গোপাল পুজো কেন করা হয়
মানুষ কেন গোপাল পুজো করে এর কারণ জানতে গিয়ে নানা মতামত পেয়েছি। গোপালের পুজো হয় এমন পরিবারে অনুসন্ধান করে কিছু মতামত জানা গেছে।
বাংলার অসংখ্য পরিবারে নিত্য পুজো করা হয় গোপালের। কেন তারা গোপালের পুজো করে থাকেন, কী উদ্দেশ্য নিয়ে বাড়িতে গোপাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার সঠিক কোনও কারণ জানা যায়নি। গোপালের নিত্য পুজো হয় এমন বহু পরিবারে অনুসন্ধান করে কিছু মতামত জানা গেছে, যেগুলি তুলে ধরছি এখানে।
মতামতগুলি পাওয়া গিয়েছে মহিলাদের তরফ থেকে,
আজকাল প্রায় সব বাড়িতেই দেখি গোপালের পুজো করা হয়। সকলের দেখা দেখি আমারও ইচ্ছে হল বাড়িতে গোপালের পুজো করি। আমাদের পাড়ার একজন হরিদ্বারে গিয়েছিল। ওকে বলেছিলাম আমার জন্য একটা গোপাল এনে দিতে। এনে দিয়েছিল সেটাই পুজো করি। এ ছাড়া আর কোনও উদ্দেশ্য নেই। বেশ ভালোই লাগে। ভোগটোগের কোনও ঝামেলা নেই। রোজ একটু নকুলদানা আর জল দিই। গোপাল এতেই খুশি।
আমার শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে বংশানুক্রমে গোপালের পুজো হয়ে আসছে। শাশুড়িমাতা বেঁচে থাকতে সারাদিন রাতে চারবার সেবা দিতেন গোপালের। উনি গত হওয়ার পর ওই কাজটা আমিই করে থাকি। আমাদের গোপাল পাঁচ পুরুষের।
আমার পর পর তিনটে মেয়ে। একটা ছেলের বড়ো ইচ্ছা ছিল, হল না। আমার ছোট বোন একবার কাশী গিয়েছিল বেড়াতে। ওকে একটা গোপাল এনে দিতে বলেছিলাম। এনে দিয়েছে। গোপালকে আমি ছেলের মতো দেখি। গোপাল আমার ছেলের পরিপূরক। পুজোর সময় আগে গোপালের জামাকাপড় কিনি, পরে আমাদের।
বিয়ের পর দুটো বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেল। ডাক্তার বলেছে হওয়ার আর আশা নেই। তাই গোপালকেই সন্তানজ্ঞানে সেবা করি।
বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে মনের আর মতের মিল নেই। বাচ্চাকাচ্চাও হয়নি। তাই গোপালকে নিয়ে আছি। গোপালই আমার স্বামী-পুত্র সব। এখন মনে কোনও কষ্ট নেই।
অনেক চেষ্টা করেও আমার বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হওয়ার মতো কোনও কারণও কিছু ছিল না। তবুও হল না। কেন হল না জানি না। বয়েসও তো অনেক হল। কোনও জীবনসঙ্গী জুটল না কপালে। গোপালকে সঙ্গী করেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।
বরটা আমার বেয়াড়া। মনের মতো হয়নি। আমার সঙ্গে কোনও কথা বলে না, শুনতেও চায় না। গোপালকে এনেছি, যা কিছু সুখ–দুঃখ মনের কথা গোপালকেই বলি। এখন বরের জন্য মানসিক কষ্টটা আর নেই।
মানুষ কেন গোপাল পুজো করে এর কারণ জানতে গিয়ে সর্বত্রই এই ধরনের মতামত পেয়েছি। তবে কোনও পৌরাণিক গ্রন্থে ‘গোপাল’ শব্দটা পাইনি। অষ্টোত্তর শতনামে গোপাল বনমালী জ্বল জ্বল করছে। উত্তরপ্রদেশে বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণ আদরে নন্দলালা, লালা, কিষাণ, কানাইয়া ইত্যাদি নামে অভিহিত। এই নামগুলি শোনা যায় ব্রজমায়ীদের মুখে। ‘গোপাল’ নামটা তাদের মুখেও শোনা যায় না। অবাংলাভাষী অঞ্চলে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যরূপ কানাইয়া তথা গোপাল প্রায় সবক্ষেত্রে সেবা পেয়ে থাকে মহিলাদের কাছে সন্তানজ্ঞানে।