Mythology

ভগবানের দয়া কি ভাবে পাওয়া যায়, জানালেন সাধুবাবা

সাধুবাবা ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিলেন। পরে মুখের দিকে তাকাতে বললাম,

– বাড়ি কোথায় ছিল আপনার?


– উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলায়।

কোনওরকম বিরক্তিপ্রকাশ না করে উত্তর দিচ্ছেন সাধুবাবা। আনন্দে মনটা আমার ভরে উঠছে। এমন আনন্দ হয় আর সকলেই, কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কারও কাছে গেলে সেখানে কার্যসিদ্ধি ও ব্যবহার ভাল পেলে। এখন আমার মনের অবস্থাটা ঠিক সেইরকম। জিজ্ঞাসা করলাম,


– প্রভাসে আছেন কতদিন?

– মাসখানেক হল, এবার চলে যাব।

জানতে চাইলাম,

– কোথায় যাবেন এখান থেকে?

হাসতে হাসতে বললেন,

– তার কি কোনও ঠিক আছে বেটা! কোনও কাজই সাধুদের ভেবে করার উপায় নেই। তাঁর ইচ্ছাতেই যে চলতে হয়। সাধুদের ইচ্ছাটা তো তাঁর ইচ্ছার উপরেই ছেড়ে দেয়া। তাই কোনও কাজ আগের থেকে ভেবে করতে পারি না। তাঁর প্রেরণাতেই করতে হয় সবকিছু। ‘ইচ্ছার’ দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে রাখলে হালকা হয়ে চলা যায় না। বোঝাটা নামিয়ে দিয়েছি বহুকাল আগে।

সাধুবাবার কথায় মনে পড়ল রেলের কথা। ভ্রমণে লাগেজ কম, আরাম বেশি। কিন্তু আমি দেখেছি ভ্রমণপথে এক একটা পরিবার ভ্রমণে বেরোয় শুধু বাড়িটা বাদ দিয়ে সারা সংসার বাক্সপ্যাঁটরায় ঢুকিয়ে নিয়ে। এরা পথে বেরোয় বোঝা বইতে। এদের জন্মই হয়েছে সংসারে বোঝা বইবার জন্যে, বয়ে যাবে অনন্তকাল ধরে। মরার সময় বোধ হয় শিলনোড়াটাও রেখে যাবে না, ফেলে যাবেনা হুক্হীন ব্লাউজের সেপ্টিপিনগুলো। অথচ দেখেছি এরা যা নিয়ে বেরোয় তার অর্ধেক কাজে লাগে না পথে, তবুও নিয়ে যাওয়া চাই-ই। অনেকে অনেক কিছু নিয়ে যায়। তারমধ্যে পোশাকই বেশি, লোক দেখানোর জন্যে। ফিরেও দেখে না কেউ, কারণ নিজেকে সাজিয়ে, নিজেকে দেখতে, নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত, ভালওবাসে তাই – তাই অন্যকে দেখার সময় কোথায়? ওরাই প্রকৃত বাবু, এরা কুলি যে!

আমরা দুজনে ঘাটগুলো থেকে একটু দূরে বসে কথা বলছি। কোলাহল বা বিরক্ত হওয়ার মতো কোনও পরিবেশ নেই এখানে। কাছাকাছিও কেউ নেই তবে তীর্থযাত্রীদের আনাগোনাটা দেখতে পাচ্ছি। কোলাহলের হালকা আওয়াজ ভেসে আসছে স্নানঘাট থেকে। তাতে একটুও ব্যাঘাত ঘটছে না আমাদের কথাবার্তায়।

জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা, বিয়ের পর গৃহত্যাগ করেছেন, না কুমার ব্রহ্মচারী?

ডানহাত দাড়িতে একবার বুলিয়ে হাসিমুখে বললেন,

– না বেটা, সেই বারোবছর বয়েসে গৃহত্যাগ করেছি, ‘শাদি-উদি’ কিছু করিনি আমি।

– এখন বয়েস কত হবে আপনার?

ভুরুটা একটু কুঁচকে বললেন,

– কত আর হবে, পঁচাত্তর আশি।

এবার ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলাম,

– আপনি বললেন বারোবছর বয়সে গৃহত্যাগ করেছেন। তখন তো একেবারেই বাচ্চা। ওইটুকু বয়সে ‘ভগবানের প্রেরণা’-র কি বুঝেছিলেন, কি উপলব্ধি হয়েছিল আপনার যে গৃহত্যাগই করলেন, অন্য কিছু মাথায় এল না?

