বিজেপির লালবাজার অভিযান ঘিরে সকাল থেকেই পুলিশের দিক থেকে ছিল সাজোসাজো আয়োজন। অন্যদিকে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরাও ক্রমে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। মিছিল করে, মাটাডোর করে জড়ো হতে থাকেন তাঁরা। ঠিক ছিল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে একটিই মিছিল এগোবে নির্মল চন্দ্র দে স্ট্রিট হয়ে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে লালবাজার অভিমুখে। রাজ্যে আইনের শাসন নেই। এই অভিযোগ করে এদিন লালবাজার অভিযানের ডাক দেয় বিজেপি।
বেলা যত গড়িয়েছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা জড়ো হয়েছেন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। এদিকে একটিই মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও এদিন লালবাজার আসার অন্য রাস্তাগুলিতেও প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা ছিল সকাল থেকে। খোদ লালবাজারের মূল ফটক ছিল বন্ধ। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের চারধার। পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে স্তরে স্তরে। ত্রিস্তরীয় গার্ড তৈরি করা হয় পুলিশের তরফে। এছাড়া তৈরি রাখা হয়েছিল ২টি জল কামান। তৈরি ছিল ব়্যাফ। তৈরি ছিল মহিলা পুলিশের বিশাল বাহিনী। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি চলছিল।
বেলা ১টার পর বিজেপি নেতা কৈলাস বিজবর্গীয়, রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা, মুকুল রায়, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুদের নেতৃত্বে মিছিল এগোতে থাকে। ছিলেন রাজ্যের বিজেপি সাংসদরাও। এছাড়া ছিলেন বিজেপির বহু কর্মী সমর্থক। গরম থাকলেও আকাশ ছিল মেঘলা। তারমধ্যেই চড়তে থাকে লালবাজার অভিযানের পারদ। মিছিল নির্দিষ্ট রাস্তা ধরে এগিয়ে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে পুলিশের করা প্রথম ব্যারিকেডে পৌঁছলে বিজেপি কর্মীরা গার্ডরেল ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিছুটা ভেঙেও ফেলেন। পুলিশ কর্মীরা অন্যদিক থেকে আপ্রাণ সেই গার্ডরেল আটকানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ এমন চলার পরই পুলিশ জলকামান ছোঁড়া শুরু করে। জলের প্রবল তোড়ের মুখে পিছু হঠতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। এরমধ্যেই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটাতে থাকে। জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের জোড়া ধাক্কায় খুব দ্রুত বিজেপি কর্মীরা পিছু হঠতে থাকেন। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের রাস্তা তখন ভিজে একাকার। বিজেপি কর্মীরা দ্রুত পিছু হঠে পুলিশকে লক্ষ্য করে দূর থেকেই ইটবৃষ্টি করতে থাকেন। এদিকে বিজেপি কর্মীরা পিছু হঠলেও পুলিশ কোনও ঝুঁকি নেয়নি। বরং বিজেপি কর্মীরা যে গার্ড রেল ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেছিলেন তা ফের সেখানে ঠিকঠাক করে ফেলা হয়। পুলিশও প্রচুর সংখ্যায় মোতায়েন থাকে।
বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট থেকে পিছু হঠে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি নেতা কর্মীরা। এরমধ্যে অন্য রাস্তা দিয়ে বিজেপি কর্মীরা যাওয়ার চেষ্টা করলে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। বিজেপি নেতারা ততক্ষণে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এরপর একে একে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহারা বক্তব্য রাখার পর মিছিল শেষের ঘোষণা করেন দিলীপ ঘোষ।
বিজেপির লালবাজার অভিযান শেষ হয় দুপুর আড়াইটেয়। যদিও তারপরও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা ভিড় করে ছিলেন। এদিকে এদিন অভিযানের সময় জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এদিকে এই অভিযানকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুরে অচল হয়ে যায় মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ। ফলে যে রাস্তা খোলা ছিল সেখানে প্রবল যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রবল সমস্যায় পড়েন পথচলতি সাধারণ মানুষ।