সঠিক নারী বা পুরুষকে চিনবেন কী করে, বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন সাধুবাবা
মানুষ মানুষের বাইরের চেহারাটা দেখে রূপ সৌন্দর্যের বিচার করে, মোহিত হয়ে যায়। প্রকৃত সুন্দরের বিচার সাধুরা বাইরেটা দেখে করে না।
কোনও কিছু পাওয়ার আশায় কখনও সাধুসঙ্গ করিনি। পথচলতি সাধুসন্ন্যাসীরা জীবনে কি পেলেন, কেমন করে চলেন তা জানার আশাতেই সাধুসঙ্গ করা। এসব কৌতূহলের বশে করাতে লাভ যে একেবারে কিছু হয়নি তা কিন্তু মোটেই নয়। সেটা অস্বীকার করলে সত্যকে অস্বীকার করা হয়। কি লাভ হয়েছে পথে প্রান্তরে ঘুরে তা একান্তই আমার অন্তরের ব্যাপার, যা লিখে বা বলে বোঝানো যাবে না। সেই চেষ্টাতে যাওয়ারও প্রবৃত্তি নেই। তবে একটা সত্য বুঝেছি, যে যা কিছু করছে তার ফল কখনও বিফলে যাওয়ার নয়। শুভকর্মের ফল একটা শুভ যেমন হবে, হয়ই—তেমন অশুভ বা অসৎ কর্মের ফলও একটা আছে। সেটা দুদিন আগে বা পরে পাওয়া যাবে, রেহাই হবে না। আর একটা কথা, সাধুদের জাতের বিচার করিনি কখনও। সাধুসঙ্গের সময় বুঝেছি যে সব সংসারীরা জাতবিচারের গণ্ডিতে এখনও আবদ্ধ তাদের সদগুরুলাভ হলেও তারা পরমপথের সন্ধান কতটা পাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কোনও সাধুসন্ন্যাসীকেই আমি জাতের প্রশ্নে যেতে দেখিনি। সাধুরা দেখেন নিবেদিত মনটা।
যাইহোক, এলাহাবাদ শহর আর প্রয়াগ ঘুরে যখন স্টেশনে ফিরে এলাম তখন সন্ধে লাগো লাগো। দিনের আলো একেবারে মুছে যায়নি। হালকা একটা রেশ রয়ে গেছে। এ যাত্রায় আমি একা। বেনারস হয়ে বাসে এসেছিলাম এলাহাবাদে। এখান থেকে যাব গয়াতে, তারপর বাড়ি। ট্রেন আসতে এখনও অনেক দেরি তাই বসে রইলাম প্লাটফর্মের বেঞ্চিতে। বড় অস্থির চিত্ত আমার। মিনিট পনেরো বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ালাম। পায়চারী করার উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে এলাম প্লাটফর্মের এক মাথায়। আবার ওখান থেকে হাঁটতে লাগলাম, যাব আর এক মাথায়। দেখছি নানা ধরনের মানুষ, নানা প্রদেশের। কোনও কোনও মহিলার রং রূপ একেবারে ফেটে পড়েছে। একটু আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে রূপের বাহার দেখছি হাঁ করে। দু-পা চলছি, দেখছি অন্য কাউকে। কেউ বসে আছে গালে হাত দিয়ে, কেউবা আধশোয়া হয়ে, কেউ বা দাঁড়িয়ে। এদের সকলকে পাশ কাটিয়ে এঁকেবেঁকে চলতে লাগলাম ধীর পায়ে। আমার যখন কোনও কাজ থাকে না তখন পথের ধারে দাঁড়িয়ে নইলে পথ চলতে চলতে মানুষের মুখগুলো দেখি আর ভাবি নানা কথা। বাহ্যরূপের প্রতিফলন হয় মনে, সেই কথাই ভাবি।
ভরা প্লাটফর্মের মানুষগুলো দেখতে দেখতে যখন আর এক মাথায় প্রায় এসে গেছি ঠিক সেই সময় নজরে এল এক সাধুবাবা। মাটিতে বসে আছে শিরদাঁড়া টানটান করে। দেখে আমার বয়েসই মনে হল। খুব বেশি হলে ২৯/৩০। পাতলা ছিপছিপে চেহারা। মাথায় জটা নেই। ঝাঁকড়া চুলগুলো উসকোখুসকো, এলোমেলো। রং ময়লা। চোখ দুটো টানটান। লাঠি বা কমণ্ডলু কিছু নেই। খুব ছোট্ট একটা ঝোলা কাঁধে। এই অবস্থাতেই বসা। মুখশ্রী সুন্দর।
বয়েস অল্প বলে আমার কথা বলতে ইচ্ছা হল না। কারণ বয়স্ক সাধুদের জীবনে দেখাটা বেশি, অভিজ্ঞতাও। তাই পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম স্টেশনের শেষ মাথায়। ফিরে আসার সময় ভাবলাম, এইভাবে ঘোরাঘুরি করার চাইতে কাছে বসি, সময়টা কাটবে। ভালো লাগলে বসব নইলে উঠে পড়ব। এই ভাবনামাত্র সোজা এসে বসলাম সাধুবাবার মুখোমুখি হয়ে। অভ্যাসবশত প্রণাম করার জন্য পায়ে হাত দিতেই বিদ্যুতের মতো একটা শিহরণ খেলে গেল আমার সারা দেহটায়। চমকে উঠলাম। কি বলব বুঝে ওঠার আগেই সাধুবাবা বললেন,
– আমার কিন্তু বয়েস বেশি না বেটা, এ সাধুর সঙ্গ করে তোর কোনও লাভ হবে না। বুঢঢা সাধুরা তো ভগবানকে পেয়ে বসে আছে তাই তাঁদের জ্ঞান বেশি, জীবনে দেখেছে বেশি, অভিজ্ঞতাও বেশি। এত অল্প বয়েসের সাধুর সঙ্গে কথা বলে তুই কিছু জানতে পারবি না।
কথাকটা বলে একটু হাসলেন। হাসিতে কোনও শব্দ নেই। রামপ্রসাদের মতো গাল ভর্তি দাড়ির মধ্যে পাতলা অধরে ছোট্ট একটু হাসি উঠে মিলিয়ে গেল মুহুর্তে। আর এই মুহুর্তে মনে হল কে যেন জুতো দিয়ে ঠাসঠাস করে মেরে দিল দুটো গালে। লজ্জায় অপমানে মাথাটা নিচু করে আবার পা দুটো স্পর্শ করে বললাম,
– বাবা, আমার অপরাধ ক্ষমা করে দিন। এতদিন আমি একটা ভুল ধারনা নিয়ে চলছিলাম। এখন থেকে এমন আর কখনও হবে না।
পা ছুঁয়ে এই কথাটুকু বলে হাতদুটো সরিয়ে নিলাম পা থেকে। এবার পা-দুটো স্পর্শ করাতে প্রথম বারের মতো দেহে আর বিদ্যুৎ প্রবাহের মতো তেমন কোনও শিহরণ হল না। সাধুবাবা ডানহাতটা অভয়সূচক করে হাসলেন। নিঃশব্দ হাসি। এমন সুন্দর হাসি, এ হাসি দেখলে নারীপুরুষ নির্বিশেষে মোহিত না হয়ে পারবে না। এবার আমার গতে বাঁধা কথা দিয়ে শুরু করলাম,
– বাবা, তীর্থরাজ প্রয়াগ তো দর্শন করলেন, এবার এখান থেকে যাবেন কোথায়?
মধুরকণ্ঠে সাধুবাবা বললেন,
– আমি কোথায় যাব বললে তো আর যাওয়া হবে না। গুরুজির ইচ্ছেতেই আমার পথচলা, কথাবলা, থাকা, সাধনভজন—সব, সবকিছু। তাঁর ইচ্ছাতে মনে উদয় হয়েছে জ্বালামুখী দর্শনের সেখানেই যাওয়ার ইচ্ছা।
এই কথাটুকুতে বুঝতে বাকি রইল না সাধুবাবাকে তাঁর গুরুজি আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। আর নিজেও নিবেদিত শ্রীগুরুর চরণে। বুঝলাম, এঁর সঙ্গে কথা বলে আনন্দ পাওয়া যাবে। বয়েস অল্প হলেও যে শক্তিধর তা প্রথম স্পর্শেই জানিয়ে দিয়েছেন। ট্রেনের এখন অনেক দেরি, হাতে যথেষ্ট সময়ও আছে। বেশ আরাম করে বাবু হয়ে বসলাম। জানতে চাইলাম,
– বাবা আপনি কোন সম্প্রদায়ের সাধু?
হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
– আমি নাথ সম্প্রদায়ের সাধু। মূল আখড়া গোরক্ষপুর।
যতটুকু কথা ততটুকুই হিন্দিতে উত্তর। বললাম,
– বাবা, সাধুসন্ন্যাসী গুরু এরা অন্তর্যামী হন কি করে? আপনিই বা স্টেশন ভর্তি এত লোকের মধ্যে আমার অন্তরের কথাটা জানলেন কেমন করে, দয়া করে বলবেন?
প্রশ্নটা শুনে সাধুবাবা হাসতে লাগলেন। একবার চারপাশ দেখে নিলাম কেউ দেখছে কিনা? দেখলাম আমাদের ব্যাপারে কারও মাথাব্যথা নেই। যাত্রীরা যে যার রয়েছে নিজের তালে। সাধুবাবাও একনজর চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে সরাসরি তাকালেন আমার চোখে। বললেন,
– বেটা, এতে আশ্চর্য বা অবাক হওয়ার কিছু নেই। সকলের এটা হতে পারে, সহজেই সম্ভব। মনের ময়লা মুছে গেলে পবিত্র গঙ্গার মতোই মন স্বচ্ছ ও নির্মল হয়। তখন বিশ্বের যেকোনও প্রান্ত থেকে নির্মল মনের অধিকারী কারও সম্পর্কে কিছু ভাবলে তা বায়ুতরঙ্গের মাধ্যমে, কোনও কথা বললে তা শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে এসে পরিস্কারভাবে ধরা দেয়। ব্যস, এ-ই, আর কিছু নয়। গুরু বা ইষ্ট তো অনন্তকাল ধরে সত্যে প্রতিষ্ঠিত ও নির্মল হয়ে আছেন। সাধক শিষ্যের প্রতি মুহুর্তের ভাবনাগুলো তো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েই রয়েছে। সেইজন্যে তো তিনি অন্তর্যামী। সাধুসন্ন্যাসীদের মধ্যে যারা যত নির্মল মনের অধিকারী, তারা তত বেশি মানুষের মনের কথা বোঝেন, শোনেন। তুই আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে লক্ষ্য করে যেটুকু ভাবলি সেটুকুই তোকে বললাম। তুই আসার আগে এখান থেকে এক বৃদ্ধ যাওয়ার সময় আমাকে দেখে মনেমনে ভণ্ড বলতে বলতে চলে গেল। তবে তোকে দেখামাত্র আমার ভাল লেগেছে। তোর মনের তত বেশি উন্নতি না হলেও মনটা এপথে আছে বলে তোকে টেনে এনে বসলাম, বুঝলি?
কথাটুকু শেষ হতে দুটো পায়ে হাত দিয়ে বললাম,
– হ্যাঁ বাবা, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার মনটাও কত নোংরা আর নিচ তা শুনলে আপনার নিজেরই খারাপ লাগবে। এই দেখুন না, একটু আগে সময় কাটানোর জন্য প্লাটফর্মের এ মাথা সে মাথা করছিলাম আর সুন্দরী মেয়েমানুষ দেখলে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে তার রূপ আর দেহটাকে মনে মনে গিলে খাচ্ছিলাম। অথচ দেখুন, বাইরে থেকে আমার চুলদাড়ি দেখলে বা কথাবার্তা শুনলে মানুষ তো আমাকে সাধু মনেরই ভাববে। এবার আপনি ভাবুন, একটু আগে সারা প্লাটফর্মের অসংখ্য মেয়েমানুষ দেখে দেখে মনের মধ্যে কি নোংরা তোলপাড়ই না করছিলাম। অথচ আজ কিন্তু ত্রিবেণীসঙ্গমে স্নান করেছি সাত-সাতটা ডুব মেরে। গঙ্গায় স্নান করার ফল বুঝি এই হয়?
