সমস্ত বেড়া টপকানোর শক্তিশালী মন্ত্র দিলেন সাধুবাবা
এর মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত অধ্যাত্মরহস্য। সৃষ্টি কোথা থেকে হল, কিভাবে ধারণ ও লয় হবে এসব রহস্যের সমাধান যোগীগণ সূর্য সংযম দ্বারা লাভ করেছেন।
পথ চলছি লক্ষ্য রেখেই যদি কোনও সাধুর দেখা পাওয়া যায়। সাধুসঙ্গের নেশাও তো আছে। তাই লক্ষ্য করছিলাম, তবে কপালটা ভাল। এবার আর সাধু খুঁজতে হল না। দেখলাম বয়স্ক এক সাধুবাবাকে, আমাদের আগে আগে চলেছে গঙ্গোত্রীর পথে। কাঁধে মাঝারি ধরনের একটা বোঝা। বয়সের ভার আর হিমালয়ের চড়াই তাঁকে বেশ নুইয়ে দিয়েছে। পরনে গেরুয়া বসন যা বহুবার ধোয়ায় অনেকটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। লালচে চুলগুলো পিঠের উপর ছড়ানো তবে মেয়েদের মতো পিঠ ছাড়িয়ে যায়নি। পরে দেখেছিলাম, উন্নত নাসা। চোখদুটো বয়েসের ধাক্কায় একেবারে কোণঠাসা হয়ে গেছে, তবে উজ্জ্বল। উচ্চতা প্রায় আমারই মতো পৌনে ছ-ফুট। হাতে তাঁর বহু ব্যবহৃত লাঠি। গালে বড় বড় দাড়ি, সাদা। পেটের একটু উপর পর্যন্ত। পথ চলছে ধীরে ধীরে। জোড়ে চলার উপায় নেই। হিমালয়ই বটে।
টুটুকে বললাম, তুমি লখনউ–এর মেয়ে। আমার চেয়ে অনেক ভালো হিন্দি জানো। আমাকে একটু সাহায্য কর, কেমন। চল, সাধুবাবার সঙ্গে কথা বলি।
সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ল টুটু। চলার গতি বাড়িয়ে দিলাম। দুজনেরই মানসিক উত্তেজনা আছে। সাধুর সঙ্গে কথা বলব। জানতে চাই, কেন এরা সাধু আর কেমন করেই বা চলছে এদের জীবন! সাধুবাবার খুব কাছাকাছি এসে ডাকলাম,
– সাধুবাবা?
একটু পিছন থেকে ডাকায় ঘাড় ঘুরিয়ে দাঁড়ালেন।
– কহো বেটা।
আমিও দাঁড়ালাম। একটু বিশ্রাম হল। এবার কথাও হবে। বললাম,
– আপকা উমর?
হুট করে বয়েস জিজ্ঞাসা করায় সাধুবাবা কেমন যেন একটু অস্বস্তিবোধ করলেন। মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন একটু ভেবে নিয়ে বললেন,
– অভি তো বেটা পয়ষট হো চুকা হ্যায়।
ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম,
– আপকা ডেরা কাঁহা বাবা?
উত্তর দিলেন স্বাভাবিক ভাবে,
– গুজরাট।
– পয়লে ঘর কাঁহা থা?
– অযোধ্যা।
যেটুকু প্রশ্ন সেটুকুই উত্তর দিচ্ছেন সাধুবাবা। কোন সম্প্রদায়ের সাধু তা জানার উদ্দেশ্যে বললাম,
– আপকা সম্প্রদায় ক্যা হ্যায়?
– ম্যায় বেটা গিরি সম্প্রদায়কা সাধু হু।
– বাবা আপকা চলতা ক্যায়সে?
লাঠি সমেত হাতটা কপালে ঠেকালেন। কারও উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বললেন,
– গুরু মহারাজ কি কৃপা সে।
আমরা পথ চলতে চলতে কথা বলছি। বেশ খাড়াই পথ। পথ চলার সঙ্গী লাঠিকেও যেন বড় বোঝা বলে মনে হয় পাহাড়ি পথে। আর কিছুক্ষণ পরে পৌঁছব ভৈরবঘাটি।
সাধুবাবার কাঁধে রয়েছে বোঝা। পরিশ্রমও হচ্ছিল বেশ। তাই কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঝোলাটা নিলাম নিজের কাঁধে। এই ভেবে নিলাম, পথ চলায় কষ্ট কম হবে। আমার সঙ্গে কথাও বলতে পারবে বেশি। বোঝাটা বেশ ভারী। কারণ জানিয়ে সাধুবাবা বললেন, লাল কালিতে তিন লক্ষ শিব নাম এবং বেশ কয়েক লক্ষ দুর্গা নাম লেখা খাতা আছে, তাই এত ভারী। তাঁর ইচ্ছা, গঙ্গোত্রীর পবিত্র জলে অর্পণ করে পুণ্য সঞ্চয় করা।
মাসটা ছিল জ্যৈষ্ঠ তাই কোনও অসুবিধে হয়নি সাধুবাবার। ভাদ্রমাস হলে ইচ্ছাটা হয়ত অপূর্ণই থেকে যেত। ওই মাসে গঙ্গা তার জলের মাহাত্ম্য বহন করেন না। শাস্ত্রমতে গঙ্গা রজঃস্বলা হন ভাদ্র মাসে। তাই ওই গঙ্গা জলে দেবদেবীর পুজো নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে কোনও সময়ই গঙ্গা জলের মাহাত্ম্য বহন করে না গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের জল। জানতে চাইলাম,
– বাবা, আপনে হিয়া আয়া লেকিন রুপেয়া কৌন দিয়া?
