বাঙালি তান্ত্রিকের ক্রিয়ায় বশীভূত হলেন মেমসাহেব, আশাপূরণ হল সাহেবের
এই সাধুবাবা বয়েসে বৃদ্ধ তবে দেহের সাধনসুলভ উজ্জ্বলতা এতটুকুও কমেনি। বাঁধুনিও তেমন। অনেক বয়স্কা রমণীর মতো।
এই সাধুবাবা বয়েসে বৃদ্ধ তবে দেহের সাধনসুলভ উজ্জ্বলতা এতটুকুও কমেনি। বাঁধুনিও তেমন। অনেক বয়স্কা রমণীর মতো। বেশ কয়েকটি সন্তানের মা অথচ দেহের বাঁধন আঁটসাঁট। মনে হয় যেন বয়েস তেমন কিছুই হয়নি। পুরুষের চোখে টান ধরে। পলক ফেলতে দেয় না। সাধুবাবার চেহারা দেখে অবশ্য আমার তাই-ই মনে হল। মাথায় জটা তবে সারা মাথাভর্তি নয়। মাত্র কয়েকটা জটা নেমে এসেছে কাঁধ আর পিঠ বেয়ে। ক্যাতরানো সাপের মতো। হাত দেড়েকের উপর হবে না। মুখখানা বেশ। গালে দাড়ি আছে লম্বা। কাঁচায় পাকায় বেশ মানিয়েছে।
গলায় ছোট রুদ্রাক্ষের একটা মালা। মালা আরও আছে একটা, স্ফটিকের। রূপসজ্জার আড়ম্বর বলতে এইটুকু। কপালে তিলক বা ফোঁটাটোটা কিছু নেই। গায়ের রঙ ময়লা। ময়লা গেরুয়া বসনটাও যেটা পরনে আছে। পাশে একটা পানপাত্র নারকেল কিংবা পাকালাউ এর খোলা দিয়ে তৈরি। প্রয়োজনে ভিক্ষের চালও রাখা যায়। দেখলাম শিঙেও আছে একটা বাঁপাশে রাখা ঝুলিটার উপরে।
একটু কাছাকাছি গিয়েই লক্ষ্য করেছি এসব। সাধুবাবা বসে আছেন বশিষ্ঠ গঙ্গার পাড়ে একটা বড় পাথরখণ্ডের উপরে। ঝরনা বয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। এই গঙ্গায় স্থানীয় বাচ্চা ছেলেমেয়েরা স্নান করছে ঝাঁপাঝাঁপি করে। সাধুবাবা তাই দেখছেন, হাসছেন খুশিতে। আরও একটু কাছাকাছি হলাম। এবার আমার চোখে চোখ পড়ল সাধুবাবার। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই বললেন,
– বোস বাবা, বোস বোস।
মনে মনে যা ভেবেছিলাম দেখলাম ঠিক তাই হল। কথাতেই বুঝলাম বাঙালি। পাথরখণ্ডটা বেশ বড়। সাধুবাবার সামনে অনেকটা জায়গা ছিল। বসলাম সামনে। তাতে কথা বলতে সুবিধা হয়। সাধুবাবার চোখদুটো বাচ্চাদের উপরেই রয়েছে। মিনিটখানেক পর বললাম,
– বাবা, আমার কিছু জিজ্ঞাসা আছে। যার উত্তর বই পড়ে পাওয়া যায় না। সাধুসন্ন্যাসীদের অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনবোধ থেকেই পাওয়া সম্ভব। এটা আমার ধারণা। আরও একটা ধারণা আছে, সাধুসন্ন্যাসীরা কেউ নিজের থেকে নতুন কথা কিছু বলেন না। তারা প্রাচীন ভারতের ঋষিবাক্যের ধারক ও বাহক গুরু পরম্পরায়। যদি অনুমতি দেন তো প্রাণখুলে কথা বলি।
কথাটা শুনে চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ। চোখদুটো এখনও ওই জলক্রীড়ারত শিশুদের উপরেই আছে। এবার আমার দিকে তাকিয়ে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করে বললেন,
– দেখ বাবা, লেখাপড়া আমি কিছু করিনি। জ্ঞানেরও বড় অভাব। বিদ্যের দৌড় কেলাস টু পর্যন্ত। মায়ের কৃপাতেই পথ চলি। তোর প্রশ্নের উত্তর কি আমি দিতে পারব?
এই কথাটুকুতে বুঝে গেলাম সাধুবাবা মাতৃসাধক। সরাসরি অনুরোধের সুরেই বললাম,
– পারলে দেবেন, না পারলে দেবেন না।
এবার আমাকেই জিজ্ঞাসা করলেন,
– তুই কি করিস?
