Mythology

কিভাবে ঈশ্বরদর্শন সম্ভব, ঈশ্বরপ্রাপ্তির গুঢ় পথ জানালেন সাধুবাবা

– বেটা, মনটা চায় শরীরের সুখ, হৃদয়ে বাসনা সন্তানলাভের অথচ সন্তানপ্রসবে কষ্ট ভোগ করব না, তা বললে কি আর মায়েদের সন্তান আপনা থেকে কোলে এসে যাবে? বেটা, যৌবনের শুরু থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত হাজার ছেড়ে দে, একালে লাখে একটা দেহমনে সংযমী নারীপুরুষ তুই খুঁজেই পাবি না। বর্তমানের সাধুসন্ন্যাসীদের মধ্যেও এর সংখ্যা বড়ই কম। একেবারে নেই বলব না, আছে তবে খুব খু-উ-ব কম।

মিনিটখানেক থেমে আবার কথাগুলো বললেন। এই যদি কথা হয় তাহলে তো গৃহীদের পোড়াকপাল। সাধুবাবার কথাগুলো যে সত্য তা তো দেখতেই পাচ্ছি। নিজের জীবন দিয়েও তো বুঝতে পারছি হাড়েহাড়ে। বাপরে, কি কামনাবাসনার এ দেহ মন নিয়ে বাইরে লোককে সৎ বলে জাহির করছি। আর ভিতরে কাম, ক্রোধ, লোভ, পরচর্চা ও নিন্দার ঝুড়ি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি সব সময়। এতটুকু সহ্য শক্তি নেই। স্বার্থে একটু আঘাত লাগলেই হায়হায় করে মরছি। অথচ ভগবানের কথায় চোখমুখের ভাবটা এমন করছি যেন আমার চেয়ে বড় ভক্ত আর কেউ নেই। নারদের পর আমি। বাহ্যত ভদ্র সভ্য সৎ বলে জাহির করলেও মনটা যে কোন নরকে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছ তা বুঝতে এতটুকুও দেরি হল না।


সাধুবাবার কথায় রাশ টেনে বললাম,

– তাহলে তো বাবা সংসারীদের তাঁকে লাভ করা একেবারেই অসম্ভব!


ঘাড়টা নেড়ে মাথাটা দুলিয়ে তিনি সহজভাবে বললেন,

– হাঁ বেটা, তুই ঠিকই বলেছিস। তাঁর স্বরূপ দর্শন শুধু জপ করলেই পাওয়া যাবে না। সংযমই মূল ও প্রধান। শুধুমাত্র জপে তিনি ইন্দ্রিয় সংযম করিয়ে দেন ঠিকই, তবে সে জপ সংসারে থেকে পারে কজনা! তাই শুদ্ধ উচ্চারণে নিয়ম মাফিক জপ আর সংযম, এদুটোরই প্রয়োজন। সংযম বলতে সব বিষয়ে এবং সব ব্যাপারে, বুঝলি? এবার বলি তোর মূল প্রশ্নের উত্তর। এই সংযম করতে হলে যে কঠোরতার প্রয়োজন নারীপুরুষের তা সংসারে থেকে একেবারেই সম্ভব নয়। কোনদিনই সম্ভব নয় বলতে পারিস, সেইজন্য তো সারাটা জীবন সাধুসন্ন্যাসীদের কাটাতে হয় কঠোরতার মধ্যে দিয়ে শুধু তার ইন্দ্রিয় সংযমের জন্য। আর সেই কারণে এই কঠোর ব্রত নিয়েছি, সাধুসন্ন্যাসীরা নিয়ে থাকেন। বেটা, ভগবানকে লাভ করা অত সস্তা না।

