– বেটা, এটা তো কিছুই না। এর চাইতে আরও কঠিন তপস্যা আছে। শুনলে তোর মাথাটা খারাপ হয়ে যাবে। তপস্যাটা কেমন জানিস? ভোরবেলায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কোন নদী বা গঙ্গায় নেমে তপস্বী দাঁড়িয়ে থাকবে গলাজল পর্যন্ত। অন্তরে জপতে থাকবে ইষ্টনাম জপ। সারাদিন এইভাবে চলতে থাকবে তপস্যা। সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত গেলে উঠে আসবে জল থেকে। তারপর গ্রহণ করবে ভগবানের প্রসাদ। প্রতিদিন তাও একবেলা মাত্র। এটা একদিনের ব্রত নয়। নির্দিষ্ট একটা সংকল্প করে এই ব্রত পালন চলে মাসের পর মাস ধরে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনও ঋতুতেই বন্ধ করা চলবে না সংকল্প করলে। এই তপস্যাকে জলশয্যায় তপস্যা বলে। যারা করেন তাঁদের জলশয্যি তপস্বী বলে।
একটু থেমে বললেন কথাগুলো।
জলশয্যি তপস্বীর কথা শোনামাত্রই মনে পড়ে গেল ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসের কথা। তখন বয়েস কম ছিল তাই বুঝিনি অত, ভাবিনিও। হরিদ্বারে গিয়ে বেশ কয়েকদিন ছিলাম। একদিন বেলা দশটা নাগাদ গেলাম আনন্দময়ী মায়ের আশ্রমে। পাশে দক্ষরাজ মন্দির। ঘুরতে ঘুরতে গেলাম মন্দিরের পিছনে। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। এক-আধজন লোক রয়েছে নিজের কাজে। পাশে বয়ে চলেছে মা গঙ্গার নীলধারা। ছোট্ট একটা ঘাট। দেখলাম একজন জটাধারী সাধুবাবা চোখবুজে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গলাজলে। নভেম্বর মাস। বেশ ঠান্ডা। গোটা হরিদ্বার কাঁপছে ঠান্ডায়। ভাবলাম সাধুবাবা স্নান করতে নেমে হয়ত জপ করছেন। আমি ঘাটের কাছে এমনিই বসে রইলাম। দেখতে লাগলাম মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আর তরতর করে বয়ে যাওয়া গঙ্গার নীলধারা।
এইভাবে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। বসে ছিলাম অন্যমনস্ক হয়ে। যখন ঘাট থেকে উঠে আসি তখনও দেখেছিলাম চোখবুজে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গঙ্গাজলে। তখন তো অত বুঝিনি। মন্দিরের একজনকে সাধুবাবার জলে দাঁড়িয়ে থাকার কথা জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলেছিলেন, উনি জলশয্যি তপস্বী। বহুদিন ধরে আছেন এখানে। ব্যস, এটুকুই। এসব নিয়ে আর কিছু ভাবিনি। ভাববার মতো মনটা তখন আমার ছিল না। শুধু দর্শন হয়েছে মাত্র।
আজ সাধুবাবার কথায় জানতে পারলাম কি কঠিন তপস্যারত ছিলেন সেই সাধুবাবা। মুহুর্তে সেদিনের ছবিটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। আবার মন ফিরে এল কনখল থেকে বৃন্দাবনে। তিনি বললেন,