কথাটা শুনে প্রায় সমবয়স্ক এই সাধুবাবা খুশিতে একেবারে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। এবার পায়ের উপর পা তুলে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর কায়দায় বসে আনন্দিত মনে বললেন,
– বেটা, গঙ্গামাঈর কৃপা আর জলের গুণ আছে বলেই তো সারা স্টেশনে অত মেয়েমানুষ দেখেও তোর মনে এতটুকুও ভোগের ইচ্ছা জাগেনি। কে বলে গঙ্গাস্নানের ফল নেই? আজকের স্নানের ফল তো তুই হাতে হাতেই পেলি। আর রং রূপ যৌবন সৌন্দর্য যেটা তুই লুকিয়ে আড়াল থেকে দেখছিলি, সেটা তো রজোগুণের ক্রিয়া। ওটা তো মানুষমাত্রেরই হয়। এছাড়া নারীপুরুষের কুৎসিত বা সুন্দর রূপ নিয়ে যেটা ভাবছিলি বা দেখছিলি সেটা আসল সত্য নয়। ওটা একেবারে বাহ্য ও স্থূল ব্যাপার। প্রকৃত সুন্দর আর কুৎসিতের সংজ্ঞা তোর জানা নেই বলে মেয়েমানুষের মুখ ও দেহটাকে তারিয়ে তারিয়ে দেখছিলি।
সাধুবাবা থামলেন। আমি চুপ করে রইলাম। মনেমনে ভাবলাম এবার আসর জমবে। হাঁটুর উপরে হাতদুটোকে রেখে বললেন,
– বেটা, মানুষ মানুষের বাইরের চেহারাটা দেখে রূপ সৌন্দর্যের বিচার করে, মোহিত হয়ে যায়। প্রকৃত সুন্দরের বিচার সাধুরা বাইরেটা দেখে করে না। ও বিচারটা করে কামনার কালিমায় লিপ্ত সংসারীরা। যেমন কোকিলের রূপ কণ্ঠস্বরে, কুৎসিতের রূপ বিদ্যায়, নারীর রূপ সতীত্বে আর সাধুসন্ন্যাসী ও তপস্বীদের রূপ ক্ষমায়। বেটা, সেই পুরুষ প্রকৃত সুন্দর, সেই নারী প্রকৃতই সুন্দরী যার অন্তরে কোনও মান নেই, অভিমানও নেই। কথায় বাধ্য। কোনও কথা বলামাত্র আনন্দিত মনে সেই কাজ সুন্দরভাবে করে। দুঃখকে ভয় করে না। কখনও কোনও কাজ করে না, কোনও কথাও বলে না ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ক্রোধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও।
একটু থামলেন। একনজর ডাইনে বাঁয়ে সামনে চোখদুটো ঘুরিয়ে নিলেন। আমি তাকিয়ে রইলাম সাধুবাবার মুখের দিকে। বললেন,
– বেটা, সেই নারীপুরুষই প্রকৃত সুন্দর যে কোনও কথায় রাগ করে না, এতটুকু অসন্তুষ্ট হয়না। সব কথা শোনে তবে আনন্দিত চিত্তে সু-কথা শোনে ও পালন করে। বেটা, সৌন্দর্যের সবচেয়ে বড় প্রকাশ তার ভিতরে প্রকাশিত হয় যে কথায় কথায় কাঁদে না, কোনও কারণে মুখখানাকে পোড়াহাঁড়ির তলার মতো গোমড়া করে না। সুখেদুঃখে সবসময়েরই থাকে হাসি মুখে, আনন্দিত মনে। অতি কম লজ্জা ঘৃণা ভয়। সেই সুন্দর, যে কোনও কথা অপ্রিয় হলেও আনন্দিত চিত্তে উপেক্ষা করতে পারে সহজে।
আবার থামলেন। মিনিটখানেক চুপ করে থেকে বললেন,
