Mythology

ভগবানের কাছে করা প্রার্থনায় হতে পারে বিপরীত ফল, কারণ জানালেন সাধুবাবা

ঘুরতে ঘুরতে এলাম বিশাখাকুণ্ডের পাড়ে। ভাবলাম, কুণ্ডের জল একটু মাথায় দিয়ে আসি। ভাবামাত্রই তরতর করে নেমে গেলাম বাঁধানো সিঁড়ি ভেঙে। কুণ্ডের জল একটু মাথায় ছিটিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম মিনিটখানেক। তারপর ধীরে ধীরে যখন উঠে আসছি তখন চোখে পড়ল এক সাধুবাবা বসে আছেন সিঁড়িতে নামতে গেলে বাঁপাশে। তাড়াতাড়ি নামার জন্য প্রথমে চোখে পড়েনি। সিঁড়িতে বসে আছেন আরও বেশ কয়েকজন। চেহারায় ও পোশাকে জনাকয়েক স্থানীয় আর অন্যদের মনে হল আমার মতো যাত্রী। নিধুবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক তীর্থযাত্রী থাকলেও বিশাখাকুণ্ডে সেই তুলনায় কম। যারা বসে আছেন তারা সকলেই গল্পে মশগুল। অনেক জায়গা ঘুরে ক্লান্ত হয়ে হয়ত এখানে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন।

সাধুবাবা বসে আছেন সিঁড়ির একেবারে পাশে। এমন জায়গায়, যাত্রীদের কুণ্ডে ওঠানামায় কোনও অসুবিধা হবে না। বয়সে বৃদ্ধ। পঁচাত্তর থেকে আশির মধ্যে হবে বলে মনে হল। এখন গায়ের রং তামাটে। রোদে জলে অর্ধাহারে অনাহারে হয়ত এমনটা হয়েছে। এককালে যে ফরসা ছিলেন এখনও দেখলে তা বোঝা যায়। মাথায় জটা ঝুঁটি বাঁধা। পরনে আধ ময়লা গেরুয়াবসন। সঙ্গের সাথী লোটা কম্বল আর ঝুলিটা তো আছেই।


সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে এসব লক্ষ্য করলাম। সাধুবাবাও লক্ষ্য করলেন আমাকে। আমার ভিতর থেকে কথা বলতে মন সায় দিল না। আজ বিশেষ কারণে একটু ব্যস্ত আছি। মনটাও আছে অস্থির হয়ে। হরিদ্বার আর বৃন্দাবন তো সাধুদের হাট। এ যাত্রায় এসে অনেক সাধুসঙ্গ করেছি কয়েকদিনে। তাই আর মনটা চাইল না বসি গিয়ে পাশে। এইসব ভেবে পাশ কাটিয়ে কয়েকটা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতেই সাধুবাবা বললেন,

– এই বেটা, শোন।


বুঝতে পারলাম তিনি আমাকেই ডাকছেন। দাঁড়ালাম। ভাবছি বসব কিনা! বসলে চট করে উঠতে পারব না। সাধু দেখলে উপযাচক হয়ে আমি বসি। আজ কিছুতেই মন চাইছে না। অপ্রত্যাশিতভাবে সাধুসন্ন্যাসীদের পেয়েছি বিভিন্ন জায়গায়। তবে এমনভাবে তারা ডেকেছেন খুব কমই। হাতে গুণে বলা যায়। এই মুহুর্তে ভাবছি, এমন হাতে পেয়ে ছেড়ে দেব? আবার ভাবছি, ওদিকে আমার জন্য বসে থাকবে সকলে, কাজটা আটকে যাবে। এই কথা ভাবতে ভাবতেই নেমে এলাম কয়েক ধাপ। দাঁড়ালাম সাধুবাবার সামনে। তাকিয়ে রইলাম মুখের দিকে। আমার কোনও প্রশ্ন নেই। হাসিমুখে বললেন হিন্দিতে,

– কিরে বেটা, একগাল দাড়ি নিয়ে অত ব্যস্ত হয়ে চললি কোথায়? এত অল্প বয়সে কত শত সাধুসঙ্গ করলি আর আমার সঙ্গে দু-চারটে কথা হবে না?

