সংসারে নিত্য অশান্তি থেকে মুক্তির পথ জানালেন সাধুবাবা
এমন কোনও বাড়ি নেই যে বাড়িতে অশান্তি নেই অথচ তাদের অভাব অনটন কিছুই নেই। কেন এমনটা হয়, এটা কি কোনও গ্রহের জন্য হয়? এ থেকে মুক্তির উপায় কি?
ভেড়াঘাটে পিচের রাস্তা ধরে একটু এগোতে প্রথমে পড়ল একটা জৈনমন্দির, পরে কালীমন্দির। এ দুটো দেখে একটু চড়াই পথ ধরে এগোলাম চৌষটযোগিনী মন্দিরের দিকে। পথের দুপাশে কয়েকটা খাবারের দোকান পার হতে ডানপাশে মাঝারি আকারের বহু পুরনো একটা মন্দির। নাম পচমটা মন্দির। মন্দিরে ভগবান শঙ্করের লিঙ্গমূর্তি, দেবী নর্মদা আর গণেশ বিগ্রহ। এগুলো দেখে ওই রাস্তা ধরে চলতে লাগলাম সোজা। প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে এলাম মাঝারি আকারের একটা পাহাড়ের সানুদেশে।
এখান থেকে শুরু হয়েছে পাথর কেটে তৈরি সিঁড়ির মতো। বেশ চওড়া। পরপর একশো আটটা ভেঙ্গে উঠে এলাম একেবারে উপরে। টানা ওঠা যায় না। হাঁপিয়ে যেতে হয়। পাহাড়চুড়োয় অনেকটা জায়গা জুড়ে গোলাকার সমভূমি। চারিদিক উঁচু পাথরের প্রাচীরে ঘেরা। ভিতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ল গোলাকার চত্বরে গৌরীশঙ্করের মন্দির। প্রাচীরের ভিতর দিকে দেওয়াল জুড়ে সারি সারি একশো কোটি দেবী দুর্গার সহচরীদের মূর্তি। এদের মধ্যে যোগিনীমূর্তি ৬৪টি। বৃষের পিঠে বসা হরপার্বতী এই মন্দিরের মূল আকর্ষণ। হরপার্বতীকে ঘিরে লক্ষ্মীনারায়ণ, দত্তাত্রেয়, সূর্য, চন্দ্র, তারাদেবীসহ আরও প্রায় ৩০০টি নানা দেবদেবী। মাত্র ৯টি ছাড়া কোনও মূর্তিই বলতে গেলে অক্ষত নেই। মূর্তিগুলি সব হরপার্বতীর বন্দনায় মগ্ন। সামান্য সোনালি আভাযুক্ত প্রত্যেকটি মূর্তি গঠন পারিপাট্যে অতুলনীয়। সূক্ষ্ম কারুকার্যখচিত বিগ্রহগুলি বহন করছে এক অনবদ্য স্থাপত্যকলার সাক্ষর। শিবমন্দিরটি নির্মিত দশম শতাব্দীতে। গোলাকার মন্দির অঙ্গনের জন্য শিবমন্দিরের নাম হয় গোলকি মঠ। পরবর্তীকালে ৬৪টি যোগিনীর মূর্তির কারণে নাম হয়েছে চৌষটযোগিনী মন্দির।
পাহাড় চুড়োয় প্রশস্ত সমতল অঙ্গন। এরই ডানদিকে একটা কোণে বসে আছেন এক সাধুবাবা। পরনে সাদা বসন। মাথায় জটা আছে, তবে লম্বায় বড় নয়। পাশে রয়েছে আমরণের সঙ্গী ঝোলাটা। গায়ের রঙ ময়লা। গালভরা কাঁচাপাকা দাড়ি। লম্বা লাঠিটা শোয়ানো। গলায় ও বাহুতে রুদ্রাক্ষ। দেখে মনে হল শিবের উপাসক। পাতলা নির্মেদ চেহারা। নাক ও চোখমুখে বেশ টান আছে একটা। বয়েস অনুমান ৬০/৬৫ হবে। বসে ছিলেন উবু হয়ে। কাছাকাছি গিয়ে প্রণাম করতেই বললেন ওঁ নম শিবায়।
সাধুবাবার মুখোমুখি হয়ে বসলাম,
– বাবা আপনি কি এখানে থাকেন, না অন্য কোথাও ডেরা আছে আপনার?
