কোনও এক গাঁয়ের ছেলের রূপকথা
সহজ, সরল, সাবলীল। কথা বলতে শুরু করলেই বোঝা যায় ভদ্রলোক কথা বলতে ভীষণ ভালবাসেন। কোনও প্রশ্নে কোনও বিরক্তি নেই।
ফোনটা বেজে চলেছে। কী হল! অচেনা নম্বর দেখে ধরছেন না। হতেই পারে। সেলেব্রিটিরা অনেক সময় এমন করেই থাকেন। এসব সাতপাঁচ ভাবছি। এমনসময় ওপাশ থেকে ভেসে এল কোনও মেকি গাম্ভীর্যহীন সহজ সরল একটা গলা। ‘হ্যালো, কে বলছেন’? প্রথম আওয়াজেই বেশ একটা ভরসা পেলাম। সময় নষ্ট না করে বলে ফেললাম, দাদা একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই। যদি একটু সময় দেন। উল্টো দিক থেকে উত্তর এল হ্যাঁ, তবে সুবর্ণলতার সেটে আসতে হবে। শুটিং-এর ফাঁকে কথা বলা যেতেই পারে। সাক্ষাৎকারের স্থান, কালটা পাত্রের কাছে ফোনেই জেনে নিয়েছিলাম। ফলে সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়ে চিত্রগ্রাহক সঙ্গীকে বগলদাবা করে পৌঁছতে অসুবিধা হল না। আমাদের আসার খবর পেতেই ফ্লোর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী পরা এক মোটা সোটা যুবক। না, চিনতে এতটুকুও অসুবিধা হল না। ইনিই বিশ্বনাথ বসু। যাঁর সাক্ষাৎকার নিতে আমাদের এখানে আসা।
‘জানেন, আমি কিন্তু আপাদমস্তক গ্রামের ছেলে। বিকেল কাটানোর জন্য আমার কখনও কম্পিউটার বা ভিডিও গেমের প্রয়োজন পড়েনি। গ্রামের মাঠে-ঘাটে ফুটবল, ক্রিকেট খেলে আর আম, কাঁঠালের গাছের ফাঁকে আমার কৈশোরটা দিব্বি কেটেছে। এখনও কাজের ফাঁকে গ্রামের কথা মনে পড়লে মন কেমন করে। সুযোগ পেলেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাই’।
সহজ, সরল, সাবলীল। কথা বলতে শুরু করলেই বোঝা যায় ভদ্রলোক কথা বলতে ভীষণ ভালবাসেন। কোনও প্রশ্নে কোনও বিরক্তি নেই। বরং মন দিয়ে প্রশ্ন শুনে তার উত্তর হাসিমুখে দিতেই পছন্দ করেন তিনি।
হাসিখুশি মানুষটার অনর্গল কথা শুনতে খুব ভাল লাগছিল। তবে সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি। তাই নিজের ভালোলাগার বাইরে বেরিয়ে শুরু করলাম ছোট ছোট প্রশ্নে আসল বিশ্বনাথকে বের করে আনার চেষ্টা। কয়েকটা প্রশ্নের পর বেশ বুঝলাম, এই স্বনামধন্য মানুষটি নিজের কথা প্রাণ খুলে বলতে ভালোবাসেন। আমায় শুধু প্রশ্ন নামক শব্দজালে তাঁকে বিষয় বৈচিত্র্যের খোরাক দিতে হচ্ছিল মাত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের আরবালিয়া গ্রাম। এখানেই জন্ম আজকের বিশ্বনাথের। ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে যিনি আজও হারিয়ে যান গ্রামের সেই দিনগুলোতে। বাবা ছিলেন রাশভারী মানুষ। পড়াশোনার জন্য খুব যে বকাবকি করতেন, তা নয়। তবে বাড়িতে বাবার কঠোর অনুশাসনের মধ্যে দিয়েই বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। জোরে কথা বলতে নেই, বসেবসে পা দোলাতে নেই, ঘরে অন্য কেউ থাকলে জিজ্ঞেস না করে টিভি নেভাতে নেই। আপাতদৃষ্টিতে এমন বহু ছোট ছোট পাঠ আজকের বিশ্বনাথকে মানুষ করে তুলেছে। বাবার সেই সাদামাটা শিক্ষা এখনও এই গ্ল্যামার জগতের মানুষটাকে নাড়া দিয়ে যায়।
ছোট থেকেই একটু বেশি কথা বলার অভ্যাস। সঙ্গে ছিল অভিনয়ের উপর প্রচণ্ড টান। সিনেমা ভাল লাগত। ছোট থেকেই গোলগাল সুন্দর দেখতে। তাই গ্রামে রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে যখনই স্বামী বিবেকানন্দের উপর নাটক হত, তখনই ডাক পড়ত তাঁর। বিবেকানন্দের ভূমিকায় অনেকবার অভিনয় করেছেন সেসময়ে। সেসব স্মৃতি এখনও নাড়া দেয় তাঁকে। তবে বাবার মত ছিলনা। ছেলে অভিনয় করুক, তা তিনি কোনও দিন চাননি। চেয়েছিলেন ছেলে তাঁর মতই চাকরি করুক। ঘর সংসার করুক। কিন্তু অভিনয় ছাড়া যাঁর আর কোনও কিছুই ভাল লাগত না তার পক্ষে বোধহয় অন্য কোনও পেশা বেছে নেওয়া সম্ভব ছিলনা। আরবালিয়ার স্কুলে স্কুল জীবন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বনাথ চলে আসেন কলকাতায়। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে। এই সময়ে পড়তে পড়তে অজস্র পথ নাটিকা, শ্রুতি নাটক করেছেন তিনি। তাঁর অভিনয় প্রতিভা দেখে তাঁর এক দাদা বিশ্বনাথকে আলাপ করিয়ে দেন টলিউডের দাপুটে অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বিশ্বনাথের ভাষায় বাবা-মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন। আর শুভাশিসদার হাত ধরে সিনেমার জগতে আমি ফের একবার জন্ম নিই। শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ই তাঁকে টলিউডের বিভিন্ন লোকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। একজন স্ট্রাগলিং অভিনেতার জন্য এই সুযোগ যে কতটা দামি তা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাই জানান দিয়ে গেল। আর বুঝিয়ে দিয়ে গেল এই হাসিখুশি যুবকটিকে গ্ল্যামারের দুনিয়া উপকারির উপকারের কথা ভুলিয়ে দিতে পারেনি।
১৯৯৬-৯৭ থেকেই ছোট ও বড়পর্দায় সুযোগ পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগা। প্রত্যেক পরিচালক, প্রযোজক, প্রত্যেকটি চ্যানেলের দফতর, কোথাও যেতে বাকি ছিল না। নখদর্পণে ছিল শহরের কোথায় কোন প্রোডাকশনের কাজ চলছে। তার সঙ্গে কারা কারা যুক্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা কাজের সুযোগ চেয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখা করতেন সেসময়ের স্ট্রাগলিং বিশ্বনাথ। তাঁর কথায় চাকরি করতে গেলেও তো পরীক্ষা দিতে হত। সুযোগের জন্য লড়াই করতে হত। সেই লড়াইটাই আমি সিনেমা, টিভিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য দিয়েছি। কথাগুলো বলতে বলতে নিজের অজান্তেই একটা পাঠ দিয়ে গেলেন স্ট্রাগলারদের জন্য। যে কাজটা করতে চাও, তার খুঁটিনাটির খবর রাখো।
ইটিভিতে প্রিয়া কার্ফার সঙ্গে একটি টেলিফিল্মে অভিনয়ে প্রথম নজর কাড়েন বিশ্বনাথ। তবে ‘এক পশলা বৃষ্টি’ সিরিয়ালে অভিনয়ের পর দেখলেন ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়ররাও এর তার কাছে খবর নিতে শুরু করেছেন কে এই ছেলেটি। তাঁকে নিয়ে কানাঘুষো হচ্ছে। বেশ বুঝলেন চোখে পড়েছেন। যেটা একজন উদীয়মান অভিনেতার জন্য অবশ্যই ভাল খবর। তবে টুকটাক খবর নেওয়া, কয়েকজন চেনা, এভাবে শম্বুকগতির পরিচিতিকে এক ধাক্কায় খ্যাতির চুড়োয় পৌঁছে দিল ‘ধ্যাত তেরিকা’ সিরিয়ালে অভিনয়। ২০০৫-এর এই আপাত কমেডি সিরিয়ালের সৌজন্যে বিশ্বনাথকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সিরিয়ালে ডাক। সিনেমায় ডাক। দ্রুত বদলাতে শুরু করল ভাগ্যের চাকা। আর তা ধরে রাখার জন্য চলল কঠোর পরিশ্রমও। ঠিক ওই সময়েই ধ্যাত তেরিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাম করল ‘উৎসবের সেরা পরিবার’, সেখানেও অ্যাংকরিং-এর সুবাদে বিশ্বনাথ তখন বোকাবাক্সের ঘরের ছেলে।
বাংলা সিনেমায় হাফ সেঞ্চুরি অনেক দিন আগেই করে ফেলেছেন। ‘ক্রান্তি’ থেকে ‘উড়োচিঠি’, প্রতিটি সিনেমায় নতুন বিশ্বনাথকে দেখছেন দর্শকরা। মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় বেশ কয়েকটি ছবি। ছোট পর্দায় চলছে চুটিয়ে কাজ। কৌতুক অভিনেতার তকমা ঝেড়ে ফেলে তাঁকে একটা সম্পূর্ণ অভিনেতা করে তুলেছে ‘সুবর্ণলতা’ সিরিয়ালে প্রবোধের চরিত্রে বলিষ্ঠ অভিনয়। আর এসবের ঠেলায় নাটকে অভিনয়টাই ধামাচাপা পড়ে গেছে। সময়ের অভাবে শেষ চার-পাঁচ বছরে নাটকটাই করে ওঠা হয়নি। আর তা নিয়ে আক্ষেপও রয়েছে বিশ্বনাথের। সব মাধ্যমেরই নিজের ভাষা আছে। অভিনয়ের ধরণ আছে। একথা বারবার বললেও, বিশ্বনাথের কাছে নাটক হল অভিনয়ের ব্যাকরণ। নাটক একটা সম্পূর্ণ অভিনেতা তৈরি করে। নার্ভ শক্ত হয়। কয়েকশো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে যেখানে রিটেকের কোনও জায়গা নেই।
অনেক সিরিয়ালেই অভিনয় করেছেন। তবে সুবর্ণলতার প্রবোধ নিয়ে একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত লাগল টলিউডের এই চরিত্রাভিনেতাকে। তিনি প্রবোধ চরিত্রে অভিনয় করছেন জেনে তাঁর শাশুড়ি মা পর্যন্ত উচ্ছ্বসিত ছিলেন, হাসিমুখে জানালেন বিশ্বনাথ।
চিরদিনই একটু বেশি কথা বলতে ভালবাসেন। তাই অ্যাংকরিংটা করতে এখনও ভীষণ ভাল লাগে বিশ্বনাথের। অ্যাংকরিং-এর প্রতি কৃতজ্ঞও তিনি। স্পষ্টই জানালেন, অ্যাংকরিং আমাকে আরবালিয়া থেকে আটলান্টা নিয়ে গেছে। অ্যাংকরিং একটা অন্যরকম ভালবাসা। দৃঢ় গলায় জানালেন, অনুষ্ঠানের মেরুদণ্ড হল অ্যাংকরিং। সেটা ঠিকঠাক ধরে রাখা সহজ কথা নয়।
তিনি সংসারি নন, তবে সংসারকে ভালবাসেন। হাসিমুখেই জানালেন বিশ্বনাথ। পেশাগত কারণে সংসারকে সময় দেওয়ার ঠিক থাকেনা। অনেক ক্ষেত্রে সারাদিনই বাড়ি থাকেন না। কিন্তু সময় পেলে বিশ্বনাথের পুরো সময়টাই পরিবারের। ভালবাসেন বউ, ছেলে নিয়ে দূরে কোথাও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে। কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। বিশ্বনাথ তার ব্যতিক্রম নন। পাহাড় ভালবাসেন। সন্ধের পাহাড় মন খারাপ করে দেয় বিশ্বনাথের। বড্ড নস্টালজিক করে তোলে। মনে পড়ে পুরনো বহু কথা। আর সমুদ্র? সমুদ্র দেখলে ভারভার লাগে। বিশালত্বের মাঝে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হয়। মনে হয়, তিনি কিছুই নন। সমুদ্রের টানে ২৫ বার পুরী গেছেন বিশ্বনাথ। জানালেন, ভবিষ্যতেও যাবেন।
ছেলেকে নিয়ে বেশ স্বপ্ন বিলাসী বাংলার রুপোলি পর্দার এই তরুণ তারকা। শহুরে নয়, চান ছেলের শৈশবটা তাঁর নিজের ছোটবেলার মত হোক। একটু পুকুরে স্নান, একটু গাছে চড়া, ঝড়ের রাতে আম কুড়নো, সাইকেল চালিয়ে গ্রামের পথ ধরে বেড়াতে যাওয়া। ক্লান্ত দুপুরে নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল দি গ্রেট, চাঁদমামায় মুখ গুঁজে দেওয়া। নিজের ছেলের মধ্যে নিজের ছোটবেলাটাকেই বোধহয় আবার একবার ঝালিয়ে নিতে চান এই ব্যস্ত অভিনেতা।
অবসর পেলে ছোট গল্পে মশগুল হতে ভালবাসেন। নিজেই বললেন, বহু ছোট গল্প পড়েছি। তবে ছোটগল্প পড়তে শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। নিজে গল্প লেখেনও। সে গল্প বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপাও হয়। গল্পের মত কবিতা অতটা প্রিয় না হলেও, মাঝে মধ্যে কলম হাতে কবিতাও লিখে ফেলেন। আর ভালবাসেন গান। শুধু শোনাই নয়, গাইতেও ভালবাসেন। রাজ্যের কোনায় কোনায় স্টেজ শো করতে হয়। আর সেখানে দর্শকরা চান বা না চান, খান চার পাঁচ গান তিনি গাইবেনই, হাসিমুখেই জানালেন বিশ্বনাথ। আর ভালবাসেন মিমিক্রি। কোনও বিখ্যাত মানুষের গলা নকল করে তাঁর মত বলা। যেখানেই স্টেজ শো করেন, সেখানেই মিমিক্রির অনুরোধ রাখতে হয় তাঁকে। আমার অনুরোধও রাখতে হল। সাক্ষাৎকারের ফাঁকেই খুশি মনে দু-কলি গেয়ে শোনালেন বিশ্বনাথ। সঞ্জীব কুমারের মিমিক্রিও করলেন হাসিমুখে।
উত্তম কুমার প্রিয় অভিনেতা ঠিকই, কিন্তু তরুণ কুমারের অভিনয় অন্ধের মত অনুকরণ করতে ভালবাসেন বিশ্বনাথ। নতুন বাংলা ছবির চেয়ে পুরনো বাংলা ছবিই বেশি পছন্দ। অভিনয় শেখার চেষ্টাটাও আছে। এই মুহুর্তে নিজের অভিনয়কে কেবল পাস মার্ক দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান তিনি। তাঁর মতে, কমাল হাসান, নাসিরুদ্দিন শাহ, উত্তম কুমার, অমিতাভ বচ্চন – এঁদের অভিনয় দেখলে বোঝা যায় অভিনয় জিনিসটা কতটা কঠিন। মুম্বইতে অভিনয় করতে পারলে মন্দ হয়না ঠিকই, তবে বসিরহাটের এই গ্রামের ছেলেটি এখনও মনে করেন, যদি তাঁকে এই বাংলায় বসেই চিরদিন রোজগার করতে হয়, তাতে তাঁর এতটুকুও কষ্ট হবে না।
অনেকক্ষণ ধরেই উসখুস করছিলাম প্রশ্নটা করার জন্য। ফাঁক পেয়ে এবার করেই ফেললাম। ‘তোমার বিয়েটা হল কিভাবে?’ সুকৌশলে, ছোটোর মধ্যে সারলেন সে কাহিনি। স্ত্রী দেবিকা তখন এমএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। সেই সময় একটি অনুষ্ঠানে আলাপ। ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা।
বাড়ির নিমরাজি ভাব কাটিয়ে শেষমেশ ২০০৮-এর শীতের শুরুতে বিয়ে। দিনটা ছিল ৬ই ডিসেম্বর। ব্যস তারপর চুটিয়ে সংসার। তবে রান্নাবান্নায় বড়ই অপটু ‘পেটুক’ বিশ্বনাথ। বিভিন্ন রকম মাছ তাঁর বড়ই প্রিয়। মাছ হলেই হল। আর ভাল বাসেন বিরিয়ানি। মিষ্টিও প্রিয় বটে। তবে স্ত্রীর কড়া অনুশাসনে শরীরের কথা ভেবে মিষ্টি থেকে বেশ দূরেই রাখেন নিজেকে। নিজে এক গ্লাস জল গড়িয়ে খেতে না পারলে কি হবে, মা, শাশুড়ি মা আর স্ত্রীর রান্নার তারিফটা করলেন একদম মন থেকে। মায়ের তৈরি বড়ির ঝাল যে তাঁর কত প্রিয় তা সেদিন মুখ দেখেই বুঝেছিলাম।
কোনও কিছুকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতা আর অল্পে রেগে যাওয়া, নিজের এই দুটি খারাপ দিক নিয়ে নিজেই চিন্তিত বিশ্বনাথ। বললেন, এ দুটো অভিনয়ের জন্য খুব খারাপ। পরিবর্তন করতে হবে। বুঝলাম অভিনয়ে প্রভাব ফেলে এমন কোনও কিছুকেই বেশিদূর এগোতে দিতে চাননা এই তরুণ তারকা।
আর ফ্যান! রাস্তা ঘাটে ঘিরে ধরেনি লোকজন? নিজেই বললেন অনেকেই চিনতে পারেন। নানা কথা বলেন। যারমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ছুঁয়েও গেছে এই সরল হাসিখুশি মানুষটাকে। চিনতে পেরে একদিন একটা চিপসের প্যাকেট তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক হকার। ভক্তের এই ছোট্ট উপহারের কথা তিনি আজও ভুলতে পারেননি। ভুলতে পারেননি ধর্মতলার মোড়ে এক খবরের কাগজওয়ালার কথা। যে তাঁকে চিনতে পেরে এগিয়ে এসেছিল। বেশ বুঝলাম ফ্যানদের সঙ্গে ছোট ছোট মুহুর্তগুলো কতটা নাড়া দিয়ে যায় তাঁকে।
ব্যস্ত অভিনেতা। প্রতিদিনই কাজের মধ্যে সময় কাটে। অবসর বলতে কাজের মাঝে কিছুটা ফাঁকফোকর। সেটুকু নিতান্তই ব্যক্তিগত, পরিবারের। এমন বিশ্বনাথও বছরে টানা চারদিন কাজ করেন না। ওই চারটে দিন ছুটি। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী। ওই চার দিন বাদে বছরের সবকটা দিন কাজ করতে প্রস্তুত তিনি। তবু এই ব্যস্ততার মাঝে নিজের ভালবাসা, ভালোলাগাগুলোকে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই হাসিমুখের যুবক। সাক্ষাৎকার শেষ। শেষে আবদারের মতই বললাম, ‘আর একটা গান হয়ে যাক।’ কোনও ভণিতা নয়, ওজর আপত্তি নয়। গলাটা একবার খাঁকড়ে নিয়ে চোখটা বন্ধ করলেন বিশ্বনাথ। আর তাঁর সুরেলা কণ্ঠ গেয়ে উঠল – ‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক, বেশ তো, গোধূলির রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশ তো, বেশ তো, বেশ তো…’।