কথাটা শুনে একটু দমে গেলাম। কিছু বললাম না। দাঁড়িয়ে রইলাম, এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না বসব, না চলে যাব! সাধুবাবা বললেন,

– আরে বেটা, এত ভাববার কি আছে? মন চায় তো বস নইলে চলে যা। তোকে জোর করছি না বেটা। আমি তোর কাছে অর্থ চাইছি না। আসলে তুই সাধু ভালবাসিস তাই ডাকছি তোকে। অর্থের জন্য নয়। লোভীরা ভালবাসে অর্থ, সংসারে যারা কামুক পুরুষ তারা সবসময় ভালবাসে নারী, সাধুসন্ন্যাসীরা ভালবাসে ভগবানকে, আর সংসারে থেকেও যারা সাধুকে ভালোবাসে তারা তো পরোক্ষে ভগবানকেই ভালোবাসে। সেইজন্যই বেটা তোকে ডাকছি। এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে কথা হবে কি করে, বোস না বোস।

কথাটা এমনভাবে আন্তরিকতার সুরে বললেন আমি আর উপেক্ষা করতে পারলাম না। বিবশভাবে বসে গেলাম সাধুবাবার মুখোমুখি হয়ে। এতক্ষণ প্রণাম করার কথা মনে ছিল না। আসলে ইচ্ছা ছিল না বলেই স্মরণ ছিল না। বসা অবস্থায় স্মরণ করলাম। দুটো হাত মাথায় দিয়ে বললেন,

– যতদিন বেঁচে থাকবি, ততদিন সমস্ত কর্মে সিদ্ধিলাভ হোক। তোর জন্য ছোট্ট এই প্রার্থনাটুকু রইল আমার গুরুজির কাছে।

এমন দুর্লভ আশির্বাদের কথা শুনে ভিতরে ভিতরে আমার কান্না পেয়ে গেল। আবেগে জলে ভরে উঠল চোখদুটো। মুখ থেকে একটা কথাও সরল না। ভাবছি, আজ সাধুবাবাকে এড়িয়ে গেলে এ কথা তো শোনা হত না। এইমুহুর্তে একটা প্রশ্নও এল না মাথায়। সাধুবাবা বললেন,

– গালে দাড়ি রেখেছিস কেন?

এতক্ষণ পর এই প্রথম কথা বললাম,

– ভাল লাগে, তাই।

আবার প্রশ্ন করলেন,

– সংসারে এতকিছু থাকতে দাড়ি ভাল লাগে কেন?

এর উত্তর জানা নেই। উল্টে আমিই বললাম,

– এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। তবে আমার একটা জিজ্ঞাসা আছে। সাধুসন্ন্যাসীরা দাড়ি জটা রাখেন কেন সেটা বলুন না আপনি।

সাধুবাবার সঙ্গে বসা বা কথা বলার ব্যাপারে আর যারা বসে আছেন তাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। আমার মতো অনেকেই আসছেন, একটু বসছেন, চলে যাচ্ছেন। কেউ বা কুণ্ডের জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন মাথায়। কথার ফাঁকেই এসব লক্ষ্য করলাম। এক ভদ্রমহিলাকে দেখলাম, স্বামী পুত্র দাঁড়িয়ে সিঁড়ির একেবারে উপরে, তিনি কুণ্ডে নেমে প্রথমে নিজের মাথায় জল ছিটালেন। তারপর হাতে কোষ করে জল এনে ছিটিয়ে দিলেন স্বামীপুত্রের মাথায়। ভাবলাম, এটাই ভারতীয় নারীর ধর্ম। স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায় এদের চাইতে আর কেউ ভাবে না বেশি।