উত্তরে সাধুবাবা জানালেন,
– না বেটা, এখানে আমার কোনও ডেরা নেই। আস্তানা গুজরাটের জুনাগড়ে। এখানে এসেছি বাবা মহাদেব আর পার্বতীমাঈকে দর্শন করতে।
এই সাধুবাবা খুব আস্তে আস্তে কথা বলেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় থাকি, কি করি, জব্বলপুরে কি করতে এসেছি, বাড়িতে কে আছে ইত্যাদি। সমস্ত কথার উত্তর দিলাম। দেখলাম বেশ খুশিই হলেন। জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, সমস্ত তীর্থদর্শন কি আপনার সম্পূর্ণ হয়েছে?
মাথা নেড়ে মুখেও বললেন,
– হাঁ বেটা, গৃহত্যাগের পর কোনও তীর্থদর্শন বাকি রয়েছে বলে মনে হয় না।
এরপর সাধুবাবার ফেলে আসা জীবনকথা ধীরে ধীরে জেনে নিয়ে নানা কথা প্রসঙ্গে একসময় বললাম,
– বাবা, এমন কোনও বাড়ি নেই যে বাড়িতে অশান্তি নেই অথচ তাদের অভাব অনটন কিছুই নেই। কেন এমনটা হয়, এটা কি কোনও গ্রহের জন্য হয়? এ থেকে মুক্তির উপায় কি?
কথাটা শোনামাত্র সাধুবাবা এক নজরে দেখে নিলেন আমার মুখখানা। এতক্ষণ বসেছিলেন উবু হয়ে। এখন বসলেন আরাম করে বাবু হয়ে। চোখে চোখ রেখে বললেন,
– প্রশ্নটা করেছিস খুব ভালো তবে উত্তরটা তোর ভালো লাগবে না। মানুষের অজান্তে অজ্ঞাতে অলক্ষ্যে কত সুখ বা দুঃখের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তা কে জানতে পারে। বেটা, প্রতিটা বাড়িতে মা লক্ষ্মী ফটোতে অবস্থান করেন না। তাঁর প্রকৃত অবস্থান ভাতের হাঁড়িতে। একেই তো ব্রহ্মার পত্নী গায়ত্রীর অভিশাপে মা লক্ষ্মী চঞ্চলা তার উপরে আরও বেশি করে তাঁকে চঞ্চল অস্থির করে রেখেছে প্রতিটা বাড়ির গৃহিণীরা। সুতরাং শান্তিটা আসবে কোথা থেকে? বেটা, আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, এদেশের কোনও সংসারে কোনও দিনই শান্তি আসবে না।
একটু থামলেন। ভাবছি, বলে কি সাধুবাবা! এসব কথা তো জন্মেও কোনও দিন শুনিনি কারও মুখে। এই মুহুর্তে কোনও কথা বললে কথার ছন্দ ও গতি নষ্ট হয়ে যাবে বলে চুপ করে রইলাম। সাধুবাবা চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে নিয়ে বললেন,
– বেটা, প্রতিটা বাড়িতে দেখবি ভাত রাঁধার সময় মেয়েরা হাতা বা খুন্তি দিয়ে ভাত নাড়ে। হাতা বা খুন্তিতে চাল লেগে থাকলে তা ছাড়ানোর জন্য হাঁড়ির কাঁধায় সমানে ঘটাং ঘটাং করে আঘাত করতে থাকে। যদি না লেগে থাকে তবুও দু-এক ঘা মারবেই মারবে। মানুষ জানে না, দিব্যদৃষ্টি তো নেই ফলে দেখতে পায়না, অলক্ষ্যে হাঁড়িতে আঘাত মানে মা লক্ষ্মীর অঙ্গে আঘাত করা। ক্ষুব্ধ লক্ষ্মীর দৃষ্টিতে দূষিত অন্ন খায় গৃহীরা। ফলে দেহমনের স্বস্তি নষ্ট হয় ও সাংসারিক জীবনের শান্তি নষ্ট হয়ে যায় অলক্ষ্যে, অজান্তে। তুই নিজের বাড়িতে বলেও একাজ থেকে মেয়েদের বিরত করতে পারবি না। আগেই বলেছি না, মেয়েদের সহজাত অভ্যাস। ওরা যখন জন্মায় তখন এই অভ্যাস নিয়ে জন্মায় শান্তি না পাওয়ার জন্য।
সঙ্গে সঙ্গেই বললাম,
– বাবা, আপনি বিয়ে করেননি সুতরাং সংসারের কোনও প্রশ্নই আসে না। মেয়েদের এই অভ্যাস নিয়ে এসব কথা এত জোর দিয়ে বলছেন কি করে?
