মহাকালেশ্বর মন্দিরঅঙ্গন। বেশ কয়েকটা গাছ রয়েছে যার গোড়া বাঁধানো। এখানে তীর্থযাত্রীদের অনেকেই এসে বসেন, বিশ্রামও করেন। অনেকটা জায়গা জুড়ে শীতল স্নিগ্ধ ছায়া। মহাকালেশ্বর দর্শন সেরে বেরিয়ে আসতেই চোখ পড়ল বাঁধানো গাছের গোড়ায় বসে আছেন এক সাধুবাবা। একটু হেলান দিয়ে আরামের কায়দায়। কাছাকাছি এসে দেখছি আধবোজা চোখ। হালকা গেরুয়ায় মোড়া দেহ। পা দুখানা লম্বা করে মেলে দেয়া। রোদে তাতা চামড়ার রং। প্রায় ভুঁড়ির কাছাকাছি দাড়ি কালোসাদা মিলিয়ে। মাথায় জটা নেই। চুলগুলো কাঁধপর্যন্ত এলোমেলো ছড়ানো। পুরনো টিনের কৌটো টোপ খেলে যেমন হয় সাধুবাবার গালের দশা তেমন। আধবোজা হলেও বোঝা গেল আয়ত চোখ। টিকালো টানা টানা নাক। মাথায় উপরের খানিকটা চুল উঠে যাওয়ায় কপালটা বেশ চওড়া দেখাচ্ছে।
তন্দ্রাটা ভাঙানোর জন্য মুখে ‘গোড় লাগে বাবা’ বলে পায়ে হাত দিতে সোজা হয়ে বসলেন। বুঝলাম তিনি ঘুমোননি। সাধুবাবার দিকে মুখ করে বসলাম বাঁ দিকে। বললাম,
– বাবা, কলকাতায় থাকি। ঘুরতে বেরিয়েছি। মহাকালেশ্বর দর্শন করেছি। মন্দির থেকে বেরিয়ে আপনাকে দেখে প্রণাম করতে এলাম। মহাকাল মন্দিরের প্রধান পূজারি গণেশপুরীজির সঙ্গে আমার আলাপ ও হৃদ্যতা আছে। আজ প্রসাদ পেতে বলেছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলে সময়টা কাটবে, প্রসাদও পাওয়া হবে। বাবা, আপনি কি জানেন গণেশপুরীজির দেহ বাঙালির?
হিন্দিভাষী সাধুবাবা বললেন,
– হাঁ বেটা, মেরা মালুম হ্যায়। একজন বাঙালির ছেলে হয়ে এত অল্পবয়েসে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বরের নিত্যসেবাপুজোর দায়িত্ব পাওয়া ‘বহুত বহুত ভাগ সে হোতা হ্যায় বেটা, বহুত ভাগ সে হোতা হ্যায়’।
কথাটা শুনে আমি খুশিই হলাম বাঙালি বলে। সাধুবাবার অন্তরে ঢোকার ফাঁকফোকর খুঁজছি। কি দিয়ে শুরু করব। বলে ফেললাম মাথায় যা এল,
– বাবার সব তীর্থ ঘোরা হয়ে গেছে বুঝি?
