ভূতচতুর্দশী কি ও কেন পালন করা হয়
এ কথা সূর্যের মতো সত্য। শুভ কাজের ফল যেমন কখনও বৃথা যায় না, তেমনই অশুভ কর্মের ফল দেহধারীকে ভোগ করতেই হবে।
কালীপুজোর আগের দিনকে ভূতচতুর্দশী বলা হয়। এই দিনটির পিছনে আছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। দানবরাজ বলির বড্ড অহংকার ছিল দানবীর হিসাবে। তিনি স্বর্গ মর্ত্য ও পাতালের অধীশ্বর হয়েছিলেন পুরাণেরকালে। এতে ধীরে ধীরে একসময় দারুণ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন দেবতারা। তখন দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে ভগবান বিষ্ণু বামনরূপে এসে তাঁর পা রাখার জন্য তিন পা পরিমাণ জমি ভিক্ষা চাইলেন রাজা বলির কাছে।
স্বয়ং বিষ্ণু যে এসেছেন রাজার কাছে এ বিষয়টা পরিস্কার ছিল, কিন্তু কোনওভাবে এতটুকুও বিষ্ণুকে বুঝতে দেননি রাজা বলি। তবুও তিনি দান দিতে রাজি হলেন কথা রক্ষার্থে।
তখন বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু একটা পা রাখলেন স্বর্গে, আর একটা পা দিলেন মর্তে। এবার নাভি থেকে বের হল আর একটা পা। এই পা রাখলেন রাজা বলির মাথায়।
এর পর ধীরে ধীরে বলি ঢুকে গেলেন পাতালে। বলি জেনে বুঝেও দান দিয়েছিলেন বলে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন মর্ত্যলোকে।
নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে থাকে রাজার অসংখ্য অনুচর হিসাবে পরলোক জগতের ভূত প্রেতরা। তাদের দূরে রাখার জন্য জ্বালানো হয় প্রদীপ।
তিথিটা থাকে চতুর্দশী, তাই জ্বালানো হয় চোদ্দোটা প্রদীপ। প্রদীপগুলি মূলত নিবেদিত হয় স্বর্গত পিতৃপুরুষ, প্রেতাত্মা, ধর্ম, রুদ্র, বিষ্ণু, কান্তারপতি বা অরণ্যে অধিষ্ঠিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে।
পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পারলৌকিক যেকোনও কাজের ফল কখনও বৃথা যায় না। তাঁদের আত্মার আশীর্বাদ সূক্ষ্মভাবে কাজ করে থাকে যিনি তাঁর উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর কাজটি করে থাকেন তার ওপর। এ কথা সূর্যের মতো সত্য। শুভ কাজের ফল যেমন কখনও বৃথা যায় না, তেমনই অশুভ কর্মের ফল দেহধারীকে ভোগ করতেই হবে।
পরলোক বিষয়টা সাদামাটা চোখে দেখা যায় না বটে, তবে একে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। পারলৌকিক জগত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাটা খুবই কম। মোটের উপর পুরাণের পৌরাণিক কথায় ভূতচতুর্দশী প্রসঙ্গ এটুকুই।