সাধুবাবা হাসতে হাসতে বললেন,
– সংসার না করলে কি সংসারের কথা জানা যায় না? এখনকার মতো আগেকার দিনে আমাদের গাঁয়ে এ্যালুমিনিয়মের হাঁড়ির প্রচলন ছিল না। তখন তো অত বুঝতাম না, এখনও চোখে ভাসে, মাটির হাঁড়িতে ভাত নাড়াচাড়া দিয়ে চামচটা ঠকঠক করে বারকয়েক হাঁড়িতে ঠুকে দিতে দেখেছি মাকে। এতে যে লক্ষ্মীকে আঘাত করা হয় তা আমি নিজেও জানতাম না। একদিন দুপুরে গুরুজির জন্য ভাত রান্না করার সময় হাঁড়িতে হাতা ঠুকতে দেখে আমাকে নিষেধ করলেন এবং কারণটা জানালেন। বেটা, মানুষের অনেক কিছু অজানা বলে মানুষ দুঃখ ভোগ করে অজান্তে। আবার অনেক কিছু নিষিদ্ধ জেনেও সেই কাজটা করে অশান্তি ভোগ করে। ভাতের হাঁড়িকে লক্ষ্মীজ্ঞান করবি, দেখবি দুমুঠো অন্নের অভাব হবে না কোনও দিন।
একটু থেমে এমন একটা চমৎকার উদাহরণ দিলেন, যা একটু লক্ষ্য করলেই নজরে পড়ে। বৃদ্ধ সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, একটু খেয়াল করলেই দেখবি, বড় বড় উৎসব ও মহোৎসবে যে বামুনঠাকুর রান্না করে, বিশাল ওই কর্মযজ্ঞের রান্নায় হাতা বা খুন্তির খটাং খটাং আওয়াজ তুই কোনও দিন শুনতে পাবি না। এতে প্রীত মা লক্ষ্মী হাজার হাজার মানুষের খাওয়ার কাজটা উতরে দেন সুন্দরভাবে। বেটা, তুই শ্রীক্ষেত্রের কথাটা একবার ভাব। ওখানে হাতা খুন্তির খটাং খটাং আর ভাতের হাঁড়িতে ও দুটোর কোনও সম্পর্ক নেই। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোকের অন্নপ্রসাদ জুগিয়ে যাচ্ছেন মা লক্ষ্মী, যা গ্রহণ করে মানুষের মন তৃপ্ত ও আনন্দময় হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
সাধুবাবার ‘ভাতের হাঁড়িতে মা লক্ষ্মীর অবস্থানের’ কথা শুনে মনে পড়ে সাধুসন্ন্যাসীদের খর্পরের কথা। ১৯৮১ সালের কথা। উজ্জয়িনী থেকে গেছিলাম কালভৈরব মন্দিরে। এই মন্দিরে উঠতে গেলে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙ্গেই উঠতে হয়। সিঁড়ির পাশে গাছের গোড়াগুলি সব শান বাঁধানো। ছায়াছন্ন শীতল পরিবেশ তীর্থযাত্রীদের ক্যাঁচক্যাঁচানি নেই। দেখি এক সাধুবাবা গাছে ঠেস দিয়ে বসে আছেন ঝোলাটা পাশে রেখে। ওই সাধুবাবা ছিলেন নাথ সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী। প্রণাম করে বসলাম। কথা শুরু হল, হৃদ্যতা বাড়ল। একসময় ৬৫ বছরের বৃদ্ধ সাধুবাবাকে প্রণাম করে বসলাম,
– বাবা, ভারতের অসংখ্য তীর্থপর্যটন তো করেছেন। তার মধ্যে কোন তীর্থ সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আপনার, বলবেন দয়া করে?