আবেগভরা কণ্ঠে বললেন,

– বেটা, তখন আমি তো একেবারেই নাবালক। ভগবানের কথা কিছু বুঝি না। অথচ তখন মনে এমন একটা ভাব, এমন একটা প্রেরণার উদয় হল প্রাণে, আমার আর কিছু ভাল লাগল না। কিছুতেই পারলাম না ঘরে থাকতে। একদিন ছুটে বেরিয়ে পড়লাম সংসারের সকলকে, সবকিছুকে ত্যাগ করে।

কথাটা শুনে মনের খটকা গেল না। বললাম,

– ওই বয়েসে হঠাৎ করে মনের এমন অবস্থা হয়? আর প্রেরণাই বা কি, আমার ঠিক বোধগম্য হল না বাবা!

উত্তরে সাধুবাবা যা বললেন তাতে আমার কিছু আর বলার রইল না। প্রসন্ন মনে বললেন,

– বেটা, রমণ সময় রমণসুখের অনুভূতি রমণকারী ছাড়া আর কি কেউ বুঝতে পারে? ওই আনন্দের যে অনুভূতিটা কি দেখানো যায়, না কোনওভাবে বুঝিয়ে বলা যায়? কারও অন্তরে শোকের কথা কি কেউ ভাষায় প্রকাশ করতে পারে? যে শোক পেয়েছে সে-ই জানে শোকের সময় অন্তরে যন্ত্রণটা কেমন হয়। প্রাণে আমার কি প্রেরণা তিনি দিয়েছিলেন তা কেমন করে, কি দিয়ে বোঝাই বলতো?

এখন মনে হল কোনও শোক বা দুঃখে নয়, মনের তাৎক্ষণিক আবেগবশত বেরিয়ে পড়েছিলেন ঘর ছেড়ে, কোনও কিছু না ভেবে। যেটা কোনওভাবেই বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না সাধুবাবার পক্ষে। এই ‘আবেগজনিত’ কারণটাই হয়তো বলতে চাইছেন ভগবানের প্রেরণা। অথবা জন্মান্তরের সংস্কারগত কোনও কারণে হঠাৎ মনের পরিবর্তনে সব ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন পথে। যাইহোক, আর ওপ্রসঙ্গে না গিয়ে চলে গেলাম অন্য প্রসঙ্গে,

– বাবা, আপকা চলতা ক্যায়সে, ভিখসা করতা?

এ প্রশ্নে কণ্ঠের সুর পরিবর্তন হয়ে গেল সাধুবাবার। উত্তর দিলেন বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে,

– ‘নেহি বেটা, ম্যায় কভি কিসি সে ভিখসা নেহি মাঙা, মাঙতা ভি নেহি। ম্যায় সাধু হুঁ, ভিখারি নেহি হুঁ।’ কেউ কিছু দিলে খাই, না দিলে খাই না। কারও কাছে চেয়ে খাই না। পরমাত্মার কৃপায় চলি, জুটেও যায়।

এ কথার উপরে প্রশ্ন করলাম কথায় একটু প্যাঁচ মেরে,

– বাবা, আপনার আমার কুকুর বিড়াল এমনকি সারা জগৎ সংসারটাই তো চলছে পরমাত্মার কৃপায়। সেকথা বলছি না আমি। প্রশ্ন আছে একটা। এমনও তো কখনও হয় যেমন ধরুন, অসম্ভব খিদে পেয়েছে আপনার, একটা পয়সাও নেই কাছে। অথচ এমন খিদে পেয়েছে যে সেই সময় কিছু না খেলে নয়ই, খেতেই হবে কিছু। সহ্য করার মতো অবস্থাটাও নেই। এমন অবস্থায় ভিক্ষে ছাড়া উপায় কি, কারও কাছে চাইতে হয় নিশ্চয়ই?

একটু হাসলেন কথাটা শুনে। হালকা হাসি। মুখের তোবড়ানো হনুদুটো একটু নড়ে উঠেই থেমে গেল। মনেমনে ভাবলাম, সাধুবাবার কথায় ফাঁসিয়ে দিয়েছি সাধুবাবাকেই। এতে একটু পুলক সৃষ্টি হল মনে। বৃদ্ধ বললেন,

– এ সব জেনে তুই কি করবি?