– বেটা, এপথে মনটা যখন আছে তখন অনেকেরই সন্ধান তুই পেয়ে যাবি। আরও কিছু তপস্বীর কথা বলি শোন। এক ধরণের তপস্বী আছেন যারা আকাশের দিকে মুখ করে তপস্যা করেন। এটাও একশ্রেণীর সাধুসন্ন্যাসীদের ব্রত। এদের উর্দ্ধমুখী বা আকাশমুখী তপস্বী বলে। এদের মধ্যে অনেকে আবার সূর্যের দিকে তাকিয়ে তপস্যা করেন। এটা খুব খু-উ-ব কঠিন তপস্যা।
সাধুবাবা থামলেন। আমার কি ভাগ্য আজ জানতে পারছি কত ধরণের, কত কঠিনভাবে তপস্যারত সাধুসন্ন্যাসী রয়েছেন তপোবন ভারতবর্ষে। অথচ যাঁদের সচরাচর দেখতে পাই না, দেখতে পেলেও বিষয়ীমন ওইসব ত্যাগব্রতীদের বিষয়ে মনে কোনও রেখাপাত ঘটায় না। অদ্ভুত মন আমাদের। সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, এক শ্রেণির সাধুদের ব্রত আছে যারা কখনও নখ কাটেন না। মনে মনে কোনও সংকল্প করে তাঁরা এই ব্রতপালন করেন। এদের নখী তপস্বী বলে। একটা শ্রেণি আছে, যারা দিবারাত্র দাঁড়িয়ে থাকেন, বসেন না কখনও। এরা চলাফেরা করেন কথাবার্তা বলেন, সবই করেন সাধন জীবনে, কিন্তু বছরের পর বছর কখনও বসেন না। এটাও একটা ব্রত। এদের সঙ্গে বাঁশ বা লাঠি থাকে নিজের মাপ মতো। একটা ছোট আর দুটো বড়। ছোট টুকরোটা দুটো বাঁশের বা লাঠির মাথায় বেঁধে নিয়ে তার উপরে মাথা রেখে ঘুমোন। বিশ্রামের প্রয়োজন হলে ওইভাবে বিশ্রাম করেন। এই ব্রতে শোয়া বা বসার কোনও উপায় নেই।
কোনও কথা বলে ছেদ টানলাম না সাধুবাবার কথায়। একবার কথার তার কেটে গেলে অনেক সময় জোড়া লাগে না, আবার কখনও জোড়া লাগতে সময় লাগে অনেক। সাধুবাবার পায়ে ধরার ফলটা দেখছি বেশ ভালই হয়েছে। প্রশান্ত চিত্তে তিনি বলে চলেছেন,
– বেটা মৌনব্রতী সাধুদের কথা তো তোর জানাই আছে। এরা সাধারণত নির্দিষ্ট একটা সংকল্প করে কেউ তিন, কেউ ছয়, কেউ বা একযুগ বারোবছর পর্যন্ত মৌনব্রত অবলম্বন করেন। এ ধরণের তপস্বীদের অনেকে মৌনীবাবা বা মৌনব্রতী তপস্বী বলে। একান্ত প্রয়োজনে এরা ইশারায় অথবা লিখে মনের ভাবটুকু প্রকাশ করে মিটিয়ে নেন প্রয়োজনীয় কাজটুকু।
সৌভাগ্যক্রমে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণকালীন যেমন কেদারনাথ, বদরীনারায়ণ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, জ্বালামুখী, জম্মুতে বৈষ্ণোদেবী, অমরনাথের পথে পহেলগাঁও, হরিদ্বার, নেপালে পশুপতিনাথ, এমন আরও অসংখ্য তীর্থে বহু মৌনী সাধুর দর্শন পেয়েছি, তবে কোথাও কারও সঙ্গে লিখে বা ইশারায় কোনও কথা হয়নি আমার। বহু বছর আগে একবার পুরীতে আর একবার উত্তরাখণ্ডে উত্তর কাশীর আশ্রমে দর্শন করেছিলাম শ্রীশ্রী ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথজিকে। তখন তিনি ছিলেন মৌনী অবস্থায়।
অনেকক্ষণ কথা বলতে না পেরে একটু হাঁপিয়ে উঠেছি ভিতরে ভিতরে। তাই মৌনব্রত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, এই ব্রতপালনে সাধুসন্ন্যাসীরা কি ফল পেয়ে থাকেন তা কি আপনার জানা আছে?