একটু থেমে এদিক ওদিক মণিদুটো ঘুরিয়ে দেখে নিয়ে বললেন,

– বেটা, আমার কথায় ঈশ্বর লাভের ব্যাপারে তোর মনে হতাশা সৃষ্টি হবে এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সত্য কথাটা বললাম স্পষ্ট করে। হাজার হাজার দীক্ষিত নারীপুরুষ রয়েছে গ্রামেগঞ্জে শহরে। তুই তো সংসারে আছিস, একটু খোঁজ নিয়ে দেখে আয় একটা লোকের মুখেও শুনতে পাবি না তাঁর স্বরূপ দর্শন হয়েছে, তাঁকে লাভ করেছে। বেটা একটা কথা বলি শোন, কাউকে বলবি না কখনও। সাধুসন্ন্যাসী যাদের তুই দেখছিস, তাদের কজনার ভাগ্যে তাঁর দর্শন ঘটেছে? একেবারে মিথ্যাবাদী না হলে বলবে ‘এ পথে আছি বাবা, তবে তাঁর সাক্ষাৎ হয়নি এখনও’। বেটা, আজকের সাধুসন্ন্যাসীদের মধ্যে হাজারে একজন তাঁর দর্শন পেয়েছে কিনা সন্দেহ।

কথাটা শুনে এতটুকুও রেখাপাত করল না আমার মনে। চরম সত্যটা সাধুবাবার মুখ থেকে শুনে খুশিই হলাম। এমন নির্মল সত্য এর আগে কোনও সাধুসন্ন্যাসীর কাছ থেকে শুনিনি। প্রশ্ন এল। জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা, আপনি সব সাধুসন্ন্যাসী গৃহীদের এইভাবে টেনে এনে জোর দিয়ে বলছেন কিভাবে? কে পেয়েছে, না পেয়েছে তা আপনি জানছেন কি করে? কত মানুষ তাঁকে লাভ করেছেন তার কোনও হিসাব কি কিছু রেখেছেন আপনি?

কথাটা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন সাধুবাবা। এতক্ষণ পর তার সারাটা দেহ দেখলাম কেঁপে উঠল। হাসির রেশ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে বললেন,

– বেটা, কতজন তাঁর স্বরূপ দর্শন করেছে তার হিসাব আমার কাছে নেই ঠিকই তবে তোকে যে কথাটা বললাম, স্থির মাথায় একটু চিন্তা করলে সহজে উত্তরটা তুই পেয়ে যাবি। মা মা বলে, রাধে রাধে বলে, শঙ্কর শঙ্কর বলে চেঁচিয়ে গলা ফাটালে যে তাঁকে পাওয়া যায় না, তা ভাগ্যক্রমে এ পথে এসে আমি বুঝেছি। বেটা, বেশ ভালভাবেই বুঝেছি। সেজন্যই তো তোকে প্রথমে বলেছিলাম, আমার কথাটা খুব অপ্রিয়। শুনতে ভাল লাগবে না। এখন বুঝলি তো!

কথাটা বলে আবার হাসতে লাগলেন নির্বিকার ভাবে। কোনও কথা বললাম না। ভাবতে লাগলাম কথাগুলো। কোথাও কোনও ফাঁক পাচ্ছি না সাধুবাবার কথায়। হাসিটা থামতেই তিনি বললেন,

– বেটা, ভগবানের মারের চোটে পিঠের চামড়া না উঠলে তাঁকে লাভ করা যায় না। এ সত্য আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি।

‘চামড়া ওঠা’ অর্থে যে অত্যন্ত কঠোর কঠিন সংযমী জীবনের কথা সাধুবাবা বলতে চাইছেন তা আমি বুঝেছি। এবার একটু হতাশার সুরে বললাম,

– বাবা একটা প্রশ্ন আছে এখনে। এই যে সাধুসন্ন্যাসী গৃহী যারা তাঁকে ডাকছে, সেটা সংযম বা অসংযমে কিংবা সৎ বা অসৎ জীবনযাপনের মাধ্যমে, তার কি কোনও ফল নেই? তাঁকে ডেকে কি লাভ তাহলে? সাধুসন্ন্যাসীদের যে ধারা, মঠ মন্দির মিশন আশ্রমে যারা বাহ্যত সব ছেড়ে দিয়ে পড়ে আছে, গৃহীরা হাজার দুঃখ কষ্টের মধ্যেও তাঁকে যেটুকু স্মরণ করে তার কী কোনও মূল্যই নেই?