ঘাড়টা নেড়েও মুখে বললেন,
– হাঁ বেটা, কৈলাস মানস থেকে শুরু করে সারা ভারতের প্রায় সমস্ত তীর্থদর্শনই হয়েছে, ‘লেকিন বেটা আফসোস কি বাত’, হিংলাজ মাতার দর্শনটা আমার হয়নি। চেষ্টা করেছিলাম। তখন দেশ ভাগ হয়নি। লাহোর পর্যন্ত গেছিলাম কিন্তু ও পথের একটা সঙ্গীও পেলাম না। ফিরে এলাম। নইলে বেটা প্রায় সবই আমার ঘোরা। নর্মদা পরিক্রমা করেছি একবার। অমরনাথ, কেদার বদরীজি তো বহুবার।
বুঝে গেলাম, সাধুবাবা ঝুনো নারকেল। ভিতরে মিষ্টি শাঁস আর জলে ভরা। জানা যাবে অনেক কথা। অধিকাংশ সংসারে কি নারী, কি পুরুষ, এরা যখন বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলে তখন কণ্ঠে কোকিলও হার মানে। খেজুরের রস, নলেন গুড়, আখের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিলেও এত মিষ্টি হয় না, এমন মধুর স্বর। অথচ এরাই যখন বাবা মা ভাইবোন স্বামী স্ত্রী সন্তান, একে অপরের সঙ্গে ঘরে কথা বলছে তখন এদের ব্যবহার, কথাবার্তা, ভাষা, বাচনভঙ্গি এমনই যে, কোনও কিছুর সঙ্গে তুলনামূলক উদাহরণ দেয়া যায় না। দিলে সেই ‘কিছুকে’ হেয় ও ছোট করা হবে। তবে আমি কিন্তু এই গোত্রের। ঘরের বাইরে মধু। মধুর কণ্ঠেই বললাম,
– বাবা, খুব ছোটবেলায় ঘর ছেড়েছিলেন বুঝি?
কথাটা জিজ্ঞাসা করে তাকালাম মুখের দিকে। কোনও অস্বস্তি ফুটে উঠেছে কিনা দেখতে। দেখলাম ঠিকই আছে। সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, স্মৃতিতে যতটুকু আছে তাই-ই বলছি তোকে। বাড়ি আমার উত্তরপ্রদেশে। কোন জেলায়, কোথায় কিছু বলতে পারব না। তখন বয়েস আর কত? পাঁচ ছয় সাত, এর আশপাশে হবে। গাঁয়ের অনেকগুলো পরিবার মিলে গেছিলাম একটা বিশাল মেলায়। ওখানে অসংখ্য হাতি ঘোড়া উট গরু থেকে শুরু করে হাজার রকমের জীবজন্তু কেনাবেচা হয়। এত ভিড় যে সেখানে চলা একরকম দায়ই বলতে পারিস। যতদূর মনে পড়ে ওখানে একটা নদী আছে। আমরা সবাই স্নান করলাম। হাজার হাজার মানুষ আমাদের মতোই স্নান করেছিল ওই নদীতে। তারপর মেলা ঘুরতে ঘুরতে একসময় কখন যে মায়ের হাতছুট হয়ে ভিড়ের মধ্যে দলছাড়া হয়ে হারিয়ে ফেললাম মাকে, তা আজও ভাবতে পারি না।
এই পর্যন্ত বলে থামলেন। মুখখানা বেশ মলিন হয়ে এল। কিছু বললাম না। তবে সাধুবাবা যে বিহারে শোনপুরের মেলায় গেছিলেন এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, কারণ একমাত্র ওই মেলাতে হাতি ঘোড়া ইত্যাদি অজস্র রকমের পশুপাখি বিক্রি হয়। কার্তিকী পূর্ণিমায় পুষ্করে যে পশুমেলা হয় সেখানে মূলত প্রাধান্য পায় উট। জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা, আপনার অপ্রত্যাশিত সংসারচ্যুত হওয়ার কথা শুনলাম। এ আমার কল্পনাতেও আসছে না। তা এখন আপনার বয়েস কত হল? মেলায় তো হারিয়ে গেলেন। ওখান থেকে গেলেন কোথায়?
