মাকালী কথা বললে শুনতে পান, মনে কষ্ট হলে সাধুবাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন
মায়ের যে কত দয়া, কত করুণা তা তাকে বলে বোঝাতে পারব না। মা কথা বলে শোনা যায়। মনে কষ্ট হলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পরিস্কার অনুভব করা যায়।
প্রশ্ন করেছিলাম একটা অথচ বিষয়টা বোঝাতে কত কথা বলতে হল সাধুবাবাকে। আনন্দে মনটা আমার ভরে উঠল। হাসতে হাসতে আবার সেই আগের কথাটাই বললাম,
– বাবা আপনি প্রথমে বলেছিলেন ‘কেলাস টু’ পর্যন্ত আপনার বিদ্যের দৌড়। কিন্তু এতক্ষণ আপনার কথা শুনে তো মনেই হলনা। আপনি কি আপনার শিক্ষার কথা গোপন করছেন?
হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসিতে ফেটে পড়লেন সাধুবাবা। বললেন,
– না বাবা, সাধু আমি। তোর কাছে মিথ্যে বলে বা কথা গোপন করে কি লাভটা হবে বলতে পারিস? এসব কথা জেনেছি আমি সাধুসঙ্গ করে।
‘সাধুসঙ্গ করে’ কথাটা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
– আপনি নিজে সাধু। সাধু হয়ে আবার সাধুসঙ্গ কেমন?
খুব খুশি মনে বললেন,
– ‘সাধু’ মানে তো আর এই নয় যে সব জেনে বসে আছি। এই জীবনে, এই সাধনজীবনে অনেকসময় মনের বিভ্রান্তি, হতাশা। সব সাধুই গুরুমুখে শুনে থাকে বিভিন্ন শাস্ত্রের কথা, সাধনজীবনের গোপন কথা। সাধন পথে কত বাধা আসে জানিস! মনের কখনও ওই অবস্থা এলে সাধুসঙ্গ করলে সাধুমনে বিভ্রান্তি কাটে, কাটে হতাশা।
সাধুসঙ্গের সময় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তাতে প্রত্যক্ষ জ্ঞানও বাড়ে। পুঁথি পড়ে পণ্ডিত হওয়া যায় আর কিছু হয় না। ঈশ্বরে বিশ্বাস ভক্তি প্রেম শরণাগতি বাবা সাধুসঙ্গ সৎসঙ্গ ছাড়া কিছুতেই আসবে না, হবারও নয়। সেইজন্য তো সাধু হলেও সাধুসঙ্গ করতে হয়।
ছোট্ট প্রশ্ন। বুঝিয়ে দিচ্ছেন অনেক কথা বলে। কোনও বিরক্তি নেই। অথচ সংসারে বাপ মায়ের কেউ পড়াতে বসেছে শিশুকে। বসা থেকে ওঠা পর্যন্ত দাঁতখিঁচুনি আর বিরক্তির অন্ত নেই। একবারও ভাবে না, শিশুকালে নিজের মাথাটা কেমন ছিল! এদিকে বেলাও বাড়ছে। জিজ্ঞাসা করলাম,
– আপনি কি ব্রহ্মচারী, না বিয়ে-থা করেছিলেন?
স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলেন,
– না বাবা, ওপথে পা বাড়াইনি।
প্রশ্নের পা বাড়িয়ে দিলাম সাধুবাবার ব্যক্তিগত জীবনপ্রশ্নে,
– বাড়ি কোথায় ছিল আপনার, গৃহত্যাগই বা করলেন কেন?
