Kolkata

বিজেপির নবান্ন অভিযানে তোলপাড় গঙ্গার এপার ওপার, মহিলা পুলিশকর্মীর আচরণে ক্ষুব্ধ শুভেন্দু

বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে সকাল থেকেই ক্রমশ চড়ছিল পারদ। আর অভিযান শুরু হতে কার্যত তুলকালাম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় গঙ্গার এপারে ও ওপারে।

সকালে বেশ কয়েক জায়গা থেকে অভিযোগ আসছিল বিজেপি কর্মীদের বাধা দেওয়ার। বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে তাই মেঘলা দিনের সকাল থেকেই চড়ছিল পারদ।

এদিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আলিপুর পিটিএস-এর সামনে এসে হাজির হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। এঁরা এগোতে গেলে ব্যারিকেডের মুখে পড়েন।


সেখানে শুভেন্দু অধিকারী ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাঁধে। এক মহিলা পুলিশকর্মী তাঁকে স্পর্শ করাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শুভেন্দু অধিকারী।

এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের মধ্যস্থতায় শুভেন্দু অধিকারীকে শান্ত করে পরে গ্রেফতার করা হয়। ফলে নবান্ন অভিযান শুরুর আগেই গ্রেফতার হন বিজেপির ৩ নেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাহুল সিনহা এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়।


সাঁতরাগাছির দিক থেকে নবান্নমুখী মিছিলটিই প্রথমে শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন সৌমিত্র খাঁ। মিছিল গার্ডরেলে এসে ধাক্কা দিতে শুরু করলে পুলিশ প্রথমে জল কামান চালায়। তাতে ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়। এরপর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে শুরু করে পুলিশ।

লাঠি হাতে পুলিশ এগোতে শুরু করে বিজেপি কর্মীদের দিকে। কর্মীরা পিছু হটলেও পুলিশকে লক্ষ্য করে চলতে থাকে লাগাতার ইট বৃষ্টি, কাচের বোতল বৃষ্টি।

এর মধ্যেই কয়েকটি বোমা পড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। পুলিশ সাঁতরাগাছিতে কিছুটা প্রাথমিকভাবে বিজেপি কর্মীদের পিছু ঠেলে দিতে সক্ষম হলেও পরে সাঁতরাগাছি স্টেশনের দিক থেকে রেলের পাথর আর রাস্তার দিক থেকে ইট বৃষ্টি চলতেই থাকে।

একটা সময় এমনও দেখা যায় পুলিশ কিছুটা ছুটে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। সাঁতরাগাছিতে কিন্তু বিজেপি কর্মীদের দাপট অব্যাহত থাকে বিকেল পর্যন্ত। এখানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ পাওয়া মুশকিল হয় পুলিশের জন্য।

নবান্নমুখী অন্য একটি মিছিল দুপুর ১টার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে হাওড়া ময়দানের দিকে এগোতে থাকে। সেখানেও ছিল ব্যারিকেড।

ব্যারিকেডে ধাক্কা শুরু হতেই এখানেও একই পদ্ধতি মেনে প্রথমে জল কামান এবং তারপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। প্রচুর লাঠিচার্জ হতে থাকে।

বিজেপি কর্মীরা বেশ কিছুটা সময় সামনের দিকে জোর করে এগোনোর চেষ্টা চালালেও অবশেষে পিছু হটেন। তবে পুলিশকে লক্ষ্য করে এখানে ইট বৃষ্টি চলতে থাকে।

এখানে অবস্থানে বসে পড়েন জল কামানে ভিজে যাওয়া সুকান্ত মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল।

তাঁরা সাফ জানান পুলিশ কমিশনারকে এসে তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে, তবেই তাঁরা অবস্থান থেকে উঠবেন। এভাবে বেশ কিছুটা সময় কাটার পর তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে একটি মিছিল এগোয় এমজি রোড হয়ে হাওড়া ব্রিজের দিকে। মিছিল হাওড়া ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছতে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় পুলিশ ও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধ।

এখানেও পরিস্থিতি রীতিমত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। একদিক থেকে যেমন পুলিশের দিকে এলোপাথাড়ি ইট পাথর উড়ে আসছিল, তেমনই পাল্টা পুলিশও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ শুরু করে। পিছু হঠতে থাকা জনতা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বড়বাজার চত্বরে বেশ কিছু দোকান খোলা হলেও এসব দেখে ব্যবসায়ীরা দোকান দ্রুত বন্ধ করে পালান। এখানে খণ্ডযুদ্ধে আহত হন বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এদিন কিন্তু বিভিন্ন প্রান্তেই বিজেপি কর্মীরা যেমন আহত হয়েছেন, তেমনই বহু পুলিশ কর্মী রক্তাক্ত হয়েছেন।

বিজেপির রাজ্য সদর কার্যালয় মুরলীধর সেন লেনের মুখেও এদিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে গলির মুখে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জও করে।

এদিন লালবাজারের সামনেও বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা হাজির হলে ধস্তাধস্তি ও লাঠিচার্জ হয়। সব মিলিয়ে এদিন কিন্তু বিজেপির নবান্ন অভিযানে গঙ্গার এপার ওপার উত্তপ্ত হল, রক্তাক্ত হল।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button