মুখে একটু হাসি মাখিয়ে বললাম,

– সাধুদের দীর্ঘ সাধনজীবন আর তাঁদের চলার পথের খুঁটিনাটি বিষয়ের উপরেই তো আমার যত কৌতূহল। জানতে ইচ্ছে করে তাই তো আপনার কাছে জানতে চাওয়া। বললে আর যাই হোক, ক্ষতি তো কিছু হবে না আপনার!

এবার সাধারণ মানুষের মনস্তত্ত্বের এমন কিছু কথা শোনালেন সাধুবাবা, যা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি। বললেন,

– বেটা, ভিক্ষা চাইলে তো আমি ভিখারিই হয়ে গেলাম, সাধু রইলাম কোথায়? তুই যখন জানতে চাইছিস, তখন বলি শোন। ধর খু-উ-ব খিদে পেয়েছে। কাছে একটা পয়সাও নেই। কিন্তু কিছু খেতেই হবে অথচ চাইব না কারও কাছে। তখন কি করি জানিস? কোনও খাবারের দোকানের সামনে বসি। এমনভাবে, এমন জায়গায় গিয়ে বসি যাতে দোকানদার আমাকে দেখতে পায়। বসি, তবে বলিনা কিছু। যদি কিছু খেতে বা ভিক্ষে চাই, একবার যদি বলে বসে ‘মাপ কর বাবা’ তাহলে সেখানে আর দাঁড়াতে পারব না। চলে যেতে হবে তাই কোনও কথা বলি না। বসে থাকি চুপ করে। ফিরেও তাকাই না দোকানের দিকে। এইভাবে থাকলে দোকানদার ভাবে, পথ চলতে চলতে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। এমনভাবে কিছুক্ষণ থাকলে দোকানদার নিজে বলে, কোথায় থাকি, কোথা থেকে আসছি বা কোথায় যাব? তখন কথার জবাব দিই। এরপর কথায় কথায় দোকানদারই একসময় বলে, ‘বাবা, একটু চা খাবে নাকি?’ আমিও বলি, ‘যদি দয়া করে দাও তো আমার কোনও আপত্তি নেই।’ বেটা চা দিলে শুধু চা-ই দেয় না, সঙ্গে বিস্কুট পাউরুটি বা অন্য কিছুও একটা দেয়। যদি হোটেল হয় তাহলে দেয় রুটি সবজি। তাতেই খিদে মিটে যায়। এবার বুঝলি, ভিক্ষে চাইতে হল না অথচ খিদেটা মিটল।

বুঝলাম, যেকোনও মানুষ সে যদি নিষ্ঠুর কিংবা ধর্মে অবিশ্বাসীও হয়, সাধুদের উপর দুর্বলতা কমবেশি একটা আছে। আর ধর্মভীরু হলে তো কথাই নেই। তাই এটাও সত্য, কিছু চাইলে প্রায় সময়ই সাধুদের ‘মাপ কর বাবা’ শুনতে হয়। সুতরাং উপায় কি! এসব কথা ভাবছি একটু অন্যমনস্ক হয়ে মাথা নিচু করে। মাথাটা তুলতেই দেখি সাধুবাবা হাসছেন, হাসছেন মুচকি হাসি। রহস্যময় হাসি। হাসতে হাসতে বললেন,

– বেটা সৎপথে থাকলে, তাঁর উপর ভরসা রাখলে আমাকে যেমন — তেমনই তিনি এইভাবে মানুষের মধ্যে দিয়ে দয়া করেন মানুষকে। তাঁর দয়া প্রকাশের একমাত্র মাধ্যমই তো মানুষ। আগে মানুষ পরে ভগবান। আর ভগবানের দয়া তো এইভাবেই চোখে দেখা যায় বেটা।

জিজ্ঞাসা করলাম,

– বাবা কোন সম্প্রদায়ের সাধু আপনি?

প্রসন্নচিত্তেই বললেন,

– বেটা, বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শাখা আছে চারটে। যেমন শ্রীবৈষ্ণব, বল্লভ, নিম্বার্ক আর মাধব। এর মধ্যে বল্লভ সম্প্রদায়ের সাধু আমি।

জানতে চাইলাম,

– সাধুজীবনে আসার পর আপনার কখনও কি কোনওভাবে মনের পতন ঘটেছে?