এ কথায় একটু অস্বস্তিবোধ করলেন। মুখ দেখে তা মনে হল। অস্বস্তি ভরা মুখে বললেন,
– বাড়ি ছিল আমার পূর্বপাকিস্তানের রাজশাহীতে। আমার ফেলে আসা জীবনের কথা জিজ্ঞাসা করিসনে।
হাতদুটো সাধুবাবার পায়ে রেখে একান্ত অনুরোধের সুরে বললাম,
– বাবা অযাচিতভাবে কত কথা বললেন। আপনার অনুগ্রহের কথা ভুলব না কখনও। দয়া করে যদি কিছু বলেন তো কৌতূহলটা মিটে যায়।
পা থেকে হাতদুটো আমার সরিয়ে দিলেন। বেশ কয়েক মিনিট চুপ করে রইলেন। উদাসীনতায় ভরে গেল মুখখানা। কেমন যেন হয়ে গেল। মনে হল তিনি যেন সেই গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে গেছেন। খানিকপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– মায়ের যে কি ইচ্ছে তা কারও বোঝার সাধ্য নেই। আমার ঘর ছাড়ার পিছনে আছে এক অদ্ভুত কাহিনি। শুনলে মনে হবে গল্পকথা। কিছুতেই তোর বিশ্বাস হবে না। তবুও বলছি তুই অনুরোধ করছিস বলে।
তখন আমার বয়েস বছর আঠারো। বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করি। স্বাচ্ছন্দ্যেই আমাদের সংসার চলে। আমার বিয়ের দিনও মোটামুটি ঠিক হল। মাসখানেক বাকি। এরইমধ্যে হঠাৎ একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলাম চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়। চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাশে বসে আছে এক জটাজুট সন্ন্যাসী। সেখানে গেছি আমি। সন্ন্যাসী দীক্ষা দিলেন আমাকে। মনের এক অদ্ভুত পরিবর্তন হল। ভুলে গেলাম মা বাবা ভাইবোন আর সংসারের কথা। আর ফিরে এলাম না। দেখলাম এটুকুই। ঘুম ভেঙ্গে গেল। কাউকে কিছু বললাম না। প্রতিদিন যেমন কাজকর্ম করি তেমনই করলাম।
অবাক হয়ে শুনতে লাগলাম সাধুবাবার কথা। তিনি বলতে লাগলেন,
– সাধু হব এমন কথা ভাবিনি কখনও। ভগবানে বিশ্বাস তোর যেমন আছে, আমারও তেমন ছিল তবে প্রগাঢ় কিছু নয়। সাধারণ সংসারীদের যতটুকু থাকে ততটুকুই। পরদিন আবার ঠিক ওই একই স্বপ্ন দেখলাম। একই জায়গায়, একই সাধুর কাছে। স্বপ্নের বিষয়বস্তু আর ছবির তফাৎ হল না এতটুকু। মনটা কেমন যেন একটা অস্বস্তিতে ভরে গেল।
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম, স্বপ্নের কথাটা বললাম সবাইকে কিন্তু জায়গার কথাটা বললাম না। কোনও কারণে নয়, এমনিই বললাম না। সকলে বলল, ওসব কিচ্ছু না, পেট গরম থেকে হয়েছে। এরপর কাউকে কিছু আর বললাম না। দ্বিতীয় দিনও কাটল আমার প্রতিদিন যেমন কাটে তবে বেশ অস্বস্তি নিয়ে।
নিজে বুঝে উঠতে পারলাম না কেন এমন হচ্ছে! অজানা একটা উদ্বেগ সৃষ্টি হল মনে। অদ্ভুত ব্যাপার, তৃতীয় দিন আবার ওই একই স্বপ্ন দেখলাম আমি। তবে এবার আর কাউকে কিছু বললাম না। সারাদিন কাজকর্ম করলেও স্বপ্নের বিষয়টা সমানে ঘুরপাক খেতে লাগল মাথার মধ্যে। চারদিনের দিন মনটা আমার কেন যেন হয়ে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবলাম, দেখি তো ব্যাপারটা সত্যি কিনা? ব্যস, কাউকে কিছু বললাম না। বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে সামান্য কিছু পথ খরচা নিয়ে।
মন দিয়ে শুনছি গৃহত্যাগের কাহিনি। তিনি বলে চললেন,
– যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। স্বপ্নে যা দেখেছিলাম গিয়ে দেখলাম ঠিক সেই রকম। মন্দিরের পাশেই চাতাল। সেখানে বসে আছেন এক জটাধারী সন্ন্যাসী। দেহ যেন জ্যোতির্ময়। পরনে কালো একটা আলখাল্লা। ঝাড়া হাত পা। সঙ্গে ঝোলাটা পর্যন্ত নেই। দারুণ সুন্দর দেখতে। ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতিমূর্তি যেন। বিস্মিত হয়ে গেলাম স্বপ্নের কথা ভেবে। দাঁড়িয়ে রইলাম স্থিরভাবে। কণ্ঠস্বর রোধ হয়ে এল। নড়বার শক্তিও রইল না।
সাধুবাবা বিস্মিত হয়েছিলেন জীবনের কোনও একসময়, এখন বিস্মিত হলাম আমি। ভাবলাম এটা বিজ্ঞানের যুগ। কত অগ্রগতি বিজ্ঞানের। এ যুগে এসব কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে! কেমন করে এটা সম্ভব? এর কি কোনও ব্যাখ্যা আছে? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
– তারপর কি করলেন আপনি?