প্রফুল্ল মনে উত্তর দিলেন সাধুবাবা,
– মেরা দো–চার ভক্ত অউর গুরুজি মহারাজ নে ভি হামকো কৃপা করকে কুছ রুপেয়া দে কে বোলা যাও তিরথ করো। ইস লিয়ে ম্যায় আয়া চারো ধাম কো দর্শন করনে কে লিয়ে। হিয়াসে হাম কেদারনাথ, উসকে বাদ বদরিজিকা পাস যায়েগা।
পথশ্রমে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তাই কিছুটা চলছি আর একটু করে বিশ্রাম নিচ্ছি পথের ধারে। সাধুবাবা, টুটু আর আমি। সঙ্গীরা সব এগিয়ে গেছে আগে। জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, আপকা চেলা হ্যায়?
‘না’ এর মতো ঘাড় নেড়ে মুখেও বললেন,
– নেহি বাচ্চা, মেরা তো চেলা নেহি হ্যায়। চেলা বনানে সে চেলা কা বহুত পাপ লেনা পড়তা হ্যায়। মেরা তো ইতনা শক্তি নেহি হ্যায় না!
এখন জানতে হবে আসল কথাটা। তাই ইচ্ছে করে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলাম,
– বাবা আপনি কি বিবাহিত?
কথাটা শুনে হেসে ফেললেন সাধুবাবা। দাঁড়িয়ে গেলেন। হাসতে হাসতে বললেন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে,
– বেটা, বিয়ে করব কিরে? তখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। আমাদের বাড়ি থেকে অযোধ্যার (হনুমানগড়ি) হনুমান মন্দির খুব কাছেই। ওই মন্দিরে থাকতেন এক সাধুবাবা। আমি বাবার সঙ্গে মাঝে মধ্যে যেতাম সেখানে। গেলে আর আসতে চাইতাম না। ওই অতটুকু বয়েসেই আমার কেমন যেন ভাল লাগত। বাবা যখন না নিয়ে যেত, তখন একাই চলে যেতাম। সাধুবাবার কাছে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। বাড়ির লোক এসে আমাকে জোড় করে নিয়ে যেত।
পাহাড়িপথে চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠতে হয়। এখন পথের ধারে একটা পাথরের উপরে বসে কথা হচ্ছে। কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাতে সাধুবাবা বললেন,
– এভাবেই কাটল প্রায় বছর তিনেক। একদিন সেই সাধুবাবা হঠাৎ আমাকে বললেন ‘বেটা, এবার আমি ডেরায় ফিরে যাব। এখানে কাজ আমার শেষ হয়ে গেছে। তুই আর আসিস না।’ কথাটা শুনে মনটা আমার কেঁদে উঠল। কাউকে কিছু বললাম না। তখন আমার বয়েস আট। শুধু জেনে নিলাম, কবে কখন অযোধ্যা ছেড়ে চলে যাবেন। নির্দিষ্ট দিনে আমি তালে তালে রইলাম। হনুমান মন্দির থেকে সাধুবাবা বেরনোর পর আমি দূরে দূরে লক্ষ্য রেখে সোজা এসে হাজির হলাম অযোধ্যা স্টেশনে। আমাকে দেখে তো সাধুবাবা অবাক! অনেক চেষ্টা করলেন বাড়ি ফেরাতে। কিছুতেই ফিরলাম না। ওখান থেকে আমরা এলাম দ্বারকায় সাধুবাবার ডেরায়। সেই সাধুবাবাই আমার গুরুজি মহারাজ। এখনও তিনি দেহে আছেন।
সাধুবাবার বিধি নির্বন্ধ গৃহত্যাগের কাহিনি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। কি অদ্ভুত কর্মফল! বললাম,
– আপনার গুরু মহারাজের বয়েস কত এখন?