উত্তর দিতে একটু ভাবলেন। ভুরুও কোঁচকালেন। বললেন,
– বেটা ‘উমর’ ঠিক ঠিক বলতে পারব না তবে ৭৫/৮০ হবে। তারপর ওখান থেকে লোকেদের পিছন পিছন কেমন করে যে একটা স্টেশনে এসে পৌঁছলাম তা আজও আমি বলতে পারব না। খিদে পেলে কারও কাছে পয়সা চাইতাম না। খুঁজে খুঁজে খাবারের দোকানে গিয়ে খাবার চাইতাম। এখনকার মতো দিনকাল তো আর তখন ছিল না। কিছু না কিছু ভগবান জুটিয়ে দিতেন। আর ওই বয়েসে কোনও ভাবনাই মাথায় আসত না। সকলের মতো আমিও ট্রেনে উঠে পড়লাম। এখন বুঝি, তারপর একটা বড় স্টেশনে বহু যাত্রী হুড়মুড় করে নামছে দেখে আমিও নেমে পড়লাম। তখন অত কিছু বুঝিনি, ভগবানের চক্করও আমার মাথায় ছিল না। অনেক অ-নে-ক পরে জানতে পেরেছিলাম বাবা বিশ্বনাথের কোলে আশ্রয় পেয়েছি। প্রতিদিনের খাওয়া জুটত দশাশ্বমেধ ঘাটে যাত্রীদের দেয়া ভাণ্ডারা থেকে। ঘুমাতাম ঘাটেই। এইভাবে কাটল প্রায় মাস কয়েক। বয়েস কম হলেও অনেক হালচাল আমি বুঝে গেছিলাম।
সাধুবাবা এবার বাবু হয়ে বসলেন মহাকালেশ্বর মন্দিরের দিকে মুখ করে। দুহাত রাখলেন দুটো হাঁটুর উপরে। মিনিটখানেক চুপ থেকে ফিরে গেলেন সুদূর অতীতে। বললেন,
– দীর্ঘদিন জামাপ্যান্ট কাচা হয় না। ভিখারিদের থেকেও এর দশা তখন আরও করুণ। ভোরে অন্ধকার থাকতে ‘নাঙ্গা’ হয়ে স্নান করে নিতাম। এ ছাড়া আর কোনও উপায়ও তো ছিল না। আমার এই অবস্থা দেখে মনে হয় গঙ্গামাঈ আর বিশ্বনাথের দয়া হয়। প্রতিদিনের মতো একদিন দশাশ্বমেধঘাটের সিঁড়িতে বসে আছি খাবারের আশায়। দেখছি এক সাধুবাবা নামছেন সিঁড়ি দিয়ে। কাছাকাছি আসতেই আমাদের চোখাচোখি হল। তিনি চলে গেলেন। পরের দিন ঠিক একইরকম হল। কোনও কথা হল না। তৃতীয় দিন ওই সাধুবাবা ইশারায় ডাকলেন। আমি বিবশভাবে উঠে পড়লাম। চলতে লাগলাম তাঁর পিছনে পিছনে। দশাশ্বমেধ ঘাট ছেড়ে চললেন হরিশ্চন্দ্র ঘাটের দিকে। ওদিকটা অনেক ফাঁকা। এতক্ষণ কোনও কথা হয়নি। একটু ফাঁকা একটা ঘাটে এসে একটা সাদা কাপড়ের টুকরো দিয়ে পরতে বললেন। কথা বলার শক্তি সেদিন ছিল না। কাপড়টা পরার পর আমাকে বললেন স্নান করতে। আমি গঙ্গায় স্নান করলাম। এবার একটু বড় কাপড় পরতে দিলেন। আমার সেই ময়লা প্যান্টজামা ফেলে দিলেন জলে।
একটু থামলেন। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন,
– সাধুবাবা ঘাটের পাশে একটা আশ্রমে এসেছিলেন কয়েক দিনের জন্য। সেখানে নিয়ে গেলেন। দীক্ষা দিলেন। শুরু হল নতুন জীবন। গুরুজির সঙ্গে দীক্ষার পর টানা ছিলাম প্রায় বছর আঠারো কুড়ি। আমরা দুজনে একসঙ্গে নানা তীর্থে যেতাম। আমি ভিক্ষায় যেতাম। গুরুজি রাঁধতেন। তাঁর হাতের রান্না ‘বহুত বড়িয়া’ ছিল। আজও মুখে লেগে আছে। আমি যে সব খাবার ভালবাসতাম গুরুজি সেগুলোই রাঁধতেন। আমাকে সামনে বসিয়ে খাওয়াতেন। প্রকৃত গুরু যারা তাদের মধ্যে মাতৃভাবটা বড় বেশি থাকে। গুরুজির সেই ভাবের জন্য আমি খুব অল্প সময়ে আমার গর্ভধারিণীর বিচ্ছেদব্যথা ভুলতে পেরেছিলাম।
