফেরার পথেই দেখতে হবে অভয়ারণ্য। এই অরণ্যকে ফেলে রেখে আরও ৪৮ কিলোমিটার ছুটে মোটর পৌঁছাবে দেওগড়।

ছোট্ট জনপদ দেওগড় বাজারের পরেই শুরু গাছের ছায়া ঘেরা জঙ্গল। পথ চলে গিয়েছে একেবারে প্রধানপট পাহাড়ের ঢালে। ঘন ঘোর সবুজে ভরা খাড়া পাহাড়ের গা। এর শিরদাঁড়া বেয়ে ওঠার উপায় নেই। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ভরা আরণ্যক পরিবেশ। কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে নেমে এসেছে ঝরনাধারা। যেন অজ গাঁয়ের কোনও উদ্দাম কিশোরী। অবিরাম ঝমঝম শব্দে মুখরিত প্রধানপটের বনাঞ্চল। ঝরনাধারা মিহি জলকণা উড়ে এসে আলাদা এক শিহরণ তোলে পর্যটক মনে। সময় কেটে যায় নিমেষে। প্রধানপটের প্রধান আকর্ষণই জলপ্রপাত। প্রচার নেই তাই পর্যটক সংখ্যা নজরে আসার মত নয়।। সম্বলপুর থেকে মোটরে সময় লাগে দু-ঘণ্টা। দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেওয়া যায় দেওগড়ের সমরেশ হোটেলে। সুন্দর রান্না। নিরামিষ খানাদানা। একবেলা কাটিয়ে ফেলে আসা পথ ধরে আসুন বাদরামা অভয়ারণ্য। জাতীয় সড়কের পাশেই বনবিভাগের অফিস। অরণ্যে প্রবেশ অনুমতি দেওয়া হয় অফিস থেকে। প্রবেশ কর ৩০ টাকা। অনুমতি নিতে সময় খরচা হয় না পাঁচ মিনিটও।


গাইডের কথায়, সন্ধ্যার আগে বনে গিয়ে লাভ নেই। রাতেই দেখার। সাদরে বিশ্রাম গৃহ খুলে দেবে বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ দুপুরের বিশ্রামের জন্য। এই অফিসের প্রতিটি মানুষের ব্যবহার অমায়িক, সাহায্যকারী মানসিকতা। বনবিভাগের গাইড রমেশ চন্দ্র মেহেরা বিকেল পাঁচটায় নিয়ে যাবেন গভীর অরণ্যে, দেখাবেন বন্যপ্রাণি। রাতের অন্ধকারে বন অভিসারের জন্য সঙ্গে থাকে তাঁর সার্চ লাইট।

বিকেল পাঁচটায় শুরু হয় বাদরামা অভয়ারণ্য পরিক্রমা। মোটর ক্রমশ এগিয়ে চলে। গভীর ঘন জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে মেঠো পথ। কখনও ঢেউ খেলানো, কখনও সমতল। অতীতের ঊষাকোটি নাম বদলে ১৯৬২ থেকে হয়েছে বাদরামা অভয়ারণ্য। কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কের দু-পাশ মিলিয়ে অভয়ারণ্য এখন ৩৭০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। শাল সেগুন পর্ণমোচী আর নানান বৃক্ষের গহন বনকে পিছনে ফেলে মোটর এসে দাঁড়াবে ৯ কিলোমিটার মাথায় ২ নম্বর ওয়াচ টাওয়ারে। নানা পাখির ডাকে মুখরিত জঙ্গল। দিনের আলোয় বসে থাকা। এখানে তেমন বন্য প্রাণি আসে না। একটা ঘণ্টা কেটে যাবে এখানে।


গাইডের কথায় শুরু হয় চলা। মোটর চলে এল ১ নম্বর ওয়াচ টাওয়ারে। ২ নম্বর থেকে দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। পথে যেতে যেতে গাইড জানিয়ে দেন বাদরামা অভয়ারণ্যে বাঘ হাতি ব্ল্যাক প্যান্থার সম্বর বাইসন বনমহিষ বনশুয়োর নানা প্রজাতির হরিণ বুনো খরগোশ বিষাক্ত সাপ অজগর ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ময়ূর আর অগুনতি নানান জাতের পাখি। ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসা জঙ্গলে মোটর এসে থামবে ১ নম্বর ওয়াচ টাওয়ারে। সবাইকে উঠতে হয় উপরে। গাইড গাড়ির ব্যাটারির সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে রাখেন সার্চ লাইটের। ১ নম্বর ওয়াচ টাওয়ার থেকে পশুদের জলপানের জলাশয়ের দূরত্ব সামান্য। রাত বাড়বে ক্রমশ। জঙ্গলের মিশমিশে অন্ধকার ভেঙে আসতে থাকবে পশুদের দল। তাদের পায়ের চাপে শুকনো পাতার মড়মড়ে শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে পর্যটন মন।

মাঝে মাঝেই সার্চ লাইটের আলোয় দেখা যাবে জলপানরত হরিণ, বাইসন ব্ল্যাক প্যান্থার সম্বর বুনো মহিষ আর বুনোশুয়োরের দল। ধৈর্য ধরে বসে থাকতে হয়। এক সঙ্গেই এদের দেখা মেলে না। হাতি আর বাঘ আসে কদাচিৎ। গাইডের কথায়, আরও গভীরে ৩ নম্বর ওয়াচ টাওয়ারে গভীর রাতে দেখা পাওয়া যাবে বাঘ হাতির। গভীর জঙ্গলে রাতের অন্ধকারে বন্যপ্রাণি দেখার আনন্দ ও অভিজ্ঞতা এক আলাদা স্বাদের, অন্য জগতের রোমাঞ্চকর অনুভূতি। গা ছমছমে অন্ধকারের ঘন জঙ্গলে দেখতে দেখতে বেজে যাবে রাত ৯টা। অভয়ারণ্যের বনবিভাগে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে তবে পর্যটকেরা প্রায় সকলেই ফিরে আসেন সম্বলপুরে। অভয়ারণ্য থেকে পথ যে মাত্র এক ঘণ্টার।

কোথায় থাকবেন, কি ভাবে যাবেন?

সম্বলপুরে হোটেল লজের ছড়াছড়ি। ওড়িশা পর্যটন দপ্তরের পান্থনিবাস আছে সম্বলপুরে পাহাড়ি টিলার উপরে। অগ্রিম সংরক্ষণের ঠিকানা – C/o, Manager, Panthanivas, Brooks Hill, Orissa Tourism Development Corporation Ltd., P.O. – Sambalpur, Dist – Sambalpur, Pin – 768001. OTDC-এর আয়োজনেও রয়েছে বাদরামা প্যাকেজ।

সম্বলপুর থেকে বাস যায় বাদরামা হয়ে। অভয়ারণ্য ঘুরতে হলে জিপ কিংবা মোটরের ব্যবস্থা সম্বলপুরে করাই ভালো। এতে প্রধানপটের জলপ্রপাতও হয়ে যাবে।

অভয়ারণ্য ঘুরে রাতে কেউ বনবিভাগের বিশ্রাম গৃহে থাকতে চাইলে যোগাযোগের ঠিকানা, Divisional Forest Officer (Wild Life), Motijharan, P.O. – Sambalpur.

(ছবি – শিবশংকর ভারতী)

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button