Festive Mood

বং নববর্ষের হালের ফ্যাশন ‘পান্তা ইলিশ’

পুজোপার্বণ হোক বা বর্ষবরণ, উৎসবকে ঢাল বানিয়ে বাঙালি হামলে পড়ে ষোড়শ উপাচারে সাজানো থালার ওপর। সেই ভোজন উৎসবের তালিকায় নতুন সংযোজন নববর্ষে ‘পান্তা-ইলিশ’।

বাঙালি হুজুগে জাতি। বাঙালি পেটুক। বাঙালির ঘাড়ে চাপা এই অপবাদ আবহমান কালের। উৎসবের আড়ালে বাঙালি আসলে ছুতো খোঁজে পেটসেবার। তাই পুজোপার্বণ হোক বা বর্ষবরণ, নানা উৎসবকে ঢাল বানিয়ে বাঙালি হামলে পড়ে ষোড়শ উপাচারে সাজানো থালার ওপর। সেই ভোজন উৎসবের তালিকায় নতুন সংযোজন নববর্ষে ‘পান্তা-ইলিশ’ খাওয়ার ধুম।

শহর বা শহরতলির মৎস্যলোভী বাসিন্দাদের অনেকেই পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ দিয়ে করেন নতুন বছরের হালখাতা। এদিন তিলোত্তমার নামীদামী হোটেল-রেস্টুরেন্টের মেনুকার্ডে আলাদা জায়গা করে নেয় সুগন্ধি পান্তা-ইলিশ। এছাড়া থাকে ইলিশের বাহারি পদ।


যাঁরা সাশ্রয়ে বিশ্বাসী, তাঁরা অবশ্য চড়া দাম দিয়ে রেস্তরাঁর নাকে সুড়সুড়ি দেওয়া এক টুকরো ইলিশ খেতে রাজি নন। নববর্ষের আগের দিন তাঁরা অনেক খুঁজে বাজার থেকে আগুন দামে গোটা ইলিশ কিনে সেটাকে সপরিবারে হজম করাতেই অনেক বেশি আনন্দ পান। দাম যাই হোক, বছরের প্রথম দিন পান্তা ইলিশ না খেলে পেটের ভাত সেদিন যে হজম হওয়ার নয়।

আশির দশকে হঠাৎ করেই পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চল শুরু হয় শহুরে ‘এলিট’ সম্প্রদায়ের মধ্যে। পরে এপার বাংলা এবং ওপার বাংলায় এই হুজুগে প্রথা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। আগে নববর্ষের দিন কচি পাঁঠার ঝোল আর সরু সুগন্ধি চালের ভাতেই পরিতৃপ্ত হত বাঙালির রসনা। সেই পছন্দের তালিকায় কখন যেন নিঃসাড়ে ঢুকে পড়ল ইলিশ আর পান্তা।


আসলে পান্তা ভাত শরীরকে শীতল রাখে। তাই গরম পড়তেই গ্রামবাংলার খেটেখাওয়া মানুষগুলোর কাছে কদর বেড়ে যায় পান্তার। জল দেওয়া ভাতের সঙ্গে সবজি বা একটু ভাজা মাছ হলে পরম তৃপ্তি! সময়ের সাথে সাথে সেই রসনাবিলাসের পারদ চড়াতে কালক্রমে সবজি ডিম মাংসের জায়গা দখল করে নেয় মাছের রাজা ইলিশ। বছরের প্রথম দিনে মেজাজ ফুরফুরে রাখতে সুগন্ধি ভাজা ইলিশ আর তার তেল নাহলে যেন চলে না। এমনটাই মনে করেন খাদ্যরসিক বাঙালির একাংশ।

বছরের প্রথম দুমাস গ্রীষ্ম, তার পরে আসবে বর্ষা। অতদিন আর তর সয় না ভোজনরসিকদের। তার আগেই জলের রূপোলী শস্যের আস্বাদ নিতে আনচান করে ওঠে বাঙালির মন। তাই ইলিশ ভক্ষণের বাহানাও তৈরি হয়ে যায়। পান্তাভাত, কাঁচা লঙ্কা, ইলিশ আর পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর।

বর্ষা নামার আগে ইলিশের উৎপাদন কম থাকে। তা বলে তো আর নতুন বছরে ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়া যায়না। চাহিদা বেশি থাকায় এইসময় বাজারে আসে খোকা ইলিশ। অস্বাভাবিকভাবে চড়া দামে পয়লা বৈশাখের কিছুদিন আগে থেকেই তা দেদার বিকোতে থাকে। তাই পান্তা-ইলিশে যতই নববর্ষে মন মজুক, বাঙালির এই নতুন হুজুগ ইলিশের জীবনচক্রকে দিচ্ছে তছনছ করে। অবিলম্বে এমন ক্ষতিকর ভোজন বাহানা বন্ধের উদ্যোগ নিতে ‘পান্তা ইলিশ’ বিরোধী অভিযানে সামিল হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button