কামকে অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই, সাধুবাবার স্বীকারোক্তি
ভরা যৌবনটাই তো কাটল পথে পথে। সংসার করলেন না। কোনও নারীদেহ ভোগ করলেন না। কিন্তু দেহমনে রিপুর প্রভাবকে তো অস্বীকার করতে পারবেন না।
এখন শীতকাল। বেলা দশটা। ট্রেন ছাড়ার এখনও অনেক দেরি। রোদের তাপ আর শীতের ঠান্ডা, এ দুয়ের মাখামাখি এমন যে গায়ে সওয়া যায়। এক কথায় বলা যায় কড়ামিঠে রোদ। অসংখ্য যাত্রীতে ভরা এই জব্বলপুর স্টেশন প্ল্যাটফর্ম। এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আর এক প্ল্যাটফর্ম, এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে এলাম একেবারে শেষ প্ল্যাটফর্মের মাথায়। এখানে আপাতত কোনও ট্রেন আসবে না বলেই হয়ত বেশ ফাঁকা। দেখলাম এক সাধুবাবা বসে আছেন ছোট্ট একটা আসন বিছিয়ে। পাশে এগরোলের মতো গোটানো একটা কম্বল। দু মাথায় দড়ি দিয়ে বাঁধা। জলপাত্র বা ঝোলাঝুলি কিছু নেই। বয়েস আন্দাজ বছর চল্লিশ হবে। গায়ের রঙ ময়লা। মাঝারি গড়ন। মুখশ্রী মোটামুটি। তেমন আকর্ষণ কিছু নেই। কাঁধ পর্যন্ত চুল। সাদা কাপড় পরা। একটুকরো গায়ে জড়ানো। খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন স্থির হয়ে। পোশাকে ও ভাবে একেবারেই সাদামাটা।
পায়ে পায়ে এগিয়ে সাধুবাবার সামনে বসলাম মুখোমুখি হয়ে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে কোনও বাধা দিলেন না। শুধু মুখে ‘নমো নারায়ণায়’ বলে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন। প্রথম কথা শুরু করলাম এইভাবে,
– বাবার বাড়ি কোথায় ছিল, এখানে না অন্য কোথাও?
বিনয়ীকণ্ঠে বললেন,
– আমার বাড়ি ছিল মহারাষ্ট্রে।
সাধুবাবার চেহারাটা দেখে ঠিক সাধু সাধু মনে হল না। রাতে ট্রেন, কোনও কাজ নেই। মনে মনে ভাবছি যতটা সময় পারি এখানে বসে কাটাই। যদি কিছু জানতে পারি ভাল, না পারলেও ক্ষতি নেই। অকারণ ঘোরাঘুরির চাইতে সময়টা অনেক বেশি ভাল কাটবে এখানে। জিজ্ঞাসা করলাম,
– এখন বয়েস কত হল আপনার?
কোনোরকম ইতস্তত না করেই বললেন,
– এখন বয়েস চলছে পঁয়তাল্লিশ।
প্রশ্ন করলে উত্তর দিচ্ছেন দেখে বুঝতে পারলাম সাধুবাবার কার্পণ্য নেই। জানতে চাইলাম,
– প্ল্যাটফর্মে বসে আছেন, যাবেন কোথাও নিশ্চয়ই, কোথায় যাবেন?
প্রসন্নভাবে বললেন,
– আমি বেশিরভাগ সময় হরিদ্বারে থাকি। যাব হরিদ্বারেই।
– ওখানে কি আপনার কোথাও ডেরা আছে?
