Mythology

সংসারে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নাগাসাধুর দেওয়া অব্যর্থ প্রতিকার

যারা সংসারী তাদের কোনও না কোনও সমস্যা তো লেগেই আছে। মানুষের যেমন সমস্যা আছে, তার সমাধানও আছে। যে কোনও সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার পথ।

১৯৭৬ সালের কথা, বেলা তখন দুপুর। আসছিলাম পুরী মন্দিরের ওদিক থেকে। খাব বলে যাচ্ছিলাম হোটেলে। দেখি কালো নয়, ধূসর রঙের একটা কম্বল গায়ে এক সাধুবাবা। আসছেন ধীর পদক্ষেপে, মাথায় জটা, ঝুঁটি করে বাঁধা। হাতে কেবলমাত্র একটা চিমটে। কাঁধে কোনও ঝোলাঝুলি নেই। একটা লোটা পর্যন্ত নয়। মনে হয় যেন সংসারের কোনও বোঝা না বইবার জন্য এসেছে সংসারে। গায়ের রং বেশ ময়লা। তার উপরে ছাই মেখে একেবারে ভূত হয়ে আছে। বয়েসটা সেই মুহুর্তে অনুমান করতে পারলাম না। ছিপছিপে চেহারা। রোগাও বলা যায়। সারা দেহে কঠোর তপস্যার ছাপ লেগে আছে। প্রথম দর্শনে এটাই মনে হল আমার। আর মনে হল অনাহার খুব বেশি।

দুপুরের রোদ খাঁ খাঁ করছে। এই গরমেও সাধুবাবার গায়ে একটা কম্বল জড়ানো। অবাক হলাম। কাছাকাছি হতেই সামনে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে পড়লেন সাধুবাবাও। প্রণাম করলাম। সঙ্গেসঙ্গেই হাত দুটো কপালে না ঠেকিয়ে সোজা তুললেন উপর দিকে। কারফিউ জারির পর কোনও পথচারী রাস্তায় বেরিয়ে যেভাবে হাত তোলে ঠিক তেমন। শূন্যে তাকালেন। বিড়বিড় করে কি যেন বললেন। তারপর নামালেন হাত দুটো। এতে সময় কাটল প্রায় মিনিটদেড়েক।


এত গরমে এই সময় বুঝলাম কম্বল গায়ে দেয়ার রহস্যটা। সাধুবাবার গায়ে দ্বিতীয় কোনও বস্ত্র নেই। সম্পূর্ণ উলঙ্গ। হাতদুটো উপরে তোলার সময়ে তা দেখলাম। কম্বলে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ঢাকা। সুদর্শন নয়, তবে মুখশ্রীটা খারাপও নয়। সাধুসন্ন্যাসীদের দেখতে যেমনই হোক না কেন, গেরুয়াবসন অথবা ছাইমাখা দেহটাই যেন আলাদা আকর্ষণ, আলাদা সৌন্দর্যেরও সৃষ্টি করে। এই সাধুবাবা আলগা সুন্দর। অনেক মেয়েকে খুঁটিয়ে দেখলে ভালো লাগে না। ভালো লাগে পলকে। আলগা-শ্রী। ঠিক তেমন এই সাধুবাবাও। দাঁড়িয়ে রইলেন। কথা বললেন না একটাও। দাঁড়িয়ে আছি মুখোমুখি রাস্তার এক ধারে। লোক চলাচল করছে। দুপুর বলে একটু কম। দুজনের মাথার উপর রোদ। কাছেই দেখলাম একটা অশ্বত্থগাছ। নীচে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে জিভ বার করে। গাছটা দেখিয়ে বললাম,

– চলুন বাবা, ওখানে গাছের ছায়াতে একটু দাঁড়াই।


বলে একটু এগিয়ে গেলাম, সঙ্গে সাধুবাবাও। এখানে দাঁড়ালাম মুখোমুখি হয়ে। খাওয়ার কথা মনে থাকলেও এড়াতে পারলাম না সাধুবাবাকে। তিনি কিন্তু এখনও মৌন। কথা বললেন না। জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা, আপনি কোন সম্প্রদায়ের সাধু?

তাকিয়ে রইলেন মুখের দিকে কয়েক মিনিট। কি যেন একটা ভাবলেন। মনে মনে তিনি যেন ভাবলেন আমি ব্যক্তিটা কে, উদ্দেশ্যটা কি, কেন জানতে চাইছি ইত্যাদি। কথার কোনও উত্তর দিলেন না। বুঝলাম নিজের বিষয়টা খোলাখুলি না বললে উত্তর পাওয়া যাবে না। তাই বললাম,

– থাকি কোলকাতায়। বেড়াতে এসেছি এখানে। আপনাকে দেখে আমার ভালো লাগল, তাই দাঁড়ালাম। দয়া করে যদি দু-চারটে কথা বলেন তাহলে খুব খুশি হব।

এবার আর কোনও দ্বিধা না করেই বললেন,

– আমি বৈষ্ণবনাগা।

জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাড়ি কোথায় ছিল আপনার?

