Foodie

মকরসংক্রান্তির স্পেশাল মেনু, শিখে নিন ৫ রকমের সুস্বাদু পিঠে রান্না

মকরসংক্রান্তি মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে পার্বণ। মকরসংক্রান্তির সঙ্গে পিঠের সম্পর্ক আদি অনন্ত।

মকরসংক্রান্তি মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে পার্বণ। মকরসংক্রান্তির সঙ্গে পিঠের সম্পর্ক আদি অনন্ত। যাঁরা সারা বছর পিঠে খান না তাঁরাও এই দিনটায় পিঠে চেখে তার মন ভরানো স্বাদ তারিয়ে উপভোগ করেন। চালের গুঁড়ো, নারকেল, নলেন বা খেজুরের গুড়, সুজি সহ এমন বেশ কিছু আবশ্যিক উপাদান আর আপনার হাতের যাদুতে দ্রুত তৈরি হয় জিভে জল আনা পিঠে। এমনই ৫টি মন ভাল করা পিঠের রেসিপি রইল আপনাদের জন্য। ঝটপট তৈরি করুন পিঠে। আর গোটা পরিবার, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবকে তাক লাগিয়ে দিন।

পাটিসাপটা


Bengali Recipes

তাওয়ায় ফেলে উল্টে পাল্টে নিতে হয়। মোলায়েম তুলতুলে লম্বা। ভিতরে রসালো পুরের স্বর্গীয় তড়কা। বলুন তো এখানে কার কথা বলা হচ্ছে? ঠিক ধরেছেন, বাঙালির অন্যতম মিঠে ‘ডেজার্ট’ ‘পাটিসাপটা’-র সংক্ষিপ্ত পরিচয় এটাই। মকরসংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি। অর্থাৎ বাঙালির পিঠেপুলি উৎসব। সেই উৎসব অনেকটাই স্বাদহীন ‘পাটিসাপটা’-কে ছাড়া। তাবলে পাটিসাপটা যে শুধুমাত্র পৌষপার্বণেই পাতে দিতে হয় তার কোনও মানে নেই, মন যখন চায় তখনই বাড়িতে বানিয়ে নেওয়া যায় মনপসন্দ পাটিসাপটা। এখানে দেওয়া হল তার রেসিপি।


উপকরণ :

১০০ গ্রাম ময়দা, ৫০ গ্রাম সুজি, ৫০ গ্রাম চালের গুঁড়ো, ১৫০ গ্রাম পাটালির গুড়, ২৫০ মিলিলিটার দুধ, ২৫০ গ্রাম চিনি, গোটা নারকেল ১ টা, ৩-৪ টে মাঝারি আকারের সবুজ এলাচ, ১ চিমটে নুন, পরিমাণমত জল, বেগুনের মুখ থেকে কাটা বোঁটার অংশ

প্রণালী :

১. এলাচ তাওয়া বা চাটুতে অল্প শুকনো ভাজুন, ভাজা এলাচ মিহি করে গুঁড়ো করুন

২. নারকেল কুরে নিন, এরপর তাতে ১৫০ গ্রাম মত চিনি মেশান, হাত দিয়ে নারকেল কোরা ও চিনি ভালো করে চটকে মিশিয়ে নিন, এবারে আগুনে কড়াই বসান, কড়াই ভালমতো গরম হলে তাতে ঐ মিশ্রণ ঢালুন, খুন্তি দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটিকে নাড়াচাড়া করুন, কোনোভাবে মিশ্রণ যেন পুড়ে না যায়, তাই নাড়াটা বন্ধ করলে হবে না, কিছুক্ষণ পর মিশ্রণে হাত দিয়ে দেখবেন তা আঠামতো বা চটচটে হয়েছে কিনা, চটচটে লাগলে বুঝবেন পুর তৈরি, মিশ্রণে উপর থেকে এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে আগুনের আঁচ বন্ধ করে দিন, মিশ্রণটিকে ঠান্ডা হতে দিন

৩. কাঁচা দুধ একটা বড় পাত্রে জ্বাল দিন, দুধ ফুটে উঠলে তা একটু ঠান্ডা হতে দিন, ঈষৎ উষ্ণ দুধে প্রথমে চালের গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে ফেটাতে হবে, যেন গুঁড়োর দানা চেয়ে না থাকে, এরপর দিন সুজি, ভালো করে দুধ-চালের গুঁড়ো-সুজির মিশ্রণ মেশান, ১ চিমটে নুন দিন মিশ্রণে, ১০০ গ্রাম মতো চিনি ও পাটালি গুড় দিন, শেষে ময়দা দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটিকে হাত দিয়ে মাখুন বা ফেটান, (কাঁচা মিশ্রণ জিভে দিয়ে স্বাদ দেখে নিতে পারেন, মিষ্টি কম লাগলে চিনি ও গুড় আরও দিতে পারেন)

৪. এবার তাওয়া আগুনের আঁচে গরম করুন ভালো করে, তাতে এক একটা পাটি সাপটার জন্য প্রতিবার ১ চামচ করে সাদা তেল দেবেন, তেল গরম হলে প্রতিবার বেগুনের বোঁটা দিয়ে তেল তাওয়ার চারদিকে লাগিয়ে নেবেন

৫. এবারে ১ হাতা/বড় চামচের ১ চামচ দুধ-চালের গুঁড়ো-সুজির মিষ্টি মিশ্রণ তেলে সাবধানে দিন, আগুনের আঁচ কমিয়ে দিন, নাহলে মিশ্রণের তলা পুড়ে যাবে, চামচ/হাতার উল্টো পিঠ দিয়ে মিশ্রণটিকে গোল করে তাওয়ার চারদিকে ছড়ান, খেয়াল রাখুন গোল অংশ খুব পাতলা হবে না, নচেৎ তা ছিঁড়ে যাবে, এবারে ঐ গোল মিশ্রণের মাঝ বরাবর লম্বা করে পরিমাণমতো নারকেলের পুরটা দিন

৬. খুন্তির মাথা দিয়ে গোল অংশের প্রথমে এক দিক ভাঁজ দিন, তার উপর ভাঁজ দিন ঠিক উল্টো দিকের প্রান্তের, পুর যেন চাপা পড়ে যায় ২ দিকের ঢাকার ভিতরে, আলতো করে সামনের দিক উলটে দিন, খুন্তি দিয়ে পেটের মাঝখানটা হালকা চেপে নামিয়ে নিন একের পর এক গরম নরম ‘পাটিসাপটা’, ব্যস আপনার জিভে জল আনা পাটিসাপটা তৈরি।

কড়াইশুঁটির ভাজা পিঠে

Bengali Recipes

শীতকাল মানেই সবজি বিক্রেতাদের সম্ভারে সবুজ টাটকা মটরশুঁটির উঁকিঝুঁকি। আর সেই মটরশুঁটি দেখলেই গরম গরম ফুলকো মটরশুঁটির কচুরির জন্য মুখটা কেমন নিশপিশ করে ওঠে। ঝাল খাবারের সঙ্গে চাই পিঠে দিয়ে মিষ্টিমুখের সুখ। তাই চেনা পিঠের বাইরে কড়াইশুঁটি দিয়েই বানানো যায় নোনতা-মিঠে পিঠে। আসুন জেনেনি তার রেসিপি।

উপকরণ :

২০০ গ্রাম সবুজ মটরশুঁটি, ৫০ গ্রাম চালের গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম চিনি, ৫০ গ্রাম নলেন গুড় ও পাটালি, আধ কাপ সুজি, সাদা তেল, পরিমাণমতো জল, নুন, ৪-৫টা সবুজ এলাচ, আধ চামচ করে জিরে, ধনে, শুকনো লঙ্কা ও গোলমরিচের গুঁড়ো, সাদা কাপড়ের টুকরো

প্রণালী :

১. প্রথমে মটরশুঁটি ছাড়িয়ে জলে সিদ্ধ করে নিন, সিদ্ধ মটরশুঁটি মিক্সির পাত্রে ঢালুন, তাতে একচিমটে নুন আর এক চিমটে চিনি দিন, পাত্রের মুখ বন্ধ করে মটরশুঁটির ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন, আগুনে কড়াই গরম করুন, তাতে সিদ্ধ মটরশুঁটি ঢালুন, এবার তাতে দিন চালের গুঁড়ো, ভালো করে দুটোকে মিশিয়ে আঠা মতো হতে দিন, যেন মিশ্রণ পুড়ে না যায়, মিশ্রণটিকে ঠান্ডা হতে দিন

২. নারকেল কুরে নিন, তাওয়ায় এলাচের দানা হাল্কা করে ভেজে গুঁড়ো তৈরি করুন, সুজি আলাদা একটা পাত্রে এক ঘণ্টা মতো ভিজিয়ে রাখুন, গরম তাওয়ায় জিরে, ধনে, শুকনো লঙ্কা ও গোলমরিচের গুঁড়ো হাল্কা ভেজে ভাজা মশলা তৈরি করুন

৩. একটা বড় পাত্রে ময়দা নিন, তাতে ২-৩ চামচ তেল দিন, ভালো করে ময়ান দিন, এতে ময়দার মিশ্রণ মোলায়েম হবে, এবারে ময়দার মিশ্রণে একে একে মটরশুঁটির মিশ্রণ, জল ঝরানো সুজি দিয়ে ভালো করে মেশান, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ভালো করে নরম মণ্ডকে ঠাসুন, মিশ্রণে এক চিমটে চিনি দিন, অল্প অল্প করে হাতে জল নিয়ে মণ্ড বানান, গন্ধের জন্য এক চিমটে এলাচ গুঁড়ো ও ৩-৪ চিমটে ভাজা মশলা দিন ওই মণ্ডে, মণ্ডটিকে একটি সাদা কাপড়ে মুড়ে রাখুন ১ ঘণ্টা মতো

৪. এবারে কড়াই আগুনে বসান, কড়াই গরম হলে তাতে ঢেলে দিন নারকেল কোরা, ভালো করে কোরা নাড়তে থাকুন, এইসময় আগুনের আঁচ থাকবে মাঝারি, নারকেল কোরায় দিন এক কাপ দুধ, ৩-৪ চামচ মতো পাটালি ভেঙে কড়াইতে দিন, মিষ্টি কম মনে হলে স্বাদ বুঝে গুড় মেশান, পুরো মিশ্রণটিকে ভালো করে নাড়াচাড়া করুন, হাত দিয়ে দেখুন নারকেলের পুর চটচটে হল কিনা, আঠালো হয়ে এলে বুঝবেন পুর তৈরি, উপর থেকে হাফ চামচ এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে কড়াই আগুন থেকে নামান, পুর ঠান্ডা হতে দিন

৫. এবারে মটরশুঁটির মিশ্রণ থেকে লুচির মত গোলাকার বল তৈরি করুন, বলটিকে চাকির মধ্যে বেলন দিয়ে বেলে চ্যাপ্টা গোল আকার দিন, গোল জায়গার মাঝখানে নারকেলের পুর দিন পরিমাণমত, এরপর ভালো করে মুখ আটকে দিন যাতে পুর বাইরে না বেরিয়ে যায়, পিঠে দেখতে হবে অনেকটা মোমোর মতো

৬. কড়াইতে সাদা তেল গরম করুন, এবার কাঁচা পিঠেগুলোকে তেলে ছেড়ে এপিঠ ওপিঠ হাল্কা লাল করে ভাজুন, ভাজা মুচমুচে হয়ে গেলে নলেন গুড়ে ডুবিয়ে বা শুধু শুধুই গালে ঢুকিয়ে দিন কড়াইশুঁটির ভাজা পিঠে।

মুগ ডালের ভাজা পিঠে বা রস পিঠে

Bengali Recipes

শীত পড়তেই রাস্তার ধারে দেখা যায় পাটালি গুড়ের সম্ভার নিয়ে বসে থাকা দোকানিদের। তার সঙ্গে রয়েছে জিভে জল আনা নলেন গুড়ের হাঁড়ি। পৌষের মৌতাত জমিয়ে তুলতে নলেন গুড় বা পাটালি আর পিঠের জুটির তুলনা মেলা ভার।

উপকরণ :

৫০ গ্রাম মুগ ডাল, ৫০ গ্রাম চালের গুঁড়ো, ১০০ গ্রাম চিনি, ৫০ গ্রাম নলেন গুড়/পাটালি, এক কাপ দুধ, সাদা তেল, পরিমাণমতো জল, নুন, ৪-৫টা সবুজ এলাচ, সাদা কাপড়ের টুকরো

প্রণালী :

