আলিঙ্গনের গল্প ১ :
‘মা, আমার বড্ড শীত করছে। আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে।’ বেহুঁশ জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে মায়ের কোলের কাছে সরে আসে তিতলি। তিতলির মাথায় জলপট্টি দেওয়া থামিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন ষাটোর্ধ অনিমা দেবী। মায়ের উষ্ণ আলিঙ্গনের আবেশে চোখ জুড়িয়ে আসে দুঁদে উকিল তিতলি ওরফে মনোরমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আলিঙ্গনের গল্প ২ :
আমাদের ভালবাসার সম্পর্কটাকে আমাদের পরিবার মেনে নেবে তো আবির? ইতিহাসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সালমা সংশয়ভীরু ভেজা চোখে জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দেয় তার প্রেমিকের দিকে। ‘দূর পাগলি, এত ভেবো না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে’। নিবিড় আলিঙ্গনে পার্কের সিটে সালমা খাতুনকে বাহুপাশে বেঁধে ফেলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আবির রায়।
আলিঙ্গনের গল্প ৩ :
‘বাবা দ্যাখো, ও কিরকম ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। ওকে বাড়ি নিয়ে যাই না বাবা।’ পাড়ায় ঢোকার মুখে ৩-৪ মাসের বাদামি লোমশ নেড়ি কুকুরের ছানাকে জড়িয়ে ধরে বাবার কাছে কাতর আবেদন জানায় বছর ৬-এর সাগ্নিক। ছেলের শুকনো গরম শরীরের আলিঙ্গনে ততক্ষণে পরম নির্ভরতায় কেমন ধরা দিয়েছে বাচ্চাটা। ছাতা হাতে হাসি মুখে সেটাই দেখতে থাকেন সুনির্মল বসু।
‘আলিঙ্গন’। ৪ বর্ণের ছোট্ট একটা শব্দ। অথচ তার ক্ষমতা কিছু কম নয়। একটা আলিঙ্গন ব্যক্তি বিশেষের জীবনে হয়ে ওঠে জাদুকাঠির ছোঁয়া। যা এক নিমেষে উধাও করে দিতে পারে চিন্তা, উদ্বেগ, যন্ত্রণা, মন খারাপের মত নানান রোগ। কারোর প্রতি ভালোবাসা বোঝাতে বা পরম ভরসা জোগাতে নিবিড় ‘হাগ’-এর মতো মহৌষধি আর নেই। উষ্ণ আলিঙ্গন আমাদের সকলের জীবনে বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুও বটে। সেই অপার্থিব বন্ধুর অপরিসীম অবদানের কথা মাথায় রেখেই একসময় তৈরি হয় এক বিশেষ দিন। ১২ ফেব্রুয়ারি সেই দিন, যেদিন আপামর ভালোবাসার মানুষের কাছে চিহ্নিত হল ‘হাগ ডে’ বা ‘আলিঙ্গন দিবস’ হিসেবে। ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহের ষষ্ঠ দিবসটি উদযাপনের জন্য পকেট থেকে খসানোর প্রয়োজন নেই একটাও কানাকড়িও। কিন্তু এর স্পর্শ নামীদামী উপহারের চেয়েও অমূল্য। স্মৃতিতে অমলিন। বিনামূল্যে, নির্দ্বিধায় এইদিনে ভালোলাগার ভালবাসার মানুষটিকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরাতেও নেই কোনও বাধা।
গোলাপ, চকোলেট, টেডি বেয়ার বা অন্য কোনও উপহারের মাধ্যমেই যে শুধু মনের অনুভূতি ব্যক্ত করা যায় এমনটা নয় মোটেই। যাকে হৃদয় আপন ভাবে, তাকে ভালোবাসার বাহুডোরে বেঁধে ফেলাতেই তো প্রেমের সার্থকতা নিহিত। তাই আর দেরি কেন? যাকে বা যাদেরকে ভালোবাসেন, তাকে বা তাদেরকে বিনা সংকোচে আজ জড়িয়ে ধরুন। আর বুঝিয়ে দিন, আপনি কতটা ভালোবাসেন তাদের। তবে দেখবেন, যিনি আপনার ‘হাগ’-এর ‘উৎপাত’ হাসি মুখে গ্রহণ করতে প্রস্তুত, কেবল তাদের সাথেই নিরাপদে নির্ভয়ে পালন করুন ‘হাগ ডে’। নইলে উলট পুরাণ হয়ে বিপদ-ও ঘনিয়ে আসতে পারে!