নারী পুরুষের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হতে থাকলে কী হয়, জানালেন সাধুবাবা
দিনের পর দিন দৃষ্টি বিনিময় হতে থাকলে অথবা কোনও লোভনীয় বা মনোগ্রাহী আকর্ষণীয় বস্তুতে নিয়মিত দৃষ্টিপাত হতে হতে ঘটনাটি ঘটে।
এদেশে কোনও না কোনও বস্তু ইত্যাদি নিয়ে কিছু না কিছু আকাল হয়েছে কোথাও না কোথাও। তবে সাধুদের আকাল হয়েছে ভারতের কোনও তীর্থে এমনটা কোথাও দেখিনি, শুনিনি কারও মুখে। তাই তিলওয়াড়া ঘাটে তিলভাণ্ডেশ্বর মন্দির থেকে বেরিয়ে সাধু খুঁজছি। যদি পাওয়া যায় তাহলে দু-চার কথা হবে। এদিক ওদিক দেখে মন্দির সংলগ্ন ঘাটের দিকে চললাম। দেখছি তীর্থযাত্রীদের যেন আর শেষ নেই। কেউ ঘাটে স্নান করে পুজো দিচ্ছে, কেউ বা সাধারণ পোশাকে।
একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, হালে কয়েক বছরে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কোনও কোনও তীর্থে মহিলাদের জন্য দু-চারটে প্রসাধনী ঘর রয়েছে। আমি যখন যেখানে যে সময়ে ভ্রমণ করেছি, কাপড়চোপড় ছাড়ার মতো কোথাও সামান্য আয়োজন, নিদেনপক্ষে চট দিয়ে ঘেরা জায়গা জ্ঞানত দেখিনি ভারতের কোনও তীর্থে।
পায়ে পায়ে এসে দাঁড়ালাম মন্দিরের কাছে তিলওয়াড়া ঘাটে। নর্মদা বয়ে চলেছে তরতর করে। স্বচ্ছ জল যেন আয়না, মুখ দেখা যায়। অনেকেই দেখলাম হরিদ্বারের মতো পাতার নৌকোয় ফুল দীপ ভাসাচ্ছে। ঘাটটা বেশ বড়। এদিক ওদিক চোখ ঘোরাতে দেখি বাঁধানো ঘাটের শেষে এক সাধুবাবা বসে আছেন সিঁড়ির উপরে হাঁটু মুড়ে। এগিয়ে গেলাম কাছে। দেখে মনে হল কাজকর্ম নেই তাই সিঁড়িতে বসে নর্মদার ঢেউ গুনছে।
সাধুবাবার পরনে গেরুয়াবসন। বহুবার কাচাকাচিতে রঙ খানিকটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। পাতলা চেহারায় বয়েসের ছাপ পড়েছে। তাও কম করে সত্তর পঁচাত্তর। মাথায় সামান্য সংখ্যক চুল কাঁচা, বাকিটা দুধঢালা। পেট পর্যন্ত দাড়ির দশাও তাই। চুলগুলো এলোমেলো। কাক এখনও টের পায়নি তাহলে বাসা হয়ত বেঁধেই ফেলত। খাঁড়া নাক। ফালাফালা চোখ। রোদে জলে গায়ের রঙ এখন তামাটে। বয়সের ভারে গাল ভেঙ্গেছে। প্রশস্ত কপালের বলিরেখাগুলো যেন উথলে উঠেছে। এত বয়েসেও রূপের টান আছে। দেখলে একবার দাঁড়িয়ে যেতে হয়। এ দেখা আমার হাত দশেক দূর থেকে।