কণ্ঠস্বরে একটু বিরক্তির ভাব নিয়ে বললেন,

– কিঁউ?

বলেই চলে যাওয়ার জন্য যেই পা বাড়িয়েছেন, অমনি পা দুটো ধরে ফেললাম। দিনের বেলা খোলা রাস্তার ধারে কে দেখছে, না দেখছে তা ভ্রূক্ষেপই করলাম না। আর এগোতে পারলেন না সাধুবাবা। দাঁড়িয়ে গেলেন। বুঝলাম কাজ হয়েছে। কথাও হবে। বললাম,

– আপকা গোড় লাগে বাবা। অপরাধ নেবেন না। কোনও অসৎ উদ্দেশ্য আমার নেই। আপনাদের মতো যাঁরা, তাঁদের জীবনকথা জানতে ইচ্ছে করে, সেইজন্যেই জিজ্ঞাসা করেছি।

এ কথায় মনে হল একটু দমে গেলেন সাধুবাবা। তাকিয়ে রইলেন মুখের দিকে। সাধুসঙ্গের সম্বল আমার বিড়ি। দিতে গেলাম। বললেন,

– আমার গাঁজা চলে, বিড়ি ন‌য়।

বিড়িটা রেখে দিলাম। নিজেও ধরালাম না। সেই একই প্রশ্ন করলাম,

– আপনার বাড়ি কোথায় ছিল?

গম্ভীরকণ্ঠে বললেন,

– মজঃফফরপুর, বিহার মে।

– আভি আপকা উমর কিতনা?

ভুরু কুঁচকে একটু ভাবলেন। পরে বললেন,

– কত আর ৫০-৫৫ হবে।

অধিকাংশ সাধুসন্ন্যাসীদেরই দেখেছি সহজে কথা বলতে চান না। একবার শুরু করিয়ে দিলে তখন কোনও অসুবিধা হয় না। চলতে থাকে। তাই জিজ্ঞাসা করলাম,

– ঘর ছেড়েছেন কত বছর বয়সে?

একথায় উত্তর দিলেন দেরি না করে,

– বয়েস তখন বছর দশেক হবে।

এবার ঘর ছাড়ার কারণ জানতে চাইতে বললেন,

– মজঃফফরপুর, বলতে পারিস এক জমিদারের ছেলে ছিলাম আমি। কোনও অসুবিধে ছিল না আমার। ‘আপনি খুশি ‌সে ছোড় দিয়া।’

জিজ্ঞাসা করলাম,

– সে তো বুঝলাম বাবা। কিন্তু মা বাবা ভাইবোন, আত্মীয়পরিজন, তাদের কথা একবারও ভাবলেন না?

কথাটা শেষ হতে বললেন,

– মায়া অউর জঞ্জালকে ফের মে সাধু নেহি রহতা হ্যায়।

অবাক হলাম কথাটা শুনে। মনে হল বাঁধাগতেই কথাটা বললেন। জানতে চাইলাম,

– এ কথাটাও বুঝলাম বাবা। প্রশ্ন হচ্ছে, গৃহত্যাগ করেছেন দশ বছর বয়সে। ওইটুকু বয়সে সংসারজীবন ‘মায়া’ এবং ‘জঞ্জাল’ এসব কথা ঢুকল কি করে আপনার মাথায়? ও তো অনেক বড়বড় কথা। তখন জ্ঞানের বুঝেছিলেন কি?

এতটুকু দেরি না করে উত্তর দিলেন,

– পরমাত্মার করুণাতেই ওই বয়সে বুঝেছিলাম সংসারজীবন মানে মায়ার বন্ধন। দুঃখকষ্ট, শোকবেদনা, লোভ হিংসা ছাড়া কিছুই নেই সংসারে। সুখ যেটুকু তা তাৎক্ষণিক। আর ‘শান্তি’ কথাটা আছে, সংসারে নেই। তাই বেরিয়ে পড়েছিলাম।

কথাটা ঠিক মনে ধরল না। তাই আবার প্রশ্ন করলাম একটু ঘুরিয়ে,

– অতটুকু বয়সে ওসব কঠিন কথা মাথায় ঢোকা তো একটা বিস্ময়ের ব্যাপার। আপনার কি মনে হয়?