মাথাটা নেড়ে বললেন,
– না, আমার কোথাও ডেরা নেই। কখনও হর কি পিয়ারীতে, কখনও কোনও আশ্রম বা মন্দিরের বারান্দায় রাতটা কাটিয়ে দিই। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে, জপ করতে বসে যাই গঙ্গার পাড়ে। তারপর ভিক্ষায় বেড়িয়ে পড়ি। পেটের মতো কিছু সংগ্রহ হলে আবার এসে বসি গঙ্গাতীরে। সারাদিন বসে বসে জপ করি। এইভাবে দিনগুলো কেটে যায়।
এ কথায় আমার একটু টনক নড়লো। সারাদিন ধরে দিনের পর দিন জপ করাটা যে ছেলেখেলা নয় তা বেশ ভাল করেই বুঝলাম। বাইরেটা দেখে সাধু সাধু মনে হচ্ছিল না, এখন মন বলছে সাধু। এঁর ভাবটা মিশুকে। উত্তর দিতে মনে কোনও সঙ্কোচ নেই। জানতে চাইলাম,
– গঙ্গাতীরে তো সব সময় লোক গমগম করছে। ওখানে বসে জপ করেন, জপে মন বসে?
এতক্ষণে সাধুবাবার মুখে হাসির একটা হালকা রেখা ফুটে উঠল। বাঁ হাতটা জানু থেকে সরিয়ে বাঁপাশে গোটানো কম্বলের উপর রেখে বললেন,
– বেটা, মনটা স্থির হয় না সহজে। জপেও তাড়াতাড়ি মন বসে না। জপ করতে করতে জপে মন বসে। মন বসিয়ে কখনও জপ হয় না। বছরের পর বছর ধরে একই নাম সমানে জপ করতে থাকলে কখন মনটা যে কোথায় তলিয়ে যাবে তার কোনও হদিসই তুই পাবি না। সামনে তখন যদি কেউ ঢাকঢোলও পেটায় তা মনকে স্পর্শ করতে পারবে না, জপে চ্যুতিও ঘটে না। তবে প্রথম অবস্থায় খানিক জপ করতে করতে মনটা অন্যদিকে, অন্য চিন্তায় চলে যেত। এখন আর যায় না।
এই পর্যন্ত বলে থামতেই জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, আপনি বললেন জপের প্রথম অবস্থায় মনটা জপ করতে করতে অন্য চিন্তায় যেত। সংসার থাকলে না হয় সংসারের চিন্তা হত। সংসার ছাড়া আর অন্য কি চিন্তা আসত মনে?
প্ল্যাটফর্মে ইতস্তত যাত্রীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরই মধ্যে একটা ট্রেন অন্য প্ল্যাটফর্মে এসে চলে গেছে। আওয়াজ পেয়েছি তবে ঘুরে দেখিনি। মনটা সাধুবাবার কথাতেই একাগ্র হয়ে আছে। এ প্রশ্নে হাসি হাসি মুখ করে বললেন,
– সংসার ছাড়াও তো হাজার চিন্তা থাকতে পারে। সব কি আর বলা যায়! কত রকম চিন্তা জপের সময় ঘুরপাক খেত মাথার মধ্যে। বেটা, চিন্তার কি আর শেষ আছে?