আমরা উঠে পড়েছি। চলাও শুরু করেছি। বয়সের কথা শুনে একটু দাঁড়ালেন। কয়েক মুহুর্ত ভেবে বললেন,
– তা তো বেটা বলতে পারব না। তবে আমি যখন গুরুমহারাজের কাছে যাই তখনই তো বাবার বয়েস অ-নে-ক। একেবারেই ‘বুঢঢা’।
সাধুবাবার গেরুয়াবসন দেখে কৌতূহল হল। দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, সাধুসন্ন্যাসীরা গেরুয়াবসন পরে কেন? অন্য রঙের বসনও তো পরতে পারেন?
কথাটা শুনে একঝলক তাকালেন আমার দিকে। কি ভাবলেন জানি না। কথার কোনও উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুটা চলার পর পথের ধারে একটা বড় পাথরের চাঁই–এর উপর বসলাম। বিশ্রাম নিতে নয়। প্রশ্নের উত্তর দিতে বসে সাধুবাবা বললেন,
– বাচ্চা, আমি মূর্খ মানুষ। লেখাপড়া কিছু জানি না। তোর মতো এ প্রশ্ন আমিও একদিন করেছিলাম গুরুমহারাজের কাছে। তিনি বলেছিলেন,
– ‘বেটা, মোক্ষ বা মুক্তির প্রতীক হল গেরুয়া। এর মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত অধ্যাত্মরহস্য। পাতঞ্জল যোগদর্শনে বলা হয়েছে, ‘ভুবনজ্ঞানম সূর্যে সংযমাত’। যোগীগণ সূর্যে সংযম দ্বারা ভুবনজ্ঞান লাভ করেছেন। ভুবনজ্ঞানের প্রথম কথাই হল সৃষ্টির জ্ঞান। সৃষ্টির জ্ঞান বলতে সৃষ্টি কোথা থেকে হল, কিভাবে ধারণ ও লয় হবে এসব রহস্যের সমাধান যোগীগণ সূর্য সংযম দ্বারা লাভ করেছেন।
সূর্যোদয়ের মুহুর্তে যে রক্তাভরশ্মি সেটা চরাচর সৃষ্টি করে। অস্তাচলগত সূর্যরশ্মি লয় করে সৃষ্টিকে। সূর্যরশ্মি বিশ্লেষণ করে যোগীগণ যোগনেত্রে দেখেছেন অস্তায়মান সূর্যরশ্মির রঙ গেরুয়া। সেজন্য তো বেটা, সংসারে প্রকৃত বীতরাগ সাধুসন্ন্যাসীরা গেরুয়া বস্ত্র পরিধান করেন। তাদের ভাবনা মুক্তির, সৃষ্টির নয়। ভববন্ধনের লয় চাই। ‘গৈরিক’ – সৃষ্টি চাই না, এই শাশ্বত বাণী ও ভাবনার প্রতীক। গেরুয়া বস্ত্র সাধুসন্ন্যাসীগণের ভাবনাকে সৃষ্টিলয়ের ধ্যানধারণায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। বেটা, গঙ্গা জলের রঙও গৈরিক মিশ্রিত। তাই এই জলে স্নান করলে মোক্ষের প্রতীক ‘গৈরিক’ দিয়ে সমস্ত দেহ অনুলিপ্ত করা হয়। যার জন্য তো গঙ্গা মুক্তিদায়িনী ও স্নানে ভববন্ধন লয়ের সহায়ক হয়।
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়া এক সাধুবাবার মুখে গঙ্গার জল আর গেরুয়া বসনের অন্তর্নিহিত অধ্যাত্ম্য রহস্যের কথা শুনে আনন্দিত তো হলামই, বিস্ময়ের অবধি রইল না। মনে মনে শ্রদ্ধা জানালাম সাধুবাবাকে। কথাটা শেষ হতে শুরু করলাম হাঁটা। কিছুক্ষণ পরে এলাম ভৈরবঘাটি। গঙ্গোত্রীর পথে এটা একটা ছোট্ট চটি। এখান থেকে আবার বাস। অপেক্ষা না করে আমরা সকলে গিয়ে বসলাম অপেক্ষমান বাসে, সঙ্গে সাধুবাবাও। বসলাম পাশাপাশি। বাস ছাড়ল যথা সময়ে। দুজনে সমানে কথা হতে থাকল, জিজ্ঞাসা করলেন,
– বেটা, তেরা দিকসা হো গিয়া?
উত্তরে জানালাম,
– হাঁ বাবা, তবে আমার নারীগুরু কুমারী এবং সন্ন্যাসিনী।
কথাটা শুনে বললেন,
– তোর ভাগ্যটা ভাল। কারণ বিধবা নারী যত গুণ শালিনী হোক না কেন, দীক্ষা গ্রহণে তাঁকে পরিত্যাগ করাই শাস্ত্রবাক্য। বেটা, তেরা বীজমন্তর ক্যা হ্যায়?