কথা বলছি দুজনে গাছতলায় দাঁড়িয়ে। বসার কোনও উপায় নেই। ক্ষিদেও পেয়েছে বেশ কিছুক্ষণ, কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছে হল না। তাহলে সাধুবাবা হাতছাড়া হয়ে যাবেন। আমার প্রশ্নে এরপর একটু হাসলেন। প্রসন্ন হাসি মানেই ভরসা। বললেন,

– বেটা, পূর্বজন্মের সংস্কার ছাড়া কি ওই বয়েসে এসব কথা কারও মাথায় ঢোকে? নইলে এপথে এলাম কেন? তোর মতো সংসারে আর যারা, তারাই বা আসছে না কেন? তাদের মাথায়ই বা এসব কথা ঢুকছে না কেন? ঢুকলেও তারা বেরোতে পারছে না কেন। চেষ্টা, সেটুকুই বা করতে পারছে না কেন? আমিই বা বিনা চেষ্টাতে এ জীবনে এলাম কেন? কেউ তো ডাকেনি আমাকে। সংসারে কেউ তো বলেনি, যা সাধু হয়ে যা। আসলে সংস্কারই আমাকে সংসার থেকে টেনে এনেছে এপথে। যে যে পথে চলছে, জানবি তার সংস্কারই তাকে সেই পথে নিয়ে চলেছে।

জন্মান্তরবাদ, সংস্কার ইত্যাদি বিষয়টা দাঁড়িয়ে আছে অনেকের কাছে বিশ্বাসের উপর। আবার এসব বিশ্বাসই করে না অনেকে। সাধুসঙ্গের সময় কোনও সাধুসন্ন্যাসী এই বিষয়টা টেনে এনে পাল্টা প্রশ্ন করলে কিছু বলার থাকে না আমার। সাধুবাবার পাল্টা প্রশ্নে কিছুই বলার রইল না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম,

– বাবা, সাধুদের বেশ ও পথকে কটূক্তি করে অনেকে। গৃহীদের অনেকে এই জীবনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। নিজে দেখেছি, শুনেছিও। আপনার জীবনে কি কখনও এমন ঘটনা ঘটেছে যারা আপনাকে অবজ্ঞা করেছে, গালাগাল দিয়েছে?

সাধুবাবার প্রসন্ন মুখখানা কেমন যেন হয়ে গেল কথাটা শুনে। কি একটা ভাবলেন। পরে বললেন,

– বেটা, চলার পথে সাধুদের প্রথম প্রাপ্তি তো এটাই। অনেকে বলে পেটকে নিয়ে বৈরাগ্য, খাটকে খাও, ফোকট মে খানা না মিলি, এমন কথা আমার মতো শুনতে হয় অনেক সাধুকেই। তবে ‘ভিখ মাঙা’ সাধু তো আমি নই। তাই সামনা-সামনি কেউ কিছু বলেনি আমাকে। পথ চলতে গেলে এসব কথা অবশ্য শুনতে হবে। এই দেখনা, আজ নিয়ে অভুক্ত আছি পাঁচদিন। জল ছাড়া খাইনি কিছু। কত লোক যাচ্ছে পথ দিয়ে, কত দোকান আছে এখানে কিন্তু হাত পাতিনি কারও কাছে। সুতরাং গাল দেবে কাকে?

পাঁচদিন অনাহারে রয়েছেন এই সাধুবাবা। বিস্মিত হয়ে গেলাম কথাটা শুনে। মনটা একেবারে মুষড়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে একথাও বললেন,

– তুই ভাবিস না এসব কথা বলে তোর কাছে পরোক্ষে খেতে চাইছি। এখন তুই কিছু দিলেও তা গ্রহণ করব না আমি।

একথার পর বলার বা করার কিছু রইল না আমার। বিমর্ষ মনেই বললাম,

– পাঁচদিন হল অনাহারে আছেন? ক্ষিদে পায় না আপনার?

সুন্দর হাসি ফুটে উঠল সাধুবাবার মুখখানায়। অনাহারক্লিষ্ট মুখেও হাসি, ভাবতে পারছি না। বললেন,

– ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখ, দেখবি তোরও ক্ষিদে পাবে না।

কথাটা শেষ হতে বললাম,

– ঈশ্বরে বিশ্বাসটা আলাদা কথা। দেহের তো চাহিদা আছে একটা, আছে খাদ্যের প্রয়োজন।

মুখের ভাবটা একই রেখে বললেন,

– তা তো আছেই। অস্বীকার করি না তবে খাবার না জুটলে ক্ষুধার সৃষ্টি করেন না তিনি। কখনও কিছু জুটিয়ে ক্ষুধার নিবৃত্তি করেন। এই যে পাঁচদিন না খেয়ে আছি, দেহমনে কোনও বোধই নেই। কথাপ্রসঙ্গে কথাটা এল তাই কথাটা বললাম।

পূর্বপ্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,

– সামনাসামনি না হলেও যারা অবজ্ঞা বা কটূক্তি করে, ক্রোধবশত তাদের অভিশাপ দেন না?

