Astro Tips

কী করলে শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত হবেন

প্রতিকারগুলির মধ্যে থেকে যে কোনও একটি পালন করলে শনিদেবের অশুভ প্রভাব ও প্রকোপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় অনেকটা। তাঁর কৃপা প্রাপ্তিও হয়ে থাকে।

এখন নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলির মধ্যে থেকে যে কোনও একটি পালন করলে শনিদেবের অশুভ প্রভাব ও প্রকোপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় অনেকটা। তাঁর কৃপা প্রাপ্তিও হয়ে থাকে। ভক্তি সহকারে শনিদেবের উপাসনা ও প্রতিদিন শনি চালিশা পাঠ করলে তিনি সমস্ত রকমের দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করে সুখ শান্তি ও মনমতো ফল প্রদান করে থাকেন। প্রতি শনিবার শনিদেবের সঙ্গে হনুমানজির পুজো করা উচিত। শনি চালিশা পাঠ করার পর হনুমানজির আরতি করা কর্তব্য।

প্রতি শনিবার পিপুল গাছে (অশ্বত্থ গাছ) জল ঢেলে ও শনিদেবের উপাসনা করলে শনিদেব তার প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে সার্বিক সুখ ও আনন্দ প্রদান করে থাকে।


Astro Tips
শনিদেব, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় সূর্যদেবকে দর্শনের পর দুচোখ বন্ধ করে এই স্তবটি পাঠ করলে অত্যন্ত প্রসন্ন হন ভগবান ছায়ানন্দন –

সূর্যপুত্র দীর্ঘদেহী বিশালাক্ষঃ শিবপ্রিয়ঃ।
মন্দচারঃ প্রসন্নাত্মা পীড়া দহতু মে শনিঃ।।


আটা না চেলে সেই আটা দিয়ে দুটো রুটি করে একটু সরষের তেল লাগাতে হবে রুটিতে। সেই রুটির একটা গোরু আর একটা কুকুরকে খাওয়াতে হবে। এই নিয়মটা পালন করতে হবে প্রতিদিন। অত্যন্ত অশুভ শনির কুফল থেকে অতি দ্রুত মুক্ত হওয়া যায় এই প্রক্রিয়ায়।

যে কোনও দিন ঘোড়ার ক্ষুরের আংটি কেনা যাবে। শনিবার স্নানের পর প্রথমে কাঁচা দুধ, পরে গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে, শনিদেবকে উদ্দেশ করে প্রণাম জানিয়ে ধারণ করতে হবে ডানহাতের মধ্যমায়। এতেও শনিদেবের অশুভত্ব দোষ ও প্রভাব দূর হয়।

প্রতি শনিবার অশ্বত্থ (পিপুল) কিংবা বটগাছের নীচে সরষের তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে গাছের চারদিকে সাতবার কাঁচা সুপারি প্যাঁচাতে হবে। পড়ে গাছকে প্রণাম করলে শনিদেবের রোষ দৃষ্টির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রতি শনিবার ভিজানো অথবা ভাজা দেশি চানা বাঁদরকে খাওয়ালে শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়। বাঁদরকে হনুমানজির রূপ হিসাবে ধরা হয়। এই প্রয়োগ করা হয় সেইজন্য।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে (মেঝেতে পা রাখার আগে) ভগবান শনিদেবের নাম দশটি-শনি, ছায়ানন্দন, পিঙ্গল, বভ্রু, রৌদ্র, সৌরী, মন্দ, কৃষ্ণা (কৃষ্ণবর্ণের কারণে হয়তো) দুঃখভঞ্জন, কৌনস্থ্য। দশটি নামের প্রত্যেকটি নাম পাঁচবার করে মনে মনে স্মরণ অথবা মুখে উচ্চারণ করলে শনিদেব প্রসন্ন হন। তাঁর অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

শনিদেবের মূর্তিতে প্রতি শনিবার সামান্য সরষের তেল লাগিয়ে প্রণাম করলে তাঁর অশুভ প্রভাব ও দোষ দূর হয়।

Astro Tips
শনিদেব, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

প্রতিদিন সকালে অথবা দুপুরে নিজের খাবার থেকে খাওয়ার আগে সামান্য খাবার সরিয়ে রাখতে হবে। পরে সেই সরানো খাবারটা কাককে খাওয়ালে শনিদেবের উৎকট প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর কৃপালাভ হয়।