১. প্রথমে মুগ ডাল কড়াইতে হাল্কা করে ভাজুন, ভাজা ডালে পরিমাণ মতো জল দিন সিদ্ধর জন্য, ডাল নরম হয়ে এলে কড়াই আগুন থেকে নামিয়ে নিন, সিদ্ধ জল ঝরিয়ে নিন, এবারে ডাল মিক্সির পাত্রে ঢালুন, তাতে ১ চিমটে নুন আর ১ চিমটে চিনি দিন, পাত্রের মুখ বন্ধ করে ডালটির ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন, আগুনে কড়াই গরম করুন, তাতে সিদ্ধ মুগ ঢালুন, এবার তাতে দিন চালের গুঁড়ো, ভালো করে দুটোকে মিশিয়ে আঠা মতো হতে দিন, যেন মিশ্রণ পুড়ে না যায়, মিশ্রণটিকে ঠান্ডা হতে দিন

২. নারকেল কুরে নিন, তাওয়ায় এলাচের দানা হাল্কা করে ভেজে গুঁড়ো তৈরি করুন

৩. একটা বড় পাত্রে ময়দা নিন, তাতে ২-৩ চামচ তেল দিন, ভালো করে ময়ান দিন, এতে ময়দার মিশ্রণ মোলায়েম হবে, এবারে ময়দার মিশ্রণে ডালের মণ্ড মেশান, একসঙ্গে ময়দা আর ডালের নরম মণ্ড তৈরি করুন, মিশ্রণে এক চিমটে চিনি দিন, অল্প অল্প করে হাতে জল নিয়ে মণ্ড বানান, গন্ধের জন্য এক চিমটে এলাচ গুঁড়ো দিন ওই মণ্ডে, মণ্ডটিকে একটি সাদা কাপড়ে মুড়ে রাখুন ১ ঘণ্টা মতো

৪. এবারে কড়াই আগুনে বসান, কড়াই গরম হলে তাতে ঢেলে দিন নারকেল কোরা, ভালো করে কোরা নারকেল নাড়তে থাকুন, এইসময় আগুনের আঁচ থাকবে মাঝারি, নারকেল কোরায় দিন এক কাপ দুধ, ৩-৪ চামচ মতো নলেন গুড় বা পাটালি গুড় দিন, মিষ্টি কম মনে হলে স্বাদ বুঝে আরও গুড় মেশান, পুরো মিশ্রণটিকে ভালো করে নাড়াচাড়া করুন, হাত দিয়ে দেখুন নারকেলের পুর আঠা মতো হল কিনা, আঠা হয়ে এলে বুঝবেন পুর তৈরি, উপর থেকে হাফ চামচ এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে কড়াই আগুন থেকে নামান, পুর ঠান্ডা হতে দিন

৫. এবারে আলাদা একটা পাত্রে দেড় কাপ জল দিন, জল হালকা গরম হলে তাতে ৫০ গ্রাম মতো চিনি দিন, ভালো করে ফোটান, চিনি জলে মিশে গেলে জলের মধ্যে এক চিমটে এলাচের গুঁড়ো ফেলে দিন, চিনির সিরাপ তৈরি, পাত্র ঢাকনা চাপা দিন

৬. এবারে ময়দা-ডাল-চালের গুঁড়োর মণ্ড থেকে লুচির মত গোলাকার বল তৈরি করুন, বলটিকে চাকির মধ্যে বেলন দিয়ে বেলে চ্যাপ্টা গোল আকার দিন, গোল জায়গার মাঝখানে নারকেলের পুর দিন পরিমাণমত, এরপর ভালো করে মুখ আটকে দিন, যাতে পুর বাইরে না বেরিয়ে যায়, পিঠে দেখতে হবে অনেকটা মোমোর মতো

৭. কড়াইতে সাদা তেল গরম করুন, এবার কাঁচা পিঠেগুলোকে তেলে দিয়ে এপিঠ ওপিঠ হাল্কা লাল করে ভাজুন, ভাজা হয়ে গেলে পিঠেগুলোকে তুলে আস্তে আস্তে ঢেলে দিন চিনির সিরাপে, ১৫ মিনিট পর সিরাপ থেকে পিঠেগুলো তুলে স্বাদ নিন মিষ্টি মুগ পিঠের, সিরাপে না দিয়ে ভাজা মুগ পিঠেও খেতে পারেন নলেন গুড়ে ডুবিয়ে।