আমার মনের কথাটা ধরতে পেরেই হয়ত বললেন,
– বাবা, মায়ের দয়াতে সবই সম্ভব। যেকোনও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে কারও বিশ্বাসের অপেক্ষা না রেখেই।
সাধুবাবার এ কথাটা একেবারে চুপসে দিল আমাকে। তিনি পূর্বকথার রেশ ধরে বললেন,
– সন্ন্যাসী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসলেন। কোনও কথা বললেন না। সম্বিৎ ফিরে এল আমার। প্রণাম করে বসলাম। স্বপ্নের কথা বলতে যেতেই নিষেধ করলেন ইশারায়। অন্তর্যামী। তারপর যথানিয়মে দীক্ষা হল। তিন রাত্রি রয়ে গেলাম চন্দ্রনাথের আশ্রয়ে। কেমন যেন পরিবর্তনও হয়ে গেল মনের। কি করে যে কি হল কিছু বুঝতে পারলাম না। আর ফিরেও গেলাম না বাড়িতে।
তারপর ওখান থেকে গুরুজি আমাকে সোজা নিয়ে গেলেন জ্বালামুখীতে। সেখানে ছিলাম মাসখানেক। এরপর একে একে চলতে থাকল বিভিন্ন তীর্থপরিক্রমা। চলল কয়েকবছর ধরে। প্রায় সব তীর্থদর্শনই হল গুরুজির সঙ্গে। এইভাবে কেটে গেল বেশ কয়েক বছর। তীর্থপরিক্রমা করতে করতে একদিন গেলাম রামেশ্বরে।
গুরুজি বললেন, ‘এবার তুই একলা চলবি। এখান থেকে আমি চলে যাব উত্তরাখণ্ডে। আর কোনও দিন দেখা হবে না। আমার আশীর্বাদ রইল তো উপরে’। ওখানে দু দিন থাকার পর গুরুজি চলে গেলেন। আমার শুরু হল একলা চলা তাঁর কৃপা নিয়ে।
জানতে চাইলাম,
– সাধুজীবনে আসার পর বাড়ির কথা মনে পড়েনি, মন খারাপ হয়নি কারও জন্যে?
স্বাভাবিকভাবেই বললেন,
– না রে, বাবা মায়ের কথা একবারও মনে পড়েনি, মন খারাপও হয়নি কোনওদিন। কেন হয়নি বলত?
উলটে প্রশ্ন করায় একটু অস্বস্তি হল আমার। কেন সাধুবাবার মন খারাপ হয়নি, এ প্রশ্নের উত্তর আমি দেব কি করে! তাই প্রসঙ্গ পালটে বললাম,
– বাবা, এতক্ষণ আপনার কথা শুনে মনে হল আপনি তন্ত্রসাধক। আমার ধারণা কি ভুল?
হাসিতে ভরে গেল সাধুবাবার মুখখানা, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন,
– না বাবা, আমি সাধক টাধক নই। ওসব অনেক বড় কথা। আমি মায়ের ভিখিরি ছেলে। তোর ভাবে তুই ভাবলি, তাতে কি আমি তাই হলাম। মাকে ডাকি, মায়ের কৃপাতেই চলি এই পর্যন্ত।
প্রশ্ন করলাম,
– দেহ যখন আছে তখন রোগব্যাধি আসবেই। আপনার কখনও বড় কোনও রোগ হয়নি। হলে কি করতেন, সেবা করতো কে?
আনন্দিত মনে বললেন,
– জলে ভেজা, রোদে পোড়া অযত্নের দেহটা মায়ের কাছেই সঁপে দিয়েছি বাবা, এ দেহ তাঁরই। তাই ঘর ছাড়ার পর ওষুধের মুখ দেখিনি কখনও।
আমার ভাগ্যটা ভাল। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছি, উত্তরের জন্য বেগ পেতে হচ্ছে না। সাধারণভাবে অনেক সাধুর কাছেই হয় না এটা। বললাম,
– বাবা, এখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন আপনি। আপনার মনে এমন কোনও আশা ক্ষোভ বা দুঃখ কি কিছু আছে, যা মনকে পীড়িত করে অথচ কাউকেই বলতে পারেন না।
এ কথাটা শোনামাত্র সাধুবাবার মুখখানা কেমন যেন মলিন হয়ে উঠল। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে চোখদুটো ভরে উঠল জলে। বললেন,
– হ্যাঁ বাবা, দুঃখ আমার একটা আছে। তবে সে দুঃখের কথা তুই বুঝবি না।
বলে চুপ করে রইলেন। কেটে গেল কয়েক মিনিট। কোনও কথা বলছেন না দেখে জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা আপনি সাধু, আপনার ভিতরেও দুঃখ! কি এমন দুঃখ যা আমি বুঝব না! দয়া করে বলবেন?
একটু ধরা গলায় বললেন,
– বাবা, মৃত্যুর পর এই দেহটাকে কেউ যদি সমাধি দিয়ে দিত তাহলে আমার আর কোনও দুঃখ থাকত না। কিন্তু জানি না এ দেহটা পুড়বে, না সমাধি হবে!
কথাটা বলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। কৌতূহলী হয়ে বললাম,
– আপনি তো হিন্দু। মৃত্যুর পর দেহ পুড়িয়ে দেয়াই তো নিয়ম। পুড়িয়ে দিলে আপনার দুঃখের কি আছে?
