কলুষিত কামনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার পথ দিলেন সাধুবাবা
কল্পনাতেও আসছে না, কোথায় ছিলাম আর এই গিরিগুহায় এলামই বা কি করে! একই সঙ্গে ভাবতে পারছি না, গুরুজি আমার সেই কবেই দেহরক্ষা করেছেন আর এখন তিব্বতের অজানা এক গুহায় তাঁকে দেখছি রক্ত মাংসের দেহে।
এতক্ষণ সাধুবাবা বসেছিলেন বাবু হয়ে। এখন পা দুটো একটু মেলে দেওয়ার মতো করে বসলেন। একবার এপাশ ওপাশ দেখে নিলেন। দেখলেন যাত্রীদের আনাগোনা। জিজ্ঞাসা করলাম,
— বাবা, আমরা প্রায়ই কথায় কথায় ‘কামনা বাসনা’ কথাটা বলে থাকি। এই শব্দের প্রকৃত অর্থটা কি দয়া করে বলবেন?
হাসিমাখা মুখে বৃদ্ধ প্রশান্ত মধুর কণ্ঠে বললেন,
— বেটা, একটু আগে যে কথাগুলো তোকে বললাম সেটার মানেই তো বাসনা।
কথাটা বলেই তিনি বললেন,
— কথার মানেটা বোধহয় তোর বোধে এল না। শোন বেটা, নারী পুরুষের ইন্দ্রিয় ভোগের যে চিরন্তন ইচ্ছা তাকেই তো বাসনা বলে। এই যেমন ভালো খাব, ভালো পরবো, সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করব, ইন্দ্রিয়ের এই ভোগের যে ইচ্ছা, এটাকেই বাসনা বলে। কোনও বাসনা যখন মনে আসবে না তখনই জানবি মানুষের দেহ মনে ইন্দ্রিয়ের বেগ উপশমিত হয়েছে। অপার্থিব বস্তু অর্থাৎ তাঁকে লাভ করার পথের প্রথম সিঁড়িটা পার হয়েছে। তবে পথ অনেক লম্বা। সংসারী মানুষ যখন নিজে বুঝতে পারে যে সে কত দুর্বল, তখনই তাঁর দৃষ্টি যায় ভগবানের দিকে।
সাধুবাবা একটু থামলেন। চোখ মুখের ভাবটা হঠাৎ কেমন যেন উদাসীনতায় ভরে উঠল। একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন,
— সংসারে সমস্ত দুঃখের মূলই হল বাসনা। বাসনা ব্যাহত হলেই মানুষ দুঃখ পায়। তাছাড়া মানুষের দুঃখের আর কোনও কারণ আছে বলে আমার জানা নেই। সুখের প্রতি দৃষ্টি থাকলে সুখ আসে না কখনও। জগতের নিয়ম এই, সুখ আপনা থেকেই আসে যারা ভুলে থাকে সুখকে।
অতি বৃদ্ধ এই সাধুবাবা কেমন যেন একটা ভাবের ঘোরে কথা বলছেন। কোনও কথা বলে ভাবটা নষ্ট করলাম না। সুন্দর কথার তারটা ছিঁড়ে গেলে ফের মনের সঙ্গে চট্করে সংযোগ করা যায় না। বৃদ্ধ বললেন,
— শীতকালে যে মানুষ রোদের আকাঙ্ক্ষা করে না, তাপদগ্ধ গ্রীষ্মকালে এতটুকুও লালায়িত হয় না একটু শীতল স্নিগ্ধ ছায়ার জন্য, বেটা, সংসারজীবনে একমাত্র সেই মানুষই নিষ্কৃতি পায় সমস্ত দুঃখের হাত থেকে। লাভ করে শুধু আনন্দ, আনন্দ আর আনন্দ।
এই মুহুর্তে কথা বলছেন দুচোখ বুজিয়ে। কথা শুনে মনে হচ্ছে তাঁর কণ্ঠস্বর জুড়িয়ে আসছে আবেগে, আনন্দে। দেহটা এখন ধীর স্থির নিথর। আমি বসে আছি চুপচাপ। বৃদ্ধবাবা বললেন,
— সংসার বা পার্থিবজীবনে আমরা যে বস্তুকে ভিত্তি করে আমোদ বা আহ্লাদ করি, তাকেই সুখ বলে (Happiness)। এছাড়া সংসার বা জগতে বস্তু নিরপেক্ষ যা কিছু আমোদ বা আহ্লাদ তার নামই আনন্দ (Bliss)। বেটা, আমার কথার অর্থ কি তুই বুঝতে পারছিস?