চুষির পায়েস

Bengali Recipes

জন্মদিন,অন্নপ্রাশন বা বাড়ির যেকোনও পূজাপার্বণ, পায়েস ওরফে পরমান্ন ছাড়া একেবারেই বিস্বাদ। মিষ্টি প্রিয় বাঙালির অন্দরমহলে পায়েসের খাতিরযত্ন তাই চিরকালীন। ভরা শীতের হিমেল হাওয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে পিঠেপুলির কথা। পৌষপার্বণের সঙ্গে পিঠেপুলির সম্পর্ক চিরন্তন। তাই পুলি আর পায়েসের মেলবন্ধনে পৌষপার্বণ জমিয়ে তোলাই যেতে পারে। মকরসংক্রান্তির শুভলগ্নে রইল ‘চুষির পায়েস’ বা ‘পুলির পায়েস’ তৈরির রেসিপি।

উপকরণ :

৪ জনের জন্য – ২৫০ গ্রাম চালের গুঁড়ো, ১০০ গ্রাম ময়দা, ৫০ গ্রাম সুজি, ১ লিটার দুধ, ২৫০ গ্রাম চিনি, ৪-৫টি তেজপাতা, পরিমাণমতো জল, পরিমাণমতো নুন, ছোটো আধ চামচ ছোট এলাচের গুঁড়ো

প্রণালী :

১. প্রথমে এক কাপ মতো জল ঈষদুষ্ণ গরম করে নিতে হবে (প্রয়োজনে আরও একটু বেশি করে জল গরম করে রাখুন), একটা বড় পাত্রে চালের গুঁড়ো, সুজি ও ময়দা একসঙ্গে মাখিয়ে তাতে আঙুলের এক চিমটে নুন ফেলে দিন, একসঙ্গে উপকরণগুলিকে মেশান, এবারে আগে থেকে তৈরি ঈষদুষ্ণ জল পরিমাণমতো দিয়ে মিশ্রণটিতে মাখান, ভালো করে হাতের তালু দিয়ে ঠেসে মিশ্রণটিকে মণ্ডে পরিণত করুন, লক্ষ্য রাখবেন মণ্ডটি যেন নরম মোলায়েম হয়

২. মণ্ড থেকে ছোটো ছোটো বলের আকারে লেচি কেটে নিন, এবারে লেচিটিকে হাতের তালুতে রেখে হাল্কা করে চ্যাপ্টা আকার দিন, তারপর প্রদীপের সলতে যেমন করে পাকায় ওইভাবে চ্যাপ্টা লেচিকে আঙ্গুল দিয়ে পাকান, খেয়াল রাখবেন, লেচির মাঝখানটা হবে চ্যাপ্টা আর দুটি মাথা বা প্রান্ত হবে ছুঁচালো, একেই বলে চুষি বা পুলির ছোটো সংস্করণ

৩. এবারে বড় ডেকচি জাতীয় পাত্রে দুধ ভালো করে ফোটান, ফোটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভালো করে জ্বাল দিন, কোনোভাবে যেন দুধ পাত্রের তলায় ধরে না যায়, দুধ একটু ঘন হয়ে গেলে তাতে তেজপাতা আর চিনি দিয়ে দিতে হবে, স্বাদ বাড়াতে দুধে বাতাসা বা মিছরিও দিতে পারেন, তবে ভুলেও গুড় দেবেন না, এতে চুষির পায়েসের দুধ কেটে যাবে, ভালো করে দুধ জ্বাল দিয়ে মিষ্টি ভালো করে মেশাতে হবে দুধের সঙ্গে, এরপর কাঁচা চুষিগুলোকে সাবধানে দুধে ঢেলে দিতে হবে, এরপর আরও ৫-১০ মিনিট ঢিমে আঁচে চুষিসহ পায়েসটাকে ভালো করে সাবধানে হাল্কা করে নাড়তে হবে, পায়েসে থকথকে ভাব এলে তাতে এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে আরেকটু পর নামিয়ে নিতে হবে

আর কি! এবার শুধু রসনা তৃপ্তির পালা। গরম বা ঠান্ডা, টাটকা বা বাসি, যেভাবে খুশি খান চুষির সুস্বাদু পায়েস।

কাস্তে পিঠে

Bengali Recipes

পেটে খেলে পিঠে সয়। একথা কে না জানে। শীতের মরশুমে গণ্ডা খানেক পিঠে পেলে দিব্যি হজম করে নেবে ভোজন রসিক বাঙালির পেট। রসে টইটম্বুর এমনই এক পিঠের রেসিপি দেওয়া হল। দেখতে দক্ষিণী খাবার ইডলির মতো হলেও স্বাদে, গন্ধে ও বর্ণে একেবারেই স্বতন্ত্র এই পিঠে।

উপকরণ :

১ কেজি আতপ চাল, দেড় লিটার জল, পরিমাণমতো নুন, ৩-৪ চামচ সর্ষের তেল, ৩ কাপ চিনি, ১ চামচ এলাচের গুঁড়ো

প্রণালী :

১. সুগন্ধি আতপ চাল জলে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মতো ভিজিয়ে রাখুন, এরপর জল থেকে আতপ চাল ছেঁকে তুলে নিন, চালের জল ঝরিয়ে নেবেন, এরপর মিক্সিতে চাল একদম মিহি করে গুঁড়ো করুন, গুঁড়ো হয়ে যাবার পর চালুনি বা টুকরিতে চালের গুঁড়োকে আবার ছেঁকে নিন, যত চালের গুঁড়ো মিহি হবে ততই ভাল, মনে রাখবেন, বাজার থেকে কেনা তৈরি চালের গুঁড়ো দিয়ে এই পিঠে হবে না

২. এবারে চালের গুঁড়োর পরিমাণ বুঝে একটা পাত্রে জল একদম হালকা গরম করুন, জল কিন্তু বেশি গরম হবে না, এবারে ওই জলে চালের গুঁড়ো ভালো করে মেশান, মিশ্রণের মধ্যে কয়েক চিমটে নুন (২-৩ চিমটে) ফেলে দিয়ে ভাল করে মিশ্রণটিকে ফেটান, খেয়াল রাখবেন, যেন মিশ্রণ খুব গাঢ় না হয়, আবার খুব পাতলা না হয়, হালকা থকথকে নরম মিশ্রণের গোলা তৈরি করতে হবে

৩. এই পিঠে রাঁধতে ইডলি মেকার লাগবে, সেই পাত্রের ঢাকনা তুললে দেখা যায় প্রথমে আছে অনেকগুলো ফুটো দেওয়া গর্তের মতো দেখতে গোল আকারের জায়গা, ওই জায়গাগুলোর প্রতিটিতে ২-৪ ফোঁটা সর্ষের তেল ভালো করে মাখান, গোল গোল গর্তের মতো পাত্রের একদম নিচের অংশে এক মগ মতো জল ঢালুন, এই পদ্ধতি শেষ হলে ইডলি মেকারের উপরের ঢাকনা বন্ধ করে মাঝারি আগুনের আঁচে বসিয়ে গরম করুন

৪. ১ মিনিট পর আগুনে পাত্রের নিচের জল গরম হওয়ায় দেখা যাবে উপরের গোল গোল গর্ত করা জায়গাগুলো হালকা গরম হয়েছে, এবারে হাতা বা বড় চামচে করে চালের গুঁড়োর গোলা ওই গর্ত করা স্থানে ধীরে ধীরে ঢালুন, সব কটা জায়গায় ঢালা হয়ে গেলে আবার উপরের মূল ঢাকনা চাপা দিয়ে দিন, পুরো প্রক্রিয়াটি ভাপা বা সিদ্ধ প্রক্রিয়া নামে পরিচিত

৫. আরেকটা বড় পাত্রে ১ লিটার জল নিয়ে গরম করুন, তাতে চিনি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে গাঢ় চিনির রস তৈরি করুন

৬. ইডলি মেকারে ২-৩ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখা যাবে সেদ্ধ চালের গুঁড়োর মিশ্রণে হালকা খয়েরি বা কালচেটে রং ধরেছে আর মিশ্রণ গোল হয়ে ফুটে উঠেছে, এবার ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে ভাপা পিঠেগুলোকে কাটিয়ে তুলতে হবে, নরম পিঠেগুলোকে এবার এক এক করে চিনির রসে ফেলুন, উপর দিয়ে এক চামচ মতো এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে পিঠেগুলোকে রসে উল্টে দিন, ঘণ্টা ২ পরে চিনির রসে মজে ওঠা কাস্তে পিঠে হয়ে উঠবে তারিয়ে তারিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button