বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের দিনটা কার্যতই এক অন্যতম প্রধান উৎসবের চেহারা নেয়। ভোর থেকে রাত, গোটা বাংলাদেশটা মেতে থাকে বর্ষবরণের আনন্দে। প্রতি বছরই সেই বর্ষবরণ হয় আক্ষরিক অর্থেই রঙিন। পোশাকে বাঙালিয়ানা। আর বিভিন্ন প্রান্তে মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর সেই শোভাযাত্রায় বাহারি ট্যাবলো আর রঙিন কাট-আউট পুরো ফোকাসটাই কেড়ে নেয় মুহুর্তে। সোমবার ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করতেও একইভাবে রঙিন হল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ঢাকার শাহবাগে চিরাচরিত প্রথা মেনেই মঙ্গল শোভাযাত্রা বার হয়। বহু মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল দেখার মত। একের পর এক অতিকায় ট্যাবলোতে তুলে ধরা হয়েছিল বাংলার স্বকীয় কিছু ঐতিহ্যকে। ট্যাবলোগুলিতে উঠে এসেছে বাংলার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, পোড়া মাটির কাজ থেকে শুরু করে একতারা, দোয়েল, ফিঙে এবং আরও কত কি!
ছিল বাংলাদেশের বর্ষবরণে ফিবছর দেখা পাওয়া হাতে ধরা রঙিন লাঠির ওপর নানা বাহারি কাট-আউট। তাতে কোনওটায় ঝলমল করে রঙিন সূর্যদেব, কোনওটায় পেঁচা। আবার বাঘ, সিংহ, পাখি এসবও ছিল। অনেকের হাতে দেখা গেছে রঙিন কুলো। বাহারি ধামা। পুরুষদের পোশাকে ছিল নিপাট বাঙালিয়ানার ছাপ। মহিলাদের পোশাকেও তাই। সকলের পরনে শাড়ি। তাও অধিকাংশই তাঁত বা ঢাকাই, মসলিন অথবা জামদানি। অনেক মহিলাই শাড়ি পড়েছিলেন কোল আঁচলের বাঙালিয়ানায়। এই শোভাযাত্রা দেখার জন্য বহু মানুষের ভিড় জমে। শোভাযাত্রার সিংহভাগই কিন্তু ছিল নব্য প্রজন্মের দখলে।
ঢাকা তো বটেই এছাড়া সিলেট, কুমিল্লা, খুলনা, বাগেরহাট, রাজশাহী, রাঙামাটি সহ বাংলাদেশের কোণায় কোণায় এদিন সকাল থেকেই পথে নেমে পড়েন মানুষ। ছিল উৎসবের মেজাজ। মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ। সেই মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় প্রায় সর্বত্র। কিশোরী থেকে তরুণী, কিশোর থেকে তরুণ মূলত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরই উৎসাহ ছিল সর্বাধিক। শোভাযাত্রাগুলির সামনে ফুলের কাট-আউটের ওপর বা ব্যানারে লেখা ছিল স্বাগত ১৪২৬ বা বর্ষবরণ ১৪২৬ বা এসো হে বৈশাখ এমন কত কি! বাংলাদেশের ঝিনাইদহে এদিন সকালে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশের এই বাঙালির একান্ত উৎসবে একটা জিনিস ছিল দেখার মত, বাঙালি সাজে সেজে তরুণ-তরুণীদের একসঙ্গে সেলফির হিড়িক। সোশ্যাল মিডিয়ার জামানায় এসব সেলফি দ্রুত ছড়িয়েছে ইন্টারনেটে। হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট। সে একটা দারুণ ব্যাপার আর কি! বর্ষবরণের সকালে কে কী পড়ল, কাকে কেমন লাগল এও যেন এক প্রতিযোগিতা। সঙ্গে আনন্দও। অনেকে আবার এদিন গালে নানা রঙে এঁকে নিয়েছেন বর্ষবরণ ১৪২৬ বা শুভ নববর্ষ।