Astro Tips

মাঙ্গলিক বিষয়ে ভীতি দূর করুন, জ্যোতিষ মতে এর সঠিক ব্যাখ্যা – শিবশংকর ভারতী

পাঠক-পাঠিকাদের বুঝতে অসুবিধা হতে পারে, তাই গভীর আলোচনায় না গিয়ে সহজভাবে বিষয়টা পরিবেশন করা হল।

একবার এক ভদ্রলোক এলেন, সঙ্গে একটি মেয়ে। মাঝারি গড়ন। দারুণ সুন্দর মুখখানাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে চোখ দুটো। গায়ের রং ফরসা বলা যাবে না, তবে কালো বলতে আমার রুচিতে বাধে। টিকালো নাক। উচ্চতায় আন্দাজ সাড়ে পাঁচ ফুটের সামান্য বেশিই হবে। এসব সত্ত্বেও এক নজরে দেখলাম, সারা মুখখানা উদ্বেগমাখা।

এবার ভদ্রলোকের কথা। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। দোহারা চেহারা। পুরুষেরা সুদর্শন খুব কমই হয়, তবে একে নিঃসন্দেহে দেখতে সুন্দর বলা যায়। আমার সামনে বসামাত্রই একরাশ উদ্বেগ বেরিয়ে এল –


দেখুন, আমার মেয়ের বয়স এখন চব্বিশ। এক জায়গায় বিয়ের যোগাযোগ হওয়ার পর কথাবার্তা অনেকটা এগোল। আমাদেরও পাত্র পছন্দ। প্রথম দিনেই মেয়েকে ওরা পছন্দ করেছিল। পাত্রের সঙ্গে মেয়ের যোটক মিল হলে তবেই বিয়ের ব্যাপারে পাকা কথা হবে বলে মেয়ের জন্ম-সাল, তারিখ, সময় নিল। বলল, ওদের জ্যোতিষী মত দিলে ফোনে জানাবে হ্যাঁ অথবা না। দিন ছয়েকের মাথায় পাত্রপক্ষ ফোন করে জানাল, এ বিয়ে হবে না। জ্যোতিষী জানিয়েছে, আমার মেয়ে মাঙ্গলিক।

মাঙ্গলিক শব্দের অর্থটা কী তা আমি জানি না। বিষয়টা জানার জন্য আমি বহুবার পাত্রপক্ষকে ফোন করেছি, ওরা আমার ফোন আর একবারের জন্যেও ধরল না। আমার এক প্রতিবেশীর কাছে আপনার কথা শুনে এলাম। আপনি কি একটু বলবেন, আমার মেয়ের অপরাধটা কোথায় আর মাঙ্গলিক শব্দের অর্থটা কী?


এসব কথা শোনার পর মেয়েটির জন্মকুণ্ডলী দেখলাম। জ্যোতিষী বিষয়ক আমার যা বক্তব্য তা জানানোর পর উভয়েরই উদ্বেগ দূর হল। খুশিতে ডগমগ মন নিয়ে ফিরে গেলেন তাঁরা।

দীর্ঘ ৪২ বছরের পেশাগত জীবনে এক শ্রেণীর ‘অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত’ (কথাটা প্রয়াত এক রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রীর কাছ থেকে ধার করে নিলাম। ঋণ অপরিশোধ্য) জ্যোতিষীর খপ্পরে পড়ে এরকম শুধু একটা নয়, কারও যোগাযোগের শুরুতে, কারও বা শেষে শত শত বিয়ে ভেঙে যেতে দেখেছি। এবার মাঙ্গলিক দোষ বিষয়টা বলি খোলসা করে।

‘মাঙ্গলিক’ (দোষবিশেষ) শব্দটা শোনা যায় অবাংলাভাষীদের মুখে। হালে বেশ কয়েক বছর ধরে এই কথাটা মধুমাখা হয়ে ঝরছে একশ্রেণির বাংলা বলা জ্যোতিষীর মুখ থেকেও। জ্যোতিষশাস্ত্রে ভৌমদোষ (ভৌম শব্দে ভূমিপুত্র মঙ্গল গ্রহকে বোঝায়) কথাটার উল্লেখ আছে।

ভৌম অর্থাৎ মঙ্গল থেকে অবাংলাভাষী জ্যোতিষীদের কথায় মাঙ্গলিক। বাংলা ভাষায় মাঙ্গলিক শব্দটা শুভসূচক-মঙ্গলজনক কর্মসূচক অর্থে ব্যবহার করা হয়।

Guru Purnima

মোটের ওপর মাঙ্গলিক দোষ তথা ভৌমদোষকে ঝরঝরে বাংলায় বৈধব্যদোষ বলা হয়। ওই শব্দ যে নারীকুলের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়, এ কথাটা শতকরা ৯৯ ভাগ জ্যোতিষীর জানা আছে বলে মনে হয় না। কারণ ভৌমদোষ পাত্রের ক্ষেত্রে বিপত্নীক, পাত্রীর ক্ষেত্রে বিবাহোত্তর জীবনে স্বামীর অকালপ্রয়াণের নির্দেশ করে।

