সংসারে অভাব ও অলক্ষ্মীর দৃষ্টি দূর করার সহজ রাস্তা জানালেন সাধুবাবা
প্রতিদিন যদি কাজটা করিস দেখবি, আর্থিক দৈন্য কেটে যাবে ধীরে ধীরে। আসবে সচ্ছলতা। এতে ধনী হবি কিনা বলতে পারব না তবে অর্থকষ্টটা যাবে।
যখন কোথাও ভ্রমণে যাই তখন সঙ্গী থাকে অনেক ভ্রমণেই। যখন সাধুসন্ন্যাসী খুঁজে বেড়াই বা সাধুসঙ্গ করি তখন কোনও সঙ্গীকে নিই না সঙ্গে। কারণ ওদের ধৈর্য কম। তাড়া দিতে থাকে। কথা বলা যায় না। উদ্দেশ্যটাও নষ্ট হয় আমার, তাই সঙ্গী নিই না। এখন বেড়িয়েছি একা।
আজ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা। ফিরছি নাঙ্গাবাবার আশ্রম থেকে। আসার পথে পড়ে লোকনাথ মন্দির। এই মন্দিরে যাওয়ার পথের দুধারেই বিশাল বিশাল অশ্বত্থ আর তেঁতুল গাছ। অনেকটা জায়গা জুড়ে বেশ বাগানের পরিবেশ। মন্দিরের একটু আগেই একটা অশ্বত্থগাছের গোড়ায় দেখি জনাদশেক নারীপুরুষ বসে আছে বিভিন্ন বয়সের। সবাই বসে আছে এক সাধুবাবাকে ঘিরে। সাধুবাবাও বসে আছেন গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে। এসব লক্ষ্য করলাম দূর থেকেই। বুঝলাম ওখানে একটা কিছু ব্যাপার আছে। রিকশা ছেড়ে দিলাম ভাড়া মিটিয়ে।
কৌতূহল আমার আজ না, বরাবরই। তাই পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। অনেকটা কাছাকাছি হলাম ওদের। উপস্থিত সকলে তাকালেন আমার মুখের দিকে। কেউ কোনও কথা বললেন না। তবে সকলেই যে একটু বিরক্ত হলেন মুখের ভাব দেখে তা বুঝলাম। আরও বুঝলাম, অনেকক্ষণ ধরে কথা হচ্ছে ওদের। আমার উপস্থিতিতে চুপ করে গেলেন সাধুবাবা।
সাধু আমি বহু দেখেছি, তবে এমন সাধু এই প্রথম। পরনের কাপড়টা একেবারে শতচ্ছিন্ন হাঁটু পর্যন্ত। নোংরা আর কাকে বলে! এত নোংরা, উদাহরণেও আনা যায় না। গালভর্তি কাঁচায় পাকায় দাড়ি। খোঁচাখোঁচা অথচ বড়। দাড়ি বড় অথচ খোঁচা খোঁচা এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। একমাথা ঝাঁকড়া চুল একেবারেই এলোমেলো। ঝোড়ো কাকের বাসা যেন। চুলগুলো ময়লাতে জটাজটা লাগছে। গায়ের রঙও ময়লা। একে ময়লা, তার উপরে দীর্ঘকাল স্নান করেনি, ফলে দশাটাও যেমন হয় তেমনই। গায়ে গলায় কিছুই নেই। একটা মালা পর্যন্ত নয়। কপালে তিলক টিলকও কিছু নেই। পাশে একটা ছোট্ট পোঁটলা। কাঁধে ঝোলানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। মনে হয় বগলদাবা করে নিয়েই পথ চলতে হয়। দেখলে পাগল কিংবা না খাওয়া ভিখারি ছাড়া আর কিছু ভাবা যায় না। অন্তত অন্যে তাই ভাববে। সাধুবাবার ভাবে বুঝলাম, এসব কথা তাঁর ভাবার অবকাশ নেই। সাধু ভেবে শ্রদ্ধা তো দূরের কথা, কথা বলারও প্রবৃত্তি হবে না কারও। তবুও সকলের পাশ কাটিয়ে গিয়ে প্রণাম করলাম। দাঁড়ালাম সাধুবাবার বাঁপাশে।