অকপটে বললাম,
– এখন কলেজে পড়ি। থাকি কলকাতায়। কলেজের এক বন্ধুই আমাকে তার খরচা দিয়ে এনেছে কামাখ্যা দর্শনে।
দেখলাম চোখেমুখে একটা বেশ খুশির ভাব ফুটে উঠল সাধুবাবার। জিজ্ঞাসা করলাম,
– আপনার কামাখ্যা দর্শন হয়ে গেছে?
হাসিমুখে বললেন,
– হ্যাঁ বাবা, কামাখ্যায় ছিলাম দিন পনেরো। গতকাল এসেছি এখানে। জায়গাটা বেশ ভাল। আজ থাকব এখানে। কাল রওনা দেব বৃন্দাবনের পথে।
কোনও প্যাঁচাল পাড়তে হচ্ছে না। কথা বললে কথার উত্তর দিচ্ছেন সহজভাবে। বললাম,
– বাবা, এপথে যখন আছেন তখন নিশ্চয়ই হিন্দুশাস্ত্রে বিশ্বাস আছে আপনার? আপনি কি বলেন?
সৌম্যদর্শন প্রশান্ত সাধুবাবা বললেন বেশ দৃঢ়কণ্ঠে,
– বিশ্বাস মানে, ষোলোআনাই বিশ্বাস করি।
এতটুকু দেরি না করে জিজ্ঞাসা করলাম,
– গৃহীদের কল্যাণের জন্যে তো অনেক কথাই বলা আছে তন্ত্রশাস্ত্রে। যেমন তাবিজ কবচ মাদুলি শান্তি স্বস্তয়ন ইত্যাদি। অনেকে এসব বিশ্বাস করে ধারণ করেন, অনেকে শান্তিস্বস্ত্যয়নও করেন সার্বিক কল্যাণ কামনায়। কিন্তু তাতে কোনও ফল হওয়ার কথা শুনি না। যারা এসব ধারণ বা কর্ম করেছেন তাদের মুখ থেকেই আমার শোনা। এবিষয়ে আমার নিজেরও বিশ্বাস আছে। আবার লোকের কথাও অবিশ্বাস করতে পারি না। শুনলে নিজের মনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ভাবি তাহলে তন্ত্রের এসব কথা কি মিথ্যে?
এতক্ষণ বসেছিলেন একটু নুয়ে। কথাটা শুনে সোজা হয়ে বসলেন। কণ্ঠে ফুটে উঠল দৃঢ়তার সুর। বললেন,
– তন্ত্রের মাধ্যমে সিদ্ধ হয় না এমন কোনও অসাধ্য কাজই নেই। তন্ত্র হল ‘প্র্যাক্টিক্যাল সায়েন্স’। যখন এর কোথাও কোনও ব্যতিক্রম দেখবি তখনই বুঝবি, সেখানে ভাঁওতা বা গোলমাল আছে কিছু।
এইটুকু বলে সাধুবাবা থুতনিটা রাখলেন হাঁটুর উপরে। বসে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ। ভাব দেখে মনে হল যেন ভাবছেন, ভাবছেন বেশ গভীরভাবে। তর সইতে না পেরে বললাম,
– বাবা, বিষয়টা যদি একটু খোলাখুলি বলেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হয়।
বলেই মনে মনে ভাবলাম, এই সাধুবাবার কাছে জানা যাবে অনেক কথা। মিনিটদশেক কেটে গেল নিঃশব্দে। একটা বিড়ি দিতে আপত্তি করলেন না। জ্বলন্ত কাঠিটা ধরলাম সাধুবাবার দাঁত দিয়ে চেপে ধরা বিড়িটাতে। ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা টান দিয়ে বললেন,
– বাবা, ভারতীয় তন্ত্র কোনও স্বতন্ত্র শাস্ত্র নয়। অনেকের মতে, বেদেরই রূপান্তর মাত্র। তবে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে তন্ত্রশাস্ত্রকে। একটিতে নির্ধারিত হয়েছে ব্রহ্মবিদ্যালাভের অন্য বিস্তৃত ক্রিয়া ও পদ্ধতির মাধ্যমে মুক্তির সহজ উপায়। অপরটিতে বর্ণিত হয়েছে জাগতিক অভ্যুদয়, ঐহিক সুখসমৃদ্ধি, শান্তি ও নিরাপত্তালাভের উপায়।
তবে এগুলো সব ষটকর্মের অন্তর্গত। যেমন স্মৃতিশাস্ত্রে যজন যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপন, দান ও প্রতিগ্রহকে বলে ষটকর্ম। তন্ত্রে আবার মারণ, উচাটন, স্তম্ভন, বশীকরণ, বিদ্বেষণ ও শান্তি, এই ছটি কর্মকে ষটকর্ম বলে।
এই পর্যন্ত বলে দুটো টান দিলেন বিড়িতে। তারপর ফেলে দিলেন। কোনও কথা বললাম না। সাধুবাবা বললেন,
– প্রাণহানিকর ক্রিয়াদিকে তন্ত্রে মারণ বলে। এই ক্রিয়া দ্বারা বাণমারা, শত্রু নিধন থেকে শুরু করে যেকোনও পশুপাখি, মানুষ ও ফলন্ত গাছকে প্রাণে মেরে দেয়া যায়। তখনকার দিনে বিখ্যাত তান্ত্রিক ছিলেন অভিনব গুপ্ত। পাণ্ডিত্যে হেরে গেলেন আচার্য শঙ্করের কাছে। মারণ আভিচারিক ক্রিয়াদির প্রয়োগ করলেন আচার্যের উপরে। দেখা দিল ভগন্দর রোগ।