জন্মকুণ্ডলীতে কীভাবে এই যোগটা হচ্ছে? পাঠক-পাঠিকাদের বুঝতে অসুবিধা হতে পারে, তাই গভীর আলোচনায় না গিয়ে সহজভাবে বিষয়টা লিখছি। যে কোনও পাত্র বা পাত্রীর জন্মকুণ্ডলীতে লগ্ন, দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, দশম এবং দ্বাদশে মঙ্গল অবস্থান করলে আপাতদৃষ্টিতে পাত্রের স্ত্রীহানি, পাত্রীর স্বামীহানি অর্থাৎ ভৌমদোষ হয়।

যে কোনও পাত্র বা পাত্রীর জন্মকুণ্ডলী খুললে দেখা যাবে, শতকরা প্রায় ৯৮ জন পাত্র বা পাত্রীর মঙ্গল উক্ত স্থানগুলির কোথাও না কোথাও অবস্থান করছে। আবার বৃহস্পতি কিংবা শুক্রের শুভ যোগাযোগ বা অবস্থান কারণে শতকরা ৯৮ জনের উক্ত দোষ খণ্ডিত হয়ে আছে। গড়ে ধরা যায় শতকরা দুজনের উক্ত যোগ কঠোরভাবে বলবত।

এখন প্রশ্ন হল, এটা কীভাবে খণ্ডন হচ্ছে বা হয়? জন্মকুণ্ডলীতে শুক্র কিংবা বৃহস্পতি যদি লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম, দশম-এর কোনও স্থানে অবস্থান করে, তাহলে ভৌমদোষ খণ্ডন হয়ে যায়। উক্ত শুভ গ্রহ দুটি ওইভাবে অবস্থান না করে যদি মঙ্গলের সঙ্গে এক রাশিতে অবস্থান করে তাহলেও ভৌমদোষ খণ্ডিত হয়।

এবার দেখা গেল, পাত্রের জন্মকুণ্ডলীতে ভৌমদোষ অর্থাৎ বিপত্নীক যোগ আছে, পাত্রীর নেই। অথবা পাত্রীর আছে, পাত্রের নেই। এক্ষেত্রে পাত্রপাত্রী উভয়ের দীর্ঘায়ুযোগ থাকলে কারও অকালপ্রয়াণ হবে না। উভয়েই দীর্ঘজীবন লাভ করবে, তবে সারাটা জীবন মতবিরোধজনিত অশান্তিতে ভুগবে। মন ও মতের মিল হবে না, আবার ছাড়াছাড়িও হবে না। মাঝেমধ্যে পুলিশের খাতায় ডায়েরিও লেখা হবে। কিন্তু দু’চার দিন পর আবার পিরিত। পুরী কিংবা দিঘা ভ্রমণ। আবার স্বামী-স্ত্রীতে মারদাঙ্গা, র‍্যাফ। এইভাবেই চলবে। মরবে বুড়োবুড়ি হয়ে। কেউ দু-দশ দিন আগে, কেউ পরে। মোটের ওপর পারিবারিক শান্তিটা হবে না।

ক্ষেত্রবিশেষে সম্পর্ক থাকবে তবে কোনও না কোনও কারণে একে অপরের থেকে দূরে অথবা আলাদা থাকবে। কোনও পাত্রের জন্মকুণ্ডলীতে ভৌমদোষ আছে, একই দোষ আছে পাত্রীর জন্মকুণ্ডলীতে। এ যোগে বিবাহ হলে উভয়েই দীর্ঘ জীবন লাভ করে। সুখদুঃখটা নির্ভর করবে তাদের জন্মকুণ্ডলীতে অন্যান্য গ্রহের শুভাশুভ অবস্থানের ওপর।

ভৌমদোষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে মঙ্গলের যে অবস্থানের কথা লেখা হল, এ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন গ্রহের অশুভ অবস্থান কারণে স্বামী বা স্ত্রীর অকালমৃত্যু হতে পারে, তা অত্যন্ত বিশদ আলোচনাসাপেক্ষ।

ভৌমদোষের কারণে স্বামী ও স্ত্রীর অকালপ্রয়াণ অথবা বিবাহবিচ্ছেদ হবেই, নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যায় না। দাম্পত্য জীবন কিছুতেই সুখকর হবে না, এটা বলা যায় সুনিশ্চিতভাবে। প্রকৃতই কারও বিবাহিত জীবন অসুখকর হবে, এযোগে জন্ম হলে সুখকর হওয়ার কোনও প্রতিকার জ্যোতিষ ও তন্ত্রশাস্ত্রে নেই।

Show Full Article

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button