একবার মুখের দিকে তাকালেন। বসতে বললেন ইশারায়। এই তাকানোতেই সর্বাঙ্গে একটা শিহরণ খেলে গেল আমার। চোখ আমি বহু সাধুরই দেখেছি, তবে এমন চোখ দেখলাম এই প্রথম। ভিতর থেকে যেন বিদ্যুতের আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। তাকানো যায় না চোখের দিকে। দেহের বিষয় যাইহোক, চোখদুটো দেখে বুঝলাম এ সাধুবাবা উচ্চমার্গের কোনও মহাত্মা হবেন।
বসলাম, সাধুবাবার ইশারাতেই বসলাম। মাটিতে আর সকলে যেমন বসে আছে। এখনও একটা কথাও শুনিনি। তাই বুঝতে পারছি না কোন ভাষাভাষীর লোক। আমার আসাতে এখানকার পরিস্থিতিটা একটু অন্য রকম হয়েছিল। সাধুবাবা বসতে বলায় আবার আগের অবস্থাটাই ফিরে এল ধীরে ধীরে। রাজা সরাসরি কাউকে গ্রহণ করলে পার্ষদদের কিছু বলার থাকে না, এখানেও ঠিক তাই হল।
একটা কথাও বললাম না। সাধুবাবাকে ঘিরে রয়েছে যারা তাদের চেহারা দেখে বুঝলাম, প্রত্যেকেই ওড়িশাবাসী। ছজন মহিলা, পুরুষ চারজন। এদের পোশাক দেখে মনে হল বেশ দরিদ্র। ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে এক মহিলা বললেন,
– বাবা, আমার কথাটার উত্তর দিলেন না?
একটু আনমনা হয়ে বললেন,
– কি যেন বলেছিলি?
এবার কথাতে বুঝতে পারলাম সাধুবাবা হিন্দিভাষী। ওই মহিলা বললেন,
– ওই যে বললাম প্রায় রাতেই স্বপ্ন দেখি। কখনও ভূতপ্রেত, কখনও ভয়ের আবার কখনও দেখি আজেবাজে স্বপ্ন যার মাথামুণ্ডু নেই। ভীষণ ভয় পাই। দয়া করে এমন একটা কিছু দিন যাতে ওসব বন্ধ হয়ে যায়।
একমুহুর্ত কি যেন চিন্তা করলেন সাধুবাবা। বসলেন সোজা হয়ে। কোনও কথা না বলে সকলকে দেখছি – দেখছি সাধুবাবাকেও। আমার উপস্থিতিতে প্রাথমিক অস্বস্তিটা কেটে গেছে ইতিমধ্যেই। তিনি বললেন,
– রবি আর বৃহস্পতিবার বাদ দিবি। সকাল থেকে বেলা বারোটার মধ্যে একটা তুলসী পাতা তুলবি বোঁটা সমেত। বাড়িতে গাছ না থাকলে কেনা তুলসীপাতা হলেও চলবে। এবার তুই যে বালিশে মাথা রেখে ঘুমাস, সেই বালিশের ওয়াড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিবি। একদিনই রাখবি। ব্যস, ধীরে ধীরে দেখবি কুস্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে যাবে। খেয়াল করবি, পাতাটা যেন ভিতর থেকে বেরিয়ে না পড়ে যায়। প্রতিদিন বিছানায় শুধু গঙ্গার জল ছিটিয়ে ঘুমলেও ওই একই ফল হবে। এখানে তো আর গঙ্গাজল পাবি না। ওটাই করিস।
এইটুকু বলে সাধুবাবা হেলান দিলেন গাছের গোড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে ওদেরই একজন পরনে ময়লা ছেঁড়া জামাকাপড়, ভদ্রলোক বললেন,
– বাবা সংসারে আমার অভাব অনটন আর বাচ্চা বউ–এর রোগভোগ লেগেই আছে। দয়া করে এমন কিছু দিন যাতে এই কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পাই।
একথা শোনামাত্রই সাধুবাবার মুখমণ্ডলটা দয়ায় ভরে উঠল। মনে হল, অন্তরে যেন ব্যথার সৃষ্টি হল। করুণাঘন কণ্ঠে তিনি বললেন,
– আমি তো নিজেই ফকির রে, একেবারেই ভিখিরি। দেবার মতো আমার কিছু নেই। তোদের মতো যারা, তাদের দয়াতেই তো প্রাণটা আমার কাছে। তোরাই তো আমার দেবতা। তোদের কি দিই বলতো?