আমার প্রশ্ন ও কণ্ঠে হতাশার সুর শুনে বললেন,

– ঘাবড়াও মত বেটা, লাভ আছে, অনেক লাভ আছে বেটা, অনেক লাভ আছে। সাধারণ সাধন ভজনে (অসংযমে) তাঁর স্বরূপ দর্শন হবে না একথা একেবারে সত্য, তবে জন্মান্তরের কর্মক্ষয় হবে নিশ্চিতভাবে। এইভাবে চলতে চলতে একদিন না একদিন মুক্তিলাভ হবে। সেটা কার কবে হবে, কত জন্মে হবে তা কারও বলার সাধ্য নেই, তবে নাম সাধনে মুক্তি অনিবার্য।

বুঝলাম, সৎভাবে জীবনযাপন করে কঠোর সংযমে ইন্দ্রিয়দের বশে আনতে না পারলে ঈশ্বরের স্বরূপ দর্শন করাটা কোনও গৃহী বা সাধুসন্ন্যাসীর পক্ষে সম্ভব নয়। উর্দ্ধবাহু এই সাধুবাবার কথা ভাববার আছে। একথা ভেবে চলে গেলাম অন্য প্রসঙ্গে। বললাম,

– বাবা, চলার পথে দেখেছি অনেক মঠ মন্দির আশ্রম ও অনেক গৃহীর বাড়িতে চিৎকার করে, কখনও বা মাইক লাগিয়ে ভগবানের নামগান করা হয়। আবার অনেক ভিখারি ও সাধুদের দেখেছি তাঁর নাম গান করে ভিক্ষে করতে। এই বৃন্দাবনেই দেখুন না, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হাজার হাজার বিধবা মহিলা, সধবাও কিছু আছে, তারা ছড়িয়ে যান বৃন্দাবনের মন্দিরে মন্দিরে। এদের কেউ স্বামী, কেউ সংসার পরিত্যক্তা, কেউ বা এসেছেন শ্রীকৃষ্ণের লীলা বিজড়িত বৃন্দাবনের টানে। এদের একই সুরে বাঁধা জীবন। ভোর চারটে থেকে টানা চার ঘণ্টা ভগবানের নাম সংকীর্তন করে মজুরি পান দেড় দুটাকা আর সামান্য কিছু চাল ডাল। এতে এদের ক্ষুন্নিবৃত্তি হয় কিনা তা বৃন্দাবনের কৃষ্ণই জানেন। আমার প্রশ্ন, এইভাবে ঈশ্বর উপাসনায় আধ্যাত্মিক জীবনে কতটা কল্যাণ হয়, কিভাবে হয় বা আদৌ হয় কিনা? না হলে কেন হয় না? এ ব্যাপারে দয়া করে কিছু বলবেন?

প্রশ্নটা করামাত্র এতক্ষণ পর বিরক্তিতে ভরে উঠল সাধুবাবার মুখখানা। বিরক্তিভরা মুখে বললেন,

– সেই তখন থেকে তুই একের পর এক প্রশ্ন করে আমার বাক্য অযথা ব্যয় করাচ্ছিস। এসব কথায় তোর যেমন লাভ হবে না, আমারও নয়। যা বেটা এখন যা তো! আর বিরক্ত করিস না।

মুহুর্ত দেরি করলাম না। সাধুবাবার দুটো পায়ে হাতদুটো রেখে অনুরোধের সুরে বললাম,

– আপকা গোর লাগে বাবা, সন্তানের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিন আপনার ভজনে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য। এসব কথা জানার আশা নিয়েই তো আমার পথে বেরনো। প্রাচীন ভারতের আধ্যাত্মিকতার ধারাবহনকারী আপনাদের মতো যারা, তাদের কাছে এসব কথার উত্তর না পেলে কার কাছে পাব বলতে পারেন? যেটুকু জেনেছেন তা সম্পূর্ণই গুরুপরম্পরা। আপনাদের মতো যারা আছেন এ পথে, তাদের কথার মূল্য অনেক। তাই দয়া করে কিছু বলুন।