প্রতি শনিবার সূর্যাস্তের পর একবেলা কালো কলাই জল ও আতপ চাল দিয়ে খিচুড়ি করে খেতে হবে। সঙ্গে সবজি খাওয়া যাবে। রান্নাটা হবে ঘি দিয়ে। তেল চলবে না। আর একবেলা রুটি, লুচি, পরোটা খাওয়া যাবে। যা কিছু রান্না তা ঘিয়ের হতে হবে। এই নিয়মে শনিবার পালন করলে শনি প্রভাবিত সমস্ত অশুভত্ব দোষ অতি দ্রুত বিনষ্ট হয়। সার্বিক সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য আস্তে থাকে ধীরে ধীরে।

কালো রঙের পোশাক পরিচ্ছদ, নীল বা কালো রঙের বিছানার চাদর ও জানালা দরজার পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো। এই রং দুটির উপর শনিদেবের দৃষ্টি পড়ে প্রকটভাবে। ওই রঙের পোশাক ব্যবহারকারীদের সারাদিন কাটতে থাকে একটা না একটা অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে। এরা অত্যন্ত অস্থির ও চঞ্চলমতি হয়।

গাই গরুকে কালো তিল আর গুড় প্রতি শনিবার খাওয়ালে শনিদেব ও মা ভগবতী উভয়েই সীমাহীন প্রসন্ন হন। শারীরিক মানসিক সাংসারিক ও অন্যান্য সার্বিক অশেষ কল্যাণ হয়, দুর্ভোগ কাটে।

এখন অশুভ শনিদেবের আর একটি প্রতিকারের কথা। আমার শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী। তাঁর মুখেই শোনা এই অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনার কথা। বহু বছর আগের কথা। তখন মাস্টারমশাই জ্ঞানদাপ্রসাদ হুগলি জেলার অন্তর্গত চাঁপাডাঙা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তিনি প্রায়ই যেতেন তারকেশ্বরে। তখন তারকেশ্বর মন্দিরের মহন্ত মহারাজ ছিলেন আচার্য শঙ্করের দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী হৃষীকেশ আশ্রম। তিনি যে অত্যন্ত উচ্চ মার্গের যোগী ছিলেন, একথা খুব সামান্য সংখ্যক মানুষেরই জানা ছিল। মাস্টারমশাই-এর যাওয়া আসার সুবাদে তাঁর সঙ্গে সখ্য ও ঘনিষ্ঠতা হয়। মাস্টারমশাই ওখানে গেলে ধর্মীয় বিষয়ে নানান ধরনের আলোচনা হত মহন্ত মহারাজের সঙ্গে।

একদিন কথা প্রসঙ্গে মহন্তজি জানিয়েছিলেন, সৌভাগ্যবশত ভগবান শনিদেব রক্তমাংসের স্থূলদেহে তাঁর ঘরে এসে দর্শন দেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দান করেন। পুরাণে বর্ণিত শীর্ণকায় ও ঘনঘোর কৃষ্ণবর্ণের দেহেই উপস্থিত হয়েছিলেন মহন্ত মহারাজের কাছে। সেই সময় লোককল্যাণে ভগবান শনিদেবের তুষ্টি বিধানের জন্য প্রতিকারটি বলেছিলেন মহন্তজিকে। তিনি বলেছিলেন মাস্টারমশাইকে। আমি শুনেছিলাম তাঁর মুখ থেকে।

প্রতিষ্ঠিত শনি মন্দিরে শনিবার মাটির প্রদীপে সরষের তেল দিয়ে তুলোর সলতে জ্বালিয়ে আরতি করার পর সেই প্রদীপের তেল প্রতিদিন একটু গায়ে ও মুখে মাখলে শনিদেব প্রীত ও প্রসন্ন হন। শনিদেবের অশুভ ফল অচিরেই বিনষ্ট হয়। সংসারের সার্বিক কল্যাণ সাধন করেন। তাঁর একান্ত প্রিয় যে কোনও সুগন্ধি শ্বেতপুষ্পের মালা। টগরফুলের মালা পছন্দ করেন না। তাঁর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় আছে একমাত্র সাদা বাতাসা। জবা ও অপরাজিতা সহ অন্য যে কোনও রঙিন ফুল শনিদেবের অপছন্দের তালিকাভুক্ত।

প্রসঙ্গক্রমে বলি, তারকেশ্বরে মহন্ত মহারাজ পদে থাকাকালীন একবার রক্ত মাংসের স্থূলদেহে বিভীষণ দর্শন দিয়েছিলেন বলে কথাপ্রসঙ্গে হৃষীকেশ আশ্রম জানিয়েছিলেন ভাগ্যবান জ্ঞানদাপ্রসাদকে। এ যুগে এসব কথা কারও বিশ্বাসই হবে না, তবে এসব কথায় আমার বিশ্বাস আঠারো আনা।