সাধুবাবাও মানুষ, আমিও। আমার চিন্তাধারার সঙ্গে সাধুবাবার কোনও মিল আছে কিনা তা জানার উদ্দেশ্যে একরকম জোর দিয়েই জানতে চাইলাম,
– জপের সময় যে সব চিন্তাভাবনাগুলো আপনার মনে উদয় হত সেগুলো একটু বলুন না দয়া করে।
একথা শুনে মিনিটখানেক চুপ করে রইলেন। পরে একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে সাধারণভাবে বললেন,
– আমার গৃহত্যাগের পর অনেক ধাক্কা খেতে খেতে চলে গেলাম হরিদ্বারে। বেটা, এদেশে যত তীর্থ আছে তার মধ্যে হরিদ্বারের নামটাই আগে মনে আসে। ওখানে এক পাঞ্জাবি সাধুর কাছে দীক্ষালাভ হয়। আমার গুরুজি ছিলেন নানকপন্থী। তিনি দীক্ষা দিয়ে কোথায় যে চলে গেলেন তা জানিনা। দীক্ষার পর আমি একটা দিনের জন্যেও গুরুসঙ্গ করতে পারিনি। গুরুজি বয়েসে বৃদ্ধ ছিলেন। দীক্ষা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বেটা, আমার সঙ্গে তোর আর কোনওদিনই লৌকিকভাবে দেখা হবে না। তবে তাতে তোর কিছু আসবে যাবে না। আমি তোকে যে গুরু পরম্পরাগত সিদ্ধমন্ত্র দিলাম, এই মন্ত্র সদা সর্বদা জপ করবি। এতে ধীরে ধীরে মনের সমস্ত ময়লা ধুয়ে মুছে যাবে, সময়ে বিভিন্ন অবস্থালাভ হবে। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সব সময় জপ করবি। তারপর যা করার আমি তোর মঙ্গলের জন্য অলক্ষ্যেই করে যাব। কোনও চিন্তা করবি না।
গুরুর বাহ্যদেহের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকলেও, গুরুসঙ্গ না করলেও জানবি দীক্ষার পর মন্ত্রের মাধ্যমে শিষ্যের অন্তরের সঙ্গে গুরু বা ইষ্টের মধ্যে একটা অনন্ত কালের সূক্ষ্ম বন্ধনসূত্রের সৃষ্টি হয়ে একের সঙ্গে অপরের যোগাযোগটা রয়ে যায়। তেমন অবস্থায় উন্নত হলে এটা বোঝা যায়, দেখাও যায়। গুরুর সঙ্গে মন্ত্রের মাধ্যমে শিষ্যের বন্ধন অনন্তকালের। আমার সঙ্গে আর কখনও এমন করে দেখা হবে না বলে দুঃখের কিছু নেই। একবার যখন জোড়া লেগেছে তখন আর ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় নেই। এ তো ঘুড়ি নয়, সুতো কেটে গেলেই কোথায় গিয়ে পড়বে তার ঠিক থাকবে না। পূর্বজন্মের কর্মফলে তোর কিছু ভোগ এবং দুর্ভোগ বাকি আছে। ওগুলো সময় মতো হয়ে যাবে তবে জপ ছাড়বি না। গুরুর অবর্তমানে শিষ্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হয় না।’ গুরুজি এই কথা কটা বলে সেই যে কোথায় চলে গেলেন, তারপর আর তাঁর দেখা পাইনি।
একটানা এই পর্যন্ত বলে থামলেন। অনেক প্রশ্ন এসে গেল মনে কিন্তু ছেদ টানলাম না কথায়। ভাবছি ভাগ্যটা আমার ভালোই। কথাগুলো মনে বেশ ধরেছে। অদ্ভুত একটা আনন্দের স্রোত এই মুহুর্তে বয়ে যাচ্ছে মনে। আর ভাবছি, সাধুসঙ্গে আর কিছু হোক বা না হোক, তাৎক্ষণিক এই লাভটা হয়ই। সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, দীক্ষা দেয়ার পর গুরুজি চলে গেলেন। মনটা আমার বেশ খারাপই হয়ে গেল কিন্তু কথাগুলো এমনভাবে, এমন সুরে বলছিলেন যে সেই মুহুর্ত থেকে একটা ভরসা, একটা বিশ্বাস আমার অন্তরে এসেই গেল। এটা তিনি কৃপা করে সেদিন করে দিয়েছিলেন। গুরুসঙ্গ ছাড়া থাকলেও মনে আর কোনও অস্বস্তি হয়নি, আজও নেই। আমার গুরুজি এখন দেহে আছেন কি নেই তা জানি না।
একটু থেমে তিনি বললেন,
– এবার আসি তোর জিজ্ঞাসার উত্তরে। দীক্ষার পর প্রথম প্রথম জপের সময় অতীত জীবনের নানাকথা, নানা দৃশ্যপট ভেসে উঠত মনে। জপ করছি আর মনে মনে ভাবছি, বাড়িতে মা ভাই বোন বাবা কেমন আছে, আমার কথা তারা চিন্তা করছে কিনা, যে কারণে আর যার কারণে সব ছেড়ে বেরিয়ে এলাম, সে কি করছে, এমন অজস্র সাংসারিক চিন্তা জপের সময় মনকে গ্রাস করে ফেলত। তারপর ঢুকত খাওয়ার চিন্তা। জপের পর ক্ষিদে পায়। কিন্তু খাবার কে দেবে, কোথায় পাব, এমন চিন্তা চলত মনের মধ্যে।
কথার ভাঁজটা বুঝে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,
– বাবা, ঘর ছাড়লেন কেন? তখন আপনার বয়েস কত?