কথা কটা বলে হাতটা সরিয়ে নিলাম পা থেকে। আমি ঘাড় উঁচু করে সাধুবাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনিও তাকিয়ে রইলেন আমার মুখের দিকে। দেখলাম বিরক্তির ছাপটুকু মুছে গেল ধীরে ধীরে। মুখখানা আবার ফিরে এল আগের ভাবে। প্রশান্তির ছাপ ফুটে উঠল চোখেমুখে। বললেন,

– বেটা, তুই যাদের কথা বললি, যে নিয়মে তাদের নামগানের কথা বললি, তাদের কথা কিছু বললে তোর শুনতে ভাল লাগবে না। তবুও যখন জানতে চেয়েছিস তখন বলছি। বেটা, একটা কথা মনে রাখবি, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তাঁর নাম মুখে আনলে কিছু কল্যাণ তো হয়ই। তবে শ্রদ্ধা বিশ্বাস ও ভক্তিতে করা আর ওগুলো ব্যতিরেকে তাঁর নামগান করা, এই দুরকমের মধ্যে ভগবানেরও করুণাভেদ আছে জানবি। এই জাতীয় উপাসনাকে তামসিক ধর্মাচরণ বলে।

যারা চিৎকার করে উপাসনা বা ভগবানের নামগান করে মঠ মন্দির আশ্রমে কোনও ধর্মসভায় কিংবা বাড়িতে, তাদের প্রচ্ছন্ন অহংভাব জাগরিত হয়ে ওঠে, ভক্তিভাব থাকে না এতটুকু। যার অন্তরে প্রকৃত ভক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, সে কখনও ওদের দলে ভিড়ে তাঁর ভাব কিছুতেই নষ্ট করবে না। অহংভাবের প্রকট প্রকাশই হল এই জাতীয় উপাসনা। ‘আমি ভক্ত’ – এইভাবটা প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করে যারা এমন অনুষ্ঠান করে এবং তাতে যারা যোগ দেয়। এতে দেহের শক্তি ক্ষয় হয়ে মনের অস্থিরতা বাড়ে। লোকের কাছে বাহবা পাওয়া যায়। মনের উন্নতি কিছু হয় না, নিভৃতে তাঁর নামগান ও গুরুপ্রদত্ত বীজমন্ত্র সংযুক্ত ইষ্টনাম অন্তরে অবিরত জপ না করলে বেটা কাজের কাজ কিছু হবে না। এই জাতীয় উপাসনায় সাধুসন্ন্যাসী বা গৃহীদের মধ্যে মূলত কাজ করে আবেগ। আধ্যাত্ম্য জগতে আন্তরিক বিশ্বাস ভক্তি ছাড়া আবেগের কোনও স্থান নেই বেটা, বুঝলি?

আমার কথাটা এবার শুনতে তোর আরও খারাপ লাগবে। এই ধরণের উপাসক বা ভজনকারীদের সঙ্গে শিয়ালের কোনও তফাৎ দেখি না। গ্রামে দেখবি দলবদ্ধভাবে শিয়ালরা সমানে কিছুক্ষণ ডাকার পর তারা যে যার মতো চলে যায় আহারের সন্ধানে। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবি, এই জাতীয় তামসিক ধর্মাচরণকারীরা ভগবানের নামে চিৎকার করে পরে যে যার মতো চলে যায় নিজের ধান্দায়।

সাধুবাবা থামলেন। এখন তেমন শীত নেই তবে যমুনার সুন্দর হাওয়া বইছে হু হু করে। স্নানযাত্রী আর দর্শনার্থীদের আনাগোনায় কোনও বিরাম নেই কেশীঘাট। কোলাহল বলতে যা, তাও নেই। জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা, উর্দ্ধবাহু হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কঠোর ব্রতের এই জীবনযাপন করছেন যে উদ্দেশ্য নিয়ে, সে উদ্দেশ্য কি সফল হয়েছে?