সাধুবাবা উল্লসিত হয়ে বললেন,
– ‘হরদুয়ার বেটা হরদুয়ার’। বেটা, হরিদ্বার এমনই এক তীর্থ, এখানে কেউ নিতে আসে না, প্রাণমন ভরে দিতে আসে। এসে দেয় বলেই তো কি গৃহী কি সাধুসন্ন্যাসী সকলে ফিরে যাওয়ার সময় অন্তরভরে নিয়ে যায় অনাবিল আনন্দ। বেটা, এখানে যা চাওয়া যায়, গৃহী ও সাধুসন্ন্যাসীরা তাইই পেয়ে থাকেন। না চাইলেও পাওয়া যায়। গঙ্গামাঈয়াই দু-হাত ভরে দেন। তা যদি না হত তাহলে হরিদ্বারে দশনামী সম্প্রদায়ের আটটা আখড়া চলছে কেমন করে? আখড়ায় প্রতিদিন সাধুভোজন, দরিদ্রনারায়ণ সেবা ও আনুষঙ্গিক খরচ প্রচুর। কোনও আখড়ার মহন্ত মহারাজ কারও কাছে ‘কভি ভিখ মাঙ্গে’ না। বছরের পর বছর ধরে তীর্থদেবতাই জুটিয়ে দেয়, বুঝেছিস বেটা।
কথা শেষ হতে জানতে চাইলাম,
– আখড়ার মহন্ত মহারাজের পদ বিশাল। সম্মানের খাতিরে তিনি না হয় কারও কাছে ভিখ মাঙলেন না কিন্তু কি হরিদ্বার, কি কালভৈরব, আপনাকে কারও না কারও কাছে হাত তো পাততেই হয়।
কথাটা শেষ হতে সজোরে মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললেন,
– না না, বেটা, ও অভ্যাসটা আমার নেই। চাইতে হয় না। আপনিই জুটে যায়। সারা দিনরাতের মধ্যে খাই তো মাত্র একবার, একাহারে থাকি। কতটুকুই বা খাই। খিদেটা তো নেই, মরে গেছে। বেটা, দীক্ষার পর একটানা ৪০ দিন অন্ন গ্রহণ না করা আমাদের একটা নিয়ম বা ব্রত। দিনান্তে একবার ফলমূল খেতে হয়। ওতে কি মন ভরে না পেট? রসনা, আহার ও খাদ্যবস্তুর উপর লোভ সম্বরণ ও সংযমতার জন্য দীক্ষার পরে ৪০ দিনের এই ব্রত। এতে ধীরে ধীরে খাওয়ার উপরে ইচ্ছেটা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।
দীক্ষার পর পরই যে এমন একটা ব্রত পালন করতে হয়, এর আগে কোনও সাধুসন্ন্যাসীর মুখ থেকে শোনা ছিল না। আজ নতুন একটা বিষয় জানতে পেরে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। সাধুবাবা বললেন,
– বেটা আদর ও ভালোবাসায় যেমন নারী বা স্ত্রী বশীভূত এবং সংসার সুখের হয়, তেমনই ক্ষুধা বশীভূত হয় রসনা ও আহার সংযমে, অন্তরের সুখ হয়। আবার বলছি বেটা, কারও কাছে চাইতে হয় না। গুরু মহারাজের কৃপায় আপনিই জুটে যায়।
জানতে চাইলাম,
– এখানে একটা কথা আছে বাবা। ঘুমন্ত সিংহের মুখে হরিণ কখনও প্রবেশ করে না। তাকে ধরে খেতে হয়। এটাই যদি সত্য হয় তাহলে খাবার বা তার জন্য অর্থ না চাইলেও এসে যায় কেমন করে, গেরুয়াবসনের জন্য?