ভগবান শনিদেবের সঙ্গে এক নিবিড় ও প্রীতির সম্পর্ক রয়েছে সঙ্কটমোচন হনুমানজির। রামায়ণী যুগ। রামায়ণের কথা। ভগবান শঙ্কর ও ব্রহ্মার বলে বলীয়ান তখন লঙ্কেশ্বর রাবণ। তিনি তখন ভয়ঙ্কর। পদাবনত করে রেখেছেন সমস্ত দেবকুলকে।

লঙ্কেশ্বরের অগাধ জ্ঞান ছিল জ্যোতিষশাস্ত্রে। পুত্র মেঘনাদের অকালমৃত্যুর কথা তিনি জানতে পারেন পুত্রের জন্মের সময়েই। তাই মেঘনাদের ওপরে কোনও গ্রহের কুপ্রভাবে যাতে প্রাণহানি না হয়, সেইজন্য রাবণ শনিদেব সহ অন্যান্য গ্রহকে বন্দি করে রেখেছিলেন এক একটি আলাদা ঘরে।

কালের নিয়মে সীতাহরণ হল। হনুমানজি লঙ্কায় এলেন শ্রীরামপত্নী মা জানকীর খোঁজে। লঙ্কাপুরীতে নানান জায়গায় সীতার খোঁজ করার সময় করুণ কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন তিনি পরে দেখতে পান বন্দি শনিদেবকে। কাতরকণ্ঠে উদ্ধার করতে অনুরোধ করলেন সঙ্কটমোচনকে। অনুরোধ রক্ষা করলেন হনুমানজি। কিন্তু যখনই তাকালেন হনুমানজির দিকে তখন থেকে শুরু হল শনিদেবের অশুভ প্রভাব। তবে অমিত শক্তিধর যোগী হনুমানজি সেই প্রভাব সহ্য করে নিলেন যোগবলে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন ভগবান শনিদেব। আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাবনত হয়ে বললেন, শনিবারে কেউ যদি মহাবীর হনুমানজি পুজো করে তাহলে সমস্ত যন্ত্রণা থেকে সে মুক্তি পাবে।

Astro Tips
শনিদেব, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

যে কোনও সুমিষ্ট ফল, কাঁচাগোল্লা (সম্ভব হলে) আর জবাফুল দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হনুমানজির মন্দিরে পুজো দিলেই হবে। তবে প্রথম দুটো ধূপ জ্বালিয়ে আরতি করবেন।

প্রতি শনিবার প্রতিষ্ঠিত শনিমন্দিরে সরষের তেল, এক টুকরো কালো কাপড়, সামান্য কালো তিল ও সাধ্যমতো দক্ষিণা দিলে সাড়ে সাতির অশুভ প্রভাব থেকে শনিদেব মুক্তি দেন।

প্রতি শনিবার কুকুরকে যে কোন খাবার খাওয়ানো এবং নিজে নিরামিষ খেলে শনিদেবের অশুভত্ব দূর হয়।

বাড়ির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম যে মুখই হোন না কেন, প্রধান সদর দরজায় ঘোড়ার ক্ষুর আর হনুমানজির ছবি লাগালে শনির কুপ্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

শনিদেবকে সন্তুষ্ট করতে এবং অশুভ প্রভাব কমাতে হলে আগে হনুমানজিকে তুষ্ট করতে হবে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হনুমানজির পুজো ও আরতি করে প্রসাদ বিতরণ অথবা হনুমান চালিশা পাঠ করতে হবে।

প্রতি শনিবার অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় সামান্য কালো তিল, সরষের তেল আর এক টুকরো কালো বস্ত্র দান করলে অশুভ শনির কুফল উপশমিত ও দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

শনিদেবের অশুভ দোষ থেকে নিশ্চিত মুক্ত হতে গেলে প্রতি শনিবার নারকেল তেলে একটু কর্পূর মিশিয়ে মাথায় দিতে হবে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : এ লেখায় সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন আমার সদ্য প্রয়াত জ্যোতিষশাস্ত্রের শিক্ষাগুরু পরম শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় শুকদেব গোস্বামী, শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী (মাস্টারমশাই)। এছাড়াও অসংখ্য সাহায্য নিয়েছি। পরিসরের কথা মনে রেখে সেগুলির নাম উল্লেখ করা সম্ভব হল না। এজন্য লেখক ক্ষমাপ্রার্থী।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button