এ কথায় অবাক হয়ে বললাম,
– বাবা, ইয়ে তো বোলনা মানা হ্যায় হামারা গুরুকা।
শুনে হেসে ফেললেন সাধুবাবা। বললেন,
– নেহি বাচ্চা, যব কোই পুছেগা গুরু তুমনে তুমহারে কান মে ক্যা ফুঁক দিয়া? তুম বোলোগে, গুরু মন্তর দিইয়া হ্যায় সচ কহো, কিসি কো ধোঁকা না দো, কহেনা এই মন্তর দিয়া গুরুনে।
আরও বললেন, কথায় অনুরোধের সুর মেশানো,
– বেটা, কিসি কা উপকার না করো তো কোই বাত নেহি, লেকিন কিসি কা বুরা না করো।
ভাবলাম, সব মন্ত্রের মূলই তো সত্য। সম্যকভাবে সাধুবাবা বীজমন্ত্র জানতে চাননি, বলেছেন মন্ত্রের মাধ্যমে সত্যকে আঁকড়ে ধরার কথা। বাস চলছে গঙ্গোত্রীর পথে। একটু থেমে আবার বললেন,
– বেটা, হাম এক মন্তর তুমকো দেগা, তুম মানো তো ম্যায় কহুঁ।
কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম, এমন কোনও মন্ত্র হয়ত দেবে যে ছু করলেই রসগোল্লা এসে যাবে হাতে। তাই অত্যন্ত কৌতূহলের সঙ্গে বললাম,
– কহিয়ে বাবা।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবেগভরা কণ্ঠে বললেন,
– বাচ্চা, ইস দুনিয়ামে কুছ নেহি হ্যায়। গুরুমহারাজ কো ছোড়কে দুনিয়ামে কোই নেহি হ্যায়। গুরুকো পকড়ো, তব তুম সংসার বেড়া তোড়কে চলে যা সকোগে।
রসগোল্লা এল না। এল গঙ্গোত্রী। ভৈরবঘাটি থেকে ৯ কিমি। বাস এসে যেখানে থামল সেখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ গঙ্গোত্রী মন্দির। একে একে সকলে নেমে এলাম বাস থেকে। ধীর পায়ে এগিয়ে চললাম, সঙ্গে সাধুবাবাও। এবার সোজাসুজি প্রশ্ন করলাম,
– বাবা, আপকা ইষ্টকা দর্শন হুয়া?
শেষকালে এরকম একটা প্রশ্ন করব আশাই করেননি সাধুবাবা। চলতে চলতে তাকালেন মুখের দিকে। কয়েক মুহুর্ত মাত্র। তারপর কণ্ঠে দৃঢ়তা ও স্বীকারোক্তির পরোক্ষভাব নিয়েই বললেন,
– বাচ্চা, ইয়ে বাত কিসি কো বোলনা নেহি চাহিয়ে। কিসি কো দর্শন মিলনে সে ওহ মুহসে নেহি বোলতা হ্যায়। (হাতদুটো উপরে তুলে) জয় গুরু মহারাজ কি জয়, জয় গুরু মহারাজ কি জয়।
এ কথার পরও কথায় চেপে ধরে বললাম,
– বাবা, এত বছরের ত্যাগ আর সংযমের জীবন আপনার। এই জীবনে উপলব্ধি কি কিছু হল, পেলেন কি কিছু?
কথাটা বলে তাকালাম সাধুবাবার মুখের দিকে। দেখলাম, প্রসন্নচিত্ত আর অপাথির্ব এক হাসিমাখা মুখ। কথাটা শুনে এক মুহুর্তও দেরি করলেন না তিনি। আন্তরিকভাবে টেনে নিলেন কাছে। কানের কাছে মুখটা এনে একটা কথাই বললেন,
– বেটা, সব ছেড়ে দে, সব পেয়ে যাবি। এটাই পেয়েছি আমি।
আর কোনও কথা হল না। সাধুসন্ন্যাসীদের প্রতি আকর্ষণ আমার ছোটবেলা থেকে। প্রণাম করলাম। প্রণাম করলাম এই কারণেই আর কিছু না হোক, সারাটা জীবন তো একটাকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে সব কিছু ত্যাগ করে, তাই। জীবনে কি পেয়েছে বা পায়নি আমার বোঝার কি সাধ্য আছে? আর সকলকেই যে পেতে হবে এবং তার বিনিময়ে প্রণাম করব, তা তো হয় না। মোটের উপর সে সাধু। কিছু পেয়ে থাক বা না থাক। পেয়েছে হয়ত পায়নি হয়ত বা!
আমার সঙ্গে রাতটা থাকার ইচ্ছা ছিল সাধুবাবার। ইচ্ছা আমারও ছিল আমার সঙ্গেই থাক। কিন্তু আমি তো আর একা নই। সঙ্গীদের আপত্তি। ওরা চায় না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাধুসঙ্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম।