আমি আমার রাজা, আমার এই রাজার রাজত্বে। রবি ঠাকুরের গানের একটু এদিক-ওদিক করে এমনটা গাইতেই পারেন সুযশ দীক্ষিত। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের বাসিন্দা এই যুবক এখন সুদূর উত্তর আফ্রিকার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বঘোষিত রাজা।
মিশর ও সুদানের মাঝখানে রয়েছে এক অদ্ভুত অঞ্চল। যে অঞ্চলের দাবি জানায় না দু দেশের একজনও। সেই পাণ্ডববর্জিত জনহীন মরুপ্রদেশের নাম বির তাউইল। ৮০০ বর্গ মাইল তার বিস্তার। নামকরা একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সুযশ অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালবাসেন। তাই মাঝে মাঝেই লোটাকম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে।
বিপদকে পরোয়া করেন না তিনি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সেই দুঃসাহসিক অভিযানের বর্ণনা দিয়ে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন এই যুবক। ৩১৯ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে বির তাউইল জয় করার কাজটা মোটেই খুব একটা সহজ ছিল না বলে জানাচ্ছেন ওই যুবক।
যাত্রাপথে না ছিল সুনির্দিষ্ট কোনও রাস্তা। ফটো তোলার ক্ষেত্রে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। উপরন্তু, যে রাস্তা ধরে তিনি এগিয়ে চলেছিলেন, তা জঙ্গিদের এলাকা নামে কুখ্যাত। তাই যেকোনও মুহুর্তে সৈন্যদের হাতে প্রাণ যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সব ভালো যার শেষ ভালো। তাই শেষ অবধি বিনা সঙ্কটে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ এ পা রাখেন সুযশ।
এরপর জমি জায়গা মনে ধরে যায় তাঁর। বির তাউইলের মালিকানা পাওয়ার জন্য অনলাইনে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন সুযশ। তাঁর আবেদনকে সমর্থন করে সইও করেছেন বেশ কয়েকজন।
বির তাউইলের বর্তমান রাজা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছেন সাহসী সুযশ। সেখানকার রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন তাঁর বাবা। আর দেশের সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানো হবে তাঁর আরেক আত্মীয় সুযোগ দীক্ষিতকে। এরমধ্যে তিনি আবার তাঁর রাজ্যপাটের যুতসই একটা নামও দিয়ে ফেলেছেন। ‘দীক্ষিতের রাজত্ব’। সভ্যতা গড়ে তোলার নিয়ম অনুযায়ী রুক্ষ মরুভূমির বুকে বীজ বপন করেছেন সুযশ। বন্ধ্যা জমিকে শস্যশ্যামলা করে তোলাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
কিন্তু, প্রজা না থাকলে কি আর রাজার মান বাড়ে! তাই তাঁর সেই নতুন রাজত্বের বাসিন্দা হতে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছেন সুযশ। তাঁর নতুন রাজত্বের দিকে কেউ অন্যায় নজর দিলে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন সুযশ। কিন্তু সেই যুদ্ধের আবহাওয়াকে গরম রাখতে সুযশের প্রধান অস্ত্র কিন্তু এক কাপ গরম কফি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৪ সালে এক আমেরিকান পর্যটক বির তাউইলে পা রাখেন। তিনি তাঁর মেয়েকে ওই এলাকার রানি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আরও অনেকে ওই অভিভাবকহীন এলাকার মালিক হওয়ার দাবি জানান। কিন্তু তাঁদের সেই ইচ্ছা ও দাবি কোনওটাই পূরণ হয়নি। এখন দেখার সুযশের ইচ্ছাশক্তির জোরে পৃথিবীর মানচিত্রে বির তাউইল আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার চূড়ান্ত স্বীকৃতি পায় কিনা।