এ গ্রামে সাপ বলা মানা, সাপ এখানে দেবী, ছোবল প্রসাদ
সাপ ও মানুষের এমন সহাবস্থান বড় একটা চোখে পড়েনা। তবে এই গ্রামে সাপ আদপেও বিষধর কোনও প্রাণি নয়, বরং দেবী। আর সাপের ছোবল দেবীর প্রসাদ।
সাপ নামটা শুনলেই মানুষ একটু সতর্ক হয়ে যান। এ প্রাণির সঙ্গে দূরত্ব রাখাই সঠিক মনে করেন। কারণও রয়েছে। এমনও কয়েকটি সাপ রয়েছে যার ছোবল খুব দ্রুত মানুষকে পৌঁছে দেয় মৃত্যুর দরজায়। অনেক মানুষের সাপের ছোবলে মৃত্যুও হয়।
তবে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ও ভাতারের এমন ৪টি গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ কেউটে জাতীয় এক ধরনের সাপকে দেবী রূপে পুজো করেন। মুসারু, পলসোনা, ছোট পোষলা ও বড় পোষলা, এই ৪টি গ্রামে এই কেউটে জাতীয় সাপের পুজো হয়।
এসব গ্রামে আবার সাপকে সাপ বলা যায়না, বলতে হয় ঝাঁকলাই। ঝাঁকলাই এখানে দেবী। লৌকিক এই দেবী জ্ঞানেই সাপকে ধরে গুরুপূর্ণিমার পরের দিন প্রতিপদে ধুমধাম করে পুজো হয় এই গ্রামে।
এখানে যে সাপকে পুজো করা হয় তাকে বয়স্করা কালনাগিনী বলতেই স্বচ্ছন্দ। তাঁদের বিশ্বাস মনসামঙ্গল কাব্যে লখিন্দরকে যে সাপ ছোবল মেরেছিল সেই কালনাগিনীই তাঁদের গ্রামে তাঁদের বাড়িতে একসঙ্গে থাকেন। এখানে ওই কেউটে জাতীয় কালো বিষধর সাপকে ফুল, দুধ দিয়ে পুজো করা হয়।
এই ৪ গ্রামে কিন্তু এই কেউটে জাতীয় সাপের দেখা প্রায় প্রতি বাড়িতেই পাওয়া যায়। গৃহস্থের সঙ্গে তারা একসঙ্গেই বসবাস করে। তাদের তাড়ানোর বা মেরে ফেলার কথা ভাবতেই পারেননা এখানকার বাসিন্দারা।
এখানে সাপে ছোবল মারার ঘটনাও খুব কম ঘটে। যদি ঘটে তাহলে গ্রামের মানুষের বিশ্বাস এখানে যে ঝাঁকলাই দেবীর মন্দির রয়েছে সেখানকার মাটি ছোবল খাওয়া অংশে লেপে দিলেই মানুষ সুস্থ হয়ে যান। দেবী কারও প্রাণ নেন না। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে এই ৪টি গ্রামের মানুষ এই বিশেষ ধরনের সাপের সঙ্গে দিনযাপন করে চলেছেন।