প্রশান্ত চিত্তেই বললেন,

– ক্রোধ আমার নেই। আর জীবনে কখনও অভিশাপ দিয়েছি কাউকে এমন তো আমার মনে পড়ে না।

প্রসঙ্গক্রমে এসে পড়ল ‘অভিশাপ’ কথাটা। তাই এবিষয়ে হঠাৎ প্রশ্ন এল মাথায়। জানতে চাইলাম,

– বাবা, সংসারে দেখেছি কোনও একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় একে অভিশাপ দেয় অপরকে। এই অভিশাপ কি সত্যিই ফলপ্রসূ হয়ে অনিষ্ট হয় তার যাকে দেওয়া হয়?

পা দুটো একইভাবে রেখে কথা বলছেন সাধুবাবা। দাঁড়িয়ে আছি দুজনে। কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। মাঝেমাঝে পা দুটো আমার ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। তাই ঘোড়া যেমন তিন পায়ে দাঁড়িয়ে একটা পাকে বিশ্রাম দিয়ে খানিক বাদে পরিবর্তন করে তেমন একবার ডান, একবার বাঁ-পা করছি আমিও। এইভাবে পায়ের বিশ্রাম দিচ্ছি। সে সবের কোনও বালাই নেই সাধুবাবার। উত্তরে বললেন,

– মানুষের যে কত শক্তি, সততার যে কি তীব্রশক্তি তা বেটা তুই কখনও কল্পনাও করতে পারবি না। আকারে মানুষ ছোট হলেও অভিশাপ বাক্যের শক্তি কাজ করে ভীষণভাবে। যেমন ধর অভিশাপদাতার কথা। পুরোমাত্রায় যদি তার সততা থাকে তাহলে নিশ্চিত জানবি, অভিশাপবাক্য তার অবশ্যই কার্যকরী শক্তিরূপে কাজ করবে। যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিশাপ, সেই ঘটনায় অভিশাপদাতার বিন্দুমাত্র সততার ঘাটতি থাকলে অভিশাপবাক্য কখনও কার্যকরী হবে না। বরং ক্রোধ ও দুঃখবশত সে যে অভিশাপ দেবে, তা বিফল মিথ্যে হতে পারে না। ফলে এই অভিশাপবাক্য কার্যকরী না হয়ে পরে ঘুরে এসে অভিশাপদাতাকে আশ্রয় করে তারই ক্ষতিসাধন করে। কোনও ভুল নেই এর মধ্যে।

কথা হচ্ছে রাস্তার ধারে গাছতলায় দাঁড়িয়ে। লক্ষ্য করছি কিছু কিছু পথচারী আমাদের দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে। সাধুবাবা বলে চলেছেন,

– এ যুগটা পাপের যুগ। তাই সংসারে পূর্ণ সততা নিয়ে কেউ নেই, থাকতেও পারে না। এমনকি সাধুরাও। ফলে অভিশাপবাক্য প্রায়ই কার্যকর হয় না। অভিশা‌পদাতা নিজেই কুফল ভোগ করে অভিশাপ দিয়ে। তাই কার্যকারণে যতই মানসিক কষ্টের সৃষ্টি হোক না কেন, অভিশাপ দিতে নেই। ফল ভুগতে হবে নিজেকে। কারণ সততার অভাব কমবেশি সকলের মধ্যেই রয়েছে। বাক্যের শক্তি কখনও নষ্ট হয় না। কোনও ঘটনায় অভিশাপদাতা যদি সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ থাকে তবে তার সততা থেকে উৎপন্ন শক্তি কার্যকরী করে অভিশাপ বাক্যকে।

জিজ্ঞাসা করলাম,

– মায়ের অভিশাপবাক্য কি কার্যকরী হয়, মা বলে কথা।

নির্লিপ্তভাবে বললেন,

– বিষয়মূলক মা অনেকটা বেশ্যা সমতুল্য। সর্বদা বিষয়চিন্তায় আচ্ছন্ন মায়ের অভিশাপবাক্য কখনও কার্যকরী হয় না। আর ফলপ্রসূ হয় না বিষয়মূলক ও স্বার্থজড়িত সম্পর্কের অভিশাপ। এসব ক্ষেত্রে অভিশাপদাতা অভিশাপ দিয়ে নিজেই কষ্ট ভোগ করে তিনদিন, তিনমাস নইলে তিন বছরের মধ্যে।

সম্পূর্ণ প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম,

– বাবা, সুন্দরী কুমারী যুবতী কিংবা কোনও বউকে দেখলে সব বয়সের পুরুষদেরই ভাল লাগে। সুদর্শন ছেলে দেখলে একই প্রতিক্রিয়া হয় মেয়েদেরও। পরিচিত বা অপরিচিত যাই হোক না কেন। একবার দেখলে, দূরত্ব বেশি না থাকলে চোখটা ঘুরে গিয়ে আবার তার উপরই পড়ে। আপনি সাধু কিন্তু পুরুষ তো। তাই আপনার কি কথনও এমন হয়?

