ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ থেকে জন্ম নিল অ্যাডিডাস ও পিউমা
বিশ্বখ্যাত ২টি জুতোর সংস্থা অ্যাডিডাস ও পিউমা। এই ২টি সংস্থার জন্ম হয়েছিল কিন্তু এক টানটান ঘটনা থেকে। প্রবল ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ জন্ম দিয়েছিল এই বিশ্বখ্যাত সংস্থার।
তিনি চাকরি করতেন একটি জুতোর কারখানায়। কিন্তু সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাই ভাবতেন। পিতা হিসাবে ২ সন্তান আরও ভাল কোনও কাজে নিযুক্ত হোক চাইতেন তিনি। রুডলফ আর অ্যাডলফ বড় হতে থাকেন। বাবা চাইতেন তাঁর ছোট ছেলে ব্যাঙ্কে কাজ করুক।
জার্মানির হার্জোজেনুরাচ শহরের এই ২ ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাইকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যেতে হয়। তখন সে কিশোর। সেই যুদ্ধ থেকে ফিরে অ্যাডলফ তাঁর বাবার সেই জুতো তৈরির কাজে মন দেন। তিনি একটি বাথরুমে শুরু করেন তাঁর কাজ। যে কাজ মূলত ছিল খেলোয়াড়দের জন্য জুতো তৈরি করার।
কারণ অ্যাডলফ অ্যাথলিট হওয়ার চেষ্টা করে বুঝতে পেরেছিলেন খেলার দুনিয়ায় জুতো গুরুত্বপূর্ণ হলেও খেলার জন্য আলাদা জুতো নেই। অ্যাডলফ সেই খেলোয়াড়দের জুতো তৈরি করবেন বলে স্থির করে এগোতে থাকেন।
কিন্তু হাতে টাকা নেই। দেশের অবস্থাও ভাল নয়। কাঁচা মাল কেনা দূর যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা থেকে কুড়িয়ে নানা জিনিস জোগাড় করতে শুরু করেন অ্যাডলফ।
বিদ্যুতের জন্য নিজেই প্যাডেল করে জুতো তৈরির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ওই ঘরেই তৈরি করতে থাকেন। ফেলে দেওয়া জিনিস আর সাইকেলের প্যাডেলের মত করে তৈরি বিদ্যুৎ থেকে একটি একটি করে জুতো তৈরি শুরু করেন তিনি। যার সুফল প্রথম জানা যায় ১৯২৮ সালের অ্যামস্টারডাম অলিম্পিকসে।
তার পরের অলিম্পিকসগুলিতেও অ্যাডলফের জুতোর খ্যাতি খেলোয়াড় মহলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এদিকে এই সময় জুতো তৈরির প্রযুক্তিগত ও কৌশলী দিক দেখা শুরু করেন অ্যাডলফ। যিনি বন্ধু মহলে অ্যাডি নামে পরিচিত ছিলেন।
আর তাঁর বড় ভাই রুডলফ দেখতে শুরু করেন সেলস। আর সেই সময় ফের শুরু হয় যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই জুতো তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রাণঘাতী বোমারু বিমানের বোমা থেকে বাঁচতে বম্ব শেল্টারে আশ্রয় নেন ২ ভাই ও তাঁদের স্ত্রী, সন্তানেরা। সেখানে অ্যাডলফ শক্র পক্ষকে এক কুরুচিকর গালি দেন। যা তাঁর বড়দা মনে করেন ওটা তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।
অনেক করেও বোঝানো যায়নি তাঁকে ওই গালি দেননি অ্যাডলফ। এই নিয়ে উল্টে ২ ভাইয়ে ঝগড়া, মনোমালিন্য ও মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়।
বড় ভাই রুডলফ ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ওই শহরেরই ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর অন্য পারে নিজের আলাদা জুতোর কারখানা তৈরি করেন। ২ ভাই জুতো তৈরির ব্যবসাতেই যুক্ত থাকলেও তাঁদের ব্র্যান্ড আলাদা হয়ে যায়।
অ্যাডলফের ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস নামে থেকে যায়। আর রুডলফের নতুন ব্যবসা রুডা নামে শুরু হয়। যা কিছুদিনের মধ্যে নাম বদলে হয়ে যায় পিউমা। তারপরটা ইতিহাস। এখনও জার্মানির ২ ভাইয়ের ২ ক্রীড়া জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাডিডাস ও পিউমা বিশ্বে রাজত্ব করছে।