প্রথমে ঘাড় নেড়ে পরে মুখে বললেন,
– হাঁ বেটা, আছে। যত কথা কম বলবি তত সত্য বজায় থাকবে, কথা বা বাক্যের শক্তি বাড়বে। জগতে যত শক্তি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও তীব্র শক্তি হচ্ছে বাক্যের। তাই সাধুসন্ন্যাসীরা মৌন থেকে বাক সংযম করেন। বাক সংযমে দেহের শক্তি বাড়ে, মনের শক্তি বাড়ে, বাড়ে বাক্যের শক্তি। ফলে অস্থিরতা কমে। সাধনে মন একাগ্র হয়।
যত বেশি কথা, তত বেশি মিথ্যা কথা, তত বেশি বাক্যের অপচয়, শক্তিরও। বেটা, হার আর নূপুরের পার্থক্য যেমন, অল্পেতেই মুখরিত হয়ে ওঠে নূপুর, শব্দ করে। তাই তো তার স্থান মানুষের পায়ে। হার একেবারেই নিস্তব্ধ মৌন। সেইজন্য তো সে স্থান পেয়েছে মানুষের গলায়। সাধনজীবনে মৌনতা তাই হারের মতোই আদরণীয়।
এই পর্যন্ত বলে থামলেন। আমি সাধুবাবার কথাগুলো শুনছি কিন্তু লক্ষ্য করছি তাঁর দেহটাকে। সারাদেহের কোনও অংশ এতটুকুও নড়ছে না শুধু কথার সময় মুখটুকু ছাড়া। কি অদ্ভুত সংযম! মৌনতা প্রসঙ্গে আরও বললেন,
– বেটা, যখন ইচ্ছা হবে তখনই কথা বলতে নেই। অকারণে বাক্য ব্যয় করতে নেই। সবসময় জানবি বাক্য তোর শক্তি। যত ব্যয় তত শক্তির ক্ষয়। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা না করলে বাক্য ব্যয় করতে নেই। বাক্য সংযত করা অত্যন্ত কঠিন। তবুও সংযত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। বেটা, সবসময় সুন্দর মধুর বাক্যে বলা উচিত। তাতে বিভিন্নভাবে, নানা বিষয়ে বাক্য মানুষের অশেষ মঙ্গল সাধন করে। কুবাক্য, কটুবাক্য ক্ষতি আর অনর্থই ঘটিয়ে থাকে বেটা।
গুরুজি আমার শাস্ত্রীয় উদাহরণ দিয়ে বলতেন, তিরবিদ্ধ অঙ্গের ক্ষত একসময় না একসময় শুকিয়ে যায়। তির বিদ্ধ করে মানুষের দেহকে, কিন্তু বাক্যবাণ শুধুমাত্র বিদ্ধ করে হৃদয়কে। ফলে ক্ষত, আহত হৃদয় মানুষের বছরের পর বছর দিবারাত্র যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। তাই কটুবাক্য, কুবাক্য, অমঙ্গলের কথা মুখে আনবি না কখনও। যারা ধর্মে নিরত তারা রুক্ষ ও অকল্যাণকর বাক্যও সদা সর্বদা বর্জন করবে। পৃথিবীতে এমন কোনও ডাক্তার বদ্যির জন্ম হয়নি যিনি মানুষের কথার আঘাতের ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারেন।
এমন সুন্দর কথা শুনে আনন্দে আবেগের বশে সাধুবাবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। কোনও বাধা দিলেন না। কিছু বললেনও না। মুখের দিকে তাকাতেই দেখলাম খুশিতে ভরে উঠেছে মুখখানা।। মনটা এখন আমার আর কোনও দিকেই নেই। আরও জানতে চাই, এ কথা বলতে হল না। তিনিই বললেন,
– বেটা, আর এক ধরনের তপস্বী আছেন যারা ভীষ্মের শরশয্যার মতো নিজে কাঠের পাটায় সুচালো পেরেক পুঁতে শয্যা তৈরি করে তার উপরে শুয়ে তপস্যা করেন। এ বড় কঠিনব্রত, তবে এমন তপস্বীর সংখ্যা বেটা খুব কম।