এই জাতীয় প্রশ্নের স্পর্ধা দেখে এতটুকু বিরক্ত হলেন না সাধুবাবা। শুধু একটু অস্বস্তির ছাপ পড়ল চোখেমুখে। মুহুর্তে সে ভাবটা কাটিয়ে উঠে বললেন,

– তুই কি এইসব কথা বলার জন্যে আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস এখানে?

এ কথার কি উত্তর দেব। মাথাটা নিচু করে রইলাম। নিজের মনেও যে একটু অস্বস্তি হল না, তা নয়। কোনও উত্তর না পেয়ে নিজেই বললেন,

– জগতের যা কিছু সুন্দর অসুন্দর তা সবই তো ভগবানের সৃষ্টি। তার মধ্যে বিশেষ রূপ, ভগবানের এক বিশেষ সৃষ্টি। এই রূপের মধ্যে তাঁরই প্রকাশ। যার জন্য আমরা কথায় বলি, মেয়েটির মুখখানা ‘লছমীর’ মতো। সুন্দর নারীর রূপে তাঁরই প্রকাশ, তাঁরই আকর্ষণ। এই আকর্ষণকে উপেক্ষা করার সাধ্য গৃহী তো দূরের কথা কঠোরতপা সাধুসন্ন্যাসীদেরও নেই। আমি তো তাঁদের বাইরে নই।

জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা, সাধু হোক বা গৃহীই হোক, কামের প্রভাবকে অস্বীকার করতে পারে না কেউই। কামচিন্তা, নারীভোগের ইচ্ছা জাগেনি, জাগে না কখনও আপনার মনে?

প্রশ্নটা করার আগে ভেবেছিলাম সাধুবাবা বোধহয় অসন্তুষ্ট হবেন। দেখলাম, না তা হলেন না। বরং হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন,

– না বেটা, আমার মনে ওসব ইচ্ছা জাগেনি কখনও, জাগেও না।

অস্বাভাবিক লাগল কথাটা শুনে। মনেমনে ভাবলাম, মিথ্যা কথা বলছেন সাধুবাবা। নির্মম এই সত্যকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারও নেই। এইটুকু ভেবেছি মাত্র। নিজের থেকেই বললেন,

– না বেটা, সত্যকে অস্বীকার না করে তোকে সত্য কথাই বলেছি।

আবারও ভাবলাম, এতো অবাস্তব, অসম্ভব কথা। কৌতূহলী হয়ে বললাম,

– মনুষ্যদেহ ধারণ করে কামচিন্তা রোধ করা আপনার পক্ষে কিভাবে সম্ভব হল?

স্বাভাবিকভাবে বললেন,

– এটা আমাদের সম্প্রদায়ের একটা গোপন কথা। এসব কথা বলা নিষেধ। চুপ করে রইলেন। অনেক অনুরোধ করলাম। মুখ খুলছেন না কিছুতে। আমিও ছাড়ার পাত্র নই। জানতেই হবে আমাকে। দেখলাম শেষ অস্ত্র একটাই, পায়ে ধরা। এটাতে কাজ না হলে আর কিছু করার নেই। ঝট করে বসে পড়ে পা দুটো ধরে বললাম,

– না বললে বাবা আপনার পা আমি কিছুতেই ছাড়ব না। ওই গোপন কথাটা বলতেই হবে আপনাকে।

একে রাস্তার ধারে, তাতে লোক চলাচল করছে দিনের বেলা। আর হুট করে পা ধরে ফেলব, বুঝতেই পারেননি সাধুবাবা। এক অদ্ভুত অস্বস্তিতে পড়ে বললেন,

– ছাড়, ছাড় বেটা, লেকে দেখলে অন্য কিছু ভাববে। পা ছেড়ে দে। ওঠ ওঠ বলছি।

উঠে দাঁড়ালাম। বেশ কয়েক মিনিট চেয়ে রইলেন মুখের দিকে। আমিও দেখলাম, তাঁর প্রসন্ন মুখখানা। জ্বলজ্বল করছে চোখদুটো। শুরু করলেন,

– এখন তোকে যেসব কথা বলব তা বলা নিষেধ আছে আমাদের সম্প্রদায়ের। এত করে ধরেছিস তাই বলছি। ঘর ছেড়ে যখন সাধুজীবনে এলাম তখন বয়েস আমার দশ। ভগবানের দয়ায় গুরুলাভ হল অযোধ্যায়। কিছুদিন গুরুসান্নিধ্য থাকার পর দীক্ষা হল। এই দীক্ষার দিনটাই হল আমার জীবনের এক অন্যতম স্মরণীয় দিন। দীক্ষার দিনে মন্ত্র দিয়েই গুরুজি মেরা কামকো উখাড় নিয়া।

সঙ্গে সঙ্গেই বললাম,

– ক্যায়েসে বাবা?