দেখে বেশ ভালোই লাগল। আর কিচ্ছু ভাবলাম না। সরাসরি গিয়ে পায়ে হাত দিতেই একটু চমকে উঠলেন। অন্যমনস্ক থাকলে যেটা হয় আর কি! এবার মুখের দিকে তাকালেন। আমি কোনও কথা না বলে সাধুবাবার বসে থাকা সিঁড়ির পরের ধাপে বসে পড়লাম। মাথায় হাতটা বুলিয়ে দিলেন। বললাম,
– বাবা, আমি কলকাতা থেকে এসেছি। মধ্যপ্রদেশ ঘুরতে বেরিয়েছি। মহাদেব দর্শনের পর ঘাটে এসে আপনাকে দেখে কথা বলার লোভটা সামলাতে পারলাম না, তাই এসে গেলাম।
সাধুবাবা কথাটা শুনে বেশ আনন্দিত হয়ে বললেন,
– বেশ বেটা বেশ। আমার কোনও অসুবিধে নেই। মানুষ মেঘের ছায়া, হিংসুক বা কপটের সঙ্গে প্রণয় বা সখ্যতা, নতুন খাদ্যশস্য, স্ত্রীলোক এবং যৌবনকাল যেমন স্বল্পকালই ভোগ করতে পারে, তেমনি সংসারী মানুষ কি নারী কি পুরুষ ভাগ্যবলে অতিসামান্য সংখ্যকই সাধুসঙ্গ করতে পারে। বেটা, কাব্যরূপ অমৃতের রসাস্বাদন করা আর সজ্জন ‘ইনসান’ এঁর সঙ্গে মিলন, এ দুটো সংসাররূপ বিষবৃক্ষে জানবি সুমধুর ফল। বেটা যত পারবি, যেখানে পারবি, যখন পারবি সাধুসঙ্গ করবি। সংসারে ঐশ্বর্যই হল মানুষের বিপদের প্রথম ও প্রধান জায়গা। সাধুরা আয়না, তাতে মুখ দেখে সকলেই। যার বাঁকা সে বাঁকাই দেখে, মুখ বাঁকা বলে আয়না কিন্তু মোটেই বাঁকা নয়। সাধুদের চরণে অজস্র তীর্থ, কোটি কাশী, শত গঙ্গা। তাঁদের নিন্দা করলে মানুষ অবশ্যই সঙ্কটে পড়ে।
কয়েক বছর পর এক অদ্ভুত সাধুবাবার দর্শন পেলাম। প্রথম থেকে এমন সরলতা, কথায় সহজতা, অন্তরে টেনে নেয়া খুব কমই পেয়েছি জীবনে। আর একটা বিষয় প্রথমেই আমাকে অবাক করেছে, নিজের কথা বলার আগে যখন কোনও উদাহরণ দিচ্ছেন, তখনই দেখছি একটা করে সংস্কৃত শ্লোক আওড়াচ্ছেন, পরে বলছেন হিন্দিতে। এমন সহজে কথা বলবেন সাধুবাবা তা আমার কল্পনাতে ছিল না। আনন্দে মনটা ভরে গেল। আবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। বললাম,
– বাবা, আমার কাছে বিড়ি আছে। আপনি কি একটা খাবেন?
এক ঝলক হাসি ফুটে উঠল মুখখানায়। বললেন,
– সাধুরা খায় গাঁজা আর তুই বলছিস বিড়ি! দে একটা।
দুটো বিড়ি ধরাতে ধরাতে বললাম,
– বাবা, আপকা সম্প্রদায় কেয়া হ্যায়?
– বেটা, দশনামী সম্প্রদায়ের ‘পুরী’ পদবীধারী সন্ন্যাসী আমি।
একটা বিড়ি দিলাম সাধুবাবাকে, আর একটায় জোর টান দিলাম আমি। ভারতীয় বিড়িতে ফুকফুক করে প্রেম দিলে হবে না, ঠোঁটে চেপে চুমু দিলে তবে খুশি। হঠাৎ সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, এখন তো বেলা প্রায় বারোটা বাজতে চলল দুপুরের ‘খানাউনা’ কি কিছু খেয়েছিস?