এই মহিলাকে দেখে মনে পড়ে গেল ছোটবেলার কথা। বিজয়া দশমীর বিকেলে ষষ্ঠীতলা মন্দিরে বেদী থেকে নামানো হয়েছে দুর্গা প্রতিমাকে। মা সিঁদুর মিষ্টি ইত্যাদি নিয়ে গেলেন। আসার সময় আঁচলে মাখিয়ে নিয়ে এলেন মাটির প্রতিমার পায়ের ধুলো। বাড়িতে এসে বাবা ভাই বোন সকলের মাথায় বুলিয়ে দিলেন আঁচল। ভাবটা এমন স্বয়ং মাদুর্গার আশির্বাদ এনেছি আঁচলে করে। ভাইবোনদের একসঙ্গে না পেলে কাপড় ছেড়ে রেখে দিতেন সযত্নে। কেউ আসার সঙ্গেসঙ্গেই ছুটে গিয়ে কাপড় এনে ছুঁইয়ে দিতেন মাথায়। ভদ্রমহিলাকে দেখে মনে পড়ে গেল মায়ের কথা। এমন না হলে মা নাকি! ঠাকুমাকে চোখে দেখিনি। তবে তিনিও নিশ্চয় আমার মায়ের মতো করতেন বাবাকে, যা দেখে শিখেছেন আমার মা। আর এখন!

ভাবনার সুতোটা কেটে দিয়ে সাধুবাবা বললেন,

– বেটা, জটাটা জানবি ভগবানের আশির্বাদ। সকলের হয় না। এক শ্রেণির সন্ন্যাসী আছে যারা মাথা ন্যাড়া করে গোঁফ দাড়ি রাখেন না। এই সাধুদের একটা শ্রেণি চুল দাড়ি কাটে না গৃহত্যাগের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে বেটা।

Kamakhya

একটু থামলেন। আমি আর তর সইতে না পেরে বললাম,

– কি কারণ বাবা?

মাথা দোলাতে দোলাতে হাসিমাখা মুখে বললেন,

– জগতে সমস্ত নারীপুরুষের রূপ সৌন্দর্য ও দেহের আকর্ষণ বৃদ্ধিতে মাথার কেশের অবদান প্রথম। যত সুন্দরী রমণীই হোক না কেন বাবা, তাকে মাথা ন্যাড়া করে দিলে কি কোনও পুরুষের চোখে সে দেখতে ভাল লাগবে? শুধু পুরুষ কেন, মেয়েদের চোখেও কোনও ন্যাড়ামাথা মেয়েকে দেখতে ভাল লাগবে না। আসলে নারীর আকর্ষণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য সন্ন্যাসীরা রূপ সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ কেশ পরিত্যাগ করেন। কেশহীন মাথা আর গেরুয়াবসন সন্ন্যাসীকে সংযত করতে সাহায্য করে সাধনজীবনের পরিপন্থী নারী আকর্ষণকে। সংসারে কেশের পরিচর্যা তো বাবা একের প্রতি অপরের, নারীর প্রতি পুরুষ, পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্যে।

মাথায় জটা আর গাল ভর্তি দাড়ি সংযত করে মনকে, নিবৃত করে সেইসব কাজ থেকে, যে কাজ সাধু হয়ে করা উচিত নয়। পুরুষের সাধারণ সৌন্দর্য প্রায় সব নারীরই নজর কাড়ে। কিন্তু কোনও নারী স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না তার প্রেমিক বা স্বামীর মাথায় লম্বা লম্বা জটা আর গালভর্তি বড় বড় দাড়ি থাকুক। তাহলে বেটা বুঝতেই পারছিস, নারীর নজরমুক্ত হওয়ার জন্যই সাধুদের দাড়ি জটা। কোনও নারী কখনও চট করে দৈহিক কামনা নিয়ে প্রলুব্ধ হবে না দাড়ি জটা দেখে। সাধুর এই বেশ সংযত করে নারী মনকেও।

এবার হাসতে হাসতে বললেন,

– লম্বা লম্বা জটা আর বড় বড় দাড়ি নিয়ে কোনও যুবক সাধুরও চট করে হিম্মত হবে না কোনও নারীকে কাছে পেতে বা প্রেম নিবেদন করতে। অর্থাৎ বেটা, কেশহীন মাথা অথবা জটা দাড়ি থাকা জানবি সমস্ত বিশ্বে সংযত ও সংযমতার কবচ।

জানতে চাইলাম,

– এ তো বাবা আপনি বাহ্যসংযমের কথা বললেন। সন্ন্যাসীদের ন্যাড়া মাথায় আর সাধুদের দাড়ি জটা নিয়ে মনে মনে নারীতে আকর্ষণ অনুভব, প্রলুব্ধ হওয়া, কোনও নারীতে কামনামিশ্রিত বা কামনাহীন ভালবাসাও জন্মাতে পারে। এ সম্পর্কে আপনি কি বলবেন?

