Festive Mood

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

উৎসব কি শুধুই ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালির দাগ! নাকি মন মাতলেই উৎসব! সে যে কারণেই হোক। হতে পারে একটা মুহুর্ত মনটাকে আনন্দে ভরিয়ে তুলল। সেটা উৎসব নয়!

সরস্বতী পুজো শেষ। আর সরস্বতী পুজো শেষ মানেই বাঙালির উৎসবের মরসুমে ইতি। বিশ্বকর্মা পুজোর হাত ধরে বুকের মধ্যে যে উৎসবের আনন্দ হৈহৈ করে চাড়া দেয়, সরস্বতী পুজো শেষ হলে সেই বুকেই মোচড় দেয় উৎসব শেষের যন্ত্রণা। সামনে উৎসব বলতে দোল। এরপর ভ্যাপসা গরম, নয়তো প্যাচপ্যাচে বর্ষা, আর একটানা কাজ। কোনও ছুটি ছাড়া নিরলস পরিশ্রম। যদিও এই মেঘ রোদের খেলাটা আছে বলেই হয়তো উৎসবের আনন্দটাও আছে। সারা বছর ধরেই উৎসব চলতে থাকলে সে আনন্দ একসময়ে তার জৌলুস হারাত বৈকি!

কিন্তু উৎসব কি শুধুই ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালির দাগ! নাকি মন মাতলেই উৎসব! সে যে কারণেই হোক। হতে পারে একটা মুহুর্ত মনটাকে আনন্দে ভরিয়ে তুলল। তাহলে কি সেটা উৎসব নয়! উৎসব আছে মানুষকে গতানুগতিক জীবন থেকে রেহাই দিয়ে মনটাকে প্রাণরসে ভরিয়ে তুলতে। সেটা যেভাবেই পাওয়া যায় সেটাই তো উৎসব!


সরস্বতী পুজো শেষ। মনটা কেমন কেমন করছে। ফের একটানা একঘেয়ে জীবন। এদিকে সরস্বতী পুজো শেষ মানেই শীতের বিদায় বেলায় বাতাসে একটা ঠান্ডা গরম মিশেল। সকালটা ঠান্ডা ঠান্ডা। বেলা বাড়লেই কিন্তু সেই ঠান্ডাভাব উধাও হয়ে রোদের দাপট। গায়ে রোদ লাগলে চামড়া বলছে একটা ছাতা হলে মন্দ হত না! কিন্তু তারপর যখন বিকেল নামে, দখিনা বাতাস ফুরফুর করে বয়ে চলে আপন খেয়ালে। তখন সে অনুভূতিটাই বা উৎসবের চেয়ে কম কিসে?

এমনই এক বিকেলে, পড়ন্ত রোদে, একটু খোলা মেলা, গাছপালা ঘেরা পথে হাঁটার মজাই আলাদা। একলা হেঁটে চলা। অথবা পছন্দের কাউকে পাশে নিয়ে অনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে অলস পায়ে পা মেলানো। কোনও তাড়া নেই। নেই কোনও পিছটান। শুধু মনের আনন্দে প্রকৃতির বুকে হেঁটে চলা। দখিনা বাতাস সারা গায়ে আপন মনে খেলা করে চলে। একটা অদ্ভুত সোঁদা গন্ধ মাঝেমধ্যেই মনটাকে বিভোর করে দেয়। গাছে গাছে সবুজের আবাহন। কচিকচি পাতা ধরা শুকনো ডালগুলো যেন আমার জন্য সেজে ওঠে। পলাশ গাছের ডাল লাল পলাশে মাতোয়ারা। গাছে গাছে রঙিন ফুলের কুড়ি। তার মাঝে শুধু হেঁটে চলা আপন খেয়ালে। দখিনা বায়ু গায়ে মেখে। নিরুদ্দেশের পথে।


Bengali Festivals
পলাশ, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া

এ সময়টাই এমন। প্রেম মাখা দখিনা বাতাস যেন উদাসী এক বসন্তদূত। যার আলতো পরশ নিজের অজান্তেই ভালবাসার বার্তা দিয়ে যায়, ভালোলাগার সামিয়ানার নিচে রচিত হয় অজানা প্রেমের কাব্য। ফুলের পাপড়ি বলে, এসো হে সুন্দর। বসন্তে আজ আমরা সবাই মাতি ফুলের হোলি খেলায়। না হয়, এসো না হাত ধরাধরি করে কিছুক্ষণের জন্য ভেসে যাই প্রাণের স্রোতে। যাক না ভাসিয়ে নিয়ে সে এক খেয়ালি স্বর্গে। সেখানে শুধুই বেজে চলে সুখ সংগীত। সে মাতাল সুরে  সুরার আবেশ মম করে। সে সুরের ঝোড়ো হাওয়ায় নিমেষে উড়ে যায় শত ক্লান্তি, সহস্র দুঃখ যন্ত্রণা।

ইহলৌকিক জীবনের রুক্ষ কঠোর বাস্তবই চরম সত্য। চ্যালেঞ্জে ভরা প্রতিটি পদক্ষেপ। সেখানে কাব্যের কোনও জায়গা নেই। মস্তিষ্ক দিয়েই সবকিছুর বিচার হয়। হদয়ের সেখানে কোনও জায়গা নেই। হৃদয় সেখানে শুধুই হার্টের ধুকপুকানি। বন্ধ হলে হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু এই কঠিন বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানব জীবনের অতল অন্তরে লুকিয়ে থাকা হৃদয় সদা রঙিন। তার কাছে বসন্ত বসন্তই। নবরসে সিক্ত কবির কল্পনা। সেই বসন্ত আজ বঙ্গবাসীর দরজায় টোকা দিচ্ছে।

বলছে দেখো ঋতুপতি আজ তোমার চৌকাঠে উপস্থিত। দ্বার খোলো, বাইরে এসো। এসো প্রকৃতির কোলে। জিরিয়ে যাও ক্ষণকাল। জীবনটাকে নব উদ্যমে ভরিয়ে তোল। এসো আমার মাঝে। স্পর্শ কর আমাকে। শিহরিত হও। তোমার বুকের মাঝে রিনিঝিনি বেজে উঠুক বাহারের ব্যঞ্জনা। খুশি হও তুমি। বিভোর হও তুমি। আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধর। মধুপের মত ভালবাস। আমি মধুমাস। আমি তোমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেবো। আমার কোলে জুড়িয়ে যাও প্রাণ। উদাত্ত কণ্ঠে কবির সুরে গেয়ে ওঠো ভালবাসার গান। বলতে পারেন প্রকৃতি প্রেমিকার এমন ডাক কি কোনও উৎসবের চেয়ে কোনও অংশে কম যায়! এও তো এক উৎসব। মনের উৎসব। প্রাণের উৎসব। এ উৎসব তো একান্ত নিজের। ব্যক্তিগত। একান্ত আপন। কটা দিনের জন্য বাসন্তিক উচ্ছল প্রেমে গা ভাসিয়ে কিছু মিষ্টি মুহুর্ত কাটানোটাই বা কম কীসের! — চিত্রণ – সংযুক্তা

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button