উত্তরে একটু গম্ভীরভাবে বললেন,

– এসব কথায় কি দরকার বলতো, কি হবে তোর এসব একথা জেনে?

বুঝলাম, একটু বিরক্ত হলেন। তাই বিনীত সুরে বললাম,

– বাবা, নিজে তো এ পথে আসতে পারলাম না, তাই জানতে ইচ্ছে করে এ পথের কথা, এ জীবন মনের কথা।

সাধুবাবা বসে রইলেন চুপ করে। কিছুটা সময় কেটে গেল এইভাবে। মনে হল অতীত থেকে বর্তমান ভেবে নিলেন তিনি। পরে আমার চোখের উপর চোখদুটো রেখে বললেন,

– বেটা, এই জীবনে এসে সেই বাল্যকাল থেকে আজ পর্যন্ত কোনও গর্হিত কাজ আমি করিনি। সুতরাং মনের পতন বলতে যা, তা কখনও হয়নি। বেটা, যে রমণীর পদ্মফুলের কুঁড়ির মতো সুন্দর স্তনযুগল নেই, সে নারী যেমন কোনও পুরুষের কাছে শোভা পায় না, তেমন অহংকার গৌরব যশ প্রতিষ্ঠা সম্মান শোভা পায় না সংসারহীন সাধুদেরও। ওসব তো আমার কিছু নেই যার সূত্র ধরে মনের পতন ঘটার ভয় থাকবে। তবে হ্যাঁ, লোভটোভ কখনও কখনও হয়েছে। যেমন ধর, কোনও জিনিস খাওয়ার ব্যাপারে মাঝেমধ্যে লোভ হয়েছে। কখনও কোনও কারণে মনে সৃষ্টি হয়েছে ক্রোধের, উপশমও হয়েছে। এটাকে যদি মনের পতন বলিস, তাহলে হয়েছে। বেটা জীবন তো আমার ফুরিয়েই এল। আজ পর্যন্ত কোনও কিছুর উপরে এতটুকু মোহ জন্মায়নি। সংসার নেই, থাকা খাওয়ার ঠিকানা নেই তাই হয়তো মোহটা জন্মাতে পারেনি। মোহভ্রূণের সৃষ্টিই তো সংসারগর্ভে। আর সৃষ্টি হয় সেইসব সাধুদের মধ্যে যারা এক জায়গায় বসে আছে হাঁটুগেড়ে। সংসারের মতো কোথাও স্থায়ীভাবে বসলে মোহের গর্ভসঞ্চারের সুবিধা হয় বেশি।

এবার সোজাসুজি প্রশ্ন করলাম,

– বাবা, এখন তো আপনার বয়েস হয়েছে অনেক। এখনকার কথা ছেড়ে দিন। আপনার যৌবনকালের কথাই বলছি। প্রকৃতির নিয়মে যৌবনে নারীপুরুষ সকলেরই দেহমনে কামভোগের বাসনা একটা জাগে। এই সত্যকে সাধুসন্ন্যাসী বা গৃহী, একেবারে পাগল না হলে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন?

মাথা নাড়িয়ে স্বীকার করেও মুখে বললেন,

– হাঁ বেটা এটা তুই ঠিকই বলেছিস। এই সুন্দর সত্যকে অস্বীকার করলে বাবা মাকে, চিরন্তন সত্যকেই অস্বীকার করা হয়।

এ কথায় বেশ জোর পেলাম, বাগে পেয়ে গেলাম সাধুবাবাকে। বললাম,

– এটাই যদি অনাদিকালের সত্য তাহলে আপনার যৌবনে কখনও কি কোনওভাবে নারীভোগের বাসনা জাগেনি মনে?

এ প্রশ্নে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন বলে মনে হল না। অত্যন্ত শান্ত ও ধীর কণ্ঠে বললেন,

– যখন গৃহত্যাগ করি তখন বয়েস আমার বারো। ঘর ছাড়ার বছরখানেক পর পেলাম গুরুজির আশ্রয়। সদা সর্বদা থাকতাম তাঁর কাছে। তখন কামের কোনও চিন্তা আসেনি মনে। কাম বা ওসব কিছু বুঝতাম না। তারপর কৈশোর থেকে পা দিলাম যৌবনে। তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই এল কামের একটা শিহরণ, অনুভূতি। নারীসঙ্গ বা কাম প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা জীবনে কখনও করিনি কারও সঙ্গে। ফলে কামের প্রয়োগ কিভাবে করতে হয় তা বুঝতাম না। জানতামও না। ফলে নিয়মেই আসত দেহমনে উত্তেজনা আবার শান্তও হয়ে যেত প্রাকৃতিক নিয়মে। তবে চিন্তা যে একেবারে হত না, তা নয়। সে চিন্তা নারীসংক্রান্ত নয়। তখন বয়েস অল্প। বুঝি না কিছুই। একদিন গুরুজিকে বললাম, ‘দেহে এমন উত্তেজনা আসে কেন?’ শুনে তিনি হাসলেন। শুধু একটা কথাই বললেন,

– বেটা, উসকা নাম হ্যায় কাম। কভি কিসিকো নেহি ছোড়তা। সাধনজীবন মে কাম বহুত বড়া দুশমন ভি হ্যায়, দোস্ত ভি। কামকে উপর ধেয়ান নেহি লাগাও তো ওহ্ আপনে ভাগ্ যায়েগা। উসকা উপর মন্ লাগানে সে কাম তুমরা মন্ কা পিছু কভি নেহি ছোড়ে গা। উস্ কে লিয়ে কোই চিন্তা না করো। মন্ সে উড়া দো। কুছ দিনকে বাদ দেখোগে কি সব ভাগ গিয়া।

এই পর্যন্ত বলে একবার এদিক ওদিক তাকালেন। কাউকে লক্ষ্য করে নয়, ফাঁকা তাকানো। কথায় গভীর মনোনিবেশ করে কথা বলার সময় সকলে অন্যদিকে যেভাবে তাকায়, দেখে না কিছু, তেমন। এবার দৃঢ়কণ্ঠে বললেন,

– বেটা, ‘কামকে উপর ধেয়ান নেহি লাগাও তো ওহ্ আপনে সে ভাগ্ যায়েগা’, গুরুজির এই কথার উপরে প্রতিষ্ঠা করলাম নিজের মনকে। দীর্ঘকাল ওসব নিয়ে আর কিছু ভাবলাম না। তাতে আমার যে জ্ঞান হল একেবারে নিশ্চিত জানবি, দেহের কোনও অংশের বা কোনও ইন্দ্রিয়ের দীর্ঘকাল সাহায্য না নিলে বা ব্যবহার না করলে ক্রমেই তা প্রাকৃতিক নিয়মে ‘প্রকৃতিশূন্য’ হয়ে যায়। তাকে প্রকৃতিই করে দেয় ‘প্রকৃতিশূন্য’।

কথাটা ভালভাবে ধরতে না পেরে বললাম,

– বাবা, ‘প্রকৃতিশূন্য’ কথাটা একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হত।

সাধুবাবা বসা অবস্থায় ডানহাতটা সোজা তুললেন উপরদিকে। উর্ধ্ববাহু করে বললেন,

– এই দেখ, এইভাবে হাতটাকে যদি বছরের পর বছর উপরে তুলে রাখিস, কখনও নিচে না নামাস, কোনওভাবে কোনও কাজ যদি ওই হাতে না করিস তাহলে দেখবি, ধীরে ধীরে হাতটা তোর হয়ে পড়বে অকর্মণ্য, প্রকৃতিশূন্য। প্রকৃতির কোনও ক্রিয়া আর সম্ভব হবে না ওই হাতে। ঠিক সেইরকম, দীর্ঘকাল কামের প্রয়োগ না হলে, চিন্তা এবং লিঙ্গকে ব্যবহার না করলে ধীরেধীরে তা কর্ম বা প্রকৃতিশূন্য হয়ে পড়ে। সাধুদের তো আর ইন্দ্রিয়সুখের বিষয় নিয়ে কোনও মাথাব্যথা থাকে না। তবে যার থাকে তার থাকে। আমার অন্তত ছিল না। বাল্যকাল থেকেই ওর ব্যবহার হয়নি কখনও। ফলে কৈশোর যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের দিনগুলোতে কামইন্দ্রিয় ছিল আমার প্রকৃতিশূন্য অবস্থায়। তাই নারীভোগের কামনাবাসনা কখনও মনেই আসেনি।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button