সাধুবাবা উত্তর দিলেন মুহুর্ত দেরি না করে,

– হাঁ বেটা, তোর কথা ঠিক। জন্মাতে পারে বই কি! তবে তা একেবারেই তাৎক্ষণিক এবং সেটা তাৎক্ষণিক সঙ্গদোষেই হতে পারে। কখনও কখনও ওগুলো থাকা সত্ত্বেও একের সঙ্গে অপরের মনের একটা যোগাযোগ সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু সরাসরি দেহ মিলনে ওই দাড়ি জটা ন্যাড়ামাথা বাধা দেবেই দেবে। এ পথে একেবারে হতভাগ্যের কথা ছেড়ে দে।

সাধুবাবার যুক্তিটা আমার কাছে খারাপ লাগল না। টেকো মাথার চেয়ে ঘনকালো চুলভর্তি মাথা যে দেখতে ভাল, অনেক আকর্ষণীয়, এ সত্যকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। তিনি বললেন,

– বেটা, সাধুদের জটা দেখতে পাবি তিন রকমের। পিঠ বেয়ে নেমে যাওয়া লম্বা লম্বা জটা এক রকমের। এ জটার নাম শম্ভু জটা। ভগবান শঙ্করের বিগ্রহে দেখা যায়। এই জটাগুলো মাথার মাঝখানে কুণ্ডলী করে পাকানো থাকে না। আর এক ধরনের জটা, সেগুলিও অনেক থাকে কিন্তু কোমর ছাড়িয়ে লম্বা লম্বা নয়, ছোটছোট। এর নাম বারবান জটা। এই জটাগুলো তুই হামেশাই দেখতে পাবি সাধারণ সাধুদের মাথায়। আর এক ধরণের জটা মাথায় পাকিয়ে পাকিয়ে পাগড়ির মতো করে বাঁধা। এর নাম নাগ জটা। মূলত নাগাসন্ন্যাসীদের মাথায় তুই ওই ধরনের জটা দেখতে পাবি।

জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা বারবান জটা মানে কি?

হাসতে হাসতে বললেন,

– ওগুলো বেটা এক এক ধরণের জটার এক একেক রকম নাম। আলাদা কোনও বৈশিষ্ট্য বা মাহাত্ম্য কিছু নেই। যেমন ধর সাধুসন্ন্যাসীরা যে কৌপীন ধারণ করে সেই কৌপীনেরও একটা নাম আছে, নাগফণী।

সাধুবাবার জটা দেখে বুঝতে বাকি রইল না ইনি নাগাসন্ন্যাসী। মাথায় যে জটা সেটি নাগজটা। ওদিকে যাওয়া হয়নি বলে প্রথম দিকে মনটা বেশ অস্থির ছিল, এখন আর নেই। একেবারে স্থির হয়ে মনটা আমার কথা শুনছে সাধুবাবার। এই মুহুর্তের ভাবটা লক্ষ্য করেই হয়ত বললেন,

– বেটা সংসারে সবই দুঃখের শুধু দুটো বিষয় ছাড়া। একটা হল সৎ ও সাধুসঙ্গ আর একটা সদগ্রন্থ পাঠ বা শোনা। এ দুটোই তৃপ্তির। সংসারে মনের পরিতৃপ্তিতে এ দুটো ছাড়া আর কিছু নেই। সংসারে আছিস, হাজার কাজের মধ্যেও প্রতিদিন সময় করে এগুলো করলে আর যাই হোক ক্ষতি কিছু হয় না। কিন্তু সংসারীদের এমনি পোড়া কপাল, এটুকু করতেও তাদের রুচি নেই।