সাধুবাবা থামলেন। আমি চলে গেলাম অতীতে। ১৯৭০ সালের মে মাসের কথা। কলেজ থেকে ভ্রমণে গেছিলাম দিল্লি আগ্রা হয়ে হরিদ্বারে। একদিন লছমনঝোলায় নৌকায় পার হয়ে ওপারে গেলাম গীতা ভবনে। সমস্ত দর্শনীয় যা কিছু তা দেখে গঙ্গার পার ধরে সাজানো মনোরম ছায়াঘেরা বনের মধ্যে দিয়ে যখন লছমনপুলের দিকে এগোচ্ছি, তখন দেখি একটা গাছের তলায় পেরেকের শয্যায় শুয়ে আছেন এক সাধুবাবা। তবে তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি। সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম অনেকক্ষণ। তিনি নিজেও উপযাচক হয়ে কথা বলেননি।
বিভিন্ন ধরণের তপস্বীদের কথা শুনলাম সাধুবাবার মুখে। এবার প্রশ্ন এল মাথায়। জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, নানান ধরণের কঠোরতপা সাধুসন্ন্যাসীদের কথা শুনলাম আপনার মুখে। এখন আমার প্রশ্ন, নিষ্ঠার সঙ্গে জপতপ করলে ভগবানকে পাওয়া যায় একথা আপনাদের মতো সাধু মহাত্মারাই বলেন। একথা যদি সত্য হয় তাহলে এমন কঠিন তপস্যার উদ্দেশ্য বা কারণ কী? আপনার কথাই ধরুন না কেন! দীর্ঘকাল ধরে আপনি বসেন না। দাঁড়িয়ে আছেন ডানহাতটা তুলে। এমন কঠোরতার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
কথাটা শোনামাত্র বেশ খুশি হয়ে বললেন,
– বেটা, গুরু মন্ত্র দিলেন আর সাধারণভাবে জপ করলাম, অমনি ভগবান এসে দেখা দিল, অত সহজ নয় বেটা। যেকোনও নিয়ম মাফিক কঠোরতায় মনের একাগ্রতা আসে। কারণ রিপুর প্রভাব নষ্ট হয় কঠোরব্রতের মাধ্যমে। রিপুই চঞ্চল করে তোলে মনকে। চঞ্চল ঘোড়া আর চঞ্চল বাক্যকে বশীভূত করতে শাস্তি ও ভালবাসা এ দুটো যেমন প্রয়োগ করতে হয়, তেমনই দেহের শাস্তিরূপ কঠোরতা ভালবাসারূপ ইষ্টনামের সাধন করলে মন বশীভূত হয়।
বেটা, তিন দিন একেবারে অনাহারে থাকা কোনও পুরুষের কাছে কোনও সুন্দরী রমণীকে এনে ভোগ করতে দিলে তার ভোগের কোনও স্পৃহাই জাগবে না। মনে তিন দিনের না খাওয়ার কঠোরতা তার রিপুর তাড়নাকে যেমন সংযত করবে, তেমনই এইসব কঠোরব্রত রিপুর প্রভাব নষ্ট করে মনকে একাগ্র করতে সহায়তা করে। তাই অনেক সাধুসন্ন্যাসীরা এমন কঠোরব্রত পালন করেন এই ভাবে। এটা তো আছেই, আবার অনেকে সাধনে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে সংকল্প করে লিপ্ত হন ব্রতে। তাতে সাধন ও সংযম দুই-ই হয়, যা তাঁকে লাভ করতে সহায়তা করে। অনেকের আবার তা নয়, তাদের সংকল্প থাকে তাঁকে লাভ না করা পর্যন্ত কঠোর ব্রত থেকে এতটুকুও সরব না। তাতে এ দেহ থাকে থাক, যায় যাক।
কথাটা শেষ হতে জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, কোনও গৃহীর পক্ষে ঈশ্বর লাভের জন্য সাধুসন্ন্যাসীদের মতো এমন কঠিন ব্রত পালন করা যে সম্ভব নয় তা আপনি ভাল করেই জানেন। সংসারে থেকে তাঁদের ঈশ্বর লাভের উপায় কি?