এখন কোনওদিকেই ভ্রূক্ষেপ করলেন না সাধুবাবা। যদিও পথচারী সংখ্যা নেহাত কম। ভরা দুপুর। গরমও পড়েছে বেশ। গায়ের কম্বলটা সরিয়ে নিজের ছোট্ট পুরুষাঙ্গটা ধরে বললেন,

– দীক্ষার দিনে গুরুজি দুটো লোহার শিক এইটুকু,

বলে কনিষ্ঠা আঙুল দেখিয়ে বললেন,

– এরকম মোটা হবে। আমার লিঙ্গের একেবারে গোড়ার উপরে একটা আর নীচে একটা দিয়ে শিকের দুমাথা ধরে বেশ জোরে একটা চাপ দিয়েই খচ করে টেনে নিলেন সামনের দিকে। অসম্ভব ব্যথা লেগেছিল। জল বেরিয়ে এসেছিল চোখ দিয়ে। যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছি প্রায় মাসখানেক। ভাল করে পিসাব করতে পারতাম না। খুব কষ্ট হত। তারপর ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গেল সব। সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত লিঙ্গের উত্থান হয়নি কখনও। কামভাব জাগেনি দেহে, মনেও জাগেনি কামচিন্তা।

বিস্ময়ের অবধি রইল না কথাটা শুনে। একটু ভেবে নিয়ে বললাম,

– এতো বাবা কৃত্রিম উপায়ে কামকে দমন করা হল। এক বিশেষ কায়দায় লিঙ্গের কোনও নার্ভকে আপনার গুরুজি অকেজো করে দিলেন। রহিত হয়ে গেল লিঙ্গের উত্থানশক্তি। আমার‌ ধারণা সারাজীবনের জন্যে হলও তাই। এতে না হয় ব্যাহত কাম দমন হল কিন্তু আপনার মনে। সেখানে তো এসব কায়দা চলেনি। চলার পথে রমণীর রূপযৌবন চোখে দেখলে তার প্রভাব তো পড়ে মনে। তাতে কি মনে কামচিন্তা আসে না, দেহকে না হয় এইভাবে ঠুঁটো করে রেখেছেন নারীভোগের বাসনা থেকে, মনকে কি তা পেরেছেন?

কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনলেন সাধুবাবা। খুব সহজভাবে হাসতে হাসতে বললেন,

– বেটা, পেটে খিদে থাকলে তো খাওয়ার চিন্তা আসবে মনে। ছোটবেলা থেকে যার খিদের অনুভবই হল না, খাওয়ার চিন্তা তার মনে আসবে কি করে?

কথাটা শুনে মনে হল, দর্শনেন্দ্রিয়ের সাহায্যে কোনও ভোগ্যবস্তু দেখলেও তাতে ভোগের চিন্তা আসে না যদি তা অনাস্বাদিত হয়। এটাই হয়তো সাধুবাবার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ। জিজ্ঞাসা করলাম,

– আপনাদের সম্প্রদায়ের সব সাধুদের কি এই পদ্ধতিতে কাম থেকে নিবৃত্ত করা হয়?

দ্বিধাহীন চিত্তে বললেন,

– এই পদ্ধতি ছাড়াও আছে আর একটা পদ্ধতি। কারও লিঙ্গে এফোঁড় ওফোঁড় করে গেঁথে দেওয়া হয় সরু লোহার শিক। ঠিক যেমন করে মেয়েদের কান বেঁধানো হয়।

এবার একটু ক্ষুণ্ণভাবে বললাম,

– সাধনভজনের মাধ্যমে কামকে জয় না করে, কৃত্রিম উপায়ে কামকে দমন করা আমার মনে হয় ঠিক না।

একথায় একটু বিরক্ত হয়ে বললেন,

– তোর ঠিক বেঠিকে কি আমরা চলব? কোনটা ঠিক আর কোনটা নয়, তুই তার বুঝিস কি?