এ কথায় দু’চোখ জলে ভরে উঠল গ্রাম্য ভদ্রলোকটির। সাধুবাবার পা দুটো ধরে বললেন,
– না বাবা, কোনও কথাই শুনব না আমি। একটা কিছু দিতেই হবে, নইলে আর বাঁচব না। সংসারটা আমার শেষ হয়ে যাবে। কিছু একটা করে না দিলে আমি কিছুতেই পা ছাড়ব না।
বলে চুপ করে বসে রইলেন পা দুটো ধরে। কাটল কিছুটা সময়। আবার সোজা হয়ে বসলেন সাধুবাবা। বুঝলাম, আজকের এই সাধুসঙ্গে জানতে পারব অনেক কথা। ভিতরে ভিতরে আনন্দিত হয়ে উঠলাম। খুশিতে ভরে উঠল মনটা। উচ্ছ্বসিত হয়ে একটা বিড়ি বের করে বললাম,
– একটা বিড়ি খাবেন বাবা?
বিড়ির কথায় প্রশ্নকারীর মুখটা কেমন যেন অস্বস্তিতে ভরে গেল। কোনও কথা বললেন না সাধুবাবা। হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। মুখটা দেখে মনে হল খুব খুশি। ধরিয়ে দিলাম। বিড়িতে কয়েকটা টান দিয়ে বললেন,
– খুব জ্ঞানী ছিলেন আমার গুরুজি। এখন আর দেহে নেই। অনেক শাস্ত্র পড়াশুনা করেছিলেন তিনি। আমি নিজে ‘পড়া লিখা’ কিছুই জানি না। শাস্ত্রের কথা আর ভগবানের নাম ছাড়া তাঁর মুখে অন্য কোনও কথা ছিল না। এখন তোদের যেসব কথা বলব এসব তাঁর মুখ থেকেই আমার শোনা। অনেক কথা। কিছু বলব তোদের। তোরা যদি মেনে চলতে পারিস তাহলে সংসারে আর যাই হোক, মোটামুটি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যেই কেটে যাবে জীবনটা। এতে তোদের কল্যাণ ছাড়া অকল্যাণ কিছু হবে না।
এই পর্যন্ত বলে একটা টান দিলেন বিড়িতে। এতক্ষণ পর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– বেটা, তুই থাকিস কোথায়?
মুখে হাসির একটা প্রলেপ টেনে বললাম,
– থাকি কোলকাতায়। এখানে এসেছি জগন্নাথদর্শনে। এখন নাঙ্গাবাবার সমাধি মন্দির দর্শন করে এসেছিলাম লোকনাথ দর্শনে। আপনাকে দেখতে পেয়ে এখানে এলাম।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কথাটা শুনে। কিছুতেই পারলাম না সাধুবাবার দৃষ্টির সঙ্গে আমার দৃষ্টিকে স্থির রাখতে। চোখ নামিয়ে নিলাম। আর কোনও প্রশ্ন করলেন না। উপস্থিত সকলের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন একনজর। শুরু করলেন,
– শোন, প্রতিদিন সকালে উঠে স্নানটা সেরে নিবি। হাজার কাজ থাকলেও এটা করবি আগে। এতে অলক্ষ্মী, অশুভ আত্মা আর প্রেতপিশাচের দৃষ্টি পড়ে না দেহে। পড়লেও তা মুছে যায়। খারাপ চিন্তা, কুস্বপ্নও মুছে যায় মন থেকে। যত অভাবেই থাকিস না কেন, চেয়েচিন্তে হলেও সাধু আর ভিখারিকে কিছু ভিক্ষে দিবি। এতে কল্যাণ হবে সংসারের। সাধু না পেলে ভিখারিকেই দিবি। তাতেও কাজ হবে।
বিড়িটা নিভে গেছে সাধুবাবার। ফেলে দিয়ে বললেন,
– যখন কোনও কথা বলবি তখন হাত-পা নাড়িয়ে বলবি না। প্রয়োজনের বেশি এতটুকুও খাবি না। এগুলো করলে অলক্ষ্মীর দৃষ্টি পড়ে। সংসারে অভাব বাড়ে। যেকোনও খাবার যত খারাপই হোক, মুখে রান্না ভাল না লাগুক, সেই খাবারের নিন্দা করিস না। খাদ্যের মধ্যেই মা লক্ষ্মীর অবস্থান। খাবারের নিন্দা করলে লক্ষ্মীর নিন্দা করা হয়। এতে জীবনে কোনও না কোনও সময় অর্থ আর অন্নকষ্ট আসে। নিন্দিত খাবার খেলে দেহ সুস্থ থাকে না। সংসারে রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ে।