সাধুবাবা বললেন,

– বেটা, গৃহত্যাগের পর থেকে বহু বছর ধরে সাধারণ নিয়মে জপতপ সাধনভজন করতাম। তাতে দেখলাম মনের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। ইন্দ্রিয়ের তাড়নায়ও উপশম হচ্ছে না কিছু। তারপর এই ব্রত গ্রহণ করলাম। তাতে দেহের কষ্ট যত বাড়তে লাগল ইন্দ্রিয়ের তাড়নাও তত কমতে লাগল। এখন কাম ক্রোধ লোভ সবই গেছে। মোহ মায়া আমার কারও উপর, কোনও জিনিসের উপর কখনও ছিল না, আজও নেই। বেটা, একটা বিষয় আমি বেশ ভালভাবেই বুঝেছি, দেহ যতদিন সুখ পাবে, এতটুকু আরাম চাইবে এবং সেই ভাবটা মনে তিল পরিমাণ থাকলে বুঝবি, ইন্দ্রিয় তোর বশে নেই। দীর্ঘদিন সাধারণ নিয়মে জপতপ করে এই উপলব্ধি যখন হল, তখন থেকেই এ কঠিন ব্রতের পথ নিলাম। ধীরেধীরে মনের সঙ্গে পরিবর্তন হল দেহের। তবে সে পর্যায়ে মন পৌঁছতে পারেনি এখনও।

অবাক হয়ে গেলাম সাধুবাবার কথা শুনে। এত বছর ধরে কঠিন ব্রত পালন করেও মন এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছয়নি যেখানে গেলে ইষ্ট দর্শন হয়। বছরের পর বছর ধরে অর্ধাহারে, অনাহারে অনিদ্রায় জীবন কাটিয়ে, ইন্দ্রিয়ের বেগ সংযত করেও সাধুবাবার মনে কোথাও ফাঁক রয়ে গেছে! একটা কথাও মুখ থেকে সরল না। মাথাটা নিচু করে বসে রইলাম। আকাশপাতাল ভাবতে থাকলাম। সাধুবাবাও কিছু বলছেন না।

এইভাবে মিনিটদশেক কাটার পর অবাক করে দিয়ে বললেন,

– অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই বেটা। আমার ইন্দ্রিয়ের সমস্ত কার্য রুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সেই অবস্থায় মন না পৌঁছনোর কারণ আমি খুঁজে পেয়েছি।

কথাটুকু বলে সাধুবাবা থামলেন। আমি মুখের দিকে তাকাতেই দেখলাম নির্বিকার মুখখানা নির্মল হাসিতে ভরে উঠেছে। না পাওয়ার এতটুকু ক্ষোভ নেই ওই মুখমণ্ডলে। তিনি বললেন,

– বেটা, সদগুরুলাভ হয়েছে। সিদ্ধ মন্ত্রও পেয়েছি। ইন্দ্রিয়ের এতটুকু বিকার নেই আমার দেহমনে। অন্তরে ইষ্টনাম চলছে অবিরত। শুধু মনে একটু ফাঁক রয়ে গেছে। সেটা কি জানিস, এত বছর সাধনভজন আর কঠোর জীবনযাপন করেও মন আমার ভগবদউক্তিতে বিশ্বাস রাখতে পারছে না, সেইজন্যে আমার ইষ্টদর্শন হচ্ছে না। তবে এই ব্রত থেকে এতটুকুও সরবো না। যদি কখনও সেই বিশ্বাস তিনি দয়া করে দেন, সেদিনই লাভ করব তাঁকে। তার জন্য কতকাল প্রতীক্ষা করতে হবে তা আমি জানি না।

একথার পর আমার আর জিজ্ঞাসা করার কিছু রইল না। প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই সাধুবাবা বাঁ হাতটা মাথায় বুলিয়ে দিলেন স্নেহভরে। আমি নির্বিকার নির্লিপ্ত সাধুবাবার অকপট স্বীকারোক্তির কথা ভাবতে ভাবতে কেশীঘাটের বাঁধানো অঙ্গন ছেড়ে ধীরেধীরে নেমে এলাম নিচে।

Show Full Article

One Comment

  1. I like to read your articles, specially meeting with sadhus and talking with them during the tours. I shall be grateful if you write about third eye, and how it opens (Divya Dristi). How we can know about ours previous life (Janmantar).
    – – – – Subir Bhattacharjee

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button