মাথাটা নেড়ে বললাম,
– না বাবা, এখনও কিছু খাইনি।
ঝোলাটা রেখে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,
– ঝোলাটা থাক, আমি মন্দিরে পুজারীজিকে বলে আসছি দুপুরে আমরা দুজনে প্রসাদ পাব।
বেশ দ্রুততার সঙ্গে চলে গেলেন। আমি ঘাটে আসা যাত্রীদের দেখতে লাগলাম। কেউ নর্মদায় তর্পণ করছেন, কেউ সমানে ডুব মেরে চলেছেন, কেউ ঘাটে দাঁড়িয়ে স্নানরতা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন হাঁ করে, কেউবা নর্মদার জল লোটায় ভরে নিয়ে যাচ্ছেন তিলভাণ্ডেশ্বর মহাদেব মন্দিরে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এসে গেলেন সাধুবাবা। ঠিক আগের জায়গায় আগের মতই বসলেন। বললেন,
– বেটা, বাবা মহাদেবের কৃপায় আজ দুজনেই প্রসাদ পাব। ওরা এখানে দিয়ে যাবে বলছে। তোর কোনও তাড়া নেই তো?
মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললাম। মনে একটা প্রশ্ন জাগল। কথায় কথায় একটা করে সংস্কৃত শ্লোক বলেছেন, পরে নিজের বক্তব্য রাখছেন। সাধুবাবার শিক্ষা আর সাধুজীবন সম্পর্কে কৌতূহল আমার বেড়ে গেল। ভাবছি, কোথাও যেন একটা কিছু বোঝার আছে যেটা এখন শুরুতে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। জানতে চাইলাম,
– খুব ছেলেবেলায় ঘর ছেড়েছিলেন বুঝি? কেন ছাড়লেন বাবা?
বেশ খুশি খুশি ভাবেই বললেন,
– বেটা, কেউ নিজের চেষ্টাতে বাড়িঘর আপনজনদের ফেলে কি এ পথে আসতে পাড়ে, না আমি এসেছি? পূর্বজন্মের কোনও সংস্কার ছিল এ জীবনে আসার তাই পরমাত্মাই নিয়ে এসেছেন এ পথে। তবে যে কোনও ঘটনার পিছনে কারণ তো কিছু না কিছু থাকে। যেমন ধর আমার কথা। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায় আমার বাড়ি। গরীব চাষির ঘরে জন্ম। তখন বয়েস আর কত হবে, দশ বারো। অক্ষরজ্ঞানটা ছিল তবে ইস্কুলের মুখ দেখিনি। একদিন সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। কিছু ভাবলাম না। সোজা এলাম স্টেশনে। ট্রেন ধরে বেনারস। ওখানে মাসখানেক থেকে পরে অযোধ্যা। অযোধ্যা থেকে হরিদ্বার। এসব কিন্তু বেটা আমি কোনও কিছু ভেবে করিনি। আপনা থেকে হয়ে গেছে। মা বাবা ভাই বোন ছিল। তাদের কারও কথাই মনে হয়নি, ভাবিনিও কিছু। পরে অবশ্য মায়ের কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ত। ঘর ছাড়ার পর বছর পাঁচেক কেটে গেছে পথে পথে, ভিখিরিদের মতো। (একটা সংস্কৃত শ্লোক আউড়ে পরে বললেন।) আমি দেখেছি একটা একটা করে দিন চলে যাচ্ছে, দিনও দেখছে আমি চলে যাচ্ছি। মহাকালের গ্রাস থেকে মুক্ত করার মতো কাউকেই পাচ্ছি না। একদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল। গুরু মিলে গেল। দীক্ষা হল উত্তরকাশীতে।
বেটা, এই হল আমার ঘর ছাড়ার কথা।
সাধুবাবা খুব সংক্ষেপেই বললেন তাঁর গৃহত্যাগের কথা। ওই প্রসঙ্গে আর কিছু জানতে চাইলাম না। জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, আমরা সংসারী মানুষ। নানা বিষয়ে আমাদের আসক্তির সীমা পরিসীমা নেই। এই আসক্তির উৎসটা কি বলতে পারবেন?