বাবু হয়ে বসা পা-দুটো আবার ঝুলিয়ে বসলেন। মনে হল যেন বেশ আরাম হল। আমি যেমন ছিলাম তেমনই রইলাম। বললেন,
– গেরুয়াবসন পরা থাকলেই কি টাকা আসে? কটা লোক ডেকে ডেকে টাকা দিচ্ছে সাধুদের। এই তো তোর সঙ্গে কতক্ষণ ধরে কথা বলছি। কত লোকই তো দেখতে দেখতে চলে গেল পাশ দিয়ে। একটা তীর্থযাত্রীও কি এসে একটা টাকা দিয়ে বলেছে, এই নাও সাধুবাবা, কিছু খাবারটাবার কিনে খেও।
এ কথার কোনও উত্তর দিতে পারলাম না। আমি নিজেও এসে একটা পয়সা প্রণামী দিইনি। চুপ করে আছি। এবার সাধুবাবা কারো কাছে না চেয়ে পাওয়ার আসল রহস্যটা তুলে ধরলেন।
– বেটা, যেদিন দীক্ষা হয় সেদিনই দীক্ষার পর গুরুজি একটা খর্পর তুলে দেন হাতে। এটা সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের নিয়ম। খর্পর থাকলে সন্ন্যাসীদের কখনও শুধু খাওয়া নয়, আমৃত্যু প্রয়োজনীয় কোনও কিছুর অভাব হয় না।
কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম খর্পর বস্তুটা কি? সাধুবাবা মুখে কিছু বললেন না। ছোট্ট ঝোলা থেকে বের করলেন একজনের রান্নার উপযোগী ছোট্ট একটা হাতল ছাড়া লোহার কড়াই। ঠিক যেন পিঠে তৈরির সরা, তবে অত বড় নয়। সেটা দেখিয়ে বললেন,
– বেটা, আমি ভিক্ষে করি না, তবে এতে ভিক্ষে করা যাবে। রুটি করা যাবে। ‘চাউল অউর সবজি ভি।’ এটা একজনের রান্নার উপযোগী হলেও ‘বেটা ইয়ে ভোলেনাথ কা খর্পর। ভোলাবাবা কা ভাণ্ডার।’ কাছে থাকলে খাবার মিলবেই মিলবে। প্রয়োজনে হাজার লোকের খাবার এই খর্পর এনে দিতে পারে, দেয়ও। খর্পরের এমনই মহিমা ‘ভোলেবাবা কি কৃপা সে।’
বিষয়টা আমার একেবারেই জানা ছিল না। আজ জানতে পেরে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। মুহুর্তে মনটা উজ্জয়িনী থেকে ফিরে এল জব্বলপুরে গৌরীশঙ্কর মন্দিরের দোড়গোড়ায়। মনে মনে ভাবছি, গৃহীদের হাঁড়ি আর সাধুসন্ন্যাসীদের ছোট্ট একটা খর্পরের অজানা অন্তর্নিহিত কত রহস্য আর অনন্ত মহিমা। বললাম,
– বাবা, অনেক কথা হল অনেকক্ষণ ধরে। এখন একটা সুন্দর কথা বলুনতো দেখি!
সাধুবাবা হেসে ফেললেন। বললেন,
– বেটা তোর দীক্ষা হয়েছে?
মাথা নেড়ে বললাম হ্যাঁ। এবার হাসি ছড়ানো মুখে বৃদ্ধ বললেন,
– বেটা, শিষ্যই প্রথম দাতা যে গুরুদেবের কাছে নত করে মাথা, দেয় দেহমন। পরে গুরুই হন দাতা, যিনি শিষ্যকে দেন নামরূপ পারমার্থিক পরমধন।
চৌষটযোগিনী মন্দির, জব্বলপুর, ছবি – সৌজন্যে – উইকিপিডিয়া