মুহুর্ত দেরি না করেই বললেন,
– বেটা, সংসারে থেকে সৎভাবে জীবনযাপন করে নিষ্ঠা ও সংযমতার মধ্যে দিয়ে তাঁর নাম জপ করলেই তাঁকে লাভ করা যায়।
এ কথা বলায় সাধুবাবাকে কথায় চেপে ধরে বললাম,
– বাবা, একথাই যদি সত্য হয় তাহলে আপনি বা আপনার মতো যারা, তারা কেন এমন কঠিন ব্রত নিয়েছেন তাঁকে লাভ করার জন্য? সংযম ও সৎ জীবনযাপন করে জপ করলে আপনারও তো ঈশ্বর লাভ হবে। তাহলে এমন কঠোর জীবনের প্রয়োজন হল কেন?
এ কথায় হেসে ফেললেন সাধুবাবা। হাসতে হাসতে বললেন,
– বেটা, এর উত্তর আমার কাছে আছে তবে বলব না। বললে মনটা তোর খারাপ হয়ে যাবে। আর এ এমন অপ্রিয় সত্য কথা যে তোর গায়ে লেগে যাবে। তুই সংসারীদের হয়ে কথাটা জিজ্ঞাসা করলি, আমার কথাটা তাদেরকে গিয়ে বললে তারাও ভাল মনে নেবে না।
সাধুবাবার কথায় কৌতূহল আমার দ্বিগুণ হয়ে উঠল। আবার পাদুটোতে হাত রেখে বললাম,
– বাবা যত অপ্রিয় কথাই হোক না কেন, দয়া করে বলুন, অসহ্য হলেও শিক্ষাটা তো হবে!
হাতদুটো ইশারায় সরিয়ে নিতে বললেন পা থেকে। সরিয়ে নিলাম। মুখখানা দেখে বুঝলাম কি যেন একটা ভাবলেন। পরে বললেন,
– বেটা সংসারে থেকে সৎভাবে সংযমী জীবনযাপন আর সাধনভজন করলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায় একথা সত্য। তবে হাজারে একজন গৃহীও তাঁকে লাভ করতে পারে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার। কারণ তাঁকে লাভ করতে হলে প্রথমে যেটা দরকার সেটা হল ইন্দ্রিয় সংযম। আমার গুরুজি বারবার বলেছেন ইন্দ্রিয় সংযমের কথা। এ যুগে এটা কোনও গৃহীর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না।
যৌবনে পা দেয়ার পর থেকে কামরিপু উত্যক্ত করতে থেকে নারীপুরুষ উভয়কে। এই রিপুর প্রভাবে কেউ বৈধ, কেউ অবৈধ ভাবে নিবৃত্ত করে দেহসুখ। কুমার অবস্থায় বিকল্প পথ অবলম্বন করে পুরুষেরা। আর বিবাহিত নারীপুরুষের কথা তো ছেড়েই দিলাম। আর অন্য সব রিপুর তাড়না ও প্রভাবের কথা বলে কোনও লাভ নেই। এক কামের তাড়নাতেই জীবনের একটা বিশেষ পর্যায় পর্যন্ত মানুষ অস্থির। অথচ তাঁকে লাভ করতে হলে উভয়কে কঠোর ভাবে সংযমী জীবনযাপন করতেই হবে।