– বেটা, দুটো নারী আর দুজন পুরুষকে সম্পূর্ণ বসনমুক্ত করে দেখ কিংবা কয়েকটা ‘নাঙ্গা’ শিশুকে পাশাপাশি শুইয়ে গভীরভাবে তাদের দেখলে দেহের গঠন, আকৃতি, রং ও রূপের একটু এদিক ওদিক ছাড়া আর কোনও কিছুই তোর চোখে পড়বে না। সব দেখবি একাকার হয়ে গেছে। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্তনের বিচার করলে, দুজন পুরুষের দেহের সৌন্দর্য বিচার করলে, বেটা আকৃতিগত সামান্য পার্থক্য নজরে পড়বে, আর এ সৌন্দর্য ও পার্থক্যটুকু সারা বিশ্বসংসার জুড়ে সমস্ত নারীপুরুষের। কিন্তু প্রকৃত সুন্দরের সংজ্ঞায় নারীর পরিপুষ্ট দুটি স্তন, টিকালো নাক, কালো কালো চোখ, পরিস্কার রং, পুরুষের সুন্দর সুঠাম দেহ পড়ে কি? প্রকৃত সুন্দর যে, তার মৃত্যুর পরে আপনপর সকলেই কাঁদে, কষ্ট পায়। সাধুদের দৃষ্টিতে যারা সুন্দরের সংজ্ঞার বাইরে, তাদের যৌবনের ভাঁটা শুরু হলে পুরুষ নারীকে নারী পুরুষকে অজ্ঞাতেই পরিত্যাগ করতে শুরু করে, শেষে পরিত্যাগই করে। ফিরেও তাকায় না, বুঝলি?
প্লাটফর্মে একটা ট্রেন ঢোকার শব্দে সাধুবাবা থামলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখলেন। যাত্রীদের ছুটোছুটি শুরু হল। কোলাহল বাড়ল। খানিক পরে ট্রেন ছাড়তে আবার বলতে লাগলেন,
– বেটা, সংসারে সেই রমণী সুন্দরী, সেই পুরুষই সুন্দর যে ধৈর্যশীল, সমস্ত বিষয়ে নির্বিকারভাবে কষ্ট সহ্য করতে পারে। যে কোনও কাজ জিজ্ঞাসা নাকরে করে না, অন্তরে ভালোবাসা সকলের প্রতিই সমান রাখে, কারণে অকারণে ঝগড়া করে না, মনে হিংসা আর কোনও কাজে নিজের স্বার্থ রাখে না, নিয়ম ও নীতি পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, কোনও বাজে সঙ্গ ও চিন্তা করে না, মন যার এক লক্ষ্যে থাকে সে নারীপুরুষ বাহ্যত যত কুৎসিতই হোক, সেই-ই প্রকৃত সুন্দর, বুঝলি?
সাধুবাবা থামলেন। আমি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম। বললেন,
– এখন বলি রূপ ও সৌন্দর্যহীন নারীপুরুষের কথা। সংসারে তারাই কুৎসিত রূপহীন যারা একগুঁয়ে, অবাধ্য, দুঃখে ভয় পায়, দেহসুখ চায়, কথায় কথায় জবাব করে, সামান্য ব্যাপারে চোখে জল আসে, মুখে একরকম ব্যবহার করে ভিতরে আর এক, কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই, কথার খেলাপ করে, সেই নারীপুরুষ কখনও সুন্দরী বা সুন্দর হতে পারে না। জিজ্ঞাসা না করে নিজের মতে কাজ করে পরে তা বলে, মুখ গোমড়া করে থাকে, অবাঞ্ছিত কাজ করে তা গোপন রাখে, কারণে অকারণে ঝগড়া করে, অকারণে বেশি কথা বলে, পরস্পরে ভালবাসা রাখে না, নিয়ম ও নীতি পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নয়, মনে হিংসা আছে, স্বার্থ ছাড়া চলে না, অবৈধসঙ্গ করে, মনে যার কুচিন্তা সততই ঘুরপাক খায়, সে নারী বা পুরুষ কখনও সুন্দরের সংজ্ঞায় পড়ে না। বেটা, সেই-ই সবচেয়ে বেশি কুৎসিত যার কথায় কথায় মান অভিমান হয়, বুঝলি?