সুন্দরভাবে শ্লোক আওড়ালেন। পরে হিন্দিতে তার মানে করে জিজ্ঞাসার উত্তরে জানালেন,
– বেটা, জগতের সমস্ত বৃক্ষেরই জীবন ধন্য। এরা সবসময়ই পাতা ফুল ফল ছায়া মূল বাকল কাঠ দিয়ে মানুষের প্রয়োজন মেটায়। নিজের বলতে এতটুকুও কিছু রাখে না। প্রার্থনাকারী মানুষের সমস্ত প্রার্থনাই পূর্ণ করে নির্বিকারভাবে, বিমুখ করে না কাউকে। প্রকৃত সাধুরাও তাই, বৃক্ষের মতো। আমার জ্ঞানবুদ্ধির ভাণ্ডার বলতে পারিস শূন্যই বটে। তবুও গুরুর করুণায় যেটুকু জেনেছি তাই-ই তোকে বলছি। বেটা, মানুষের আসক্তির মূল উৎস হল দৃষ্টি। দৃষ্টি থেকে আসে আসক্তি। তারপর ধীরে ধীরে তাতে আসক্ত হয় মন, বুঝলি?
হ্যাঁ বা না কিছু বললাম না। কথা শুনছি কিন্তু মনে মনে ভাবছি, সাধুবাবা খানিক আগে বললেন, অক্ষরজ্ঞান ছিল কিন্তু ইস্কুলের মুখটা দেখা হয়নি অথচ কথার শুরুতেই একটা করে সংস্কৃত শ্লোক বলছেন। তার মানে বলে পরে নিজের কথায় আসছেন। এই রহস্যটা আমার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না। এখন কথা চলছে। কথা কেটে দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারছি না। ভাবলাম পরে জিজ্ঞাসা করব। সাধুবাবা একটু মুচকি হাসলেন। বুঝে ফেললাম আমি ধরা পড়ে গেছি। এ বিষয়ে না গিয়ে তিনি আগের প্রসঙ্গেই বললেন,
– বেটা দৃষ্টিতেই যে আসক্তি নিহিত আছে তার উদাহরণ দিলে বিষয়টা তোর কাছে খোলসা হবে। যেমন কোনও যুবতী মেয়ে কিংবা মধ্যবয়স্কা রমণীর সঙ্গে দিনের পর দিন দৃষ্টি বিনিময় হতে থাকলে অথবা কোনও লোভনীয় বা মনোগ্রাহী আকর্ষণীয় বস্তুতে নিয়মিত দৃষ্টিপাত হতে হতে একসময় ওই রমণী বা বস্তুতে অজ্ঞাতে মনে আসক্তি জন্মে। এখানে কোনও নারী ও পুরুষের রূপ গুণ বা অন্য কোনও কিছু কাজ করে না অন্তরে, একই কথা বস্তুতেও। বেটা সমাজে একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবি, কুৎসিত পুরুষের সঙ্গে সুন্দরীর, বিপরীতভাবে সৌন্দর্যবর্জিত রমণীর সঙ্গে সুদর্শন পুরুষের হৃদ্যতা সখ্যতা প্রেম ভালোবাসা যাই বলিস না কেন, এর একটা কিছু হয়েই যায়। সেখানে উভয়ের বয়েসের ফারাকও কাজ করে না। কাজ করে শুধুমাত্র দৃষ্টি থেকে উৎপন্ন আসক্তি।
একটু থামলেন। একঝলক ঘাট ও আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে একটা সংস্কৃত শ্লোক বলে তিনি মানে করে বললেন,