সাধুবাবা থামেননি। আমিও থামলাম না। সাধুসঙ্গের ব্যাপারে আমার ভাগ্যটা বারবারই সুপ্রসন্ন। অনেক সাধুবাবার মতো এই সাধুবাবাকে তেমন খোঁচাতে হল না। আপনমনেই বলে চললেন তাঁর চলার পথের জীবনকথা। আমি স্থির হয়ে শুনছি শান্ত মনে। এখন বলে চলেছেন চোখ বুজিয়ে,
– একসময় গুরুজির আদর ভালবাসা মায়া মমতা স্নেহে আমার মা বাবা ভাইবোন সকলে চলে গেল বিস্মৃতির পথে, তবে মাকে আজও ভুলতে পারি না। এখনও মায়ের মুখখানা মনে পড়ে।
দেখলাম দুচোখ বেয়ে টসটস করে কয়েক ফোঁটা জল নেমে এল গাল বেয়ে। পরে বললেন,
– সাধনজীবনের নানা বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। বিভিন্ন শাস্ত্রের কথা, পুরাণের কথা শিক্ষা দিয়েছেন। জীবনমন আমার ধন্য করেছেন। একসময় তিনি চলে গেলেন দ্বারকায়। ওখানেই গুরুজির আস্তানা। আমার শুরু হল একের পর এক তীর্থপরিক্রমা। তবে মাঝেমধ্যে গুরুজিকে দর্শন করে আসতাম দ্বারকায় গিয়ে।
এখন জানতে চাইলাম,
– বাবা, আপনার ডেরা কোথায়?
উত্তরে জানালেন,
– বেটা আমার কোথাও ডেরা নেই। বদ্ধজীবন ভালো লাগে না, থাকিও না। গুরুজির সঙ্গে যতদিন ছিলাম ততদিন আজ এখানে কাল সেখানে করেই কেটেছে। স্থায়ীভাবে থাকিনি কোথাও। ফলে ওই অভ্যাসটাই মজ্জায় মিশে গেছে। বেটা, একটা ‘কহবত’ আছে, সহবাসে অথবা রতিতৃপ্তি দিতে অক্ষম এমন স্বামীর রতিপ্রিয়া পত্নী দেহ ও মনের তৃপ্তিদানে সক্ষম পরপুরুষের সঙ্গে মাটিতে শুয়েও যেমন তৃপ্তি ও আনন্দ অনুভব করে, অক্ষম গুণবান স্বামীর সঙ্গে সুসজ্জিত পালঙ্কে শুয়েও সেই সুখ ও আনন্দ অনুভব করে না, ঠিক তেমনই বেটা, অর্ধাহারে অনাহারে থেকে, গাছের তলায় মাটিতে শুয়ে ক্ষুধাকে সঙ্গী করে যে পরমানন্দময় জীবন দেখেছি, পেয়েছিও, তেমন কোনও সুখ ও এতটুকু আনন্দ নেই, অক্ষম স্বামী তথা বদ্ধজীবন বা আশ্রমজীবনে।
কথাটা শুনে বেশ আনন্দই হল। এমন আনন্দ হয় যখন কাম সংক্রান্ত কোনও কথা শুনি বা বলি। প্রশ্ন এল মনে, সাধুবাবা তো সেই ছোট্টটি থাকতে সংসার জীবনের বাইরে। সারাটা জীবন কেটেছে পথেপথে অথচ স্বামীস্ত্রীর শারীরিক সম্পর্কে তৃপ্তি অতৃপ্তির বিষয়টা অবগত হলেন কি করে? এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাধুবাবার মুখে হাসি যেন আর ধরে না। মিনিটখানেক হাসতে হাসতে প্রায় লুটিয়ে পড়লেন। আমি খুঁচিয়ে দিয়ে চুপ করে আছি। বললেন,
– বেটা, আজ না হয় আমি বৃদ্ধ হয়েছি। একসময় তো যৌবনতরঙ্গ আমার এই দেহমনের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে অনায়াসে। প্রকৃতির নিয়মে কাম, কামের অনুভূতি এ দেহমন তো উপলব্ধি করেছে। নরনারীর দেহমিলনে যে সৃষ্টি, এ বিষয়টা কাউকে শিখিয়ে বা বুঝিয়ে দিতে হয় না। মানুষ প্রকৃতির নিয়মে আপনিই বুঝে যায়। তবে বেটা মিলনে তৃপ্তি অতৃপ্তির বোধটা কিছুতেই আসবে না নারীর সঙ্গে পুরুষ মিলিত না হলে। আমি সন্ন্যাসী। আমি ও সবের বুঝিটা কি! তবে ‘কহবত’-এর সঙ্গে মানুষের বলা সমস্যার মিল খুঁজে পেয়েছি বলেই আমার ওই কথাটা বলা।
কথাটা ঠিক ধরতে না পেরে বললাম,
– বাবা, আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না!
