Festive Mood

শীত পোশাকের পসরা নিয়ে হাজির দোকানিরা, জমজমাট ওয়েলিংটন স্কোয়ার

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে চলতি বছরে বর্ষার ঘন ঘন ভ্রুকুটি দেখে আপ্তবাক্যটি একটু পাল্টে দিতে ইচ্ছা করে বৈকি। বাঙালির এবার বারো মাসে যেন তেরোটা বর্ষা-পার্বণ। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসেও তাই উত্তুরে হাওয়াকে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে অনাহূত আগন্তুক বৃষ্টির খামখেয়ালিপনার জন্য। তবে গাছে কাঁঠাল কবে ফলবে, মানে শীত কখন জাঁকিয়ে পড়বে, তার জন্য শীতকাতুরে বাঙালির বোধহয় আর তর সইছে না। আগেভাগে গোঁফে তেল দিতে, থুড়ি, শীতের আক্রমণ থেকে গা বাঁচাতে মাথায় ইলশে গুঁড়ির স্পর্শ মেখে বাঙালি তাই হানা দিতে শুরু করেছে কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে।

প্রতিবারের মত এবারেও ব্যস্ত রাস্তার একদিকের ফুটপাথ ধরে জাঁকিয়ে বসেছেন শীতবস্ত্রের পসারিরা। সংখ্যায় শতাধিক সেইসব বিপণীর রংবেরঙের সম্ভার ক্রেতাদের মুগ্ধ করতে বাধ্য। সকাল সকাল দোকানের ঝাঁপ খুলে একেবারে মেলার চেহারা নিয়ে ফেলে ওয়েলিংটন। মৌলালি আর ধর্মতলার মাঝামাঝি জায়গার সেই মেলায় রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলে ভিন্ন মেজাজের ভিন্ন রুচির মানুষের আনাগোনা। যদি এক দোকানে মনের মতো শীতের পোশাক না পাওয়া যায় তাহলেও কুছ পরোয়া নেহি। আরও দোকান আছে তো। হাসি মুখে দোকানদারেরা ক্রেতার সামনে মেলে ধরতে থাকেন নানা দামের নানা ডিজাইনের শীতবস্ত্র। কোনওটা পুরোপুরি উলের বুনটে ঠাসা। কোনোটা আবার ক্যাশমিলান দিয়ে তৈরি। আর কোনও কোনও শীতবস্ত্রে চোখে পড়ে সুতোর কাজের বাহারি বুনন। সব কিছুর দাম সাধ্যের মধ্যেই। ২০০-৩০০ টাকার গা গরম করার মতো পোশাক যেমন সেখানে অনায়াসে মেলে, আবার একটু বেশি দামের শীতবস্ত্রের সংগ্রহও রয়েছে দোকানিদের কাছে।


Bengali Festivals

কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় শীতবস্ত্রের ‘চাঁদনি চক’-এ খরিদ্দারদের মুখে হাসি ফোটাতে তাঁদের কেউ এসেছেন সুদূর কাশ্মীর বা দক্ষিণ ভারত থেকে। কেউবা মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, মানালি, সিমলাসহ বিহার, ছত্তিসগড় থেকে। এমনকি দার্জিলিং থেকে আসা দোকানিও আছেন এখানে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র নেপাল, ভুটানের ব্যবসায়ীরাও সেই তালিকা থেকে বাদ যাননি। পরিযায়ী পাখির মতো মাত্র ৩ মাসের জন্য কলকাতার বুকে পাড়ি জমান তাঁরা। অক্টোবরের শেষের দিকে কলকাতায় এসে পৌঁছালেও বাজার কিন্তু বসে নভেম্বরের পয়লা তারিখ থেকে। ৩ মাস পর আবার আসে জন্মভিটেয় ফেরত যাওয়ার মনখারাপের পালা। তারপরে তাঁদের দিন গুজরান হয় কি করে? এই নিয়ে কথা হল বিহার থেকে আসা জনৈক কর্মচারী অরবিন্দ কুমারের সঙ্গে।


Bengali Festivals

তাঁর কথায়, কলকাতার ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরে সবাই আবার যে যার ধান্দায় লেগে পড়েন। কেউ মন দেন চাষবাসের কাজে। আবার কেউ মজদুরির কাজে হাত লাগান। আর দোকানের মালিকরা সাধারণত তাঁদের নিজের নিজের ব্যবসায় মন দেন। নোট বাতিল বা জিএসটি ব্যবসায় কেমন প্রভাব ফেলেছে তা জানতে কথা হল আরেক দোকানি দ্রোমার সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, জিএসটি আছে তার জায়গায়, আর শীত পোশাকের দাম আছে নিজের জায়গায়। পোশাকের দাম হোক বা বিক্রিবাটার পরিমাণ, কোনোটাতেই জিএসটির প্রভাব তেমন পড়েনি। গতবারের মতো এবারেও ভালোই বিকিকিনি চলছে। তবে শীতটা একটু জাঁকিয়ে পড়লেই যে তাঁদের মুখের হাসি আরেকটু চওড়া হবে সে বিষয়ে একমত সকল দোকানিরাই।

Bengali Festivals

নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, বয়স্ক দম্পতি থেকে তরুণ প্রজন্ম সকলের ক্ষমতায় কুলায়, এমন দামেই রাখা হয়েছে হরেকরকমের সম্ভার। তবে এবারে কেতাদুরস্ত তরুণ প্রজন্মকে একেবারে কিস্তিমাত দিয়ে বাজার গরম করায় এক নম্বরে মোদীজির কোট। অবশ্য বিক্রি ও চাহিদার নিরিখে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই মহিলাদের শ্রাগ, পশমের টপ, কল্কা আঁকা বা চেক প্রিন্টের চাদর, স্টোল, লং স্যুট। বাচ্চাদের মন জয় করতে উপস্থিত জ্যাকেট স্যুট, উলের পোশাক। আর শীতের পোশাকে পুরুষদের সপ্রতিভ লুক দিতে তৈরি হরেক রকমের জ্যাকেট স্যুট, কোট, হাফহাতা সোয়েটার। তাই দেরি না করে সস্তায় মনের মতো আরামপ্রদ শীতপোশাক পেতে ঢুঁ মারতে যেতেই হবে ওয়েলিংটনের শীতকালীন পোশাকের মেলায়।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button