এই সাধুবাবার দেখলাম কথায় কোনও কিপ্টেমি নেই। ঠোঁটেই যেন উত্তরটা লেগে ছিল। বললেন,
– তখন আমার বয়েস কুড়ি। একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেললাম। আমরা উচ্চশ্রেণির ব্রাহ্মণ। ওরা একেবারেই নিচু জাত। বাড়ির ঘোর আপত্তিতে মনটা আমার বিগড়ে গেল। ভাবলাম, বিয়ে করব না, সংসারও করব না। ছোটখাটো একটা ব্যবসা করতাম। একদিন কি মনে হল, সব ছেড়েছুড়ে কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে পরলাম পথে। আর ফিরে যাইনি। দেখতে দেখতে বেটা পঁচিশটা বছর হয়ে গেল। বাড়ির কোনও খবর নেয়ার চেষ্টা করিনি। বাড়ির সকলে, আমি যাকে ভালোবাসতাম, সে কেমন আছে জানি না। ওদের কথা আর মনে পড়ে না। তুই জিজ্ঞাসা করলি তাই কথাপ্রসঙ্গে এল মা ভাইদের কথা।
এখন প্ল্যাটফর্মে দু-চারজন যাত্রী ছাড়া কেউ নেই। সাধুবাবা আর আমি। বললাম,
– বাবা, পঁচিশটা বছর ধরে এক তীর্থ থেকে ঘুরে বেড়ালেন আর এক তীর্থে। কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল, নানা ধরণের মানুষ আর সাধুও দেখলেন অজস্র। সাধু আর সংসারীদের মধ্যে ফারাক কতটা দেখলেন?
সাধুবাবার হাসিটা ভারি মিষ্টি। দাঁতগুলো ছোট ছোট। ঝকঝক করছে। নিঃশব্দ হাসিতে ভরা মুখখানা। বললেন,
– বেটা, গৃহীভক্ত দেখলাম তিন রকমের। একশ্রেণির ভক্ত আছে যারা যেখানে সাধু সমাগম ও ভগবদপ্রসঙ্গ আলোচনা হয়, সেখানেই যায়। তারপর পরিচিত মহলে সাধুদের কথা বলে কিন্তু নিজে সেই কথা মেনে চলে না। অন্যকে জ্ঞান দেয়। আরেক শ্রেণিরভক্ত আছে, যারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যায়, ধর্মের কথা শোনে। এরা এক কান দিয়ে শোনে আর এক কান দিয়ে বের করে দেয়। ধর্ম মেনে কোনও কাজটাই করে না। হাবভাবে এরা বড় ভক্ত।
একটু থামলেন। বুঝলাম বেশ রসিক সাধু। মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হাসছি, সাধুবাবাও হাসছেন। কিছু বললাম না। তিনিই বললেন,
– বেটা একশ্রেণির গৃহী ভক্ত আছে এরা সৎ ও সাধুসঙ্গ করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যায়। এরা ধর্মের কথা শোনে, ধর্ম মেনে চলে। কিন্তু কাউকে বলে বেড়ায় না বুঝতেও দেয় না।
দারুণ দিলেন সাধুবাবা। নিজের সঙ্গে মনে মনে মিলিয়ে নিলাম। আমি পড়লাম দ্বিতীয় আলোচিত ভক্তের মধ্যে। এবার বললেন,
– বেটা, সাধু আছে দু-রকমের। একশ্রেণির সাধু আছে এরা শিষ্যভক্তদের জ্ঞান বা উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দেয়। বাহবা কুড়ায়। আর এক শ্রেণির সাধু আছে, এরা শুধু উপদেশ বা জ্ঞান দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। দস্তুর মতো ঘাড় ধরে করিয়ে নেয়।