– বেটা, উপযুক্ত পোশাক পরিচ্ছদ ছাড়া দেহে কোনও অলঙ্কারই শোভা পায় না, ঘি ছাড়া আহার সুস্বাদু ও সুখকর হয় না, যে নারীর সুন্দর স্তন নেই সে নারী শোভা পায় না, বিদ্যাহীন জীবন নিরর্থক। এই চারটে বিষয়ও আসক্তিকে পরাজিত করে স্বয়ং জয়ী হয়। আসলে আসক্তিতে মনে অথবা বস্তুতে আসক্ত ব্যক্তির দেহের ছাপ পড়ে। যারজন্যে প্রেমপ্রীতিতে একে অপরকে পাওয়ার বাসনায় অন্তর অস্থির হয়। বেটা, অতিরিক্ত গুরুদর্শন, তীর্থে দেববিগ্রহ দর্শনে দর্শনকারীর ধীরে ধীরে আসক্তি জন্মে তাঁকে পাওয়ার। সাধক আসক্তিতে মেতে ওঠে সাধনায়, বুঝলি বেটা? তবে একটা কথা আছে, এই আসক্তি অত্যন্ত নিকট আত্মীয়তেও আসতে পারে।
আনন্দে মনটা আমার ভরে গেল। আসক্তি কথাটা শুনে এসেছি তবে বিষয়টা সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না, তাই খুশিতে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। সাধুবাবাও খুশিতে হাতটা বুলিয়ে দিলেন মাথায়। এবার সুযোগ এল। বললাম,
– বাবা, আপনি তো বললেন ইস্কুলের মুখ দেখেননি। গৃহত্যাগের সময় শুধু অক্ষরজ্ঞানটুকুই ছিল অথচ এখন দেখছি, কোনও কথা বলবার আগে সংস্কৃতে সুন্দর উচ্চারণে শ্লোক বলে পরে জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছেন। আপনাকে জিজ্ঞাসা, সংস্কৃতটা শিখলেন কোথায় আর এইভাবেই বা উত্তর দিচ্ছেন কেন?
এবার সাধুবাবা আমার অজানা রহস্যের জটটা খুলে দিলেন,
– বেটা, আমার গুরুজি সংস্কৃতে অত্যন্ত তুখড় ছিলেন। দীক্ষার পর তিনি হাতে কলমে এই ভাষাটা শিক্ষা দিলেন। দিনের পর দিন বসে থেকে সংস্কৃতে লেখা শংকরাচার্যের মোহমুদগর, দোঁহা, চাণক্যের হিতোপদেশ, মনুসংহিতার শ্লোক, কবীর, তুলসী দাস, মীরা, দাদু প্রমুখদের উপদেশমূলক কথাগুলো আমাকে দিয়ে জলে মতো মুখস্থ করালেন। এমন শতসহস্র শ্লোক আমার এখনও নির্ভুল মনে আছে। এরপর গুরুজি আদেশ দিয়ে বললেন, বাচ্চা, সংসারে গৃহীই বল, সাধু সমাজে সাধুই বল, সকলের পক্ষে সমস্ত শাস্ত্র, ধর্মকথা, গুরুর কথা বইতে পড়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই যখন যেখানে জাতিধর্মনির্বিশেষে যার সঙ্গেই কথা বলবি, কথা শুরুর আগে মনীষী মহাজনদের বলা কল্যাণমূলক উপদেশ কথা বলে পরে তোর বক্তব্য বলবি। এতে গৃহী বা সাধুদের যদি কল্যাণ হয় তাহলে জানবি তা গুরু বা ইষ্টেরই সেবা হল। এইভাবে মানুষের কল্যাণ ও ভগবানের সেবা দুই-ই করা হবে। তাই আমার পরম দয়াল গুরুর আদেশ রক্ষা করার চেষ্টা করছি।
এই পর্যন্ত বলে কপালে জোড়হাত করে গুরুজির উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন। আমিও বিষয়টা জেনে ধন্য হলাম এমন একজন মহাত্মার সঙ্গ পেয়ে। মনে মনে ভাবলাম, পথেঘাটে, মাঠে হাটে, ভারতের নানান জায়গায় কে যে কি ভাবে রয়েছেন তা পথে পথে না ঘুরলে কারও একবিন্দুও জানার উপায় নেই।
Nomoskar dada.jotho barei apnar ak akta leka porchi kub balo lagce.asa kori aro likben. Bangladesh…..teke.