প্রসঙ্গের মোড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা, আমরা সংসারী যারা, কোনও না কোনও সমস্যা তো লেগেই আছে। এমন কিছু বলুন যাতে এর থেকে উদ্ধার পেতে পারি।

কথাটা শুনে একটু চিন্তা করলেন। পরে ভাবলেশহীন মুখে বললেন,

– দেখ বেটা, মানুষের যেমন সমস্যা আছে, তার সমাধানও আছে। যে কোনও সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার পথটা তোকে বলি শোন। কোনও ব্যাপারে সমস্যা মনে হলে প্রথমে ভাবতে হবে, প্রকৃতই কোনও সমস্যায় পড়েছিস কিনা? যদি পড়ে থাকিস তাহলে সমস্যার ধরনটা কি? কল্পনাপ্রসূত, সাময়িক না মারাত্মক? যদি প্রকৃতই কোনও সমস্যা হয় তবে নিজে প্রথমে ভাববি গভীরভাবে। তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকবি। সমাধানের পথ পেলে ভাল। না পেলেও ক্ষতি নেই। নিজের উপর একটু ভরসা রেখে ধৈর্য ধরে থাকবি। দেখবি ধীরে ধীরে সমাধানের পথ পেয়ে যাবি। সমস্যার জট খুলে যাবে কিছুদিনের মধ্যে। কাল্পনিক সমস্যা, সমস্যায় পড়িসনি অথচ মনে হচ্ছে পড়বি। এসব ব্যাপার একেবারে উড়িয়ে দিবি মন থেকে। ভাববি, সমস্যা এলে তখন দেখা যাবে। নইলে কিন্তু মনের শান্তিটা নষ্ট হবে।

একটু থেমে বললেন,

– সমস্যাটা সাময়িক, কল্পনাপ্রসূত কিংবা মারাত্মক যাই হোক না কেন, তাড়াহুড়ো করবি না। তাড়াহুড়ো করে সমস্যা কখনও অতিক্রম করা যায় না। সমাধানও হয় না। একটু ধৈর্য ধরবি। পরে কোনও জ্ঞানী অথবা বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে সমস্যার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবি। দেখবি যত বড় সমস্যা হোক না কেন, সমাধানের পথ একটা পাবিই পাবি। কেমন করে জানিস? মনে রাখবি, আইডিয়া ইউনিভার্সাল (কথাটায় সাধুবাবা হিন্দি শব্দ প্রয়োগ করেছিলেন। পাঠকের সুবিধার্থে এখানে ‘ভাবটা’ যথাযথ রাখতে ইংরাজি শব্দ লেখা হল)। অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনন্ত আইডিয়া। কারও মাথায় দুটো চারটে আসছে, কারও মাথায় আসছে অসংখ্য। অতএব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যে আইডিয়া তোর মাথায় আসছে না, সেটা অন্যের মাথায় আসতে পারে। তাই আলোচনা বা পরামর্শ করবি, দেখবি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এখানেই থামলেন না সাধুবাবা,

– সামাজিক কিংবা পারিবারিক সমস্যা যাদের আছে, তারা যে কোনও সদগ্রন্থ পড়বে। কাউকে দিয়ে পড়িয়েও শুনতে পারে। কাজটা করতে হবে প্রতিদিন একই সময়ে একদিনও বাদ না দিয়ে। বেশ কিছুদিন এই নিয়মে চলতে থাকলে প্রথমেই চলে যাবে মনের অবাঞ্ছিত চঞ্চলতা। আসবে মানসিক স্থিতি। তখন সমস্যা সমাধানের পথ আপনিই খুঁজে পাবে। বেটা, হতাশ হতে নেই। তাহলে মানুষের পার্থিব জীবনের মৃত্যু এগিয়ে আসবে দ্রুত। একটা কথা নিশ্চিত জানবি, মহাকালের বাঁধা একটা রুটিন আছে। সেই রুটিনে প্রতিটা মানুষ সংসার জীবনে সাময়িক সুখ বা দুঃখ ভোগ করছে। এটাই নিয়ম। একথা বলে গেছেন প্রাচীন ভারতের ঋষিরা। যখন খারাপ সময় চলবে তখন ধরে নিতে হবে এটা সাময়িক। পরে আবার কোনও না কোনও অসুবিধার মধ্যে পড়তে হতে পারে। সংসারে আছিস, একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবি, মহাকালের এই চক্রে অতি দুঃস্থ মানুষের জীবনে হচ্ছে আমূল পরিবর্তন। আবার উচ্চাবস্থা থেকে পতনও হচ্ছে অবিরত।

একটু থামলেন। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

– আমার কি মনে হয় জানিস বেটা, আজকের অধিকাংশ মানুষেরই সঠিক কোনও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই। এটা হয়েছে জীবন ও জীবিকার সংঘাতের ফলে। তাতে সৃষ্টি হচ্ছে হাজার সমস্যা। যাদের সঠিক কোনও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে, তাদের নানা ঘাতপ্রতিঘাতে হচ্ছে লক্ষ্যচ্যুতি। আর একটা মজার কথা, মানুষ ‘সে যে কি চায়’ সে নিজেই জানে না। অথচ ছুটে চলেছে বিভ্রান্তের মতো।