অমানুষিক কষ্ট পেলেন আচার্য। পরে শিষ্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নরসিংহ মতান্তরে গায়ত্রীমন্ত্রের প্রয়োগে আভিচারিক ক্রিয়াদি খণ্ডন হল। রক্ষা পেলেন আচার্য শঙ্কর।
কোনও কথা বলে ছেদ টানলাম না সাধুবাবার কথায়। তিনি বললেন,
– স্বস্থান হতে উচ্ছেদ করার ক্রিয়াকে বলে উচাটন। তন্ত্রের এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেকোনও ব্যক্তিকে পাগলের মতো ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় রাখা যায় সব সময়। কোথাও একমুহুর্তে স্থির থাকা সম্ভব নয় না যার উপর এই ক্রিয়াদি প্রয়োগ করা হয়। স্তম্ভন হল প্রবৃত্তিরোধক। মানুষের প্রবৃত্তিরোধক ক্রিয়া। এর মাধ্যমে যেকোনও শক্তিমান নারীপুরুষের সমস্ত কর্মশক্তিকে নষ্ট করে জড়বিশেষে পরিণত করা সম্ভব।
এই পর্যন্ত বলার পর সাধুবাবাকে বললাম,
– এসব কথা জানতে চাইছি না বাবা। জানতে চাইছি…
আমার কথায় বাধা দিয়ে বললেন,
– অত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? আমাকে বলতে দে, তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি। পরের কথা পরেই ভাল। বাড়িতে আগে মাছ ভাত খাস, না চচ্চড়ি দিয়ে?
এ কথায় একটু লজ্জিত হয়ে চুপ করে গেলাম। সাধুবাবাও খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে আবার শুরু করলেন,
– বশীকরণ – তন্ত্রের এই ক্রিয়া দ্বারা অতিসহজেই নারীপুরুষ নির্বিশেষে যেকোনও ব্যক্তিকে বশীভূত করা যায় অব্যর্থভাবে। যেমন মনের মতো প্রেমিক বা প্রেমিকাকে বশীভূত করে প্রণয়সাধন, শত্রু বা উপরওয়ালাকে বশীভূত করে কার্যসিদ্ধি, অবাধ্য স্বামী বা স্ত্রীকে বশীভূত করে নিজের মনের মতো করে পরিচালিত করা ইত্যাদি।
সাধুবাবার একথায় বললাম,
– বাবা, এসব কথা তো ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। কিন্তু প্রমাণ তো কিছু দেখি না।
একটু বিস্ময়ের সুরে বললেন,
– কেন, তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি উডরফ সাহেবের নাম নিশ্চয় শুনেছিস। তার কথাই বলি শোন। একদিন এক মেমকে দেখার পর মনেমনে ভালবেসে ফেললেন সাহেব। প্রেম বলে কথা, তাই ধৈর্য ধরতে পারলেন না। একদিন অকপটে জানালেন তার মনের কথা। বেঁকে বসলেন মেমসাহেব। এক কথায়, না। প্রেমট্রেম পছন্দ করেন না তিনি। নিরাশ হলেন বিচারপতি। আইনের কোনও ধারায় প্রেমকে ধরতে পারলেন না।
কথায় একটু ছেদ টেনে বললাম,
– কিছু মনে করবেন না বাবা। একটু আগেই আপনি বলেছেন বিদ্যের দৌড় আপনার ক্লাস ‘টু’ পর্যন্ত। এসব কথা আপনি জানলেন কি করে?
হাসি ফুটে উঠল মুখে। বললেন,
– লেখাপড়া না শিখলে, ইস্কুলে না গেলে কি এসব কথা জানা যায় না। লেখাপড়া জেনে তো অনেকে কিছুই জানে না। ঠিক কিনা বল?
সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়তেই তিনি বললেন,
– বিচারপতি উডরফ একদিন শুনলেন প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণবের কথা। তিনি নাকি অসাধ্য সাধন করেন। আর সবুর সইল না। পাঠালেন তদানীন্তন রেজিস্ট্রারকে শিবচন্দ্রের কাছে। রেজিস্ট্রার জানালেন সাহেবের মনের কথা। হাসতে হাসতে বললেন শিবচন্দ্র, এটা তো সামান্য ব্যাপার। এ আর বেশি কথা কি। তবে শুনে আসুন, সাহেব একটা সিঁদুরের টিপ পরতে রাজি আছেন কি না?