এবার হাসি ফুটে উঠল সাধুবাবার মুখে। বললেন,

– বেটা একটা কথা প্রচলিত আছে। সারাজীবন সংসারীদের সবকিছু করার সময় মেলে কিন্তু ঈশ্বর চিন্তার সময় মেলে না। কেমন জানিস? ছোটবেলাটা কাটে খেলাধুলো আর পড়াশুনায় সুতরাং ওই সময়টা ছেড়ে দে। যৌবনে যুবক যুবতীরা একে অপরের মিলনপিপাসী আর আত্ম প্রতিষ্ঠার চিন্তায়, অতএব তখনও ঈশ্বর চিন্তার সময় নেই। অবশেষে বুড়ো বয়সে সময় কাটে রোগভোগ আর হাজার চিন্তায়। তাই সারাজীবন ভগবানকে ডাকার সময় কোথায়!

সাধুবাবা থামলেন। একটা প্রশ্ন সাধুবাবাকে প্রণাম করার পর থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়। সেটা কথার পৃষ্ঠে কথা হওয়াতে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। এবার সুযোগ এল। জানতে চাইলাম,

– বাবা, আপনাকে প্রথমে প্রণাম করার পরে আপনি আশির্বাদ করে আবার প্রার্থনা করলেন ভগবানের কাছে। আমার জিজ্ঞাসা, আশির্বাদই যখন করলেন তখন আবার প্রার্থনার কি প্রয়োজন?

প্রশ্নটা শুনে একটু ভেবে নিয়ে বললেন,

– বেটা, ঠিক তোর মতো আমিও একজন। তুই ঘরে আর আমি বাইরে, তফাৎ শুধু এইটুকু। আমি তো শুধু আশির্বাদরূপী কিছু বাক্যের প্রয়োগ করলাম কিন্তু তা কার্যকরী করার শক্তি তো রয়েছে গুরুজি বা ভগবানের হাতে। তাই আমার আশির্বাদ বাক্য তোর উপর কার্যকরী করার জন্য প্রার্থনা করলাম তাঁর কাছে।

কথাটা বলে কি যেন একটা ভাবলেন। মুখটা দেখে তাই মনে হল। ভুরুটা একটু কুঁচকে বললেন,

– বেটা, গৃহীদের হঠাৎ করে কোনও প্রার্থনা করতে নেই ভগবানের কাছে। কারণ বাক ও মনের মধ্যে নিহিত রয়েছে এক মহাশক্তি যা প্রকাশ পায় প্রার্থনায়। মানুষের সব ব্যাপারে বোধশক্তি কম। প্রার্থনায় ভালমন্দ বোঝার মতো শক্তি অনেক বিদ্বান বুদ্ধিমান এমনকি অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিরও নেই। আপাতদৃষ্টিতে ভগবানের কাছে করা কোনও প্রার্থনা শুভ মনে হলেও তার ফল মারাত্মক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মনে কর, মরণাপন্ন সন্তানের প্রাণ রক্ষার্থে কোনও বাবামা আকুল প্রার্থনা জানাল ভগবানের কাছে। ভক্তের প্রার্থনা মঞ্জুর করতে ভগবান সব সময়ই প্রস্তুত।

প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন তিনি। মরণাপন্ন সন্তান বেঁচে উঠল। কালে কালে দেখা গেল সেই সন্তানই হল হত্যাকারী বা এমন চরিত্রের যাতে প্রার্থনাকারী বাবামায়ের শান্তি নষ্ট হল চিরকালের জন্য। ভক্ত গৃহীর ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব ভগবানের। আমরা ভালমন্দের কতটুকুই বা বুঝি! প্রার্থনার দরকার নেই বেটা। তিনি তো দেখছেন, রয়েছেন সঙ্গে। আমার কোনটা প্রয়োজন সেটা আমার চেয়ে তিনি অনেক বেশি জানেন, বোঝেনও।

প্রয়োজনে আমার প্রয়োজনটা তিনিই মিটিয়ে দেবেন। একমাত্র নিজের বা পরের আত্মিক কল্যাণের প্রার্থনা ছাড়া অন্য কোনও প্রার্থনা করতে নেই ভগবানের কাছে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button