স্বপ্ন সত্যি না মিথ্যা, ভগবান নিজেই দিলেন তার প্রমাণ
বাড়িতে গোপালের পুজো হয়। পিয়ারাভোগ দিতে মনে ছিল না। দেখলাম, গোপাল বলছে, দ্যাখ, তুই তো এবার পিয়ারা খেতে দিলি না, তাই নিজেই গাছ থেকে পেড়ে খেলাম।
মনস্তত্ত্বের জনক ডাঃ সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের মন ও স্বপ্নের উপর দারুণভাবে আলোকপাত করেছেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণেরও তুলনা হয় না স্বপ্নের উপর, কিন্তু স্বপ্নের ফলাফল বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ঋষিদের সঙ্গে এর কোনও মিলই নেই। কোন স্বপ্ন সত্য অথবা আপাত-মিথ্যা স্বপ্ন পরোক্ষে সত্য হবে, তা নির্ভর করে নারীপুরুষের চিত্তের শুদ্ধতার উপরে। তবে চিন্তাশূন্য মনের মানুষ কখনও স্বপ্ন দেখে না। ভারতবরেণ্য মহাপুরুষ শ্রীশ্রীরামদাস কাঠিয়াবাবাজি মহারাজ জীবনে কখনও কোনওদিন স্বপ্ন দেখেননি এবং স্বপ্ন ব্যাপারটা কি তা তিনি জানতেনই না।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেই বলছি। আমি জীবনে যেসব স্বপ্ন দেখেছি, আজ পর্যন্ত তার একটা স্বপ্নও মিথ্যা হয়নি। হুবহু তা ঘটেছে। এখানে সে সম্পর্কে কোনও কথা বলব না। শুধু একটা কথা, আমার ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান জীবন, সবই সত্য স্বপ্নদ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
যাইহোক, মৃত্যুর কথা একেবারেই বলা যায় না। যে জ্যোতিষীরা বলবে মানুষের মৃত্যু কথা, বুঝতে হবে, হয় তার নিজের চিতেয় যাওয়ার সময় হয়েছে নইলে সে ভগবান হয়ে গিয়েছে। যদি কারও ক্ষেত্রে মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণী কোনও জ্যোতিষীর মিলে যায় তবে বুঝতে হবে নির্ঘাত ঝড়ে বক মরেছে।
১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নিমতলা শ্মশানে অসংখ্য মৃতের হাত আমি দেখেছি। কোন রেখার জন্য, কত বছর বয়েসে তার মৃত্যু হল ইত্যাদি, তা জানার জন্য। অভিজ্ঞতা হল, যে রেখা থাকলে কঠিন ব্যাধিতে মৃত্যু, অকাল মৃত্যু, দুর্ঘটনায় মৃত্যু ইত্যাদি হয় এমন বহু হাত দেখেছি। অথচ যাদের হাতে ওসব রেখাই নেই তাদেরও তো মৃত্যু হয়েছে। আবার বাস্তবে দেখেছি, যার বেঁচে থাকা উচিত নয়, সে দেখছি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে। মোটের উপর মৃত্যুর কথা বলাই যায় না, যাবেও না।
একবার হাত দেখাতে এসে এক ভদ্রমহিলা তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া বিস্ময়কর একটি স্বপ্নের কথা বলেছিলেন এইভাবে,
– দেখুন, আমার দুটি মেয়ে, একটি ছেলে। আমার ছেলের বয়স যখন ছ’দিন তখন আঁতুড়ঘরে একটা স্বপ্ন দেখলাম রাতে। দেখি একজন সুদর্শন পুরুষ এসে আমার ছেলের কপালে কি যেন একটা লিখলেন। আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম,
– কে আপনি? কি লিখলেন আমার ছেলের কপালে?
উত্তরে তিনি বললেন,
– আমি বিধাতাপুরুষ। লিখলাম তোর ছেলের আয়ু মাত্র পনেরো বছর।
স্বপ্নেই আমি অনুরোধের সুরে বললাম,
– কেন, আরও বাড়িয়ে দিন না আয়ুটা!