একটু থেমে সাধুবাবা বললেন,
– সাহেব বিচারপতি উডরফ রাজি এক কথায়। শিবচন্দ্র বশীকরণ মন্ত্রে সিঁদুর পড়া দিলেন সাহেবকে। যথানিয়মে টিপ পরলেন কপালে। গেলেন প্রেমিকা মেমের কাছে। সম্মোহিতের মতো মেম তাকিয়ে রইলেন সাহেবের মুখের দিকে। মুহুর্তের মধ্যে কেমন যেন সব ওলট পালট হয়ে গেল। পরিবর্তন ঘটে গেল মনের। এবার আর ‘নো’ নয়। বশীভূত হলেন মেমসাহেব। আশা পূর্ণ হল উডরফের।
পরবর্তী সময়ে আন্তরিক প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটল বিবাহে। তন্ত্রের এই অত্যাশ্চর্য মহিমায় আকৃষ্ট হলেন সাহেব। তন্ত্রমতে সস্ত্রীক দীক্ষাগ্রহণ করলেন শিবচন্দ্রের কাছে। তারপর দীর্ঘদিন ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করে বহু লুপ্ত তন্ত্রের উদ্ধার করে গুরুদক্ষিণা দিলেন সাহেব বিচারপতি উডরফ।
বৃদ্ধ সাধুবাবাকে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছি। অথচ এখন কোথা থেকে যে কোথায় যাচ্ছেন তিনি বুঝতে পারছি না। একটানা কথা বলে একটু বিশ্রাম নিলেন। একটা বিড়ি এগিয়ে দিলাম। আপত্তি করলেন না। দেশলাই দিলাম। বারুদে ঘষা মারতেই ফস। জ্বলে উঠে নিভে গেল কাঠিটা। এদেশে এক খোঁচাতে কোনও কাজই হবার নয়। আর একটা কাঠি জ্বেলে ধরালেন। বেশ মৌজ করে টান মেরে বললেন,
– ষটকর্মের মধ্যে বিদ্বেষণ হল প্রণয়ী বা অত্যন্ত প্রীতির সম্পর্কের মধ্যে দ্বেষ জনক ক্রিয়া। স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমপ্রীতির সম্পর্কে অশান্তি বা বিচ্ছেদ এবং যেকোনও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কে নিখুঁতভাবে ফাটল ধরিয়ে দেয়া যায় এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
একটু থেমে শেষ টান দিলেন বিড়িতে। তারপর পাথরে আগুনটা ঘষেঘষে নিভিয়ে দিলেন বললেন,
– তন্ত্রে ষটকর্মের শেষ কর্মটি হল শান্তি। যে ক্রিয়া দ্বারা দুরারোগ্য ব্যাধি আরোগ্য, সাপ ও বিছের বিষহরণ, সুখপ্রসব, মৃতবৎসা দোষ শান্তি, আপদুদ্ধার, রাজরোষ, গ্রহদোষ এমন অসংখ্য দুর্ভোগ নিবারিত হয়। এই কর্মের দ্বারা মানুষের অশেষ কল্যাণ করা সম্ভব।
আমি শ্রোতা। সাধুবাবা বক্তা। বলে চলেছেন তিনি,
– এতক্ষণ তোকে যেসব কথাগুলো বললাম তন্ত্রে এই কর্মগুলিকে বলে আভিচারিক ক্রিয়া। বেদে কর্ম ও জ্ঞানকাণ্ড নামে দুটি কাণ্ড আছে। ব্রহ্মবিদ্যা লাভের সাধনা জ্ঞানকাণ্ডের আর আভিচারিক ক্রিয়াদি কর্মকাণ্ডের অন্তর্গত। তন্ত্রে জাগতিক সমৃদ্ধিলাভের জন্য অনেক উপদেবতা সাধনের কথাও বলা আছে। তবে এ সাধনায় আধ্যাত্মিক পরমার্থ লাভ হয় না। একে বলে উপবিদ্যা। এই উপবিদ্যার সাধনা মূল ব্রহ্মবিদ্যা লাভের সাধনা থেকে অনেক সহজসাধ্য। অল্পদিনের মধ্যেই এর সিদ্ধিলাভ হয়। উপবিদ্যায় সিদ্ধ সাধক অতি অদ্ভুতভাবে ইন্দ্রজালের মতো চমকপ্রদ প্রত্যক্ষ ফল তার শরণাপন্ন প্রার্থনাকারীকে অল্পকালের মধ্যেই দিতে পারেন অনায়াসে।