Festive Mood

সূর্যের প্রথম কিরণে অচেনা সকাল নিয়ে হাজির ১৪২৭

১৪২৭ বঙ্গাব্দের আগে এমন কোনও বঙ্গাব্দ গেছে কী, যেখানে পয়লা বৈশাখ এতটা অনাদরে কাটিয়েছে? হয়ত না। প্রকৃতি নিজের নিয়মে চললেও মানুষের জীবনযাত্রার ছন্দপতন হয়েছে।

১৪২৭ বঙ্গাব্দের আগে এমন কোনও বঙ্গাব্দ গেছে কী, যেখানে পয়লা বৈশাখ এতটা অনাদরে কাটিয়েছে? হয়ত না। প্রকৃতি নিজের নিয়মে চললেও মানুষের জীবনযাত্রার ছন্দপতন হয়েছে। আপাতত গৃহবন্দি মানুষ। এক করোনা গোটা বিশ্বটাকে ঘরের মধ্যে সেঁধিয়ে দিয়েছে। যার জেরে বাঙালির বড্ড আপনার পয়লা বৈশাখের এমন একটা সকালও দেখতে হল বঙ্গবাসীকে।

মন্দিরে ভিড় নেই। নেই হালখাতা পুজোর লাইন। মাথায় ঝুড়ি নিয়ে তাতে ফুল, মালা, ধূপ, বাতি, লক্ষ্মী-গণেশ নিয়ে মানুষের সর্পিল লাইন মন্দিরের দরজা দিয়ে দূরে কোথাও পৌঁছে যাওয়া নেই। নেই মানুষের সঙ্গে মানুষের কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়। ইন্টারনেটের কৃপায় যেটুকু হচ্ছে তা সবই সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে।


কোথাও নেই অনুষ্ঠানের উদ্যোগ। কোথাও নেই বর্ষবরণের বৈঠকি আড্ডা। খাওয়া, দাওয়া, গান, বাজনা, বৈশাখের সাড়ম্বর আবাহন, কিচ্ছুটি নেই।

আছে শুধু একরাশ হতাশা। বাড়ি বন্দি মানুষ ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করছেন। এমন দিনগুলো শেষ হোক। ফিরুক স্বাভাবিক জীবন। এমন বিশ্রাম যেন আর জীবনে দেখতে না হয়।


১৪২৭ বঙ্গাব্দে পা দেওয়া বাঙালি এদিন বিমর্ষ। নতুন বছর শুরুর খুশিটা কোথায় যেন ভ্যানিস হয়ে গেছে। চিন্তিত মুখে কেউ কেউ পরিচিত, আত্মীয়দের ভিডিও কলে বা ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসটা কই? না, সেটা ধরা পড়ছে না।

বাঙালি বছরের মধ্যে হাতে গোনা দু-চারটে দিনেই অতিবাঙালি হয়ে ওঠে। নিজেদের পুরাতনি ঘরানার আবেশটা চেটেপুটে উপভোগ করে। আর তার একটি অবশ্যই পয়লা বৈশাখ।

পরিপাটি বাঙালি সাজে, বাঙালি আহারে, বাঙালি আড্ডায় গ্রীষ্ম শুরুর তপ্ত দিনটা কেমন করে যেন কেটে যায়। বৈশাখ শুরুর চড়তে থাকা পারদে ঘামে ভেজা পাঞ্জাবীটা গায়ে লেপ্টে যাক না কেন, আটপৌরে ধাঁচে পরা তাঁত, তসর, গরদ বা মসলিনের কাপড় যত দ্রুতই লাটঘাঁট হয়ে যাক না কেন, বাঙালি কিন্তু সেজে ওঠে বাঙালির সাজে। বাঙালি মনেপ্রাণে বাঙালি হয়ে ওঠে।

বাঙালির সেই বাঙালি হয়ে ওঠার আনন্দটুকুও মুছে গেছে এবার। শুধু বিষণ্ণতা। শুধুই অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। এ কেমন পয়লা বৈশাখ! নতুন বছরটাকে পর্যন্ত ভাল করে বরণ করে নিতে পারল না বাঙালি। বিক্রি হল না লাল রঙের মলাটে হালখাতা, বিক্রি হল না লক্ষ্মী-গণেশ, বিক্রি হল না নতুন পোশাক।

বাঙালির বড় আপনার চৈত্র মাসটা ঘরের জানালা দিয়ে আতঙ্কের উঁকিতেই ফুরিয়ে গেল। সারা বছরের চৈত্র সেলে জামাকাপড় কেনার অপেক্ষা – অপেক্ষাই রয়ে গেল। বিক্রেতারা যে চৈত্রের দিকে চেয়ে সারাটা বছর বসে থাকেন তাও হারিয়ে গেল কালের গর্ভে। নতুন বছর এল চরম অনাদর, অনাড়ম্বরে। তবু আশা বেঁচে থাকে। নতুন বছর বিশ্বের বুকে নেমে আসা এই দুর্দিন মুছে দিক। মানুষ ফিরুক স্বাভাবিক ছন্দে। এটাই এখন মনেপ্রাণে চাইছেন আপামর বাঙালি।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button