কণ্ঠস্বর এবার প্রায় রুদ্ধ হয়ে এল। মলিনমুখে করুণ সুরে বললেন,
– তুই বুঝবি না বাবা, তুই বুঝবি না। আমার দুঃখটা কোথায় তুই বুঝবি না।
একান্ত অনুরোধের সুরে বললাম,
– কি এমন কথা যে বুঝব না? বলুন না বাবা।
মুখের কোনও পরিবর্তন হল না সাধুবাবার। ওই একই ভাব-এ বললেন,
– সেই আঠারো বছর বয়েসে বেরিয়েছি ঘর ছেড়ে। দেখতে দেখতে কেটে গেল নব্বইটা বছর। আজ পর্যন্ত ভগবানের নাম ছাড়া আর কিছু করিনি বাবা। এ দেহের হাড়গুলো, প্রতিটা লোমকূপ পর্যন্ত নামে নামে অনুরণিত হয়ে আছে।
ভগবানের নামে তো দেহটা পুড়েই আছে, আবার নতুন করে পোড়ালে দেহে নামের ছাপগুলোই পুড়বে। আমি চাই না বাবা, আমি চাই না আমার এই নামরূপ দেহটাকে কেউ পুরিয়ে ফেলুক। সমাধি দিলে আর কোনও দুঃখই থাকবে না আমার।
কথাটা শুনে নিজেরই কেমন যেন একটা অস্বস্তি হতে লাগল। ভাবলাম, কি অদ্ভুত, কি বিচিত্র মানুষের মন, চিন্তাভাবনা। তবুও বললাম,
– আপনি তো সাধু। মৃত্যুর পর এ দেহের কি হবে না হবে তা নিয়ে বৃথা মানসিক কষ্ট পান কেন? ছেড়ে দিন না তাঁর উপরে, যিনি দিয়েছেন আপনার এ দেহ।
আবার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
– কথাটা তুই ঠিকই বলেছিস বাবা, কিন্তু মন তো এ কথা মানে না।
সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেললাম,
– একটু আগেই তো আপনি বললেন ‘এ দেহ মায়ের কাছেই সঁপে দিয়েছি, এ দেহ তাঁরই দেহ’। অথচ এখন তো মনে হচ্ছে, অসম্ভব মোহ রয়েছে আপনার নিজের দেহটার উপরে।
কথাটা শেষ হতে না হতেই সাধুবাবা বললেন,
– না না বাবা, এ দেহের উপরে কোনও মোহ নেই আমার। আসলে কি জানিস, ইষ্টনামটা গেঁথে গেছে দেহের মধ্যে। মায়ের নাম আগুনে পুড়বে, এই চিন্তাটা মাঝেমধ্যে বড় কষ্ট দেয় মনকে। মোহ আমার কোনও কিছুতেই ছিল না, আজও নেই। মৃত্যুর পর দেহটাকে কেউ সমাধি দেবে, এমনটা আগে জানতে পারলে মনের কষ্টটা হত না। নিছক দেহের জন্যে কষ্ট নয়, কষ্ট আমার এই নামরূপ দেহের জন্যে।
এবার উঠতে হবে আমাকে। তাই প্রণামটা সেরে নিলাম। আশীর্বাদ করলেন মাথায় হাত দিয়ে। শেষ প্রশ্ন করলাম,
– বাবা, ঘর ছেড়েছিলেন যখন, তখন ছিলেন উদ্দেশ্যহীন। কোথা থেকে কি ভাবে কেটে গেল এতগুলো বছর। গুরুমন্ত্র সাধনের উদ্দেশ্যই হল তাঁকে লাভ করা। মাতৃসাধক আপনি। মায়ের দর্শন কি আপনি সত্যি পেয়েছেন?
এ কথায় খুশিতে ডগমগ হয় উঠলেন সাধুবাবা। বসলেন সোজা হয়ে। আবেগে জড়িয়ে এল কণ্ঠস্বর অথচ ফুটে উঠল দৃঢ়তার সুর। বললেন,
– জানিস বাবা, মায়ের যে কত দয়া, কত করুণা তা তাকে বলে বোঝাতে পারব না। একেবারে সত্য বলছি, মা কথা বলে শোনা যায়। মনে কষ্ট হলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পরিস্কার অনুভব করা যায়। তবে তোর মতো এইভাবে বসে কথা বলা যায় না। আর স্বরূপ দর্শনের কথা বলছিস? ওটা কি এবং কেমন, তা তোকে কোনওভাবেই বলে বোঝাতে পারব না। এ পথে না এলে, এ পথের সত্যতা সম্পর্কে একটা কথাও তোর বিশ্বাস হবে না, শুনলে কেউ বিশ্বাসও করবে না।