এবার বেশ উদ্দীপ্ত কণ্ঠে বললেন,

– বেটা, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গভীরভাবে অনুভব করি, কোনও মানুষের লক্ষ্য ও তীব্র মানসিকশক্তি যদি থাকে সংসারে সাফল্য তার অনিবার্য। কোনও বাধা বা সমস্যা তার কাছে সমস্যাই হবে না। আত্মবিশ্বাস আর মানসিক স্থিতির অভাব হলেই মনের অপমৃত্যু ঘটে। ফলে প্রতিনিয়ত সবকিছুতে দেখে সমস্যা। তখন মানুষ প্রতিমুহুর্তে এগিয়ে চলে পার্থিব জীবনে মৃত্যুর পথে। বেটা, একথা কথার কথা নয়। সামনে যত অন্ধকার হোক, জীবনে যত সমস্যা জর্জরিতই হোক না কেন, লক্ষ্য অবিচল অকম্পিত রেখে এগোলে কোনও সমস্যাই মানুষকে আটকাতে পারে না, পারবেও না।

সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তরে কোথা থেকে কোথায় চলে গেলেন সাধুবাবা। এদিকে বেলাও হল অনেক। আমার জীবনে সাধুসঙ্গের সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা হল এই প্রথম। পা দুটো ধরে গেছে। সাধুবাবা নির্বিকার। তাঁর ভাবে কষ্টের কোনও লক্ষণ দেখলাম না। যতবড় সাধুই হোক না কেন, দেহটা যখন মানুষের, কষ্ট কি এতটুকু হয় না। আমার ক্ষিদেও পেয়েছে অসম্ভব। এবার যেতে হবে। প্রণাম করলাম। হাতদুটো তুললেন উপরে। চিমটেটা ধরাই আছে ডানহাতে। কি একটা প্রার্থনা করে নামালেন। অভুক্ত সাধুবাবা। কিছু প্রণামী দিতে গেলাম। কিছুতেই নেবেন না। আমিও ছাড়লাম না। শুধু বললাম,

– বাবা, এটা কোনও দান বা সাহায্য নয়। দয়া করে গ্রহণ করুন।

সাধুবাবা নারাজ। কিছুতেই নেবেন না। অগত্যা জড়িয়ে ধরলাম পা দুটো। না নিলে আমি যে শান্তি পাচ্ছি না। নিতেই হবে। সাধুবাবা চিমটেটা মাটিতে ফেলে দুহাত দিয়ে আমার বাহুদুটো তুলে ধরলেন। উঠে দাঁড়ালাম। সামান্য প্রণামীটুকু গ্রহণ করলেন। এতক্ষণে হালকা হল মনটা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মুখের দিকে। চাওয়া পাওয়ার কোনও বাসনা নেই এ দৃষ্টিতে। একেবারেই নির্লিপ্ত নির্বিকার। শেষ প্রশ্ন করলাম,

– বাবা, এত বছরের সাধনজীবনে ঈশ্বর সম্পর্কে কি ধারণা হল আপনার? ঈশ্বর মানে কি‌, কোথায় থাকেন তিনি, তাঁকে লাভ করা যায় কিভাবে, তাঁর দর্শন কি পেয়েছেন আপনি?

হাসিমাখা মুখ সাধুবাবার অথচ সেই একইভাব, উদাসীন। এবার কাছে সরে এলেন একটু। উত্তর দিলেন শেষ প্রশ্নের শান্ত ও ধীরকণ্ঠে,

– ঈশ্বর মানেই অপেক্ষা, অপেক্ষার মধ্যেই ঈশ্বর, অপেক্ষায় ঈশ্বর লাভ হয়, আমি বসে আছি তারই অপেক্ষায়।

Show Full Article

9 Comments

  1. Facebook মুখর কিছু যীশুখৃষট আছে যারা রোজ কিছু ভক্ত জুটিয়ে প্রত্যহ নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে । আপনার মত বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নয়, বরংচে এই সব গুঁডবয়রা জাকিয়ে বই বিক্রি বা পুজোর প্রমানী নিয়ে ভন্ড সন্ন্যাসীদের আসন গ্রহন করেছে ।
    আপনার লেখা মেদহীন বিতর্কিত বিষয়ের সত্যতার প্রতীক।সাহসী লেখা যা গতানুগতিকতার বাইরে মন টানে। নিজের অভিজ্ঞতাময় কথা আমাদের আকর্ষনের উৎস। শুভেচ্ছা ।আশীর্বাদ দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button