উপস্থিত শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একবার। সকলে বসে আছে স্থির হয়ে। এতটুকু নড়ছে না কেউ। এবার চোখ বুজলেন সাধুবাবা। তিনিও স্থির। বললেন,
– যারা আয়ু বেশি চাস তারা যেকোনও খাবার খাবি পূর্বদিকে মুখ করে। নাম যশ চাইলে দক্ষিণমুখে, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পশ্চিম আর যারা প্রকৃতই ধর্মোন্নতি চাস তারা উত্তর দিকে মুখ করে বসে খাবি। এটা যদি প্রতিদিন করতে পারিস দেখবি, এই ফলগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকবে আপনা থেকেই।
এবার সাধুবাবা তাকালেন মেয়েদের দিকে। ভুরুটাকে একটু উপরে তুলে বললেন,
– সংসার তো করিস, ঘরে অলক্ষ্মী কোথায় বাস করে জানিস?
উপস্থিত মেয়েরা একে অপরের মুখ চাওয়াচায়ি করল। তারপর সকলে মাথা নাড়িয়েও মুখে বলল,
– না বাবা, জানি না। এসব কথা তো শুনিনি কখনও!
প্রশান্তচিত্ত সাধুবাবার। বসে আছেন সাধারণভাবে, কোনও আসন করে নয়। আর এত ছেঁড়া কাপড়খানা, ভাবা যায় না। একটু অন্যমনস্ক হয়ে নড়াচড়া করলেই গোপনাঙ্গটা বেরিয়ে পড়বে। আমারই একটু অস্বস্তি হচ্ছে প্রথম থেকে মেয়েদের কথা ভেবে। যদিও তারা সকলে বিবাহিতা, তবুও। সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই সাধুবাবার। বললেন,
– ঘরে খাট বিছানার ছায়া যেখানে পড়ে আর প্রদীপ জ্বালানোর পর নিচে যেখানে অন্ধকার থাকে, সেখানেই বাস করে অলক্ষ্মী। ওই দুটো জায়গা প্রতিদিন পরিস্কার রাখবি। মুছে ফেলবি। দেখবি ঘরে অলক্ষ্মী ঠাঁই পাবে না। অশান্তি যাবে। মঙ্গল হয় সংসারের। খুব ভোরে আর সন্ধ্যাবেলায় কখনও কিছু খাবি না। প্রেত পিশাচেরা এই দুটো সময় আহার করে। ওই সময় খেলে আহারে দৃষ্টি পড়ে তাদের। ফলে দৃষ্টিতে দূষিত খাবার থেকে রোগব্যাধি আসে দেহে। মনের শান্তিও যায় নষ্ট হয়ে।
সকলের মুখের দিকে তাকালেন এবার। দেখলেন বাহ্যিক কোনও চাঞ্চল্য নেই কারও মধ্যে। ভাব দেখে বুঝলাম খুশি হলেন। বললেন,
– কষ্ট করে হলেও একটু ঘি কিনে রাখবি। অভাব থাকলে বেশি কেনার দরকার নেই। প্রতিদিন একটু করে খেতে পারলে ভাল, না পারলেও কথা নেই। খাওয়ার সময় অন্নের উপর একফোঁটা হলেও ছিটে দিয়ে নিবি। তারপর খাবি। একদিন নয়। প্রতিদিন যদি এইভাবে খাস দেখবি, আর্থিক দৈন্য কেটে যাবে ধীরে ধীরে। আসবে সচ্ছলতা। এতে ধনী হবি কিনা বলতে পারব না তবে অর্থকষ্টটা যাবে, জীবনে অভাব হবে না কখনও।
অবাক হয়ে গেলাম এই অদ্ভুত কথাটা শুনে। দরিদ্র দেশ এই ভারতবর্ষ। অনেকের চাল কেনারই পয়সা জোটা না তো ঘি কিনবে কোথা থেকে! তবুও না হয় কষ্ট করে কিনল। সামান্য একটু কাজ অথচ তার ফল এরকম হতে পারে! এটা কি করে সম্ভব?