সাধুবাবা তাকালেন। কণ্ঠ আমার রোধ হয়ে এসেছে। মুখে কোনও কথা বলতে পারলাম না। মাথা নেড়ে জানালাম, ‘বুঝতে পারছি’। সুখ আর আনন্দ কথাটা জন্মের পর থেকে কয়েক কোটিবার পড়া ও শোনা। কিন্তু তার প্রকৃত অর্থ আমার জানা ছিল না। আজ আনন্দে জল এল চোখে। বারবার প্রণাম করতে লাগলাম সাধুবাবার পায়ে হাত দিয়ে। তিনিও বারবার বলতে লাগলেন,
— এ বেটা, এ্যায়সা মত্কর, কোই লোগ দেখনে সে কেয়া শোচেগা। তু কেয়া পাগল হো গিয়া?
পা থেকে হাতটা সরিয়ে নিলাম। এই মুহুর্তে প্রণামজনিত স্পর্শের কারণে কিনা জানি না, সারাটা দেহ আর মনটা আমার এক অপার্থিব আনন্দলহরিতে ভেসে চলল। কথা বলার শক্তি যেন অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। আজ লিখতে বসে ভাবছি, কি অসাধারণ শক্তিধর মহাত্মা যে তিনি ছিলেন তা আজও আমি ভাবতে পারি না। আমার একান্ত আপনজন বৃদ্ধ সাধুবাবা বললেন,
— সংসারে আছিস যখন তখন সমস্ত আচারই পালন করবি নিষ্ঠার সঙ্গে কিন্তু আচারের দিকে কিছুতেই যেন মনটা না যায়। মনটা গেলেই বাড়বে অভিমান। সেটা হল, ‘আমি অত্যন্ত ধার্মিক’ — আচারে মন দিলে এই অভিমানই বাড়তে থাকে সমানে। এই অভিমান যত বাড়বে, সে বেটা ভগবানের কাছ থেকে তত দূরে সরে যাবে।
এই পর্যন্ত বলে থামলেন। আমার চোখে চোখ রেখে বৃদ্ধ হঠাৎ বললেন,
— হ্যাঁরে বেটা, তুই কি বিয়ে থা করেছিস?
হেসে ফেললাম। বললাম,
— না বাবা, ওসব কিছু করিনি। সামান্য যা আয় করি তাই জমিয়ে বেরিয়ে পড়ি নানা তীর্থে, পথে প্রান্তরে। নিজের লাগেজ বইতে জিভ বেরিয়ে যাচ্ছে, তার উপরে মহিলারূপী আর একটা বিশাল লাগেজ , কম করে ৭৫ কেজি নিয়ে চলব কেমন করে?
আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন। বুঝলাম সাধুবাবা অত্যন্ত রসিক। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমার সঙ্গকরা সাধুসন্ন্যাসীদের শতকরা প্রায় একশোভাগই স্কুলের চৌকাঠটা পর্যন্ত দেখেনি অথচ এরা দেখেছি কথা বললে কথা বোঝে, রসিকতা করে, রসিকতা বোঝে। চলার পথে এটাও দেখলাম অসংখ্য পুরুষ ও রমণীকে যাদের দেহ কাজিরাঙায়মোড়া। রসিকতা চামড়া ভেদ করে অন্তরে পৌঁছনোর আগে আপনি সাইবেরিয়ায় বরফেমোড়া পর্বতে পৌঁছে যাবেন ট্রেকিং করতে। আমার বিশ্বাস, যে সাধু রসিকতা বোঝে না, সে সাধু সাধুই নয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সাধু ছিলেন। এবার জানতে চাইলাম,
— বাবা, ভালো খাবার আমার কপালে জোটে না সুতরাং ভালো খাবারের উপরে লোভ আছে ষোলোআনা। ভালোভাবে থাকব, ভালো সম্পদ ভোগ করব, এ বাসনা অন্তরে আমার আঠারোআনা। যেকোনও বয়েসের সুন্দরী রমণী দেখলে মন আমার চঞ্চল হয়ে ওঠে। এসব কথা তো কাউকে বলা যায় না। বাইরের চেহারাটা এক রকম কিন্তু অন্তর আমার সদা সর্বদা বয়ে চলেছে অন্য খাতে, অন্য ধারায়। এই নোংরা মন আমার কিভাবে ঈশ্বরের দিকে যাবে? কি করলে যেতে পারবে তা দয়া করে বলবেন বাবা?
পড়ুন : দৃষ্টিদোষের অশুভ প্রভাব এড়ানো ও মুক্তি পাওয়ার পথ দিলেন সাধুবাবা
কথাগুলো শুনলেন মন দিয়ে। একটু ভাবলেন। তাকালেন মুখের দিকে। প্রসন্ন ও হাসিভরা মুখে বললেন,
— বেটা, এই সমস্যাগুলো বিভিন্ন রিপুর মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া মনের উপসর্গমাত্র। প্রতিদিন বাসি বিছানায় বসে উপাস্য দেবতার কাছে সমস্যাগুলো মনে মনে বলে মুক্ত হওয়ার প্রার্থনা করলে ধীরে ধীরে মনের এই উপসর্গগুলোর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বেটা, প্রার্থনার যে কি প্রবল শক্তি তা তোর কল্পনাতেও আসবে না। চিত্তশুদ্ধ মানুষের প্রার্থনা ভগবানের আসনকে টালিয়ে দিতে পারে। আমার কথাটা শুনে যা বললাম করে দেখ, ফল না পেলে আমার সাধনজীবনই বৃথা জানবি।
একথা শোনামাত্রই সাধুবাবার পা-দুটো ধরে বললাম,
— না না বাবা, এ রকম কথা বলবেন না। সাধুসন্ন্যাসীদের কথায় আমার পূর্ণবিশ্বাস। এই বিশ্বাসটা আছে বলেই তো সাধু খুঁজে বেড়াই। (মুহুর্ত ভেবে বললাম) বাবা, আপনি একটু আগে বললেন শুদ্ধচিত্তের কথা। একথার অন্তর্নিহিত অর্থ কি?
বৃদ্ধ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এদিক ওদিক চোখদুটো ঘুরিয়ে নিলেন একনজর। আশপাশে একটা দোকান নেই যে এক কাপ চা কিংবা দুটো কচুরি এনে খাওয়াই সাধুবাবাকে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধুসন্ন্যাসীরা মিষ্টি ভালোবাসেন তবে তার চাইতে অ-নে-ক বেশি ভালোবাসেন আমার মতো কচুরি, সিঙ্গারা, বিভিন্ন ধরণের চপ ইত্যাদি। যাইহোক মুচকি হাসতে হাসতে বললেন,
— বেটা, শব্দটা ছোট। এর অর্থটাও অতি সংক্ষিপ্ত কিন্তু তা আয়ত্ত করার জন্যই তো মানুষের তপস্যা আর সাধনভজন। তাতেই কেটে যায় সারাটা জীবন। মনে কোনও কলুষিত কামনার উদয় না হওয়াই চিত্তশুদ্ধির লক্ষণ। আরাধনার অঙ্গ আছে তিনটে। পুজো, ধ্যান ও জপ। ফুল তুলসী বেলপাতা ইত্যাদি ভগবানের উদ্দেশ্যে উপহার সমর্পণের নাম পুজো। তাঁর গুণরাশি ভাবনার নাম ধ্যান। গুরু তথা আরাধ্য দেবতার স্মরণের নাম জপ। এ তিনের মধ্যে চিত্তকে শুদ্ধ করা ও তাঁকে পাওয়ার একমাত্র প্রধান অঙ্গ শ্বাসে প্রশ্বাসে জপ। তাঁর নাম ছাড়া একটা শ্বাসও যেন কোনওভাবে বৃথা না যায়।
সাধুবাবা বললেন তাঁর গুণরাশির ভাবনার নাম ধ্যান। আমি এর ঠিক মানেটা বুঝলাম না। না বোঝার ব্যাপারটা বললাম। তিনি অনেক বোঝাতে শেষে বুঝলাম। আরাধ্য দেবতার রূপ ও তিনি সমস্ত গুণরাশির আধার-এই স্মরণ করার নাম ধ্যান। এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে গেলাম,
— অনেক বয়স হল আপনার। সারাটা জীবন অনেক পথই তো চললেন। এই চলার পথে এমন কোনও সুখ বা দুঃখের ঘটনা কি আছে, যা আজও আপনি ভুলতে পারেননি।
আমার এ জিজ্ঞাসায় দেখলাম বৃদ্ধের মুখখানা আনন্দে ডগমগ হয়ে উঠল। মুহুর্তে অপার্থিব এক আনন্দধারা চোখ থেকে নেমে এল কপোল বেয়ে। আনন্দ ও আবেগ সম্বরণ করে তিনি বললেন,
— হাঁ হাঁ বেটা, সুখের ঘটনা আমার সারাজীবনব্যাপী। যে দিন ঘর ছেড়ে পথে পা দিয়েছি। দুঃখ শব্দটা আমার শোনা তবে তার সঙ্গে ‘কভি মুলাকাত নেহি হুয়া’। আমার গুরুর অপার করুণায় কৈলাস ও মানসসরোবর গেছি তিনবার। দু-বার ‘বচপন’ অবস্থায় গুরুজির সঙ্গে। আর একবার গেছি একা, তখন আমার বয়েস বছর পঁয়ত্রিশ বা একটু বেশি হবে। যখন একা গেছিলাম তার অনেক আগেই আমার গুরুজির দেহান্ত হয়ে গেছে। যাইহোক, তিব্বতে মানসের পথে, তবে তখনও পৌঁছইনি। পথে একদিন শুরু হল প্রবল তুষারপাত। সেই তুষারপাত এতটাই প্রবল, এতটাই তীব্র যে সে বার বহু মানসযাত্রী আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। মৃত্যুও হয়েছিল অনেকের। ওই পরিস্থিতিতে তুষারপাতের কবলে পড়ে আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি। অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইলাম তুষারের মধ্যে।
এই পর্যন্ত বলে একটু থামলেন। এর পরের কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলাম বৃদ্ধের দিকে। সামান্য নড়ে চড়ে বসলেন। তাকালেন মুখের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে। আমার বদঅভ্যাসবশত একবার প্রণাম করলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এবার এক রাউন্ড দাড়িতে হাত বুলিয়ে নিয়ে বললেন,