প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম,
– বাবা, ভরা যৌবনটাই তো কাটল আপনার পথে পথে। আপনি সংসার করলেন না। কোনও নারীদেহ ভোগ করলেন না। কিন্তু দেহমনে রিপুর প্রভাবকে তো অস্বীকার করতে পারবেন না। ক্ষুধার্ত কামরিপুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন অথচ তার আহার দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
কথাগুলো মন দিয়ে শুনলেন। কোনও উত্তর দিলেন না। মুখখানা দেখে মনে হল আমার কথাগুলোই ভাবছেন। বোধ হয় উত্তরও খুঁজছেন। খানিক চুপ করে থাকার পর বললেন,
– বেটা, রিপুর তাড়নাকে অস্বীকার করার সাধ্য আমার নেই। গৃহত্যাগের পর বেশ কয়েক বছর ধরে এদের তাড়নায় আমি তাড়িত হয়েছি। বেটা, সুন্দরী নারী বা নারীদেহ ভাল লাগে না এমন পুরুষ কি তুই একটাও খুঁজে পাবি সারা পৃথিবীতে। আমি কি এদের বাইরে? এখনও যে পেরেছি তা বলব না। তবে চেষ্টা করছি কাম নগর থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণভাবে নাম নগরে ডুবে থাকতে। একটা বিষয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি হয়েছে, নারকেলগাছ গোড়ায় নিরস। এর আগায় মিষ্টি জলের সঙ্গে ফল। ঠিক সাধনজীবন গোড়ায় নিরস, শেষে ফল পরমানন্দরস।
জানতে চাইলাম,
– সাধু হয়েছেন যখন, তখন ধরে নিতে পারি সারা ভারতের নানা তীর্থ পরিভ্রমণ করছেন। কোন তীর্থ বা জায়গা আপনার সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, বলতে পারিস সব তীর্থেরভাব প্রায়ই একই। মাহাত্ম্যও আছে সর্বত্র কিন্তু সমস্ত তীর্থের মধ্যে আমার মনে হয় বিশ্বনাথ ক্ষেত্র কাশীর ভাবটা আলাদা। বৃন্দাবন ও হরিদ্বারে মাছ মাংসের বালাই নেই। কাশীতে তুই সব পাবি। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ভাবের মানুষ পাবি। এমন কোনও দেবদেবীর মন্দির নেই যা কাশীতে নেই। হিন্দিভাষী লোকেরা যা চায় তাই পাবে। অন্য ভাষাভাষীর লোকেরাও প্রয়োজনের সব কিছুই পাবে। প্রাকৃতিক পরিবেশের কিছু তফাৎ থাকলেও কাশীতে খাওয়া, ঘোরা, দেখা, গৃহী কিংবা সাধুদের থাকার সুবিধা আছে। স্থান বিশেষে ভাবের পরিবর্তন ঘটে তীর্থযাত্রী বা ভ্রমণকারীদের। একমাত্র কাশীতে তাদের নিজস্ব সত্ত্বার বিসর্জন দিয়ে অন্যভাব গ্রহণ করতে হয় না বলে মনে হয়। তাই আমার ঘোরা তীর্থের মধ্যে কাশীই সবচেয়ে ভাল লেগেছে।
আচ্ছা বাবা , আপনার সাধুসংগের কথা যা পাই তাই পড়ি , আমারও মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হয় , যেমন আজকের টা পড়ে মনে একটা প্রশ্ন এসেছে যদি অপরাধ না নেন তবে বলছি , এই যে সবাই বলে নারী দেহ ভোগ করা , এই নারী দেহকে ভোগ করা কেন বলে ?