বিশ্বাস হল না তবে কোনও প্রশ্নও করলাম না। সাধুবাবা সহজ সরল সুন্দর হিন্দিতে বলে যাচ্ছেন তাঁর গুরুমুখনিঃসৃত শাস্ত্রীয় কথা। আমার মনে হল না ওড়িশাবাসী শ্রোতাদের বুঝতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে। এবার সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,
– কথাগুলো অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এসব কাজগুলো যদি করিস, বিশ্বাস করে করিস তাহলে ফল পাবি। অশ্রদ্ধা ও অভক্তিতেও যদি করিস, তাহলেও ফল পাবি। ফলের কোনও মার নেই এ কাজে। তবে দু-দশদিন করে ছেড়ে দিলে কিছু হবে না। সমানে কাজগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে করলে ফল ‘জরুর মিলবে’।
একদম চুপসে গেলাম। আমার মনের ভাবটা বুঝতে পেরেই হয়ত সাধুবাবা কথাটা বললেন। একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন,
– অকারণে, অপ্রয়োজনে শুবিনা। এতে রোগকে ডেকে আনা হয়। নখ বা কোনও কিছু দিয়ে মাটিতে আঁকবি না। মনের শান্তি নষ্ট হয় আর ঋণ হয়। যাদের উপরে অলক্ষ্মীর দৃষ্টি থাকে, তারা নখ দিয়ে ঘাস ছেঁড়ে কারণে অকারণে বেশি হাসে, নিজের শরীরে বা আসনে বাজনা বাজায়। এসব করবি না কখনও। তাতে লক্ষ্মীলাভ হবে। প্রতিদিন পা দুটো বেশ ভাল করে ধুবি, পরিস্কার রাখবি। এতে যে কাজে যাবি সেই কাজ সিদ্ধি হবে। ভিজে পায়ে অন্নগ্রহণ করবি, আয়ু দীর্ঘ হবে। কিন্তু ভিজে পায়ে শুবি না, রোগে ধরবে।
কথাটা বলে একবার একটু এদিক ওদিক তাকালেন। অসংখ্য তীর্থযাত্রী আসছে যাচ্ছে লোকনাথমন্দিরে। কোনওদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই সাধুবাবার। আর সব শ্রোতাদের অবস্থাও তাই। এক মনে স্থির হয়ে কথা শুনছে সকলে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন,
– তোর কাছে বিড়ি থাকে তো একটা দে।
বলে হাত বাড়ালেন। ‘হ্যাঁ বাবা, আছে’ বলে একটা বিড়ি বের করে দিলাম। দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে ধরলাম মুখের কাছে। কয়েকটা টান দিয়ে বললেন,
– শোন, ঘরের বউ যখন সাজগোজ করবে কিংবা অনাবৃত দেহে থাকবে তখন দেখবি না সেদিকে। এতে বীর্য চঞ্চল হয় পুরুষের। তেজ নষ্ট হয়ে যায়। একবস্ত্র পরে খাবি না। পিতৃমাতৃ শ্রাদ্ধের সময় একবস্ত্র করে খাওয়ার নিয়ম। একবস্ত্রে খেলে শ্রাদ্ধের খাওয়া হয়। এতে দেহমন ও সংসারের অকল্যাণ হয়।
এই সাধুবাবার গল্পের মাধ্যমে উপদেশ গুলো খুব ভালো লাগলো, জয় শ্রী রাধে কৃষ্ণ