— বেটা, এর পরের ঘটনা যেমন অবিশ্বাস্য তেমনই বিস্ময়কর। একটু জ্ঞান আসতে দেখলাম আমার একান্ত আপনজন গুরুজি মহারাজের সামনে শুয়ে আছি একটা পাহাড়ি গুহায়। সামনে একটা ধুনি জ্বলছে। গুরুজি একটা কাপড়ের পুটলি করে ধুনির তাপ দিচ্ছেন আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত। কল্পনাতেও আসছে না, কোথায় ছিলাম আর এই গিরিগুহায় এলামই বা কি করে! একই সঙ্গে ভাবতে পারছি না, গুরুজি আমার সেই কবেই দেহরক্ষা করেছেন আর এখন তিব্বতের অজানা এক গুহায় তাঁকে দেখছি রক্ত মাংসের দেহে। শিষ্যের যেখানে গুরুজির সেবা করা উচিত, সেখানে গুরুজি যিনি স্বয়ং ভগবান, তিনিই শিষ্যের সেবা করছেন পায়ে হাত দিয়ে মাথা পর্যন্ত। আনন্দে আবেগে অশ্রুধারা বেরিয়ে এল দুচোখ ফোটে। সুস্থ হতে উঠে বসলাম। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে কেঁদে ফেললাম হাউহাউ করে। মুখে সেদিন গুরুজিকে কোনও কথা বলার মতো ভাষা ছিল না। তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু কেঁদেছি আর কেঁদেছি। মেরা বেটা, তু শুন লে, আপনি অন্তর সে সমঝ লে, আমি নিঃস্ব সন্ন্যাসী। আমার গুরুজিকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। তবে সারা ভারতের সমস্ত গৃহত্যাগী আমার মতো নিঃস্ব সাধুসন্ন্যাসীদের একটাই সবচেয়ে বড় সম্পদ চোখের জল, সেটাই দিলাম গুরুজির শ্রীচরণে।
পড়ুন : লোভের হাত থেকে মুক্তির পথ দিলেন বৃদ্ধ সাধুবাবা
সাধুবাবা থামলেন। উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। তাঁর দুচোখের মন্দাকিনীধারা স্পর্শ করল আমার দেহ ও মনকে। শিহরিত হয়ে উঠল আমার অন্তর। এমনটা এর আগে শত শত সাধুসঙ্গতেও হয়নি কখনও। আনন্দ ও আবেগে আমিও ঢুকরে কেঁদে উঠলাম। সমানে হাত বুলাতে লাগলাম বৃদ্ধের পিঠে যেমন করে ছোটবেলায় মা আমার হাত বুলিয়ে দিত পিঠে। সাধুবাবা ধীরে ধীরে আবেগ সম্বরণ করে নিয়ে বললেন,
— এরপর গুরুজি আমাকে বললেন, গুরুর কখনও মৃত্যু হয় না। লৌকিক প্রয়োজনে দেহ ছাড়লেও জানবি সেই মহাশক্তিস্বরূপ গুরু তার সন্তানের উপর সব সময় নজর রেখেছেন। কোনও প্রয়োজন হলে তবেই তিনি কখনও স্থূল দেহে, কখনও অলক্ষ্যে সূক্ষ্মদেহে তাঁর সন্তানকে রক্ষা করেন। শোন বেটা, এখনও দুদিন তুষারপাত চলবে সমানে। এই গুহা ছেড়ে কোথাও যাবি না। তোর খাবারের সমস্ত ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। পরিস্থিতি যখন ঠিক হবে তখন বেরিয়ে পড়বি। আমার আশির্বাদ আর নজর তোর উপরে সব সময়েই আছে, থাকবেও। প্রয়োজন হলে আমি আবার এসে যাব।
এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— কথাগুলো বলে গুরুজি মুহুর্তে অন্তর্হিত হলেন। দেখলাম গুহার এক কোণে নানান ধরণের সুস্বাদু ফল আর খাবার। বেটা, আনন্দে প্রাণভরে শুধু কাঁদলাম। জীবন মন আমার ধন্য ধন্য আর ধন্য। এরপর মানসসরোবরের পথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুন্দরভাবে সরোবরে স্নান আর কৈলাস দর্শন ও পরিক্রমা করে ফিরে এলাম।
বেটা, এরকম নানা সুখের ঘটনা নিয়েই কেটে গেল জীবনের এতগুলো বছর। আর একটা কথা বলি, জীবনে এই প্রথম তোকে আমার গুরুজির কথা বললাম। এই সব কথা কাউকে বলতে যাবি না। এ যুগে এসব কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। বললে হেয় হয়ে যাবি। মিথ্যাবাদী বলবে তোকে।