সাধুবাবা বললেন,
– বেটা, আমি পথে পথে ঘুরি। আজ এখানে কাল সেখানে। চলার পথে অনেক সময় কোনও তীর্থ বা অন্য কোথাও অবস্থানকালে বিভিন্ন পরিবার থেকে নারীপুরুষ আসে, নানান সমস্যার কথা বলে প্রাণ খুলে। প্রতিকার চায়, ‘জড়িবুটি’ ‘দাওয়াই’ চায় আমার কাছে। আমি কি ডাক্তারবদ্যি যে ওষুধ দেব? অনেক মহিলা তার স্বামীর সঙ্গে দেহমিলনে অতৃপ্তির নানা কথা জানিয়ে আমার কাছে ওষুধ চেয়েছে। এইভাবেই আমার জানা। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কিছু নেই, তবে অনুভবি শক্তিতে তো কিছু বুঝি।
কথা কটা বলে হাসতে লাগলেন। কথা শুনে মনে হয়েছিল, সাধুবাবার বোধ হয় সহবাস বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে। এবার ভাবনার মোড়টা একেবারে ঘুরে গেল। বললাম,
– বাবা, সংসারে থেকে টাকা পয়সা ভাল খাওয়া পরা, তাঁকে পাওয়া পর্যন্ত, কি করলে ও কোন পথ ধরে চললে সবকিছুই মিলবে, এমন পথ কি আপনি বাতলাতে পারেন?
মাথাটা বেশ ভালোরকম ঝাঁকিয়ে বললেন,
– হ্যাঁ পারি। সাংসারিক জীবনের যা কিছু বল আর পারমার্থিক যা কিছু লাভ বল, এ সব কিছু লাভের মূলে আসল কথাটা হল ধৈর্য। এটা যাদের নেই কিংবা কম,তাদের মনে শান্তিটা নেই। কোনও কাজে কোনওদিনই তারা সফল হয় না, কিছু লাভ করতে পারে না। তবে ধৈর্য ধরাটা যে কি কঠিন তা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। সাধন জীবনে প্রায় চল্লিশটা বছর কেটে গেল, দেখলাম তাঁর কোনও দর্শন তো দূরের কথা, একটু অনুভূতিও হয় না অন্তরে। দিনের পর দিন কেটে যায় যেন পলকে। ভাবলাম, পথ চলব, তা ছাড়া অন্য কোনও উপায় তো নেই! কিন্তু সাধনভজন জপতপ আর নয়। আবার ভাবলাম, চালিয়ে যাই, দেখা যাক না কি হয়? লেগে থাকলাম ধৈর্য ধরে। একটা সময় এল, দেখলাম বেটা সবই পাওয়া যায় ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে।
এ কথায় বুঝলাম সাধুবাবার সাধনজীবনের একান্ত কাম্য পরমধন লাভ হয়েছে ধৈর্য ধরে লেগে থেকে। আমাদের সেই ধৈর্য কোথায়? সেই জন্যই তো কিছু হয় না, পাইও না। দোষারোপ করি ভাগ্যকে, ভগবানকে। হাতের কাছে পেলে গুরুকেও।