গম্ভীরভাবেই বললেন বিধাতাপুরুষ,
– না। এর বেশি দেয়া যাবে না।
আমি তখন রেগে গিয়ে বললাম,
– ঠিক আছে, আপনি আয়ু না দিলে আমি বাবা তারকনাথের কাছে যাব।
বিধাতাপুরুষ আমার কথা শুনে হেসে বললেন,
– দেখি তোর বাবা তারকনাথ কেমন করে বাঁচায়?
স্বপ্নটা ভেঙে গেল। বাড়ির কয়েকজনকে বললাম। তারা শুনে তেমন একটা গুরুত্ব দিল না, গুরুত্ব দিলাম না আমিও। ১৯৮৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আমার ছেলের ১৫ বছর পূর্ণ হল। তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। একমাত্র ছেলে। রোগ ব্যাধি নেই। গত লক্ষ্মীপুজোর দিন, বাড়িতে বেলগাছ, পাশেই ছোট্ট দেয়াল। তার উপর দাঁড়িয়ে বেলপাতা পাড়ছিল পুজোর জন্যে। হঠাৎ পাঁচিল থেকে পড়ে গেল। তারপর সব শেষ। হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগটা পর্যন্ত দিল না।
এক নিঃশ্বাসে শোকাতুরা ভদ্রমহিলা কথাগুলো শেষ করে কাঁদতে লাগলেন। আমি নির্জীব শ্রোতা হয়েই রইলাম। অবিশ্বাস্য সত্য।
একবার এক বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা হাত দেখাতে এসে তাঁর অলৌকিক স্বপ্নের বিবরণ দিয়েছিলেন এইভাবে,
– দেখুন, আমাদের বাড়িতে একটা পিয়ারাগাছ আছে। সে বার, প্রতিবারের মতো প্রচুর পিয়ারা হয়েছে। আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন গোপালের পুজো দেয়া হয়। সে বার গোপালকে পিয়ারাভোগ দিতে মনে ছিল না। অথচ প্রতিবারই গাছের পিয়ারাভোগ দেয়া হয়। হঠাৎ একদিন রাত্রে স্বপ্ন দেখলাম, গোপাল বলছে, দ্যাখ, তুই তো আমাকে এবার পিয়ারা খেতে দিলি না, তাই কি আর করি, নিজেই গাছ থেকে পেড়ে খেলাম।
স্বপ্নটা দেখামাত্রই ঘুম ভেঙে গেল। ভাবলাম, সত্যিই তো এবার গোপালকে পিয়ারাভোগ দেয়া হয়নি। অথচ গাছ ভর্তি পিয়ারা রয়েছে। একইসঙ্গে ভাবলাম, সকাল হলে পুজোর সময় পিয়ারা পেড়ে ভোগ দেব গোপালকে।
সকাল হল। বাইরের কাজ আর স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে গেলাম পিয়ারা নিয়ে। আপনি বিশ্বাস করবেন না, একেবারে স্তম্ভিত হয়ে কেঁদে ফেললাম, দেখি গোপালের হাতে একটা গাছপাকা পিয়ারা রয়েছে আর সেটার অর্ধেকটাই খাওয়া।
কয়েকবছর আগে এক ভদ্রমহিলা হাত দেখাতে এসে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া স্বপ্নের বিবরণ দিয়েছিলেন এইরকম,
– আমার ছেলের বয়স তখন বছর সতেরো। একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখছি, আমার একমাত্র ছেলে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না। স্বপ্নেই কেঁদে উঠলাম। ঘুম ভেঙে যেতে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সকালে স্বপ্নের কথা বললাম সবাইকে। বাড়ির সবাই হেসে উড়িয়ে দিল। এই স্বপ্ন দেখার মাস ছয়েক পরের কথা। হঠাৎ আমার ছেলে নিরুদ্দেশ হল। প্রতিদিনের মতো সেদিন ইস্কুলে গিয়ে আর ফিরল না।
(চলবে)